পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SNo8 বিধিদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। ভারতবর্ষে শাসন কাৰ্য্য প্রকৃতিপুঞ্জের সদ্ভাব এবং রাজপুরুষগণের প্রভাব প্রতিপত্তি দ্বারা পরিচালিত হইয়া থাকে। রাজপদ বংশামুক্রমিক। রাজমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি প্রভূতি বিশিষ্ট রাজপুরুষগণও পুরুষানুক্রমে নিযুক্ত হইয়া থাকেন। হিন্দুঞ্জাতি স্বরাপানে বিরত রহিয়াছেন ; যাহারা স্বরাপান করিয়া আপনাদের চরিত্র কলুষিত করে, তাহারা হিন্দু সমাজে সাতিশয় তিরস্কৃত হয়। স্বরাপান কেবল শাস্ত্রবিরুদ্ধ বলিয়াই যে, হিন্দুজাতি উহার ব্যবহারে বিরত রহিয়াছেন, তাহা নহে ; স্বরা বুদ্ধির ভ্রংশ এবং শক্তির বিলোপ সাধন করে, এজন্তও তাহারা মুরাপানে বিরত রহিয়াছেন। যদি এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোন নরপতি সুরাপানে অভ্যস্ত হইয়াছেন, তবে তিনি রাজ্য শাসনের অযোগ্য বলিয় রাজ্যচ্যুত হন।” সোলেমানের গ্রন্থেও ভারতীয় রাজনীতি সম্বন্ধে আলোচনা দেখিতে পাওয়া যায়। আমরা তাহার মতামতও এখানে উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি। ভারতবর্ষের রাজ্য সমূহে অভিজাত সম্প্রদায় এক বংশ হইতে উদ্ভূত বলিয়। বিবেচিত হইয়া থাকেন। সৰ্ব্বপ্রকার ক্ষমতা কেবল এই অভিজাতগণের হস্তগত রহিয়াছে। নরপতিগণ আপনাদের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। হিন্দুজাতি বিলাসব্যসনের বিরোধী। তাহারা স্বরাপান করেন না ; স্বরা র্তাহাদের নিকট ঘৃণ্য। তাহাদের মতে সুরাপায়ী নরপতি , রাজা নামের যোগ্য নহেন। ভারতবর্যের রাজষ্টগণ শত্র পরিবেষ্টিত হইয়া বাস করেন, এই কারণ তাহাদিগকে সৰ্ব্বদা সন্ধি বিগ্রহে লিপ্ত হইতে হয়। প্রকৃতিপুঞ্জ বলিয়া থাকে, যদি রাজা স্বরাপানে মত্ত হন, তবে কি প্রকারে তিনি রাজ্যের গুরুভার বহন করিবেন ? ভারতীয় নরপতি কখন কথন দিগ্বিজয়ে বহির্গত হয়েন। যদি পাশ্ববর্তী কোন রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে পরাভূত হন, তবে বিজয়ী রাজা পরাজিত বংশের কোন রাজকুমারকেই সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন, এই নবাভিষিক্ত রাজা বিজেতার অধীন হইয় রাজকাৰ্য্য নিৰ্ব্বাহ করিতে প্রবৃত্ত হন। ঈদৃশ ব্যবস্থার প্রবর্তন ব্যতীত বিজিত দেশের প্রজাবৰ্গকে শান্ত ও বশীভূত করিবার অন্ত উপায় নাই। প্রবাসী। ভারতীয় রাজস্যবৃন্দের অসংখ্য সৈন্ত দেখিতে পাওঁ। যায়। কিন্তু এই সকল সৈন্তকে বেতন দিবার প্রথা নাই। ( ১ ) কোন ধৰ্ম্মযুদ্ধ উপস্থিত হইলে এই সকল গৈল্প সমবেত হইয়া যুদ্ধ করে। তারপর যুদ্ধ শেষ হইলে তাহার কপর্দক মাত্রও গ্রহণ না করিয়া স্ব স্ব আবাসে প্রত্যাবৃত্ত श्ग्र । ভারতবর্ষের কোন কোন দেশের রাজার মৃত্যু হইলে এক অদ্ভূত প্রথার অনুষ্ঠান হইত বলিয়া সোলেমান উল্লেখ করিয়াছেন। আমরা এখানে ঐ প্রথার বর্ণনা করিতেছি। রাজ-শব শ্মশানে বহন করিয়া লইবার সময় একজন স্ত্রীলোক আগ্রে অগ্রে সম্মার্জনী হস্তে গমন করিত এবং চীৎকাৰ করিয়া বলিত, “নগরবাসিগণ, তোমরা দেখ, এই ব্যক্তি গত কল্য তোমাদের অধিপতি ছিলেন, তোমাদিগকে