পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(2〉や WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)--ഹ - আছে। কিন্তু রবিবাবু উপন্যাসজগতে যে নুতন যুগ প্রবর্তন করিয়াছেন উহা সময়োপযোগী হইয়াছে তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। বঙ্কিমচন্দ্রকে কেহ কেহ বঙ্গের স্কট আখ্যা দিয়া থাকেন। স্কটের উপন্যাসাবলী যেমন বৈচিত্রে, সৌন্দর্য্যে, গাম্ভীর্য্যে ও অভাবনীয় ঘটনাবলীতে পরিপূর্ণ বঙ্কিমের উপন্যাসগুলিও সেইরূপ। কোথাও প্রেমিকের কথা, কোথাও বিদ্বেষবুদ্ধি পরিচালিত শক্রর প্রতিহিংসার কাহিনী, কোথাও বীরের বীরত্বের চিত্র, কোথাও বা পরদুঃখকাতরা রমণীর করুণ মূৰ্ত্তি ফুটিয়া উঠিয়াছে। শুধু তাই নয়। তাহার মধ্যে গভীর দার্শনিক ভাব সকলও স্থান পাইয়াছে। যেমন স্কট শুধু গল্প লেখেন নাই বঙ্কিমচন্দ্র ও তেমনি গল্প রচনা করিয়া ক্ষান্ত হন নাই। কত উচ্চভাব, কত দার্শনিক গবেষণা তাহার উপন্যাস সকলকে অলঙ্কত কৰিয়াছে তাহা চিন্তাশীল পাঠক মাত্রেই অবগত আছেন। “আনন্দমঠ” সকলেই পাঠ করিয়াছেন কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্দমঠের” উপসংহারকালে যে কয়টা কথা লিখিয়াছেন অনেক লোকের পক্ষেই তাহার নিগুঢ় অর্থ অনুধাবন করিতে পারা যে কঠিন কাজ ইতাতে সন্দেহ নাই। কতদিন মনে মনে বলিয়াছি “বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে লইয়া গেল” কিন্তু ইহার গভীর অর্থ এখনও বুঝিতে পারি নাই। বোধ হয় "আনন্দ মঠের” আচাৰ্য্য ব্যতীত আর কেহ তাহার গভীর অর্থ সম্পূর্ণরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন নাই । যেমন বঙ্কিমচন্দ্রকে লোকে স্কট আখ্যা দিয়া থাকে রবীন্দ্রনাথকেও তেমনি কেহ কেহ জর্জ ইলিয়ট বলিয়া থাকেন। এক বিষয়ে যে রবি বাবুর সহিত জর্জ ইলিয়টের সুগভীর মিল আছে তাহাতে সন্দেহ নাই। এ প্রবন্ধের প্রারম্ভেই প্রসঙ্গক্রমে সে কথা বলা গিয়াছে। সে মিল মনের ব্যবসায় লইয়া। এডাম বীড, (Adam Bede), TfKøft\ =Ratz (Silas Marner), প্রভৃতি উপন্যাস দিন দিন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদিগের নিকট সুপরিচিত হইতেছে। ইহা হইতে বেশ বুঝিতে পারা যায় যে জর্জ ইলিয়ট উপন্যাস জগতে যে নুতন যুগ প্রবর্তন করিয়া গিয়াছেন তাহ শিক্ষিত সমাজের প্রবাসী । SMMMMMMSSMMSMMMM [ ৮ম ভাগ।


অনুমোদিত। র্তাহার গ্রন্থের দোষ ক্ৰট থাকা সত্বেও এই বিশেষত্বের জন্য তিনি স্বদেশ এবং বিদেশের সাহিত্যিক ও দার্শনিকদিগের নিকট প্রচুর প্রতিষ্ঠা লাভ কলিয়াছেন। আমাদের দেশে রবীন্দ্রনাথ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস যুগের প্রবর্তক। যুগ-প্রবর্তকগণকে অনেক সময়েই নিন্দাভাগী হইতে হয়। ইংলণ্ডে মিণ্টন নিন্দাভাগী হইয়াছিলেন—আমাদের দেশে মাইকেলকে ব্যঙ্গ করিয়া কাব্যগ্রন্থও রচিত হইয়াছিল। রবি বাবুর এ চেষ্টাও যে সৰ্ব্বত্র সহানুভূতি পাইবে এমন আশা করা অন্যায়। কিন্তু এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে ষে উপন্যাস রচনা করিতে হইলে নায়কনারিকার কাৰ্য্যকলাপ বর্ণনাই যথেষ্ট নহে । তাহদের মনের পরিচয় চাই। কোন বর্ণে কাহার মনটী চিত্রিত তাহ জানিতে পারিলে পাঠকের কল্পনাশক্তি কাৰ্য্য করিতে পাৱে—তাহার চিন্তাশক্তি জাগ্রত হয়। নতুবা শুধু গল্প পড়িতে পড়িতে পাঠকের কল্পনাশক্তি মরিয়া যায়লেখকের লেখনীর গতির সহিত কল্পনার গতি একীভূত হইয়া যায়। আপনার স্বাতন্ত্র্য ও অস্তিত্ব হারাইয়া ফেলে। চোখের বালি ও নