পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)(b পরেশ বাবু কহিলেন, “আমি ললিতার কাছ থেকে সমস্ত সংবাদ শুনেছি। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে এখন আলোচনা করে কোনো ফল নেই।” হারানশাস্ত সংযত পরেশকে নিতান্ত দুৰ্ব্বলস্বভাব বলিয়৷ মনে করিতেন। তাই কিছু অবজ্ঞার ভাবে কহিলেন— “ঘটনা ত হয়ে চুকে যায় কিন্তু চরিত্র যে থাকে, সেই জন্তেই যা হয়ে যায় তারও আলোচনার প্রয়োজন আছে। ললিতা আজ যে কাজটি করেচে তা কখনই সম্ভব হত না যদি আপনার কাছে বরাবর প্রশ্রয় পেয়ে না আস্ত—আপনি ওর যে কতদূর অনিষ্ট করেচেন তা আজকের ব্যাপার সবটা শুনলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।” পরেশ বাবু পিছন দিকে তাহার চৌকির গাত্রে একটা ঈষৎ আন্দোলন অনুভব করিয়া তাড়াতাড়ি ললিতাকে তাহার পাশে টানিয়া আনিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিলেন, এবং একটু হাসিয়া হারানকে কহিলেন, “পায় বাবু, যখন সময় আসবে তখন আপনি জানতে পারবেন, সস্তানকে মানুষ করতে স্নেহেরও প্রয়োজন হয় ।” ললিত এক হাতে তাহার পিতার গলা বেড়িয়া ধরিয়া নত হইয়া তাহার কানের কাছে মুখ আনিয়া কহিল—“বাবা, তোমার জল ঠাণ্ড হয়ে যাচ্চে তুমি নাইতে যাও !”

  • পরেশ বাবু হারানের প্রতি লক্ষ্য করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন—“আরেকটু পরে যাবো–তেমন বেলা হয়নি।”

ললিতা স্নিগ্ধস্বরে কহিল, "না বাবা, তুমি স্নান করে এস —ততক্ষণ পামু বাবুর কাছে আমরা আছি।” পরেশ বাবু যখন ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন তখন ললিত একটা চৌকি অধিকার করিয়া দৃঢ় হইয়া বসিল এবং হারান বাবুর মুখের দিকে দৃষ্টি স্থির করিয়া কহিল— * "আপনি মনে করেন সকলকেই আপনার সব কথা বলার অধিকার আছে!” ললিতাকে সুচরিতা চিনিত। অন্যদিন হইলে ললিতার এরূপ মূৰ্ত্তি দেখিলে সে মনে মনে উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিত। আজ সে জানলার ধারের চৌকিতে বসিয়া একটা বই খুলিয়া চুপ করিয়া তাহার পাতার দিকে চাহিয়া রহিল। নিজেকে সম্বরণ করিয়া রাখাই স্বচরিতার চিরদিনের স্বভাব ও অভ্যাস। এই কয়দিন ধরিয়া নানাপ্রকার আঘাতের প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। SMMMMSMSMSMSAMMASAMAMS ৭ম সংখ্যা । ] বেদন তাঙ্গার মনে যতই বেশি করিয়া সঞ্চিত হইতেছিল | * ননে কিন্তু তিনি উঠিলেন না। মুখ অত্যন্ত ততই সে আরো বেশি করিয়া নীরব হইয়া উঠিতেছিল। আজ তাহার এই নীরবতার ভার দুৰ্ব্বিষহ হইয়াছে—এই জন্ত ললিতা যখন হারানের নিকট তাহার মন্তব্য প্রকাশ করিতে বসিল তথন সুচরিতার রুদ্ধ হৃদয়ের বেগ যেন মুক্তিলাভ করিবার অবসর পাইল । ললিতা কহিল—“আমাদের সম্বন্ধে বাবার কি কৰ্ত্তয়, আপনি মনে করেন, বাবার চেয়ে আপনি তা ভাল বোঝেন। সমস্ত ব্রাহ্মসমাজের আপনিই হচ্চেন হেডমাষ্টার ” ললিতার এই প্রকার ঔদ্ধত্য দেখিয়া হারান বাৰু প্রথমটা হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিলেন। এইবার তিনি তাহাকে খুব একটা কড়া জবাব দিতে যাইতেছিলেনললিতা তাহাতে বাধা দিয়া তাহাকে কহিল—“এতদিন আপনার শ্রেষ্ঠতা আমরা অনেক সহ করেছি কিন্তু আপনি যদি বাবার চেয়েও বড় হতে চান তা হলে এবাড়িতে আপনাকে কেউ সহ করতে পারবে না-আমাদের বেয়ারাটা পৰ্য্যস্ত না।” হারান বাবু বলিয়া উঠিলেন—“ললিতা তুমি”— ললিতা তাহাকে বাধা দিয়া তীব্রস্বরে কছিল-" করুন। আপনার কথা আমরা অনেক শুনেছি আজ আমার কথাটা শুনুন! যদি বিশ্বাস না করেন তবে মুচি দিৰে জিজ্ঞাসা করবেন—আপনি নিজেকে যত বড় বলে কল্পনা করেন আমার বাবা তার চেয়ে অনেক বেশি বড়। এইবার আপনার যা কিছু উপদেশ আমাকে দেবার আছে আপনি দিয়ে যান।” . হারান বাবুর মুখ কালো হইয়া উঠিল। তিনি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিলেন— স্নচরিতা !” স্বচরিতা বইয়ের পাতা হইতে মুখ তুলিল। হারান বাৰু কহিলেন—“তোমার সাম্নে ললিতা আমাকে অপমান করবে !” স্বচরিতা ধীরস্বরে কহিল, “আপনাকে অপমান করা ওর উদ্দেশু নয়—ললিতা বলতে চায় বাবাকে আপনি সন্মান করে চলবেন। কাউকেই জানিনে!” একবার মনে হইল হারান বাবু এখনি চৌকি ছাড়িা র্তার মত সম্মানের যোগ্য আমরান্ত । - গষ্ঠীর করিয়া বসিয়া রছিলেন। এ বাড়ীতে ক্রমে ক্রমে 3ाहान्न जप्नम नश्ले ठ्हेछाप्छ हेश्। डिनि गउहे अश्सद कब्रिट्ठছেন ততই তিনি, এখানে আপন আসন দখল করিয়া বসিবার জন্য আরো বেশি পরিমাণে সচেষ্ট হইয়া উঠিতেছেন। ভুলিতেছেন যে, যে আশ্রয় জীর্ণ তাহাকে যতই জোরের সঙ্গে অঁাকড়িয়া ধরা যায় তাহা ততই ভাঙিতে ৰাকে। হারান বাবু রুষ্ট গাম্ভীর্য্যের সহিত চুপ করিয়া রহিলেন দেখিয়া ললিত উঠিয়া গিয়া সুচরিতার পাশে বসিল এবং তাহার সঙ্গে মৃদুস্বরে এমন করিয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিল যেন বিশেষ কিছুই ঘটে নাই। ইতিমধ্যে সতীশ ঘরে ঢুকিয়া স্বচরিতার হাত ধরিয়া টানিয়া কহিল, “বড় দিদি এস!” মুচরিতা কহিল, “কোথায় যেতে হবে ?” সতীশ কহিল, “এস না, তোমাকে একটা জিনিষ দেখাব ! ললিত দিদি, তুমি বলে দাও নি?” ললিত কহিল, “না”। - তাহার মাসীর কথা ললিতা স্বচরিতার কাছে র্যাস করিয়া দিবে ন সতীশের সঙ্গে এইরূপ কথা ছিল ; ললিতা আপন প্রতিশ্রুতি পালন করিয়াছিল। অতিথিকে ছাড়িয়া সুচরিতা যাইতে পারিল না— কহিল, “বক্তিয়ার, আর একটু পরে যাচ্চি-বাবা আগে স্বান করে আমুন।” সতীশ ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিল। কোনোমতে হারান বাবুকে বিলুপ্ত করিতে পারিলে সে চেষ্টার ক্রটি করিত না। হারান বাবুকে সে অত্যন্ত ভয় করিত বলিয় তাহাকে কোনো কথা বলিতে পারিল না। হারান বাবু মাঝে মাঝে সতীশের স্বভাব সংশোধনের চেষ্টা করা ছাড়া তাহার সঙ্গে আর কোনো প্রকার সংশ্রব রাখেন নাই। পরেশ বাবু স্নান করিয়া আসিবামাত্র সতীশ তাহার দুই দিদিকে টানিয়া লইয়া গেল । হারান কহিলেন, “স্বচরিতা সম্বন্ধে সেই যে প্রস্তাবটা ছিল, আমি আর বিলম্ব করতে চাইনে। আমার ইচ্ছ, আস্চে রবিবারেই সে কাজটা হয়ে যায়।” গোরা।


SSASAS SSAS SSAS SSAS SSAS SSMSSSMSSSMSSSMSSS

Sgs পরেশ বাবু কহিলেন, “আমার তাতে ত কোনো আপত্তি নেই, সুচরিতার মত হলেই হল।” হারান। তার ত মত পূর্বেই নেওয়া হয়েচে । পরেশ বাৰু। আচ্ছ। তবে সেই কথাই রইল। ○&o সেদিন ললিতার নিকট হইতে আসিয়া বিনয়ের মনের মধ্যে র্কাটার মত একটা সংশয় কেবলি ফিরিয়া ফিরিয়া বিধিতে লাগিল। সে ভাবিতে লাগিল, “পরেশ বাবুর বাড়ীতে আমার যাওয়াটা কেহ ইচ্ছা করে বা না করে তাহা ঠিক না জানিয়া আমি গায়ে পড়িয়া সেখানে যাতায়াত করিতেছি। হয় ত সেটা উচিত নহে। হয় ত অনেকবার অসময়ে আমি ইহাদিগকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছি। ইহা- , দের সমাজের নিয়ম আমি জানি না ; এ বাড়ীতে আমার অধিকার যে কোন সীমা পর্যন্ত তাহা আমার কিছুই জানা নাই। আমি হয় ত মূঢ়ের মত এমন জায়গায় প্রবেশ করিতেছি যেখানে আত্মীয় ছাড়া কাছারো গতিবিধি নিষেধ !” এই কথা ভাবিতে ভূবিতে হঠাৎ তাহার মনে হইল ললিত হয় ত আজ তাহার মুখের ভাবে এমন একটা কিছু দেখিতে পাইয়াছে যাহাতে সে অপমান বোধ করিয়াছে। ললিতার প্রতি বিনয়ের মনের ভাব যে কি এতদিন তাহা বিনয়ের কাছে স্পষ্ট ছিল না, আজ আর তাহা গোপন নাই। হৃদয়ের ভিতরকার এই নুতন অভিব্যক্তি লইয়া যে কি করিতে হইবে তাছা সে কিছুই ভাবির পাইল না। বাহিরের সঙ্গে ইহার যোগ কি, সংসারের সঙ্গে ইহার সম্বন্ধ কি, ইহা কি ললিতার প্রতি অসন্মান, ইহা কি পরেশ বাবুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, তাহা লইয়া সে সহস্রবার করিয়া তোলাপাড়া করিতে লাগিল। ললিতার কাছে সে ধরা পড়িয়া গেছে এবং সেই জন্তই ললিতা তাহার প্রতি রাগ করিয়াছে এই কথা কল্পনা করিয়া সে যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়া যাইতে লাগিল। পরেশ বাবুর বাড়ী যাওয়া বিনয়ের পক্ষে অসম্ভব হইল এবং নিজের বাসার শূন্ততাও যেন একটা ভারের মত হইয়া তাছাকে চাপিতে লাগিল। পরদিন ভোরের বেলাই সে আনন্দময়ীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল। কহিল, - “মা, কিছুদিন আমি তোমার এখানে থাকব।” -