পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

이 কথা বলিতেছি। কোন জাতি (যত উচ্চ হইলেও, ) অন্য জাতিকে (অতি হীন ও দুর্বল হইলেও) পরাজয় করিয়া সম্পূর্ণ জয়লাভ করা দূরে থাকুক, বরং শেষ ফলে নিজেই হটিয়া যায়। এদেশের আর্য্য-অনার্য সংঘর্ষণের পর আমাদের যে দুর্দশা হইয়াছে, উহার মূলে ঐ সত্যটি লক্ষ্য করিতে পারা যায়। সমাজতত্ত্ববিৎ ইয়ার্ট গ্লেনির ভাষায় ঐ কথাটি এই ভাবে আছে :--- In the conflict of races, the conquerors are often the conquered, becoming merged in and modified by those whom they physically subdue. This is a truth of great sociological importance. হয়ত এই ফল এড়াইবার জন্য একালের জেতারা অনেক চেষ্টা করিতেছেন ; কিন্তু ভাগ্যচক্র মানুষের চালাকি উপেক্ষ করিয়া ঘুরিয়া যায়। বিস্তৃত সমাজ সম্বন্ধে যাহা সত্য, প্রতি মনুষ্যের ইতিহাসেও তাহাই সত্য; কেননা মানবের সমষ্টিই সমাজ । মুরজাহান যে প্রতিদিন বুদ্ধি করিয়া একটা নীতিজাল (১) রচনা করিয়া, প্রতিহিংসার জন্য, সেইটি ফেলিতেছিল ও তুলিতেছিল, একথা এ নাটকে নাই। কেননা কথাও তাহা নহে। আপনার মুখের মাত্রা চড়াইতে গিয়া, আপনার ক্ষমতা অটুট রাখিতে গিয়া, সে যত পাপ করিয়াছিল, তাহাতে সে একদিন নিজেই চমকিয়া উঠিয়াছিল। উদভ্ৰান্ত স্বামী যেদিন মদমত্ততার আনন্দে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মুরজাহান তুমি দেবী না মানবী ?” সেদিন নুরজাহান বিকৃত কণ্ঠে বলিয়াছিল, “আমি পিশাচী ।” এই রকমের গোটাকতক কথা, মুরজাহানচরিত্রের অসীম সাগরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের মত জাগিয়া উঠিয়া সমুদ্রের প্রসার দেখাইয়া দিতেছে ; নহিলে অবিশ্রাস্তপ্রসার আয়ত্ত করা যাইতে পারিত না। মুরজাহান যদি প্রতিহিংসার জন্যই কাজ করিতেছিল, এবং গৌরবের জন্যই লালায়িত ছিল, তাহা হইলে মহাবতের কাছে পরাজিত হইয়া সে কাদিয়া কাটিয়া প্রাণ রক্ষা করিত না। যাহার ক্ষমতার জন্ত পাগল, এবং প্রতিহিংসায় উত্তেজিত, তাহারা অতি যৎসামান্য পরাজয়েই আত্মহত্য (১) নীতিপদ প্রাচীনের মত policyঅর্থেই বাবার কলিম। - প্রবাসী । সমাজতত্ত্বের একটা অতি সুহ্ম ও শিক্ষাপ্রদ সত্যের ৮ম ভাগ। পর্য্যস্ত করে । কবি যদি একবার মুরজাহানকে এ अश না কাদাইতেন, তবে এই বিষম জটিল চরিত্র ভাল করিয়া বুঝিতে পারিতাম না। মুরজাহান সুন্দরী, মুরজাহান মোহিনী ; তাহার রূপ: মোহের আবর্তে পড়িয়া সমগ্র ভারতসাম্রাজ্য ঘূর্ণিত হইয়া, ছিল। যে দিন নিয়তির নির্মম ফুৎকারে সে ভেলকি উড়িয়া গেল, এবং নিজের উত্তোলিত আবর্তে পড়িয়া যুদ্ধ জাহান ক্ষমতার তৃণ মাত্র ধরিয়া দাড়াইতে চাহিল কিন্তু পারিলন, সেদিন সে পাগল হইয়া গেল। তীব্র লালসার (২) এই শেষ ফল, তাহার ঐরূপ পরিণাম, মড়লের মস্তিষ্ক রোগ গ্রন্থেও দেখিতে পাই। এই স্থানে অভিমাননী লয়লার নূতন রূপ দেখিতে পাই। লয়লা, মোগল পরিবারের অভিজ্ঞতায় বুঝিয়াছিল, যে সম্পদজনিত মুখের অর্থ অপবিত্রতা। তাই সে দুঃখের দিনে অসহায় অন্ধ স্বামীকে, এবং সম্পদহীনা ভিখারিণী জননীকে বুকে টানিয়া মুখিনী হইয়াছিল। আমি মুরজাহান নাটকের সমালোচনার কেবল মুরজাহানের কথাই বলিয়াছি। ইহাই বক্তব্য: কেননা অন্য চরিত্রের কথা কেবল মুরজাহানের চরিত্রের পারিপাশ্বিক অবস্থা মাত্র । প্রত্যেক অঙ্কের টীকা না করিলে, অঙ্কে অঙ্কে যে সংযোগ আছে, তাহা বুঝাইতে পারা যায় না। কিন্তু যাহা বলিয়াছি তাহাতেই সুস্পষ্ট হয় নাই কি, যে মুরজাহান চিত্রে কবি যে চরিত্র জটিলতা আঁকিয়াছেন, তাহার প্রতিরেখা বর্ণ বৈচিত্রে এবং ভাবের উদ্বোধনে জীবন্ত হইয়া ফুটিয়াছে ? এ গ্রন্থে মানবচরিত্র বিশ্লেষণে কবি যে অসাধারণ ক্ষমত দেখাইয়াছেন, তাহ তাহার অপূৰ্ব্ব রচনা-শিল্পের সহিত মিলিয়া মণিকাঞ্চন যোগ হইয়াছে। ঐবিজয়চন্দ্র মজুমদার। (২) মোগলগুহের তীব্র লালসার কথা, বার বার বলিয়াছি। কিন্তু ঐ গৃহের বিদ্যাচর্চার কথা বলি নাই। সারাসেনদিগের সভ্যতা এবং বিদ্যাচর্চা, পূর্ণ মাত্রায় মোগল পরিবারে ছিল। দারা উপনিষদ গ্রন্থ অনুবাদ করিয়াছিলেন : গ্ৰীক বিদ্যার পণ্ডিতেরাও মোগলদরবারে উপস্থিত থাকিত। শাজাহানের মুখে প্লেটোর গ্রন্থের কথা সেইগ্ৰন্থ এ গ্রন্থে অস্বাভাবিক নয়। ਮੈ। | | ------ ------- আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে - সাৰ্বরাস্ট্রিক সমিতি । এক শক্তির অপর কোনো এক শক্তিকে পৰ্ব্ব করিয়া প্রাধান্ত লাভ করার চেষ্টা উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের একটা প্রধান বিশেষত্ব। সাম্রাজ্যমদমত্ততার আবেগে এক একটা জাতি কোটি কোটি প্রাণহত্যা করিয়াও যুদ্ধ বিগ্ৰহ হইতে ক্ষান্ত হয় নাই। নরশোণিতে দেশ ভাসিয়া গিয়াছে, তবু পিপাসার নিবৃত্তি হয় নাই। জগতের সম্মুখে আপনার শক্তিকে সৰ্ব্বাপেক্ষ বড় করিয়া তুলিবার এই আকাঙ্ক্ষা সমস্ত জাতিকে অতান্ত স্ফীত ও সংকীর্ণমনা . করিয়া রাধিয়াছে। ব্রিটিশ সিংহের Rule, Britannia, জৰ্ম্মানETA Deutschland uber Alles softs Germany | over everything EzTift Ht RE ztzfa fä5frr কিন্তু এই “উৎকট” স্বদেশপ্রীতির শতাব্দীর মাঝে শাস্তি ও সংযমের বার্তা আসিয়া পৌছিয়াছে ; সমগ্র মনুষ্যজাতির ভিতরে সহানুভূতি ও সৌহার্দ্য স্থাপন করিবার জন্ত স্বধার্থ চেষ্টা আজ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতির ভিতরে দৃষ্ট হইতেছে। উদ্যোগিগণ, জৰ্ম্মান সোসিয়ালিষ্টগণ, ফ্রান্সের সোসিয়ালিষ্টগণ, জগতে মুদিনের প্রতিষ্ঠার জন্ত চেষ্টা করিতেছেন। যাতে এক জাতি অপর জাতির সুখদুঃথে যথোচিত সহানুভূতি প্রকাশ করিতে পারে, এক জাতি অপর জাতির প্রতি কোনো প্রকার বিদ্বেষ ভাব পোষণ না করে, যাতে একে অপরের রক্ত শোষণ করিয়া পরম তৃপ্তি লাভ না করে, সেই জষ্ঠ আজ জগতের স্থানে স্থানে ক্ষুদ্র চেষ্টা নানা আকারে প্রকাশিত হইয়া পড়িতেছে। এই প্রবন্ধে যে সমিতির কথা উল্লেখ করিব তাহারও স্বষ্টি এই মহৎ চেষ্টাকে জাগ্রত রাখিবার জন্ত । আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতি বৎসরই বিভিন্ন দেশ হইতে অনেক যুবক অধ্যয়ন করিতে আসেন ; এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাপ্রণালী ও বৈজ্ঞানিক মালোচনা করিবার মহা সুযোগ বিভিন্ন দেশ হইতে যুবক| দিগকে এখানে আকৃষ্ট করে। আমেরিকার প্রসিদ্ধ The Hague Peace Conference as | বিদ্যালয়গুলিতে বিদেশী ছাত্রসংখ্যা ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতেছে। २११ এই সকল শিক্ষা-কেন্দ্রস্থলে আশা ও আনন্দ লইয়া বিভিন্ন দেশ হইতে যে সকল যুবক আসেন, র্তাহাদের পরস্পরের ভিতরে সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য বহুদিন অবধি একটা সমিতির অভাব বোধ হইতেছিল। সমস্ত প্রকার সংকীর্ণতা বিদ্বেষ ভাব ও "উৎকট স্বদেশপ্রীতির বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া যাহাতে ইহঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ঔদার্য্যে, সাৰ্ব্বভৌমিক প্রতিতে দীক্ষিত হন এই উদ্দেশু লইয় একটা সমিতি স্থাপনের চেষ্ট হইল। ক্ষুদ্র চেষ্টার ভিতর দিয়া বিধাতার আশীৰ্ব্বাদ কত বৃহৎ আকারে প্রকাশিত zēni ērš, irántfģ* (Cosmopolitan) riffē3 জন্ম তাহার একটা জলস্ত প্রমাণ। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্রগণ সৰ্ব্বপ্রথমে এই সমিতি স্থাপনের সংকল্প করিলেন—স্বপ্নপ্রহেলিকার স্তায় এই সংকল্প স্বধু জাগিয়াই মিশিয়া গেল না, ইহা বিদেশী ছাত্রদিগকে : যথার্থই উদ্বোধিত করিয়া তুলিল। ১৯০৩ সালের ১২ই মার্চ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ষোলট বিদেশী ছাত্র কারল +TRI #ffN (Karl Kawa Kami) =fN# a*sR জাপানী ছাত্রের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে মিলিত হইলেন। একাদশট বিভিন্ন জাতির মিলনের সৌন্দর্ঘ্য তাহদের হৃদয়ের আশা আনন্দ ও উৎসাহকে আরো যেন উন্মুখ করিয়া তুলিল। তাহারা স্থির করিলেন যে উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটা সমিতি প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে যেখানে বিদেশী ছাত্রগণ পরম্পর পরস্পরের বন্ধুত্বে সাহায্যে ও সহানুভূতিতে বিদেশবাসকাল আনন্দে যাপন করিতে পারেন, যে স্থলে বিভিন্ন জাতি পরম্পর পরম্পরকে ভাল করিয়া জানিতে পারে। সেইদিনকার সেই সভাতেই সমিতি প্রতিষ্ঠিত হইল। সভাপতি, ও অন্তান্ত কৰ্ম্মচারী, নিযুক্ত হইল। একজন আরমেনিয়ান সভাপতি, একজন নরউইজিয়ান সহকারী সভাপতি, একজন জাপানী সম্পাদক, একজন আমেরিকান ধনাধ্যক্ষ, একজন জৰ্ম্মান হিসাবপরিদর্শকের পদে নিযুক্ত হইলেন ; ষোলজন সভ্য লইয়৷ সমিতির স্বচনা করা হইল। অনেকে আশঙ্কা করিয়াছিলেন সমিতি বেশী দিন চলিবে না। কিন্তু ষে সংকল্পে বিধাতার মঙ্গলম্পর্শে এত শক্তি, এত উদ্যম, এত উৎসাহ লইয়। আইসে তাহা জয়যুক্ত না হইয়া থাকিতে পারে না। আশা