পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१० চমৎকৃত না হইরে এরূপ মানুষ সংসারেই কিছু দুৰ্ল্লভ । নাকডো তাহার লম্বা লম্ব চুলগুলিতে একটা বিরাশি সিন্ধার বাকি মারিয়া একখানি টুলের দিকে অঙ্গুলি প্রদর্শন পূৰ্ব্বক পুনরায় সেই হাস্তা—সেই আগের মত এক অট্টহাস্ত হাসিয়া উঠিলেন। আমি একবার নাটগহবর হইতে ফিরিয়া আসি য়াছি, কাজেই সে সব বদনভঙ্গী আমার কাছে বড় নূতন নহে ; কিন্তু এ মহীয়সীর ভাবচক্র আয়োজন নিয়োজন দেখিয়া আমিও কিছু অভিভূত হইয়া পড়িলাম। আমরা ধীরে ধীরে সসঙ্কোচে পূৰ্ব্ব প্রদর্শিত টুল থানির উপর বসিলাম। নাক্কডো সহসা নয়ন মুদ্রিত করিয়া “কালী কালী” রবে চীৎকার করিয়া উঠিলেন। কিঞ্চিৎ দূরে এক কৃষ্ণবর্ণ জেরবাদী পুরুষ সম্ভবতঃ গঞ্জিকা সেবনে চক্ষু লাল করিয়া এক পাশে বসিয়াছিলেন। ইনি নাক্কডোর দোভাষী। তিনি আমাদের নিকটে আসিয়া হিন্দুস্থানী ভাষায় জিজ্ঞাসা করিলেন—“নাটের নিকট কি অভিপ্রায়ে আগমন ?” দাদার বাকশক্তি রহিত হইয়া গিয়াছিল, তিনি আমার গা টিপিয়া ইসারা করিলেন—“উত্তর দেও।” আমি দাদার দিকে চোক্ ঠারিয়া দোভাষী মহাশয়কে বলিলাম—“ইহার অদৃষ্ট গণনা করিতে হইবে।” দোভাষী নাক্কডোকে আমাদের অভিপ্রায় বুঝাইয়া দিলেন। নাক্কডো তখন গম্ভীরভাবে নাটের দিকে পাশ ফিরিয়া বসিলেন। দোভাষী মহাশয় ডুম্বুরাকৃতি একখানি ১ হাত উচু টেবল তাহার সম্মুখে স্থাপন করিয়া তাহার উপরে ৭টা কড়ি ছড়াইয়া দিলেন। নাক্কডো ইত্যবসরে ভূত প্রেত যক্ষরক্ষ দৈত্যদানব যিনি যেখানে থাকেন তাদের আহ্বান করিয়া পালি ও বর্ষ্য মিশ্রিত মন্ত্ররাজি উচ্চারণ করিতে আরম্ভ করিলেন । উদাত্ত অনুদাত্ত ও প্রত স্বরে নাটগৃহ প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল, কপালের ও মুখের রেখাগুলি আবার গিরি নির্ঝরিণীর কুটিল আবর্তের দ্যায় উন্মত্তভাবে চমকিত বিথারিত ও প্রলুপ্ত হইতে লাগিল, কুঞ্চিতকোণ নয়নদ্বয় কোনুে সময়ে উদ্ধক্ষিপ্ত কোনো সময়ে অধঃপ্রেরিত, কখনো বা পাশ্বস্থ, আবার পরক্ষণেই বিদ্যাৎ গতিতে নিৰ্মীলিত হইতে লাগিল। তাম্বুল-রাগ রক্ত অধরে ফিক্ ফিক হাসি যেন সংলিপ্তই রহিল, যেন সেগুলি প্রদত্ত-যৌবন নাটসমূহের প্রতি-সম্ভাষণ হইতেই খলিত হইতেছিল। প্রবাসী। - ৮ম ভাগ। কিছুক্ষণ মাত্র পাঠ করিয়া তিনি পুনরায় স্থির হইয়া ੇ এবং বৰ্ম্ম ভাষায় দাদাকে বলিলেন –“সন্মুখে বঙ্গো"। দাদা নিঃশব্দে সেই ডাইনীর সম্মুখে উপবেশন করিলেন। এখানে চৰ্ম্মপাদ্যকার প্রবেশনিষেধ দেখিতে পাইলাম না দাদা বুট লইয়াই উপবেশন করিলেন। নাক্কডো বলিতে লাগিলেন—“তোমার প্রশস্ত কপাল আছে, ডাগর ডাগর চোক আছে, চোকের ভিতর সালের আভা আছে,—ঐ–ঐ—কপালের ঐ উচু যায়গায় প্রতিভা দেবীর আসন আছে—টাকা পয়সার জন্ত বৰ্ম্মাতে আগ হইয়াছে,—তা—হবে—হবে না ?” দাদা কি মনে ভাবিতেছিলেন তিনিই জানেন। নাক্কডো স্থির দৃষ্টিতে দাদার দিকে একবার তাকাইলেন; তারপর বলিলেন—“কয়েক বছর বড় সুথে গেছে—তা'হবে-বন্ধুবান্ধবেরা বৰ্ম্ম আসতে নিষেধ করেছিল ; তোমা অদৃষ্ট এখানে নিয়ন্ত্ৰিত— এখানে সোণ ফলবে"। “হে— হ–হে—নাটের ঐ বলছে শোন—তোমাদের যেমন স্বভাব—দেপ | স্বদয়ের ভিতর এ জালা পুষিত্ত্বে কেন! সে তোমার হবে না।" নাক্কডো আবার পূর্ণ দৃষ্টতে দাদার মুথের দিকে চাহিলেন । বলিলেন—“সে তোমার হবে না। তোমার যে সে এ দিকে বসিয়া আছে, এই এই, এই উত্তর দক্ষিণ দিকে | খোজ খোজ, মিলবে।” ইহার পর আবার মন্ত্র পাঠ আরম্ভ হইল ; দাদা চুপ করিয়া বসিয়া রছিলেন; নাক্কডো একটু থামিয়া পুনরায় বলিন্তে ! আরম্ভ করিলেন-“এখনও চাকুরী হইতেছে না ; আরও কিছুদিন কষ্টে যাবে। প্রতিজ্ঞা স্মরণ আছে ত ?" বলা দরকার-দাদার ব্যবসা ওকালতী ; দু পয়সা হয়, চাকুরীর অনুসন্ধান করিতে হয় না। নাক্কডো বলিতে লাগিলেন, “সে বসিয়া বসিয়া ভাবিতেছে। দেশে পরিবার রাথিয়া আসিয়াছে—সে ভাবিতেছে।" টিপ্পনী করা আবশুক—দাদার পরিবার দাদার সঙ্গে বরমায় অবস্থিতি করিতেছেন। “কিন্তু তা হোলো—তোমার বড়ই বিপদ দেখিতেছি। চাকুরীর সম্বন্ধেও বিষম গোলযোগ । সে অঙ্গীকারটাও ভুলিয়া গিয়াছ।” ৫ম সংখ্যা । ) বলিলেন -“বাবুজি । তোমার যে অঙ্গীকার ংল, সে অঙ্গীকার ভুলিয়া গিয়াছ।” দাদা ক’নের মত জিজ্ঞাসা করিলেন—“কি অঙ্গীকার ?” নাক্কডো বলিলেন—“পূজার অঙ্গীকার!! কালী মায়ের নিকট পূজার অঙ্গীকার ; কালী মায়ের মাথার জন্ত একথানি দেশী রুমাল দিতে হইবে। তবে তিনি তুষ্ট হইবেন।” দাদা সন্দিগ্ধভাবে মাথা নীচু করিয়া বলিলেন—“ছ – আচ্ছ। আমার একটা অভিলাষ আছে ; দেখুন দেখি ফলিবে कि न ?” নাকডো সম্মুখস্থ টেবলের উপর দুই তিনবার কড়ির লে দিলেন। সহান্ত বদনে নাটের দিকে দুই তিনবার ইনিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন—“পথে কণ্টক ; আত্মীয়ই শুক্র তিন মাস ১৫ দিন বাদে আশা পূর্ণ হবে। নাটকে {ठां ५ि॥” নাকডো আরও দুই একটা বাজে কথা বলিয়া অদৃষ্ট গণনা সমাপ্ত করিলেন। আমি একদিন চারআন পয়সা নাক্কডোর পোড়া মুখে গির্জন দিয়া আসিয়াছিলাম। আজ দাদা ধীরে ধীরে ভাবিয়া চিন্তিয়া একটা টাকা বাহির করিলেন। একবার बाशम शृभन्न सििक झाश्रिजन–भाप्न-"कड दि" ? আমি বলিলাম—“দেও—একটা কিছু যা"হয়"। দাদা আবার পকেটে হাত দিলেন, সম্পূর্ণ পকেটটা এধার হইতে ওয়ার দুই তিনবার জালছাবা করিলেন–পুটি চাদ মিলিল