পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२8 পরপূৰ্ব্ব বলিয়া থাকে।” (১৬৬)–“যে স্ত্রীলোক এইরূপে মনোবাদেহ সংযত হইয়া নারীধৰ্ম্মে জীবন যাপন করেন, তিনি ইহলোকে পরমাকীৰ্ত্তি লাভ করেন ও পরকালে পতিলোকে গমন করেন।” ষষ্ঠ অধ্যায়ে, সন্ন্যাস-জীবন সম্বন্ধে উপদেশ আছে। ফলত ব্রাহ্মণের জীবন চার কালবিভাগে বিভক্ত। এই চার কালবিভাগের সহিত চতুরাশ্রমের মিল আছে। প্রথম ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রম। এই সময়ে ব্রাহ্মণযুবক গুরুর নিকট বেদাধ্যয়ন করেন। দ্বিতীয় গৃহস্থাশ্রম। এই সময়ে ব্রহ্মচারী বেদাদির অধ্যয়ন সমাপ্ত করিয়া বিবাহ করেন ও বিবাহ করিয়া গৃহস্থ হয়েন। তৃতীয় বানপ্রস্থাশ্রম। গৃহী সাংসারিক সমস্ত সুখ সম্ভোগ করিয়া অবশেষে সংসার ত্যাগ করিবার জন্য বনে গিয়া তাপসের দ্যায় জীবন যাপন করেন ; তখন তিনি শুধু ভিক্ষারের দ্বারা জীবন ধারণ কবেন। তাহার পর যখন তিনি বাৰ্দ্ধক্যে উপনীত হন এবং পার্থিব বস্তু হইতে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হন, তখন তিনি ব্রহ্মের মধ্যে প্রবেশ করিবার উদ্যোগ করেন এবং সন্ন্যাসী হয়েন । এই উচ্চ অবস্থায় উপনীত হইলে পর তিনি ভৌতিক জীবনের খুটিনাটি লইয়া আর ব্যাপৃত থাকেন না, পরস্তু চরম লক্ষ্যের দিকে চিত্তকে স্থির রাথিয়া কঠোর আত্মনিগ্রহে প্রবৃত্ত হন । (২১ শ্লোক )— “অথবা বানপ্রস্থ ধৰ্ম্মবিধি প্রতিপালন করিয়া কেবল পুষ্প-মূল-ফল দ্বারা সৰ্ব্বদা জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করিবেন, কিংবা স্বয়ংপতিত কালপক ফলদ্বারা জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করিবেন।” (২২)—“ভূমিতে গড়াগড়ি দিবেন, অথবা সারাদিন একপদে দণ্ডায়মান থাকিবেন, কিংবা কখন আসনস্থ, কখন বা আসন হষ্টতে উত্থান করিয়া কাল কাটাইবেন। প্রাতে, মধান্ত্রে এবং সায়ংকালে স্নান করিবেন।” (২৪)–“ত্রৈকালিক স্নান করিয়া পিতৃ ও দেবলোকের তর্পণ করিবেন এবং উগ্রতর তপস্যা করিয়া দেহকে শোষণ করিবেন।” (২৬)–“মুখকর বিষয়ে যত্নশীল হইবেন না, স্ত্রীসন্তোগাদি করিবেন না ; ভূমিশয্যায় শয়ন করিবেন, বাসস্থানে মমতাশূন্ত হইবেন এবং বৃক্ষমূলে বসতি করিবেন।” (২৯)–“বানপ্রস্থাবলম্বী ব্রাহ্মণ এই সমুদায় ও অপরাপর নিয়ম প্রতিপালন করিবেন এবং আত্ম-সাধনার প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। জন্য উপনিষদাদি বিবিধ শ্রুতি অভ্যাস করবেন।” (৩৪) —“আশ্রম হইতে আশ্রমান্তর গমন করিয়া অর্থাৎ ব্রহ্মচর্যা, গার্হস্থ্য ও বানপ্রস্থ ধৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়া তত্তত আশ্রমে অগ্নিহোত্রাদি হোম সমাধান করিয়া জিতেন্দ্রিয়ত্ব লাভ করিয়া ভিক্ষাদান বা বলিদানাদি কৰ্ম্মে শ্রান্ত হইলে পর সন্ন্যাসাশ্রম গ্রহণ করিলে পরলোকে পরম আভু্যদয় লাভ 3. করা যায়।” (৪২)—“সৰ্ব্বসঙ্গ রহিত হইলে সিদ্ধিলাভ হয়। ৯ জানিয়া আত্মসিদ্ধির জন্য তখন অসহায় অবস্থায় নিত্য একাকী বিচরণ করিবেন।” (৪৭)—“চুরুক্তি বা অপমানজনক বাক্য সকল সহ করিয়া থাকিবে, কাহাকেও অপমান দ্বারা পরাভব করিবে না ; এই ক্ষণভঙ্গুর দেহ ধারণ করিয়া কাহারও সহিত শত্রতা করিবে না।” (৪৮)—“কেল্লাহ ক্রোধ করিলে তাহার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করিবে না ; কেহ আক্রোশের কথা কহিলে তাহার প্রতি কুশললাক্য প্রয়োগ করিলে। সপ্তদ্বার বিষয়ক যে বাক্য, তাহাকে মিথ্যাতে নিয়োগ করিবে না।” (৪৯)-“সৰ্ব্বদা ব্ৰহ্মধ্যানপর হইয় আসীন থাকিবে ; কোন বিষয়ের অপেক্ষা রাপিবে না—সৰ্ব্ববিষয়ে নিম্পূহ হইবে ; কেবল আত্মসহায়েই একাকী মোক্ষার্থী হইয়৷ ইহসংসারে বিচরণ করিবে।” (৬০)—“ইন্দ্রিয়গণের নিরোধ, রাগদ্বেষাদির ক্ষয় এবং সৰ্ব্বভূতে অহিংসা—এই সকল উপায় দ্বারা মনুষ্য মুক্তিলাভে অধিকারী হন।" (৭২)—“প্রাণায়াম দ্বারা ইন্দ্রির বিকারাদি দোষ সকল দগ্ধ করিবে ; স্থান বিশেষে চিত্তবন্ধনরূপ ধারণা দ্বারা পাপ সকল নষ্ট করিবে ; স্ব স্ব বিষয় হইতে ইন্দ্রির আকর্ষণরূপ প্রত্যাহার দ্বারা বিষয়সংসর্গরূপ পাপ সকল হইতে দূরে থাকিতে চেষ্টা করিবে এবং পরব্রহ্মের ধানে নিযুক্ত থাকিয়া কামক্রোধাদি অনীশ্বর গুণ সকলকে জর করিবে।” (৭৬)–“এই দেহ অস্থিরূপ স্তম্ভে বিধৃত, স্নায়ুরূপ রজ্জ্বদ্বারা বদ্ধ, রক্ত ও মাংসদ্ধারা প্রলিপ্ত, চৰ্ম্মদ্বারা আচ্ছাদিত, মূত্র ও বিষ্ঠার দুৰ্গদ্ধে পূর্ণ। (৭৭)–“এই দেহ জরাশোকে আক্রান্ত, নানাপ্রকার ব্যাধি-মন্দির, ক্ষুৎপিপাসায় কাজুর, প্রায়ই রজোগুণযুক্ত, অনিত্যু এবং পঞ্চভূতের আবাস স্বরূপ —ইহা জানিয়া ইহার মায় পরিত্যাগ করিবে।” (৮২) —“যে কিছু কৰ্ম্মফল পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে, সকলই ধ্যানপরায়ণ জনের প্রাপ্য ; কিন্তু