পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

m ○>8 এই জগৎকে ধারণ করিয়া আছেন । তিনি চলেন, তিনি চলেন না ; তিনি দূরে, তিনি নিকটে ; তিনি সকলের অস্তরে, তিনি সকলের বাহিরে ! যিনি পরমাত্মার মধ্যে সৰ্ব্বভূত দর্শন করেন, এবং সৰ্ব্বভূতের মধ্যে পরমাত্মাকে দর্শন করেন, তিনি কাহাকেও অবজ্ঞা করেন না। বিশ্বাস্মার মধ্যে সৰ্ব্বভূত সৰ্ব্বজীব অবস্থিত—ইহা যিনি জানিয়াছেন, তাহার অবিদিত কি আছে ? তিনি সৰ্ব্বগত, শুভ্র নিৰ্ম্মল, আকার, শিরা ও ব্রণহীন, শুদ্ধ, অপাপবিদ্ধ ; তিনি কবি, তিনি মনীষী, তিনি পরিভূ, তিনি স্বয়স্থ, তিনি সৰ্ব্বকালে প্রজাদিগকে যথাযথ অর্থসকল বিধান করেন। যাহারা অবিদ্যাকে অর্চনা করে তাহারা ঘোর অন্ধকারের মধ্যে , গমন করে, এবং যাহারা বিদ্যালাভ করিয়াছে তাহার আরও গভীরতর অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে। ঋষিরা বলেন, বিজ্ঞানের ফল একরূপ, অজ্ঞানের ফল অন্তরূপ ; এই উপদেশ আমরা পূৰ্ব্বপুৰ্ব্ব ঋষিদের হইতে প্রাপ্ত হইয়াছি। যিনি বিদ্যা ও অবিদ্যা একসঙ্গে শিক্ষা করিয়াছেন, তিনি অবিদ্যার দ্বারা প্রথমে মৃত্যুকে অতিক্রম করেন, তাহার পর বিদ্যার দ্বারা অমৃত লাভ করেন। যাহারা সৃষ্ট বস্তুর পূজা করে তাহারা অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে, যাহারা নশ্বর স্বল্প পদার্থে আসক্ত হয় তাহারা গভীরতর অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে। ঋষিরা বলিয়াছেন, নশ্বর পদার্থের ফল একরূপ, অবিনশ্বর পদার্থের ফল অন্তরূপ। পূৰ্ব্বপূৰ্ব্ব ঋষিদিগের নিকট হইতে আমরাএই উপদেশ প্রাপ্ত হইয়াছি। যিনি নশ্বর পদার্থ ও লয়তত্ত্ব— এই উভয় জিনিস একসঙ্গে শিক্ষা করেন, তিনি প্রলয়ের দ্বারা মৃত্যুকে অতিক্রম করেন, পরে অকৃত পদার্থের দ্বারা • অমৃত লাভ করেন। গৌরবান্বিত হিরন্ময় অবগুণ্ঠনে সত্যের মুখ আচ্ছাদিত। জগৎ পোষণ হে স্বৰ্য্য! আমার সমক্ষে সত্যকে প্রকাশ কর—যাহাতে আমি তোমার চিরভক্ত হইতে পারি,—দ্যায়ের স্বৰ্য্য ও সত্যের স্বৰ্য্যকে দর্শন করিতে পারি। হে লোক-পোষণ স্বৰ্য্য ! হে নিঃসঙ্গ তাপস । পরম প্রভু পরম নিয়ুস্তা ! প্রজাপতির পুত্র ! তোমার দীপ্ত কিরণ বিকীর্ণ কর ; তোমার প্রখর তেজ সংহরণ কর, যাহাতে ক্ষামি তোমার মোহন রূপ ধ্যান করিতে পারি, তোমার মধ্যে যে দিব্য পুরুষ বিচরণ করেন, তাহার অংশ প্রবাসী। [ ৮ম ভাগ। হইয়া যাইতে পারি! আমার প্রাণবায়ু যেন আকাশে। বিশ্বাত্মা ও ভূতাত্মার মধ্যে বিলীন হয়! আমার এই ভৌতিক ও নশ্বর দেহ যেন ভৰ্ম্মে পরিণত হয়! হে দেৰ! আমার প্রদত্ত হবি তুমি স্মরণ করিও, আমার যজ্ঞানুষ্ঠানের কথা স্মরণ করিও। হে অগ্নি। সরল পথ দি৷ আমাদের সমস্ত পুণ্যকার্য্যের পুরস্কার স্বরূপ গন্তব্য স্থানে আমাদিগকে উপনীত কর। হে দেব! তুমি আম৷ দের সমস্ত কৰ্ম্মই অবগত আছ, আমাদের পাপ সকল অপনীত কর। আমরা তোমাকে বন্দনা করি, আমরা তোমাকে প্ৰণিপাত করি!” বৈদিক ধৰ্ম্ম হইতে ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মে