পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o ο ১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)...১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)WikitanvirBot (আলাপ)... ঘাটে জল খায়, তখন এ পৃথিবীতে তোমরা ধৰ্ম্মের নামে দলাদলি বাধাইয়া মামুষে মানুষেও এক নদীতে জল থাইতে দিতে চাও না কেন ? ধৰ্ম্মের মূল যে নরপ্রীতি, তাহা উড়িয় গিয়া কেবল কিচিরমিচির দেখিয়া, কবি উদার প্রাণে সকলকে কোলাকুলি করিতে আহবান করিলেন। কবি বলিতেছেন :– কদিন সমাজ একঘরের ভয়ে টিকে থাকে ? বিশ্বাস, প্রেম, মনুষ্যত্বই সমাজকে রথে । খাওয়া শোয় পর নিয়ে কেন ঘুরে ঘুমি ? সেটা কর বাড়ী গিয়ে যার যেমন খুী । জাতি রাখতে চাও--থাকে। এই সত্য ধরি, ভুলে নাক মনুষ্যত্ব সমাজ ও হরি । (২) তেজস্বিতা, সরলতা এবং উদারত যাহার হাসির মূলে, তাহার হাসির কবিতা এবং হাসির গানে দেশের লোক মুগ্ধ হইবেই হইবে । সরল ভাবে সত্য কথা বলিলে এবং সত্য কথা বলিয়া হাসিলে, হাসির উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রাণে একটু ব্যথা লাগিতে পারে। কিন্তু কবির হাসি টুকুর প্রতি ভাল করিয়া লক্ষ্য করিলেই বেদনা ভুলিতে পারা যায়। কবির ব্যঙ্গ যে লোক বিশেষের প্রতি প্রযুক্ত নহে । কিম্বা কুৎসা রটনার স্থণা কার্যে উন্মুখ নহে, সে কথা পরে বলিতেছি । - স্বীকার করি, যে এদেশের (একালের ) পণ্ডিত সমাজের প্রতি কবির দু চারিটি ব্যঙ্গশর নিক্ষিপ্ত হইয়াছে। তাহাতে যে বিদ্বেষ ভাব নাই তাহ দেখাইবার প্রয়োজন আছে। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে একালের টোলে বিষ্ঠার প্রগাঢ়তা তেমন নাই। স্পষ্টবাদী কবির সমালোচনায় সে কথাটাও স্পষ্ট করিয়া বলাই ভাল। একালের পণ্ডিতেরা ব্যাকরণে কিম্বা ছায়শাস্ত্রের অংশ বিশেষে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন বটে, কিন্তু বিদ্যালাভে বড় প্রয়াসী নহেন। বাঙ্গালাদেশের নূতনত্বের মহিমার কথা বলিয়াছি, দোষের কথাও একটা বলিব। বহুকাল হইতে এদেশে নব্য স্থায়, নব্য স্মৃতি প্রভৃতির আলোচনা হইয়া আসিতেছিল বটে, কিন্তু প্রাচীন স্তায় স্মৃতির আলোচনা আদেী ছিল না। সংস্কৃত বিদ্যা অতি সঙ্কীর্ণ ভাবেই ছিল। সোসাইটি হইতে যখন প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্ৰহ আরম্ভ হয়, তখন বেদগ্রন্থের ত কথাই নাই, প্রাচীনকালের বিখ্যাত স্মৃতির গ্রন্থও বঙ্গদেশে পাওয়া যায় নাই। বেদ যে কি জিনিস, বাঙ্গালার পণ্ডিত তাহা কদাপি জানিতেন না; কিন্তু মুখে বেদের দোহাই দিয়া যে কোন প্রবাসী। SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS সংস্কৃত মোক আওড়াইতেন। কবি নির্ভীকতার সন্ত বলিয়াছেন, যে কন্ধী অবতারের দরবারে তর্কালঙ্কারের দল, খনার বচন আবৃত্তি করিয়া বৈদিক বিদ্যা জাহির করিা: ছিলেন। যাহারা সংস্কৃত ভিন্ন অন্ত কোন সাহিত্য পড়েন না, আশ্চর্য্যের কথা এই যে র্তাহারা কোন একথান কাব্য গ্রন্থও আগাগোড়া ভাল করিয়া পড়েন না। করিলেই বলেন, যে আমরা