নঃ দাদা মুখ বেঁকাইয়। আমার দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“রেজ গী হবে"। আমি দাদার কাধে চাপিয়া মেলা দেখিতে আসিয়াছিলাম, সুতরাং স্পষ্টাক্ষরে বলিলাম —“কিছুই না”। দাদা অগত্য আবার পকেট হইতে পাঁচটা আঙ্গুলে ধরিয়া ১টা টাকা তুলিলেন–যেন জমিদারের লোককে বেকারের মাছ দিতে হইবে। টাকাটা ধুপ করিয়া নাকডোর আসনের উপর চিৎ হইয়া পড়িল । আমরাও নাকডোর আস্তানার দিকে পিঠ ফিরাইয়া বাড়ীর দিকে যাত্রা করিলাম । তথন স্বৰ্য্য অস্ত গিয়াছে ; আকাশের রঙ্গীন মেঘগুলি হইতে প্রোজ্জল প্রভাচ্ছটা ভূতলে ছাইয়া পড়িয়াছে ; চারিদিকে পাহাড়, তাহার নীল পীত লোহিত কত রঙ্গের তে ফায়৷ পোয়ে । ২৭১ চুড়া সেই উজ্জ্বল আলোকে ঝল স্কুল করিতেছে ; যে পাহাড় গুলি অনেক দূরে, তাহদের গায়ে গভীর কালো ছায়া ; দেখিলে মনে হয় এক একটা ভুটিয়া কম্বল গায়ে দিয়া আফিংথোর জঙ্গলী-সানের মত টপ হইয়া বসিয়া রহিয়াছে। তখনো সদ্ধা হয় নাই, তবুও নিকটের পাহাড়গুলি বাম্পের মোট মোটা লেপগুলি মাথার উপর টানিয়া টানিয়া রাত্রির প্রচণ্ড শীতের জন্য প্রস্তুত হইতেছিল। আমরা চিরদিনই বাঙ্গালার সমতলক্ষেত্রের হামল শোভা ও বিস্তীর্ণ নদীর উন্মুক্ত বক্ষঃস্থল দেখিতে অভ্যস্ত। আমাদের চোখে এ দৃপ্ত কত নুতন, কত সুন্দর, কত মনোহর। আমরা স্বভাবের সেই অভিনব মাধুরী চড়া গলায় আলোড়ন আন্দোলন করিতে করিতে ঘরে ফিরিতেছি, এমন সময় অপর বন্ধুটী হঠাৎ আমার কাধে হাত দিয়া বলিলেন--“আ-এই যে।” তিনি অঙ্গুলী হেলাইয়া দেখাইলেন—একটা গাছের নীচে কতকগুলি লোক জড় হইয়াছে, মধ্য হইতে একটা সুমধুর বাস্তবন্ত্র বাতাসের তরঙ্গে তরঙ্গে তানলহর ছড়াইয়া উছলিয়া উছলিয়া উঠিতেছে। বন্ধুটী বলিলেন–“এ সেই লোকটী”। আমি অৰ্দ্ধ অজ্ঞাতসারে প্রশ্ন করিলাম—“কোন লোক” । “কেন, তোমাকে একদিন এর কথা বলিয়াছিলাম--মনে আছে, সেই ‘জইয়ার’ নিকটে ?” আমি বলিলাম–“বটে, চল দেখে আসি”। গাছের তলায় যাইয়া দেখিলাম একটী কাশ্মীরী যুবক একটা সারঙ্গের সহিত গজল গাহিতেছে। চারিদিকে কতকগুলি বৰ্ম্ম বৰ্ম্মী জেরবাদী ও হিন্দুস্থানী জমিয়া গিয়াছে। মাঝখানে একখানি কম্বলাসনে বসিয়া গায়ক মধুৱকণ্ঠে গাহিতেছে— জাহির মে কঁহি রহতে হ্যায় বাতিন মে কঁহি হ্যায় ইয়েহ ওয়াম্প উনহি মে হ্যায় র্কেছ হ্যায় আউর নেহি হ্যায়। যুবকের বয়স বড় জোর ২২ বৎসর ; মুখে ভ্রমরকৃষ্ণ গুম্ফরাজির গভীর রেখা, চক্ষু বিশাল, তাহাতে কৃষ্ণরোমনিচয় কতই স্বন্দর । আমি নভেল লিখিতে বসি নাই ; নয়নমনোহর নায়ক অঙ্কিত করিবার ইচ্ছ। আমার নাই ; স্বাহ দেখিয়াছি তাহাই বলিতেছি । আর র্যাহার কাশ্মীর- ,