শাসন محمن بينهم ين، [ ৮ম ভাগ। | করিতেন, তাহার সমস্ত আদেশ জনসাধারণ কর্তৃক প্রতি । পালিত হইত ; দেখ আজ তাহার কি দশা হইয়াছে। তিনি পৃথিবী হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন, যমদূত বা বিষ্ণুদূত্র তাহার আত্মা লইয়া গিয়াছেন। অতএব জীবনের মুখে উদ্ভান্ত হইয়া বিপথগামী হইও না।” এই বর্ণনার পর ভারতবর্ষের রাজবংশে যে সতীদাহের প্রথা বিদ্যমান ছিল, তাহার উল্লেখ করা হইয়াছে। রাজশব দাহন করিবার সময় রাজমহিষীগণ চিতায় প্রবেশ করিয়া জীবন বিসর্জন করিতেন। কিন্তু তাহারা অগ্নিতে দগ্ধ হইয়া জীবন নাশ, কি জীবিত থাকিয় বৈধব্য অবলম্বন করিবেন, তৎসম্বন্ধী । নিৰ্দ্ধারণ র্তাহাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করিত। সোলেমানের, ভ্রমণবৃত্তান্ত হইতে ভারতবর্ষের রাজান্ত পুরিকাগণের অবরোধ প্রথা সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বিবরণ অবগত হইতে পারি। সোলেমান লিথিয়াছেন যে, অধিকাংশ নরপতিই পুরাঙ্গনাদিগকে রাজসভায় আনয়ন করিতেন। তাহারা বিনা অবগুণ্ঠনে সৰ্ব্বজন সমক্ষে উপস্থিত থাকিতেন। জাতিভেদ ভারতবর্ষের বিশেষত্ব। এই বর্ণবৈষম্য বিদেশী মাত্রেরই চোখে পড়ে। আমাদের আরব্য পৰ্যটক গণের ভ্রমণবৃত্তান্তেও ভারতবর্ষের বর্ণবৈষম্য সম্বন্ধে নানা ( ১ ) কোন কোন স্থলে এই প্রথার ব্যতিক্রম হইল। বল্লারের নরপতি অর্থ দ্বারা সৈন্য পরিপোষণ করিতেন, আরব্য ভ্রমণকারিগণের লেখা হইতেই এই প্রকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সংক্ষেপে আলোচনা করিতেছি। ইবন খুর দ্বতবা লিথিয়াছেন, হিন্দু জাতি সাত ভাগে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর নাম সার কুফ্রিয়। অল ইদ্রিসি লিখিয়াছেন, কফ্রিয়া। এই শ্রেণীর দ্বারা কোন বংশ উদ্দিষ্ট হইয়াছে, তাহ আমরা নির্দেশ করিতে অক্ষম। ইবন খুর তব এবং অল ইদ্রিসি উভয়েই লিথিয়াছেন, ঐ শ্রেণী অতিশয় সম্ভান্ত ; রাজগণ এই শ্রেণী হইতে গৃহীত হইয়া থাকেন। ভারতবর্ষের আপামর সাধারণ সকলেই এই শ্রেণীভুক্ত লোকদিগকে সম্মান প্রদর্শন করে ; কিন্তু ইহার কাহারও নিকট মস্তক অবনত করেন না। দ্বিতীয় শ্রেণীর নাম ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণগণ কখনও সুরা ম্পর্শ করেন না। শাস্ত্র চর্চায় ইহাদের জীবন অতিবাহিত হয়। ব্রাহ্মণগণ ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্ম বা অন্ত কোন পশুচৰ্ম্ম পরিধান কলিজানিবারণ করেন। কখন কখন ব্রাহ্মণগণ দওধারণ করিয়া চতুঃপাশ্বে সমাগত জনমণ্ডলীকে ধৰ্ম্মোপদেশ প্রদান পূৰ্ব্বক পরমেশ্বরের শক্তি ও মহিমা ঘোষণা করেন। ইহারা দেবোপাসক ; ইহাদের বিশ্বাস যে, দেবতাগণ সস্তুষ্ট হইলে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ পরমেশ্বরের করুণা লাভ করা যায়। জ্যোতিৰ্ব্বিদ, দার্শনিক, কবি এবং গণক প্রভৃতি নানা শ্রেণীর বিদ্বজ্জন মাত্রেই ব্রাহ্মণবংশজাত বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। রাজন্তগণ তাদৃশ বিদ্বজ্জনের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন। ইহারা পুরুষানুক্রমে এই সকল শাস্ত্রের আলোচনা করিয়া আসিতেছেন। অধ্যয়ন