অনায়াসে পাঠ লাগাইতে পারি এবং ব্যাখ্যা করিয়া দিতে পারি। ব্যাকরণের জোরে অপঠিত গ্রন্থ বুঝিবার ক্ষমতা আছে, তাহা না হয় স্বীকার করিলাম ; কিন্তু বিদ্যার অর্থ কি কেবল তাই ? পণ্ডিতবর্গের মধ্যে যাহার একালের ভাবের সংস্পর্শে আসেন নাই, তাহাদের অনেকেই আমূল মহাভারতখানা যত্ন করিয়া পড়েন নাই ; ক্ষুদ্রতর রামায়ণ খানিও নহে। বিদ্ধপের ফলে যদি পণ্ডিতেরা আত্মসন্মান রক্ষার জন্ম প্রাচীন শাস্ত্রাদি পাঠে মনোযোগী হয়েন, তবে হয় ভাগ। তাহা না করিয়া যদি কেবল বলেন, যে “কলিকালের মহাঘোরে এবার আমরা গেলাম,” তাহ হইলে ফল কেবল “ক্রন্দন করিতে করিতে নিস্ত্রশস্ত হওয়া ।” (৩) ধৰ্ম্মভওদিগের বিদ্রুপের দৃষ্টাস্তে কবির হাসির গানের মূলে যে সকল বিদ্বেষ-বিহীন উচ্চ ভাব আছে সাধারণতঃ তাহাই বলিয়াছি। এখন কবির হাসির গানের ও হাস্যরসের প্রকৃতি এবং বিচিত্ৰতা আলোচনা করিব। হাসি, আনন্দের হউক, ঘৃণার হউক, বিদ্রুপের হউক, উহার ইইট সাধারণ বিভাগ আছে ; যথা, নৃশংস হাসি এবং স্কন্তু হাসি। আমাদের দুর্ভাগ্য এই, যে একালের বঙ্গসাহিত্যে নৃশংস হাসির অভাব নাই। নৃশংস নিৰ্ম্মম নীচ প্রকৃতির লেখকেরা পরীকাতরতায় যদি কেবল উচ্চপদকে অপদস্থ হইতে দেখিয়া একটু হাসিয়া মনের জালা জুড়াইয়া লইস্ত ক্ষতি ছিল না ; কিন্তু ভগবান বুদ্ধদেব যাহাকে মহাপাপ বলিয়াছেন, এবং পরবর্তী স্মৃতি গ্রন্থেও যাহা পাতক বলি৷ উক্ত, নরাধমের সে পাপ কাৰ্য্য করিতে কুষ্ঠিত নহে। কুলকামিনীর কলঙ্ক রটনা করিয়া, অথবা কলঙ্কের একটা মিথ্যা কথা পেচালো ভাষায় ধ্বনিত করিয়া, যাহারা রসিকতা জিজ্ঞাসা : কবি ! [ ৮ম ভাগ । | - l করিবার প্রয়াস করে, সেরূপ মহাপাপিষ্ঠেরাও বঙ্গসাহিত্যে -1, মুরসিক লেখক বলিয়া থ্যাতিলাভ করিতেছে । ঐ পিশাচ ৭ম সংখ্যা । ] গুলির উপদ্রবে এক সময়ে ভারতী পত্রিকায় হেঁয়ালি-নাট্য প্রকাশ বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল গেটের মত উহাদিগকে দেখাইয়া দিয়াছেন :–“How Devil jests" কাজেই পিশাচগুলি এখন ভয়ে নসীরাম পালের আঁস্তাকুড়ে আপনার নরকে আপনি মুখ লুকাইয়া আছে। কবির সুপ্রসন্ন হাস্যমুথের প্রকাশে পাঠকদিগকে এখন আর তাহদের মুখ-বিকৃতি দেখিতে হয় না। এখন স্বল্প হাসিতেই দেশ ভরিয়া গিয়াছে। (৪) হৃদ্য রসেরও প্রকার ভেদ আছে। যে হাসি স্বাস্থ্যের নির্য্যাস, যাহা বর্ষার রসপুষ্ট পত্রাবলীর সতেজ হামলতায় প্রতিফলিত শরদিন্দুর মত ভাস্বর, যাহা প্রিয়জন সম্মিলনের আনন্দে স্বতঃ-অভিব্যক্ত, পরিহাস কথার রচনায়ও কবি সেই চিন্ময় হাসির স্বষ্টি করিয়াছেন। যে স্থলতা বর্জিত রস— সত্ত্বোয়েকীদখও স্বপ্রকাশানন্দ চিন্ময়: বেদ্যাস্তুর স্পর্শ শুন্তে ব্ৰহ্মাস্পদ সহোদর: তাহা নাটক এবং কাব্য গ্রন্থেই ফোটে ভাল। তাই, আন্তরী—সরলা সহবাসে, কমলমণির চুম্বন যুদ্ধে, জীবানন্দের ভোজন বাহুল্যে, মেহের-উল্লিসার সজল হাস্তে, এবং রাজিয়ার গানে, তাহা বেশি প্রস্ফুট। কবি দীনবন্ধু মিত্র, ‘যমালয়ে জীয়স্ত মানুষের” কথায়, পুরাতন বঙ্গদর্শনের প্রায় ১৬টি পৃষ্ঠা ভরিয়া, এই