উত্তীর্ণ হইবার পথে এই মহান উপনিষদই সন্ধিস্থান। এই উপনিষদই বৈদিক মত ও বিশ্বাসের সংক্ষিপ্তসার, এবং এই উপনিষদের মধ্যেই সেই সকল মতবাদের বীজ নিহিত ছিল যাহা পরে ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম-সংশ্লিষ্ট দর্শনশাস্ত্রের উদ্যমে বৃক্ষাকারে পরিণত হইয়াছে। বেদ যে ব্রাহ্মাণ্যক ভারতের চক্ষে এত পবিত্র, তাহার কারণ, বেদই সমস্ত ধৰ্ম্মতত্বের, দার্শনিকতত্ত্বের, সামাজিক ও রাষ্টিকতত্ত্বের স্বত্রস্থান ; বেদ আসলে বিশুদ্ধ আর্য জাতির নিজস্বসামগ্ৰী, উহার মধ্যে কোন বিদেশী ‘ভেজাল’ প্রবেশ করে নাই, অন্তান্ত জাতি হইতে পৃথক হইয়া, সপ্তসিন্ধুপ্রদেশের মধ্যে যে আর্য্যজাতি আবদ্ধ ছিল,--বে: তাহাদেরই জ্ঞানোন্নতির ফল ; একমাত্র নিজ সম্বলের উপর নির্ভর করিয়া অাৰ্য্যজাতি কিরূপে জ্ঞানসভ্যতায় উন্নতিসাধন করিয়াছিল—বেদ তাহারই নিদর্শন। অতএব, আর্য্যধৰ্ম্ম সমূহের সহিত সংশ্লিষ্ট যে সব ক্রিয়াকৰ্ম্ম আছে, যে সব সাংকেতিক সামগ্ৰী আছে, যে সব মতবাদ আছে-সে সমস্তের মূল অনুসন্ধান করিতে হইলে, বেদের মধ্যেই অনুসন্ধান করিতে হইবে। প্রাচ্যদেশীয় ধৰ্ম্মমত ও" বিশ্বাসের সহিত তুলনা করিয়া দেখিলেই, আর্য্যবংশ পুরাণাদির ভিতরকার ভাব অনেকটা বুঝা যায়—তাহানের মূল মৰ্ম্ম অনেকটা পরিস্ফুট হইয়া উঠে। এবং একমাত্ৰ ! বেদই,—গ্রীক, ল্যাটিন, সু্যাভ, জৰ্ম্মান ও সেন্টঞ্জাতির পুরাণাদির প্রকৃত তত্ত্বের ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ। এখন দেখা যাক, ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম কিরূপে বেদ হইতে জন্মগ্রন্থ । I ৬ষ্ঠ সংখ্যা । ] করিল। অগ্রসর হইতে লাগিল, বিজিত দেশে আপনাদিগের প্রভূত্ব স্বপ্রতিষ্ঠিত করিতে লাগিল, এবং সেই সব স্থানে স্থায়ী ভাবে বসতি করিতে লাগিল,—সেই পরিমাণে তাহদের জীবন নিৰ্ব্বাহের প্রণালীও একটু একটু পরিবর্ধিত হইতে লাগিল। প্রথমে তাহার এক এক পরিবার পৃথকভাবে বাস

িকরিত, তাহার পর তাহদের এক একটা মণ্ডলী হইল।

প্রথমে পরিবারের অন্তর্গত পিতাই পুরোহিত ছিলেন, তিনিই আত্মীয় স্বজনের মধ্যে পৌরোহিত্য কাজ নিৰ্ব্বাহ করিতেন। ক্রমে পৌরোহিত্য কাৰ্য্য, কতকগুলি বিশেষ পরিবারের হস্তে গিয়া পড়িল । ফলতঃ, বৈদিকযুগের আরম্ভকালে, যে সকল ক্রিয়াকন্ধের জন্য একজন পুরোহিত আবশ্বক হইত, পরে তাহার জন্য সাত জন পুরোহিতের আবশ্বক হইল ; তা ছাড়া, দম্বাদের সহিত ক্রমাগত সংগ্রাম করিতে হইত বলিয়া, কতকগুলি রণদক্ষ নেতার প্রয়োজন হইল। এই দুই প্রয়োজন হইতেই, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি। আর্যাদিগের মনে কতকগুলি দার্শনিক সমস্ত উপস্থিত হওয়ায়,তাহারা ভাবিল,—ঐ সকল সমস্তা, যে সকল ব্যক্তির জীবনের বিশেষ আলোচ্য বিষয়, কেবল তাহারাই ঐ সকল সমস্তার মীমাংসা করিতে সমর্থ। তা ছাড়া আর্য্যেরা দেখিল, তাহারা স্বল্প লোক –পীত ও কৃষ্ণবর্ণের অসংখ্য লোকের মধ্যে বাস করিতেছে, যদি তাহারা ঐ সকল লোক হইতে পৃথক হইয়া