পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ob。 আত্মগুণে যশস্বী হইতেন। ক্ষমতা ও বিদ্যা অর্জনের সুবিধা লইয়া যাহারা জন্মগ্রহণ করেন, কোন কালের সমাজেই তাহাদের নেতৃত্ব অস্বীকৃত হইতে পারে না। নূতন শ্রেণীর বঙ্গসাহিত্য বিকাশের প্রথম দিনে, শ্ৰব্যকাব্যের মধ্যে পন্থকাব্যে মধুসূদন, ও গষ্ঠকাব্যে বঙ্কিমচন্দ্র, এবং দৃষ্ঠকাব্যে দীনবন্ধু, যেরূপে বিদেশীয় নূতন নুতন ভাব, স্বদেশের সাহিত্যের অঙ্গীভূত করিয়া সাহিত্যে নব জীবন দান করিয়াছেন, তাহতে সমগ্র ভারতবর্ষ তাহাদের নিকট ঋণী। ইচ্ছা করিয়া ‘সমগ্র ভারতবর্ষ' কথাটা ব্যবহার করিয়াছি। কেননা বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধুর গ্রন্থের মহাটি ও গুজরাটি অনুবাদের পর হইতেই, ঐ সকল দেশে ইংরেজি ধরনের নূতন সাহিত্য রচিত হইতে দেখিতেছি। একালে সৰ্ব্বত্রই সমান ভাবে ইংরেজি চর্চা চলিতেছে বটে, কিন্তু বিদেশের জিনিষ দেশের মত করিয়া লইবার নূতনত্বটুকু বঙ্গদেশে বেশি দেখিতে পাই । অলঙ্কার শাস্ত্রের লক্ষণ ধরিয়া, মেঘনাদবধ বা কৃষ্ণকান্তের উইলের কাব্যত্ব নিরূপিত হয় না। পঞ্চসন্ধিসমন্বিত না হইলেও, নীলদর্পণখানি “অঙ্ক"(১) শ্রেণীস্থ একথানি শ্রেষ্ঠ নাটক । ( 4 ) যাহাদের লেখাপড়া শিখিবার ক্ষমতা আছে, তাহারাই ইংরাজী পড়ে ; যাহারা শিক্ষিত এবং বহুদর্শী তাহারাই দেশের নেতা হয়েন। ইংরাজি-শিক্ষিতের বঙ্গসাহিত্যের নেতা হওয়াতে একালের সাহিত্য কি উন্নতি লাভ করিতে পারে নাই ? ইউরোপের সভ্যতাকে যাহারা ম্লেচ্ছ যবনের হেয় সভ্যতা বলিয়া দস্তু প্রকাশ করেন, এবং ইউরোপের কাব্য ইতিহাস বিজ্ঞান প্রভৃতি ফুৎকারে উড়াইতে চাহেন, তাহারা বীর হইতে পারেন, কিন্তু বুদ্ধিমান নহেন। যাহা হৃদ্য এবং পথ্য, তাহা ভারতবর্ষের একচেটিয়া নহে। সৌন্দৰ্য্য অনুভূতিতে, মানবচরিত্র বিশ্লেষণে এবং ভাবের অভিব্যক্তিতে ইউরোপের যে নূতনত্ব এবং বিশেষত্ব স্লাছে ইউরোপীয় শিক্ষার ফলে তাহার প্রভাব কি আমাদের সাহিত্যের উপর বাঞ্ছনীয় নয়? যাহা স্বন্দর, (১) অঙ্কের প্রধান লক্ষণগুলি এইঃ-(ক) নেতার প্রাক্তনা (গ) রসোছত্র করু৭; স্থায়ী, (গ) বহুস্ত্রী-পরিধিবিতং । (ঘ) প্রখ্যাতমিতিবৃত্তঞ্চ (ঙ) কবি-বুদ্ধ্যি প্রপঞ্চয়ে২। প্রবাসী । যাহা মধুর, যাহা জীবনপ্রদ, তাহা সকল জাতির পক্ষেই কল্যাণকর বলিয়া গ্রহণীয়। কোন জাতিরই জীবনীশক্তি জাতি সংঘর্ষণ এবং জাতি সংমিশ্রণ ভিন্ন বৰ্দ্ধিত মন্ত্র পারে না ; সমাজতত্বের এই অতি ক্ষুদ্র সিদ্ধান্তটি আমর ভূলিব কেন ? উদ্ভাবনীশক্তি এবং চিন্তার সৰ্ব্বতোমুখ গতি, কোন জাতিতেই বহুদিন স্থায়ী হয় না ; ক্ষয় এবং অবনতির দিনে নবজাতি সংঘর্ষণই উহার পুনরুদ্দীপনের উপায়। হুন জাতির সংঘর্ষণ এবং সংমিশ্রণের পর, এক চালুক্যাদি গুর্জর জাতির অভু্যদয়ের পর, যখন ভারতব কেবল আপনাতেই অবস্থিতি করিতে লাগিল, তখন হইতেই ভারতের অবনতির আরম্ভ। ভারতের আর্য্যজাতির জীবনী শক্তি বহুসহস্ৰবৎসরব্যাপী লীলার পর যখন ক্ষয়ের দিকে অগ্রসর হইল, তখনকার সাহিত্যে কেবল চৰ্ব্বিতচর্ম; কিছুমাত্র নূতনত্ব নাই। মদম্রাবের বর্ণনা, রমণীর মুখের কথা বলিবার পূৰ্ব্বেই চন্ত্রের উপর অত্যাচার, এই পতিত যুগের কবিতার অবলম্বন। বিরহের বর্ণনায় যখন কোকিলের নামে ২৭টি এবং মল। সমীরণের নামে ২১টি কবিতা পড়া যায়, তখন দমাম্বী অপেক্ষা পাঠকের কষ্ট অধিক হইয় উঠে । ( ৬ ) একথাও স্বীকার করিতে হইবে, যে যখন ইংরেজি শিক্ষিতের হাতে সাহিত্যের ভার পড়িল, তখন এ দেশের প্রাচীনতার মধ্যে, যাহা সুন্দর এবং জীবনপ্রদ ছিল, তা অনেক পরিমাণে উপেক্ষিত হইতেছিল, এখনো সে দোষ । সম্পূর্ণ তিরোহিত হয় নাই ; কিন্তু কাল-বশে হইবে, এরূপ আশা আছে। খাটি বিলাতি ধরণে এবং বিলাতি দৃষ্টান্তের বাহুল্যে বঙ্গ-সাহিত্য রচিত হইলে, বিলাতি অভিধানের সাহায্য ভিন্ন, তাহার অর্থবোধ হইতে পারে না ; এবং ঐ অভিধানের তিরোধানের সঙ্গেই ঐ প্রকারের সাহিত্য দুৰ্ব্বোধ্য এবং অগ্রাহ হইয়া পড়িবে। কিন্তু এরূপ কোন রচনা, এদেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে নাই। যাহারা এখন নিরবচ্ছিন্ন সংস্কৃতচর্চা লইয়া আছেন । তাহাদের মধ্যে মানসিকশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির এখনো অভাব না থাকিতে পারে। কিন্তু সমষ্টি লইয়া তুলনা করিলে অনায়াসে বলিতে পারি, যে মানসিকশক্তিসম্পন্নেরাই । ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিত ; এবং একালের অবস্থার ফলে হস্তীর নাম করিতে গিয়া । [ ৮ম ভাগ। I ৬ষ্ঠ সংখ্যা । । | বহুদৰ্শিতা এবং বুদ্ধির বিকাশ বেশি লাভ করিতেছন। এরূপ স্থলে যখন সাহিত্যসেবক ইংরেজি-শিক্ষিতের প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা করিতে অগ্রসর হইতেছেন, তখন নিশ্চয়ই বলিতে পারি যে প্রাচীন ভাষা-জ্ঞানের গৌরবটুকুও একালের শিক্ষিতের অপহরণ করবেন। পশ্চিম-দক্ষিণ অঞ্চলে, ভাউদজি, ভাণ্ডারকর প্রভৃতি, টোলের গৌরব আত্মস্থ করিয়াছেন ; অচিরাং বঙ্গেও সেই ফল ফলিবে। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতেরা অসন্তুষ্ট হইবেন না ; কাল-ধৰ্ম্মে রাহা হইতেছে, তাহাই লিখিতেছি । কেবল মাত্র সংস্কৃত স্থানের ফলে যে পণ্ডিতবর্গের মধ্যে কোন নূতনত্বের বিকাশ নাই, এবং টোলের-পণ্ডিতের সমালোচনায় যে তীক্ষতা, গভীরতা, বা সৰ্ব্বদেশদর্শিতা নাই, তাহ অঙ্গীকার করিতে গীরা যায় না। একালের জ্ঞানের সহিত ইহঁাদের কিছুমান সম্পর্ক নাই ; অথচ ধৰ্ম্মতত্ত্বের ব্যাখ্যায় নিতান্ত না বুঝিয়াই বৈজ্ঞাতিক শক্তি লষ্টয়া পেলা করিতে চাহেন। কাজেই, একালের শিক্ষিতদের নিকটে উ হারা “হিং টিং ছট" বলিয়া পদে পদে উপহাসাম্পদ মাত্র হইতেছেন। সকল বিষয়ের নেতৃত্ব হারাইয়া, যে মোক্ষশাস্ত্র লইয়াছিলেন, তাহাতেও ঐক্কপ ব্যাখ্যার ফলে, কেবল অভক্তি এবং হাসির স্মৃষ্টি