জ্যোৎস্নাময় হাসি, ছড়াইয়া দিয়াছিলেন। স্বীকার করি, যে ব্যাকরণের হিসাবে সকল হাসিরই উৎপত্তি, হস্ ধাতু হইতে; কিন্তু এ শ্রেণীর হাসিকে “হাসস” (চঞ্জ) হইতে উৎপন্ন বলিতে ইচ্ছা করে। ব্যাকরণের খাতিরে ধাতু বদলাইতে না পারে ; কিন্তু এ হাসি স্বতন্ত্র "াতের”, তাহা স্বীকার করিতে হইবে। (১) the (১) একালের পাঠকদিগকে (অবাস্তর হইলেও ) প্রাচীন অলঙ্কারের হালি-বিভাগের একটি তালিকা উপহার দিতেছি,— ১.-স্মিত—অধরে ঈষৎ প্রকাশিত হাস্যের নাম । - ২–হসিত—কিঞ্চিৎ লক্ষ্য হইলে হসিত হয় ; পুনরপি :– হসিতন্তু বৃথা হাসে যৌবনোস্তেদ সম্ভবঃ ৩—বিহসিত—“মধুরস্বরং বিহসিতং" ৪–আবহসিত—“সাংসশিরঃ কম্পং" অৰহসিতং" এ-অপহসিত—“অপহসিতং সাম্রাক্ষং" ৬—অতিহসিত—"বিক্ষিপ্তাঙ্গং ভবতি—অতিহসিতং" । পরিহাস অর্থ তামাস, এবং উপহাস অর্থ ঠাট্ট ।

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল। " SAASAASAASAASAASAASAAAS 8 ox কবি দ্বিজেন্দ্রলালের তানসান, কৃষ্ণ-রাধিক, কালরূপ, প্রাণাস্ত, বিযুৎবারের বারবেলা, প্রভৃতি গানগুলি ঐ শ্রেণীর নিরবচ্ছিন্ন জ্যোৎস্নায় রচিত। একটা কিছু-না কথায় হাসি সৃষ্টি করা, বড় শক্ত ; কেবল অমিল ও বিসম্বাদী কথার যোজনা করিলেই হয় না। শুধুই যদি এড়ে গরু পিজরা ভেঙ্গে খেজুর গাছে ওঠে, তাহতে হয় মাতলামি, না হয় গ্রাম্য রকমের ভাড়ামির স্বষ্টি হয়। তানসান-বিক্রমাদিত্য সংবাদের বিসম্বাদী কথা যোজনায় কাব্যকৌশল আছে। উহার সহজ সময়বিভ্রাট টুকুতে বেশি আশ্চৰ্য্য কিছু নাই। কিন্তু তানসানের শ্রাদ্ধের কথা বলিয়াই কবি যখন লিখিলেন, “অর্থাৎ তার গানের শ্রাদ্ধ, তার ত হয়ে গেছে কৰে ; আর তানসান মুসলমান, তার শ্রাদ্ধ কেমন করেই হবে”, তথন গানের আগাগোড়া সব কথাগুলি একটা হাসির মন্ত্রবলে উড়িয়া গেল ; আর কিছুই রহিল না। . রহিল কেবল, —কোরসের “তা-ধিন্‌ তা কি” টুকু। বিযুৎ বেলার বারবেলায় প্রতিছত্রে যে নূতনত্ব এবং পরিহাসবৈচিত্র আছে, তাহা অতি দুর্লভ।. (৫) কবির ষে সকল পরিহাস, তীব্রতার জন্য প্রসিদ্ধ, তাহাতেও দাহের জালা অপেক্ষ জ্যোৎস্নার শীতলতাই অধিক। স্বীকার করি, যে চণ্ডীচরণের দল গীতার আশীৰ্ব্বাদে অনেক ঘুষি ও কামুটি ভোগ কুরিয়াছে এবং নন্দলাল বেচারাকে কবি বিলক্ষণ গলাটিপুনির চোটে নাকে খৎ দিয়া লওয়াইয়াছেন ; কিন্তু আমি শপথ করিয়া বলিতে পারি, যে উহারা গায়ের ধূলা ঝাড়িয়া উঠিয়া, কাদিয়া হাসিয়া “আর মেরোনা” বলিয়া কবির সহিত ভাব করিয়া বাড়ি ফিরিয়াছে। একেলে হিন্দুর টিকিট গোপনে পিছনে ঝুলিয়াছিল এবং বিলাত ফেরত পরমানন্দে পা ফাক করিয়া সিগারেট টানিতেছিলেন, কবি সেই টিকিট ধরিয়া টানিয়া এবং ফুৎকারে সিগারেটের ছাইটুকু ডে, রে ও মিটারের মুখে ছড়াইয়া দিয়া যখন হাসিয়া বলিতেছেন,— শুধু লুটিৰ একটু মজা শুধু করুিল একটু পেয়ার, শুধু নাচিব একটু, গাহিব একটু—- তখন কি কেহ রাগ করিতে পারে? রাগ করে না ; বরং ভণ্ডের ভণ্ডামি ছাড়ে, বাম্বরেরা বাদরামি পরিত্যাগ করে। . অর্থাৎ কিনা "অমন অবস্থায় পড়লে সবারি মত বদলায়।”