পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وا\لا8 কহিল, “বিনয় বাবু, বাবা এসেচেন ; তিনি বাইরে দয়াল বাবুর সঙ্গে কথা কচ্চেন।” গুনিয়া বিনয় তাড়াতাড়ি বাহিরে চলিয়া গেল। তথন গোর ও বিনয়ের অসামান্ত বন্ধুত্ব লইয়া আনন্দময়ী আলোচনা করিতে লাগিলেন। শ্রোতা দুই জনে যে উদাসীন নহে তাহা বুঝিতে র্তাহার বাকি ছিল না। আনন্দময়ী জীবনে এই দুটি ছেলেকেই তাহার মাতৃস্নেহের পরিপূর্ণ অর্ঘ্য দিয়া পূজা করিয়া আসিয়াছেন, সংসারে ইহাদের চেয়ে বড় তাহার আর কেহ ছিল না। বালিকার পূজার শিবের মত ইহাদিগকে তিনি নিজের হাতেই গড়িয়াছেন বটে কিন্তু ইহারাই তাহার সমস্ত আরাধনা গ্রহণ করিয়াছে। তাহার মুথে তাহার এই ছটি ক্রোড়দেবতার কাহিনী দেহরসে এমন মধুর এমন উজ্জল হইয়া উঠিল যে স্বচরিতা এবং ললিতা অতৃপ্তহৃদয়ে শুনিতে লাগিল। গোরা এবং বিনয়ের প্রতি তাহাদের শ্রদ্ধার অভাব ছিল না কিন্তু আনন্দময়ীর মত এমন মায়ের এমন মেহের ভিতর দিয়া তাহাদের সঙ্গে যেন আর একটু বিশেষ করিয়া নূতন করিয়া পরিচয় হইল। আনন্দময়ীর সঙ্গে আজ জানাশুনা হইয়া ম্যাজিষ্ট্রেটের প্রতি ললিতার রাগ আরও যেন বাড়িয়া উঠিল। ললিতার মুখে উষ্ণবাক্য শুনিয়া আনন্দময়ী হাসিলেন। কহিলেন, “মা, গোরা আজ জেলখানায় এ দুঃখ যে আমাকে কি রকম বেজেছে তা অন্তর্যামীই জানেন । কিন্তু সাহেবের উপর আমি রাগ করতে পারিনি। আমি ত গোরাকে জানি, সে যেটাকে ভাল বোঝে তার কাছে আইন কামুন কিছুই মানে না ; যদি না মানে তবে যারা বিচারকত্ব তারা ত জেলে পাঠাবেই—তাতে তাদের দোষ দিতে যাব কেন ? গোরার কাজ গোরা করেচে–ওদেরও কর্তব্য ওরা করেচে-এতে যাদের দুঃখ পাবার তারা দুঃখ পাবেই। আমার গোরার চিঠি যদি পড়ে দেখ, মা, তাহলে বুঝতে পারবে ও দুঃখকে ভয় করে নি, কারো উপর মিথ্যে রাগও করে নি—-যাতে যা ফল হয় তা সমস্ত নিশ্চয় জেনেই কাজ করেছে।” এই বলিয়া গোরার সযত্বরক্ষিত চিঠিখানি বাক্স হইতে বাহির করিয়া স্বচরিতার হাতে দিলেন। কহিলেন, “ম, তুমি চেচিয়ে পক্ষ আমি আর একবার শুনি।” কৃষ্ণ প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। গোরার সেই আশ্চৰ্য্য চিঠিখানি পড়া হইয়া গেলে পর তিন জনেই কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রছিলেন। আনন্দময়ী র্তাহার চোখের প্রান্ত আঁচল দিয়া মুছলেন। সে যে চোখের জল তাহাতে শুধু মাতৃহৃদয়ের ব্যথা নহে, তাহার সঙ্গে আনন্দ এবং গৌরব মিশিয়াছিল। তাহার গোর কি যে সে গোরা ! ম্যাজিষ্ট্রেট তাহার কম্বর মাপ করিয়া তাহাকে দয়া করিয়া ছাড়িয়া দিবেন সে কি তেমনি গোৱা! সে যে অপরাধ সমস্ত স্বীকার করিয়া জেলের দুঃখ ইচ্ছা করিয়া নিজের কাধে তুলিয়া লইয়াছে! তাহার সে দুঃখের জন্য কাহারে সহিত কোনো কলহু করিবার নাই। গোরা তাহা অকাতরে বহন করিতেছে এবং আনন্দময়ীও ইহা সহ করিতে পারিবেন। ললিতা আশ্চৰ্য্য হইয়া আনন্দময়ীর মুথের দিকে চাহিয়া রহিল। ব্রাহ্মপরিবারের সংস্কার ললিতার মনে খুব দৃঢ় ছিল ; যে মেয়ের আধুনিক প্রথায় শিক্ষা পান্ন নাই এবং যাহাদিগকে সে “হি দুবাড়ির মেয়ে" বলিয়া জানিত তাহদের প্রতি ললিতার শ্রদ্ধা ছিল না। শিশুকালে বরদাসুন্দরী তাহাদের যে অপরাধের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিতেন, “হি দুবাড়ির মেয়েরাও এমন কাজ করে না” সে অপরাধের জন্য ললিতা বরাবর একটু বিশেষ করিয়াই মাথা হেঁট করিয়াছে। আজ আনন্দময়ীর মুখের কয়টি কথা শুনিয়া তাহার অন্ত:করণ বার বার করিয়া বিস্ময় অনুভব করিতেছে। যেমন বল, তেমনি শান্তি, তেমনি আশ্চৰ্য সদ্বিবেচনা ! অসংযত হৃদয়াবেগের জন্ত ললিতা নিজেকে এই রমণীর কাছে খুবই খৰ্ব্ব করিয়া অনুভব করিল। তাহার মনের ভিতরে আজ ভারি একটা ক্ষুন্ধতা ছিল, সেই জন্য সে বিনয়ের মুখের দিকে চায় নাই, তাহার সঙ্গে কথাও কয় নাই । কিন্তু আনন্দময়ীর স্নেহে করুণায় ও শাস্তিতে মণ্ডিত মুখখানির দিকে চাহিয়া তাহার বুকের ভিতরকার সমস্ত বিদ্রোহের তাপ যেন জুড়াইঃ গেল—চারিদিকের সকলের সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ সহজ হইয়া আসিল। ললিতা আনন্দময়ীকে কহিল, "গৌর বাবু যে এত শক্তি কোথা থেকে পেয়েচেন তা আপনাকে দেখে আজ বুঝতে পারলুম।” f |

৮ম সংখ্যা । ]


আমার সাধারণ ছেলের মত হত তাহলে আমি কোথা থেকে বল পেতুম ! তাহলে কি তার দুঃপ আমি এমন করে সহ করতে পারতুম !” ললিতার মনটা আজ কেন যে এতটা বিকল হইয়৷ উঠিয়াছিল তাহার একটু ইতিহাস বলা আবশ্যক। এ কয়দিন প্রত্যহ সকালে বিছানা হইতে উঠিয়াই প্রথম কথা ললিতার মনে এই জাগিয়াছে যে, আজ বিনয় বাৰু আসিবেন না। অথচ সমস্ত দিনই তাহার মন একমুহূর্বের জন্যও বিনয়ের আগমনের প্রতীক্ষা করিতে ছাড়ে নাই। ক্ষণে ক্ষণে কেবলি সে মনে করিয়াছে বিনয় হয়ত আসিয়া। ছ ; হয়ত সে উপরে না আসিয়া নীচের ধরে পরেশবাবুর সঙ্গে কথা কহিতেছে। এই জন্ত দিনের ২ মধ্যে কতবার সে অকারণে এঘরে ওঘরে ঘুরিয়াছে তাহার ঠিক নাই। অবশেষে দিন যখন অবসান হয়, রাত্রে যখন সে বিছানায় শুইতে যায় তখন সে নিজের মনথান লইয়া কি ষে করিলে ভাবিয়া পায় না। বুক ফাটিয়া কান্না আসে ;–সঙ্গে সঙ্গে রাগ হইতে থাকে ; কাহার উপরে রাগ বুঝিয়া উঠাই শক্ত। রাগ বুঝি নিজের উপরেই। কেবলি মনে হয়, একি হইল ! আমি বঁাচিব কি করিয়া ! কোনো দিকে তাকাইয়া যে কোনো