ইষ্টতেছে। “গীতার একটি অধ্যায়ের মধ্যেই” সব আছে, মনে করিয়া, বিশ্বনাথের বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের প্রকাশ অগ্রাহ করা চলেনা দুচারি জন বুদ্ধিমান সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত, পালি নামে খ্যাত প্রাচীন প্রাকৃত-সাহিত্যের আলোচনা করিতেছেন দেখিয়া মুণী হইয়াছি। আশা করি উত্তরোত্তর ইহাদের সংখ্যা सांशृिद। শ্ৰীবিজয়চন্দ্র মজুমদার। বৈদিক ধৰ্ম্ম । f জি-দে লাফোর ফরাসী হইতে ] বৈদিক যুগ-দিগবিজয়ের যুগ ; এই যুগে, আর্য্যেরা সিন্ধুনদের প্রদেশে প্রবেশ করে এবং দক্ষিণাভিমুখে ক্রমশঃ অগ্রসর হইয় গঙ্গা পৰ্য্যন্ত যাত্রা করে। বৈদিক ধৰ্ম্ম । Jos আর্য্য বংশের প্রথম দলের, স্বকীয় জন্মভূমি বাকৃত্রিয়ান (বাহিলক) ছাড়িয়া, সিন্ধুনদ পার হইয়া, যখন এই বিশাল ভারত-প্রায়দ্বীপ জয় করিতে প্রবৃত্ত হইল, তখন তাহার এই দেশের ভূম্যধিকারী অধিবাসীদিগের সংস্রবে আসিল । এই আদিম অধিবাসিদিগের নাম দস্থ্য। ঋগ্‌বেদের মন্ত্রে, এই দক্ষ্যগণ,-বৃষ-মুখ, নাসিকাহীন, হ্রস্ববাহু বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে ; আর্য্যের উহাদিগকে ক্ৰবাদ নামে অভিহিত করিত ; ক্রব্যাদের অর্থ-মাংসভোজী রাক্ষস । আর্য্যের মাংস স্পর্শ করিত না। এই সকল বৰ্ব্বরেরা কোন দেবতা মানিত না, তাহাদের কোন ধৰ্ম্ম ছিল না। ইহার কোন জাতীয় লোক ?-বৈজ্ঞানিক ভাবে ইহার উত্তর দেওয়া বড়ই কঠিন। বেদে উহাদের যেরূপ বর্ণনা আছে, তাহাতে পীতজাতির সহিত অনেকটা মিল হয়। এই অনুমানের ভিত্তি—উহাদের দৈহিক প্রকৃতি। দক্ষ্যদের রং ছিল কালো ; উহাদের চৰ্ম্ম রোমশ ছিল না-যাহা আর্য্যদের একটা বিশেষ লক্ষণ ; উহাদের নাক ছিল চ্যাপটা। দয়াদের কোন ধৰ্ম্ম ছিল না ; ইহাও একটা বিশেষ লক্ষণ বলিতে হইবে ; এই লক্ষণটি পীতজাতির সহিত মেলে ; পৃথিবীতে যতপ্রকার মানবজাতি আছে, তন্মধ্যে একমাত্র পীতজাতির মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কোন প্রয়োজন অনুভূত হয় নাই। কংফুচুর ধৰ্ম্ম ও লাওৎসুর ধৰ্ম্ম—নীতি ও জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম— যাহা নিরীশ্বর ধৰ্ম্ম—উহাই পীতজাতির অধিকাংশ লোক পরে অবলম্বন করে । বেদে দেখা যায়,--দস্তাদের মধ্যে কতকটা ভৌতিক সভ্যতাও বিদ্যমান ছিল। এই বিষয়েও পীতজাতির সহিত একটু মিল আছে। পীতজাতীয় লোকেরা খুব কেজে, , উহাদের সভ্যতা, নবোদভাবিত প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উপরেই প্রতিষ্ঠিত। প্রথম প্রথম আর্য্যেরা, যাহাদেরই ংস্রবে আসিত তাহাদের সকলকেই নিৰ্ব্বিশেষে দ্বস্থা বলিয়া অভিহিত করিত। পরে তাহারা জানিতে পারিল যে ছই প্রকার দক্ষ্য আছে ; এক-পাৰ্ব্বত্য দস্থ্য, আর এক মধ্য-দেশের দম্বা ; প্রথমোক্ত দক্ষ্যরা কৃষ্ণবর্ণ, ও দ্বিতীয়োক্ত দসু্যরা পীতবর্ণ। - “দম্যগণ কৃষ্ণবর্ণ, বন্ত, ভীষণ হিংস্ৰ, মধ্যে