ধ্যানহীন, সুতরাং l f o ৮ম সংখ্যা । ] আত্মজ্ঞান বিরহিত ব্যক্তি কোন ক্রিয়ারই ফল লাভ করিতে পারে না।” উপরে যে সকল বচন উদ্ধত করা হইল, উহা সন্ন্যাসাশ্রমে প্রবিষ্ট ব্রাহ্মণের প্রতি প্ৰযুজ্য । উহা তাহাদের কৰ্ত্তব্যের মুখ্য অংশ মাত্র ; সমস্ত কৰ্ত্তব্য বিবৃত করিতে হইল, সমস্ত অধ্যায়ই উদ্ধত করিতে হয়। ষষ্ঠ অধ্যায়ের শেষভাগে, দ্বিজ ও দ্বিজদের ধৰ্ম্ম অর্থাৎ কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে আলোচিত হইয়াছে । ইহা অপেক্ষ উচ্চতর উপদেশ আর কোথাও প্রাপ্ত হওয়া যায় না । ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ করিবে, যে অসাধু ব্যবহার করে তাহার প্রতি সাধু ব্যবহার করিবে,—এই যে খৃষ্টমতবাদের মূলভিত্তি— এই সকল উপদেশ খৃষ্ট আবির্ভাবের ত্রয়োদশ শতাব্দি পূৰ্ব্বে প্রদত্ত হইয়াছিল। (৯১)--“এই চারি আশ্রমবাসী দ্বিজাতিগণের বক্ষ্যমান দশপ্রকার কৰ্ম্ম নিত্য যত্নসহকারে অনুষ্ঠান করা কৰ্ত্তব্য। ধৃতি, ক্ষমা, দম, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিম্বনিগ্রহ, ধী, বিদ্যা, সত্য ও অক্রোধ—এই দশটি ধৰ্ম্মের লক্ষণ।' (৯৩)–“ধৰ্ম্মের এই দশ লক্ষণ যে ব্রাহ্মণ সম্যক্ অধ্যয়ন করেন এবং অধ্যয়ন করিয়া তাহার অনুষ্ঠান করেন, তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন।” সপ্তম অধ্যায়টি রাজাদের জন্য। এই অধ্যায়টি পাঠ করিলে জানা যায়, সভ্যতার কতটা উচ্চ ধাপে ভারত এক সময়ে উপনীত হইয়াছিল ;–এই হিসাবে আমাদের নিকট এই অধ্যায়ের সমধিক গুরুত্ব। এই সংহিতার প্রতিপত্তি ও প্রামাণিকতার প্রভাব এতটা বেশী ছিল যে রাজার বাধ্য হইয়া উহা হইতে রাজধৰ্ম্ম শিক্ষা করিতেন। "রাজার দেবদত্ত অধিকার” এই বীজমন্ত্রটি এই অধ্যায়ে প্রাপ্ত হওয়া যায় ; বহুকাল পরে এই মন্ত্রটি এবং রাজার অভিষেক-অনুষ্ঠান পাশ্চাত্যখণ্ডের আর্য্যেরা গ্রহণ করে। (২ শ্লোক)—“যথাবিহিত উপনয়ন-সংস্কারে সংস্কৃত হইয়া যথাস্তায় আপন আপন প্রজাপুঞ্জের রক্ষণাবেক্ষণ কুর রাজার কৰ্ত্তব্য।” (৩)—“ইন্দ্র, বায়ু, যম, স্বৰ্য্য, অগ্নি, বরুণ, চন্দ্র ও কুবের-এই অষ্ট দিকপালের সারভূত অংশ গ্রহণ করিয়া ঈশ্বর রাজাকে স্বষ্টি করিয়াছেন।” (১৪)—“রাজার হিতার্থেই ঈশ্বর পুৰ্ব্বকালে, সৰ্ব্বপ্রাণীর রক্ষাকর্তা ধৰ্ম্মস্বরূপ আত্মজ ব্রহ্মতেজোময় দণ্ডকে স্বষ্টি ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম । *. SMMMS SSSSSS 8Հն করিয়াছিলেন।” (১৯)-“সেই দণ্ড যদি সম্যক বিবেচিত হইয়া ধৃত হয়, তবে প্রজাসমুদয় সুখে থাকে ; পরস্তু অন্যথা হইলে, অর্থাৎ অবিচার পূর্বক সেই দণ্ড বিহিত হইলে, সকলকেই বিনাশ প্রাপ্ত হইতে হয়।” (২•)—“যদি রাজা অনলস থাকিয়া দণ্ডনীয়ের প্রতি দণ্ডবিধান না করিতেন, তাহা হইলে জলস্থিত মৎস্তের ন্যায়, দুৰ্ব্বল জনেরা বলবানের বধ্য হইত।” (২৫)—“যে স্থলে শু্যামবর্ণ আরক্ত-লোচন দও, পাপবিনাশার্থ বিচরণ করে এবং দণ্ডবিধাতা সৰ্ব্ববিষয়ে স্থায়দও বিধান করিয়া থাকেন, প্রজার তপায় কদাচ কাতর হয় না।” (৩•)–“মুখ, লোভপর, শাস্ত্রজ্ঞানবিহীন মন্ত্রিপুরোহিতাদিসহায়শূন্ত এবং ভোগাসক্ত নরপতি কদাচ যথানিয়মে দণ্ডবিধান করিতে পারেন না।” (৩১)—“পবিত্রপ্রকৃতি বিশুদ্ধাত্মা, সত্য-প্রতিজ্ঞ, বেদাদিশাস্ত্রানুষ্ঠায়ী এবং স্ববুদ্ধি নরপতি স্বমন্ত্রিসহ যথানিয়মে দণ্ডবিধান করিতে সমর্থ হন।” (৩৮)–“যাহাম্বের দেহ-মন অতি পবিত্র, এবস্তৃত বেদজ্ঞ ধৰ্ম্মবৃদ্ধ ও বয়োবৃদ্ধ ব্রাহ্মণগণের সৰ্ব্বদা সেবা করা রাজার কৰ্ত্তব্য। কারণ, যে রাজা বৃদ্ধসেবায় সদা নিরত –তিনি রাক্ষসদিগের দ্বারাও পূজিত হইয়া থাকেন।” (৩৯)—“স্বভাৰসিদ্ধ নিজ স্ববুদ্ধিগুণে এবং শাস্ত্রাধ্যয়নগুণে রাজা বিনীত হইলেও সৰ্ব্বদা ঐ বৃদ্ধ-ব্রাহ্মণগণসমীপে বিনয় শিক্ষা করা তাহার কৰ্ত্তব্য ; কারণ, বিনীত রাজা কখন বিনাশ প্রাপ্ত হন না।” (৪)—“চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়গণের উপর সম্পূর্ণ আধিপত্য লাভ করিবার নিমিত্ত রাজার দৃঢ়ৰূপে যত্নবান হওয়া আবশ্বক ঃ কারণ, সম্পূর্ণ জিতেন্দ্রিয় রাজাই কেবল প্রজাগণকে নিজ কর্তব্যাসক্ত রাথিতে পারেন।” (৫০)—“দশবিধ কামজ দোষের মধ্যে স্বরাপান, পাশক্রীড়া, স্ত্রীলোকে আসক্তি এবং মৃগয়া—এই চারিটি যৎপরোনাস্তি কষ্টজনক বলিয়া রাজার জানা উচিত।” (৫)—“ক্রোধজ অষ্টবিধ দোষের মধ্যে নিষ্ঠুর কথন, প্রাপ্য ধনে প্রবঞ্চনা করা এবং নির্বাত প্রহার—এই তিনটি রাজার নিতান্ত অনর্থকর বলিয়া জানা উচিত।” (৫৩—“ক্রোধজ কিংষ্ণ কামজ দোষ । মৃত্যু অপেক্ষা ভয়ঙ্কর কষ্টজনক ; কারণ দেহাস্তে, কাম ক্রোধজ-দোষাসক্ত পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ক্রমে নিরয়গামী হয় ;. কিন্তু নির্দোষ নর, দেহাস্তে স্বৰ্গগামী হইয়া: থাকে ৷”