পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ অধিকাংশ দেশভ্রমণে অতিবাহিত হয়। ৯৫৬ খৃষ্টাব্দ তাহার মৃত্যুকাল। অলইস্তখরি, ইনি সুপ্রসিদ্ধ ইস্তধরে জন্মপরিগ্রহ করেন বলিয়া অলইস্তথরি নামে খ্যাত হইয়াছিলেন, প্রকৃত নাম সেখ আবু ইসাক । আবু ইসাক একজন প্রসিদ্ধ দেশপর্য্যটক ছিলেন। মুসলমান অধুসিত সমস্ত দেশে পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন। দশম শতাব্দীর মধ্যভাগে তাহার ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয় । ইবন হৌকন,—ইবন হৌকন বোগদাদের অধিবাসী ছিলেন, ইহার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ আবুল কাসিম । আবুল কাসিমের বাল্যকালে তুর্কীগণ বোগদাদ আক্রমণ করিয়াছিল। তাহাদের নিৰ্ম্মম আক্রমণে তিনি সৰ্ব্বস্বাস্ত হন; এ কারণ বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া বিদেশে বাণিজ্য করিয়া অর্থোপার্জন করিতে সংকল্প করেন। আবুল কাসিম ৯৪৩ খৃষ্টাব্দে বোগদাদ পরিত্যাগ করেন এবং বহুদেশে পর্য্যটন করিয়া ৯৬৮ খৃষ্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাগত হন। অল ইদ্রিসি। ইনি মরোক্কোর অধিবাসী ছিলেন ; নানা ঘটনাচক্রে পতিত হইয়া সিসিলিতে স্থায়ী বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করেন। সিসিলির অধিপতির আদেশে তিনি আপন ভ্রমণবৃত্তান্ত গ্রন্থাকারে রচনা করেন। আমাদের অবলম্বনস্বরূপ ছয়জন লেখকই দেশ পর্য্যটন বা বাণিজ্য উপলক্ষে ভারতবর্ষে আগমন করিয়াছিলেন, ইহারা সকলেই আরব্যকুল-সস্তৃত ছিলেন। এই সকল আরব্য লেখক ভারতবর্ষের যে বিবরণ রাখিয়া গিয়াছেন, তাহা তৎসাময়িক সুন্দর চিত্র। অলমস্থদি স্বীয় গ্রন্থের একস্থানে লিখিয়াছেন, ভারতবর্ষ অতি বৃহৎ দেশ, সমুদ্র ভূমি ও পৰ্ব্বতে বিস্তৃত ; যবদ্বীপ পৰ্য্যস্ত ভারতের সীমা বিস্তৃত, অন্য দিকে সিন্ধু ও খোরসান পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত; ভারতবর্ষের অন্ত পাশ্বে তিব্বত অবস্থিত। এই দেশে ধৰ্ম্ম ও ভাষা সম্বন্ধে যথেষ্ট ভেদ বিদ্যমান রহিয়াছে ; ভারতবাসীরা অনেক সময় পরপর যুদ্ধ করে। অধিকাংশ ভারতবাসীই পরকাল ও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। বিষ্ঠা বুদ্ধি, শাসনপ্রণালী, দর্শনশাস্ত্র, শারীরিক বল ও বর্ণের বিশুদ্ধতা সম্বন্ধে হিন্দুগণ অন্যান্য কৃষ্ণকায় জাতি হইতে বিভিন্ন। প্রবাসী । এই নানা ভাষা ও নানা ধৰ্ম্ম সংবলিত অনন্যসাধার। সুবিস্তৃত দেশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মণ্ডলে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক মণ্ডলে স্বতন্ত্র রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। আরব্য পর্য্যটকগণ বহুসংখ্যক রাজবংশের উল্লেখ করিয়া, ছেন। ইহাদের ভ্রমণবৃত্তান্ত হইতে আমরা কতিপয় রাজ্যের বিবরণ অবগত হইয়া থাকি। আমরা এখানে সেই সকল রাজ্যের নাম উল্লেখ করিতেছি। বল্লা, জুরজ, তাফন, রুমি, কাসবিন, ঘান, কামরুন, সর, কুমার । বল্লার, আরব্য ভ্রমণকারিগণের হস্তে পতিত হই। বল্লভপুর বল্লার নামে পরিচিত হইয়াছে। এই বল্লভপুরের রাজস্যগণ বল্লভি নামে এক অব্দের প্রচলন করিয়াছিলেন। টড সাহেব লিথিয়াছেন যে, বল্লভিপুর রাজ্য মালব দেশে অবস্থিত ছিল । ফরাসী পণ্ডিত রেইনাড সাহেবও এই মতাবলম্বী। দক্ষিণে তাপ্তী নদী এবং উত্তরে আরাবলী পৰ্ব্বত পর্য্যন্ত বল্লভিপুর রাজ্যের সীমা প্রসারিত ছিল। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে প্রসিদ্ধ চৈনিক পরিব্রাজক হায়েন সাঙ বল্লভিপুর রাজ্যে উপনীত হইয়াছিলেন। টমাস সাহেবের মতে ৭৪৫ খৃষ্টাব্দে বল্লভি বংশের বিলোপ সাধিত হইয়াছিল। টমাস সাহেবের নিরূপণ সঙ্গত নহে। কারণ আরব্য লেখকগণের সময়েও বল্লভপুর রাজ্যের প্রতাপ অক্ষুণ্ণ ছিল ; আরব্য লেখকগণের ভারত আগমনের কাল ৮৫১ খৃঃ—৯৬৮ খৃঃ। যাহা হউক, বল্লভিবংশের রাজধানীর গ্নাবশেষ এখনও ভবনগরের ২০ মাইল দূরে দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে । ৭ জুরজ, আরব্য লেখকগণ গুর্জর বা গুজরাট নাম বিকৃন্ত করিয়া জুরঞ্জ করিয়াছেন। গুজরাট রাজ্য বল্লভিপুরে উত্তরে অবস্থিত ছিল । হায়েন সাঙ বল্লভিপুর রাজা অতিক্রম করিয়া সুরাট ও গুজরাটে উপনীত হইয়াছিলেন। তাফন—সোলেমান লিখিয়াছেন, “তাফক ;” ইবন খুরদতব এবং মহুদির মতে “তাফন”। আরব্য লেখকগণ তাফক বা তাফনবাসিনী রমণীগণের শারীরিক সৌন্দর্যোর বর্ণনা আপনাদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। ফরাসী পণ্ডিত রেইনাড সাহেব এই বর্ণনার সঙ্গে মহারাণী রমণীর সাদৃশু দেখিয় তাফক বা তাফন আরঙ্গাবাৰে ৷ to... ৭ম সংখ্যা । ] SMASAMMSMSAASAASAAAS নিকট কোন স্থানে অবস্থিত ছিল বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। রেইনাড সাহেবের নির্দেশ ভ্ৰমাত্মক বলিয়া বোধ র। সোলেমান লিখিয়াছেন, তাফক গুর্জরের পার্শ্বে অবস্থিত ছিল। মসুদি লিথিয়াছেন, তাফন পাৰ্ব্বত্য রাজ্য। రి খৃষ্টাব্দে মুলতান মাহমুদ তৈফন্দ নামক দুর্গ অধিকার করিয়াছিলেন বলিয়া আসার ল-বিলদ নামক গ্রন্থে উল্লিখিত রছিয়াছে। “তৈফন্দ” “তাফন” হইতে অভিন্ন, এরূপ "নির্দেশ করা যাইতে পারে। আসর ল-বিলাদে তৈফন্দ রাজ্যের যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে, তাহ পাঠ করিলে গষ্ট উপলব্ধি জন্মায়, তাফন রাজ্য ঝিলাম ও সিন্ধুনদের মধ্যস্থিত পৰ্ব্বত মালায় অবস্থিত ছিল। রুমি,—প্রাগুক্ত রেইনাড সাহেব লিথিয়াছেন, রুমি ৰাজ্য প্রাচীন বিশাপুর রাজ্যের সহিত অভিন্ন। কিন্তু এই বিশাপুর রাজ্যের অবস্থানও অন্ত পৰ্য্যন্ত নির্দিষ্ট হইতে পারে নাই। মহুদি লিথিয়াছেন, রুমিরাজ্যের পাশ্বে কামন নামক এক দেশ অবস্থিত ছিল ; ইবন খুরদতবা লিথিয়াছেন, কামরুন রাজ্য রুমির সহিত সংযুক্ত এবং কামরুন রাজ্যের পার্থেই চীন রাজ্যের সীমা ছিল। আমাদের বোধ হয় যে, কামরূপই আরব লেখকগণের হস্তে পতিত হইয়া “কামন” বা "কামরুনে” দাড়াইয়াছে। যদি