না থাকে, তাছা হইলে তাহদের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলুপ্ত হইবে। এই জঙ্গ, বিজেতারা যাহাতে বিজিত জাতির মধ্যে একেবারে মিশিয়া না যায়, যাহাকে আর্য্যের সগৰ্ব্বে বলিত “অসুর-গর্ভজাত উৎকৃষ্ট জাতির নিৰ্ব্বাচিত বীজ”—সেই বীজের বিশুদ্ধত যাহাতে সংরক্ষিত গু=এই উদ্দেশ্যে তাহারা উদ্যমের সহিত ব্যবস্থা প্রণয়ন করিতে প্রবৃত্ত হইল। এই উপায়ে, কৃষ্ণ ও পীতবর্ণের অনাৰ্য্য জাতিদিগের সহিত আৰ্য্যজাতির বিবাহ নিবারিত হইল, আর্য্যের অনার্য্যদিগকে, আপনাদের ধৰ্ম্মমত হইতে ત્રિ রাখিল, তাহদের জন্য কেবল কতকগুলা নীচবিশ্বাস ও স্থল উপধৰ্ম্ম রাখিয়া দিল। ইহা হইতে ব্রাহ্মণিাক ভারতের বর্ণভেদ-প্রথার উৎপত্তি। সকলের শীর্ষস্থানে দেশজ করিতে করিতে, আর্ঘ্যের মে পরিমাণে ○〉Q দুই শ্রেষ্ঠবর্ণ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়—ইহারা বিশুদ্ধ আৰ্য্যবংশীয় ; তারপর বণিক ও কারিগরশ্রেণী—বৈশু ও শূদ্র,-ইহার বিজিত লোক লইয়া গঠিত। যে বর্ণভেদ-প্রথা পরে এত নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হইয়াছে তাহাই হিন্দুসভ্যতার শৈশব-দোলা বলিলেও হয় ; এই বর্ণভেদ-প্রথা না থাকিলে,-যাহা হইতে সমস্ত ধৰ্ম্মসিদ্ধান্ত, সমস্ত দার্শনিকসিদ্ধান্ত নিঃস্ত-সেই পরমাশ্চর্য্য ব্রাহ্মণ্যযুগের আবির্ভাবই হইত না ; যাহার অনুপম সৌন্দৰ্য্য, যাহার বিচিত্র আকার—সেই সংস্কৃত সাহিত্যের উদয়ই হইত না । এক কথায় এই বর্ণভেদ-প্রথা না থাকিলে আর্য্যজাতির অস্তিত্বই থাকিত না ; বহুকাল পরে, সমস্ত মানবব্যাপারে যাহা স্বভাবত ঘটিয়া থাকে—যখন প্রভৃত্বের অপব্যবহার হইতে নানাপ্রকার অন্যায় অত্যাচার উৎপন্ন হইল তখনই শাক্যমুনি বুদ্ধদেব অবিভূত হইলেন এবং তিনি সৰ্ব্বজীবে দয়া ও অহিংসার ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়া, শাস্তভাবে একটা সমাজবিপ্লব সংঘটিত করিলেন –অনাৰ্য্যজাতির কিয়দংশ লোককে; আৰ্য্যজাতির নৈতিক মৰ্য্যাদার পদবীতে উত্তোলন করিলেন। শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাপানের নারী-সমাজ । জাপান সম্বন্ধে বৈদেশিক নানা ভাষায় নানা গ্রন্থ রচিত হইয়া থাকিলেও একখানিতেও জাপ-রমণীর সামাজিক অবস্থার বিষয় এবং প্রাচীন জাপানে তাহদের কিরূপ প্রভূত্ব প্রতিপত্তি ছিল এবং তাহদের দ্বারা কি কি কাৰ্য্য অনুষ্ঠিত হইয়াছে তাহার বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায় না। জাপানের - সৰ্ব্বপ্রথম নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক জিনজে নরুসি (Ginzo Naruse) লিথিয়াছেন যে, পাশ্চাত্য সমালোচকগণ জাপান-রমণীকে কদাচিৎ বুঝিতে সক্ষম হইয়াছেন এবং তাহারা তাহাদিগকে চীন ও প্রকারিয়া দেশের রমণী-সমাজের দ্যায় এক অপ্রয়োজনীয় ও স্বতন্ত্রসত্তাহীন সামাজিক-জীব বলিয়া মনে করিয়া থাকেন। পুরাতন বিষয়ের জ্ঞান ব্যতীত জাপ-রমণীর বর্তমান অবস্থা দেখিয়া তাহাদের সম্বন্ধে কোনরূপ সিদ্ধান্ত করা সুসঙ্গত নহে।