রাস্তা দেখিতে পাই না ! এমন করিয়া কতদিন চলিবে! ললিতা জানে, বিনয় হিন্দু; কোনোমতেই বিনয়ের সঙ্গে তাহার বিবাহ হইতে পারে না। অথচ নিজের হৃদয়কে কোনোমতেই বশ মানাইতে না পারিয়া লজ্জায় ভয়ে তাহার প্রাণ শুকাইয়া গেছে। বিনয়ের হৃদয় যে তাহার প্রতি বিমুখ নহে একথা সে বুঝিয়াছে ; বুঝিয়াছে বলিয়াই নিজেকে সম্বরণ করা তাহার পক্ষে আজ এত কঠিন হইয়াছে। সেই জন্যই সে যখন উতলা হইয় বিনয়ের আশাপথ চাহিয়া থাকে সেই সঙ্গেই তাহার মনের ভিতরে একটা ভয় হইতে থাকে পাছে বিনয় আসিয়া পড়ে। এমনি করিয়া নিজের সঙ্গে টানাটানি করিতে করিতে আজ সকালে তাহার ধৈর্য্য আর বাধ মানিল না। তাহার মনে হইল বিনয় না আসাতেই তাহার প্রাণের ভিতরটা কেবলি অশাস্ত হইয়া উঠিতেছে ; একবার আনন্দময়ী কহিলেন, “ঠিক বোঝ নি। গোরা যদি l দেখা হইলেই এই অস্থিরতা দূর হইয়া যাইবে । , গোরা। 8እኅ সকালবেলা সে সতীশকে নিজের ঘরের মধ্যে টানিয়া আনিল । সতীশ আজকাল মাসিকে পাইয়া বিনয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বচর্চার কথা একরকম ভুলিয়াই ছিল । ললিত তাঙ্গকে কহিল –‘বিনয় বাবুর সঙ্গে তোর বুঝি ঝগড়া হয়ে গেছে !” সে এই অপবাদ সতেঞ্জে অস্বীকার করিল। ললিত কহিল—“ভারিত তোর বন্ধু! তুষ্টষ্ট কেবল বিনয় বাৰু বিনয় বাৰু করিস তিনি ত ফিরেও তাকান না ." সতীশ কছিল, “ইস্! তাইত। কস্থখনো না।” পরিবারের মধ্যে ক্ষুদ্রতম সতীশকে নিজের গৌরব সপ্রমাণ করিবার জন্য এমনি করিয়া বারম্বার গলার জোর প্রয়োগ করিতে হয় । আজ প্রমাণকে তাহার চেয়েও দৃঢ়তর করিবার জন্য সে তখনি বিনয়ের বাসায় ছুটির গেল। ফিরিয়া আসিয়া কহিল “তিনি যে বাড়িতে নেই, তাই জন্তে আসতে পারেন নি!” - ললিতা জিজ্ঞাসা করিল—“এ ক'দিন আসেন নি কেন ?” - সতীশ কছিল, “ক’দিনই যে ছিলেন না।” তখন ললিতা স্বচরিতার কাছে গিয়া কহিল, “দিদি ভাই, গৌর বাবুর মায়ের কাছে আমাদের কিন্তু একবার যাওয়া উচিত।” কুচরিতা কহিল "তাদের সঙ্গে যে পরিচয় নেই।” ললিত কহিল—“বা, গৌর বাবুর বাপ যে বাবার ছেলেবেলাকার বন্ধু ছিলেন।” - স্বচরিতার মনে পড়িয়া গেল—কহিল, “ই তা বটে!” স্বচরিতাও অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিল। কহিল— “ললিতা ভাই, তুমি যাও, বাবার কাছে বল গে!” ললিত কহিল, "না, আমি বলতে পারব না, छूमि বলগে !” - শেষকালে মুচরিতাই পরেশ বাবুর কাছে গিয়া কথাটা পাড়িতেই তিনি বলিলেন, “ঠিক বটে, এতদিন আমাদের যাওয়া উচিত ছিল ” - - আহারের পর যাওয়ার কথাটা যখনি স্থির হইয়া গেল তখনি ললিতার মন বাকিয়া উঠিল। তখন স্নাবার কোথা । হইতে অভিমান এবং সংশয় আসিরী उॉशां८क डे केोशिरक