আমাদের এই অবধারণ ধার্থ হয়, তবে রুমি রাজ্য পূৰ্ব্ববঙ্গে অবস্থিত ছিল বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। কসবিন,–টড লিখিয়াছেন, কাসবিন রাজ্য প্রাচীন কচ্ছ ভোজ রাজ্যের নামান্তর মাত্র। কিন্তু রেইনাড সাহেবের মতে কাসবিনের আধুনিক নাম মহীশূর। ঐতিহাসিক ডোসন সাহেব লিথিয়াছেন, কাসবিন রাজ্যের বর্তমান নাম নিভু লক্কপে ঠিক করবার কোন উপায় নাই। - ঘান,–ঘানরাজ্য কোন স্থানে অবস্থিত ছিল, তাহা স্বস্থাপি নিৰ্দ্ধারিত হয় নাই। কামরুন,—কামরূপ বিকৃতি প্রাপ্ত হইয়া কামরুন ইয়াছে। যাব,--যাবরাজ্য কোন স্থানে ছিল তাহা অস্থাপি নিৰ্দ্ধারিত হয় নাই। কুমার,–কুমারিক অন্তরীপ এবং ত্রিবাঙ্কুরের পাশ্ববর্তী ভারতীয় ইতিহাস প্রসঙ্গ। ○○○ স্থানে কুমাররাজ্য বিস্তৃত ছিল। ইবন ফকিয় নামক একজন আরব্য ভ্রমণকারী লিথিয়াছেন, মদ্যপারাদিগকে শাস্তি দিবার জন্য উত্তপ্ত লৌহশলাকা তাহাদের শরীরে স্থাপন করিয়া উহা শীতল না হওয়া পৰ্য্যন্ত তদবস্থাতেই রাখা হইত ; ইহাতে অনেক ব্যক্তির জীবন নাশ পর্য্যস্ত ঘটিত। আরব্য লেখকগণের মতে ভারতীয় রাজ্য সমূহে বল্লারের নরপতি প্রতাপে, ক্ষমতায়, সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। আমরা অলমসুদির গ্রন্থ হইতে কিয়দংশ উদ্ধত করিতেছি। “বর্তমান সময়ে মানকির সম্রাট ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি। ভারতবর্যের অনেক অধিপতি মানকির রাজদূতের তোষামোদ করিয়া থাকেন। বল্লারের চারিদিকে অনেক ক্ষুদ্র রাজ্য বিদ্যমান। বল্লারের সৈন্ত ও হস্তীর সংখ্যা অপরিমিত। রাজধানী মানকির পর্বতে অবস্থিত, এ কারণ অধিকাংশ সৈন্যই পদাতিক।” বল্লারের নরপতির সমকক্ষ না হইলেও তৎকালে গুজরাটাধিপতিও সাতিশয় প্রতাপশালী ছিলেন। বণিক সোলেমান লিথিয়াছেন, গুজরাটের সৈন্ত সংখ্যা অগণ্য। ভারতবর্ষের রাজন্তগণের তাদৃশ উৎকৃষ্ট অশ্বারোহী সৈন্ত নাই। ভারতীয় রাজন্তবৃন্দ মধ্যে গুজরাটাধিপতিই ইসলাম ধৰ্ম্মের প্রবলতম শত্র । গুজরাটাধিপতি সাতিশয় সম্পদশালী, তাহার উঃ ও অশ্বের সংখ্যা অপরিমিত। গুজরাটে বিনিময়ের জন্য স্বর্ণরৌপ্যের কণিকা সকল ব্যবহৃত হয় ; এই দেশে স্বর্ণ রৌপ্যের খনি আছে বলিয়া লোকশ্রুতি বিদ্যমান রহিয়াছে। আরব্য লেখকগণ ভারতীয় রাজবংশের পরিচয় প্রদান করিয়াই আপনাদের গ্রন্থ সমাপ্ত করেন নাই, রাজনীতি সম্বন্ধেও আলোচনা করিয়াছেন। আমরা পাঠকগণের কৌতুহল নিবারণ জন্ত ঐ আলোচনার কিয়দংশ উদ্ভূত করিয়া দিতেছি। মহুদি লিখিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, “ভারতীয় রাজকুমারগণ চল্লিশ বৎসরের পূৰ্ব্বে রাজপদ গ্রহণ করিতে সমর্থ নহেন। রাজন্তবৃন্দ কদাচিৎ প্রকৃতিপুঞ্জের সম্মুখীন হয়েন ; রাজকাৰ্য্য সম্পাদনের সময় ব্যতীত অন্ত কোন উপলক্ষে প্রকৃতিপুঞ্জের পক্ষে রাজদর্শন করিবার উপায় নাই। হিন্দুজাতির, মতে নরপতি সৰ্ব্বদ প্রকৃতিপুঞ্জের সন্মুখীন হইলে তাহার মর্য্যাদার লাঘব এবং