অধ্যাপনায় কেবল ব্রাহ্মণের অধিকার আছে। - তৃতীয় শ্রেণীর নাম ক্ষত্ৰিয় । ক্ষত্রিয়ের পক্ষে তিন পাত্রের অধিক স্বরাপান নিষিদ্ধ। ইবন খুর দতবা লিখিয়াছেন, ব্রাহ্মণগণ ক্ষত্রিয়কস্ত বিবাহ করেন, কিন্তু ক্ষত্ৰিয়গণ ব্রাহ্মণকন্ত বিবাহ করিতে অসমর্থ। কিন্তু অল ইদ্রি সি অন্তরূপ নির্দেশ করিয়াছেন, ক্ষত্রিয়গণ ব্রাহ্মণকন্যার পাণি পীড়ন করেন; ব্রাহ্মণগণ ক্ষত্রিয় কন্যার পাণিপীড়ন করিতে সমর্থ। চতুর্থ শ্রেণীর নাম শূদ্র। শূদ্রগণ কৃষি ও শ্রমজীবী। পঞ্চম শ্রেণীর নাম বৈশ্য। বৈশুগণ শিল্প-ব্যবসায়ী। ষষ্ঠ শ্রেণীর নাম চণ্ডাল। চওtলগণ সৰ্ব্বপ্রকার নিকৃষ্ট ৭ম সংখ্যা । ] ভারতীয় ইতিহাস প্রসঙ্গ। ৩৬৫ ്ഷWikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)്WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)ഷൂ منتجيبجي تيمية مجتخييم مما تتميخ তথ্য লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। আমরা এখানে তৎসম্বন্ধে কাজ করে। চণ্ডালগণ গান বাস্ত পটু, তাহদের রমণীর সুন্দরী। সপ্তম শ্রেণীর নাম বাজিকর ইত্যাদি। আরব্য লেখকগণের মতে হিন্দুগণ ৪২টি ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। অধিকাংশ ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ই ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করিতেন। ইহাদের কোন কোন সম্প্রদায় অবতারবাদী ছিলেন। তৎকালে নিরীশ্বর ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ও পরিদৃষ্ট হইত। অনেকে শালগ্রাম বা লিঙ্গ উপাসক ছিলেন। এই সকল শিলার মস্তকে স্কৃত ও তৈল মৰ্দ্দিত হইত। কোন কোন সম্প্রদায় স্বর্য্যের উপাসনা করিতেন ; তাহাম্বের বিশ্বাস ছিল যে, স্বৰ্য্যই স্মৃষ্টিস্থিতিপালনকর্তা। কোন কোন সম্প্রদায় মধ্যে হোমের অনুষ্ঠান দেখা যাইত। কোন কোন সম্প্রদায় মধ্যে বৃক্ষ বা সৰ্পেৰ পূজা প্রচলিত ছিল। দুই একটি ধৰ্ম্মসম্প্রদায় সৰ্ব্ব প্রকার ধৰ্ম্মচর্চা হইতে বিরত হইয়া সমস্ত মত অস্বীকার করিতেন। আমরা আরব্য পর্য্যটকগণের গ্রন্থ অবলম্বন করিয়া যে বিবরণ সঙ্কলন করিলাম, তাহ হইতে দুইটি বিষয় স্পষ্ট উপলব্ধি হয়। প্রথম হিন্দু জাতির বিলাসবিমুখতা, দ্বিতীয়, কষ্টসহিষ্ণুতা। হিন্দু জাতির সাধু সন্ন্যাসীর জীবনে বিলাসবিমুখতা ও কষ্টসহিষ্ণুতার চরম দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওর যাইত। এতৎসম্বন্ধে বণিক সোলেমান যাহা লিথিয়াছেন, এখানে আমরা তাহা উদ্ধৃত করিয়া এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধের উপসংহার করিতেছি। “ভারতবর্ষে এক শ্রেণীর লোক পৰ্ব্বতে ও বনে বাস করেন। তাহারা কদাচিৎ লোকালয়ে উপস্থিত হন। অনেক সময় তাহারা কেবল স্বচ্ছন্দবনজাত ফল বা শাক শবজি আহার করিয়া ক্ষুন্নিবৃত্তি করেন। তাহাদের অনেকে উলঙ্গ অবস্থায় অবস্থিতি করেন। অনেকে স্বৰ্য্যাভিমুখ হইয়া দণ্ডায়মান থাকেন। আমি একজন সাধুকে এইভাবে দণ্ডায়মান দেখি ; তারপর ষোল বৎসর পরে পুনৰ্ব্বার ঐ স্থানে আগমন করিয়া তাহাকে তম্বৰস্থাতেই দেখিতে পাইয়াছিলাম। বিস্ময়ের বিষয় এই যে, রৌদ্রতাপে সাধু দ্রবীভূত হয়েন নাই।” - ক্রীরামপ্রাণ গুপ্ত।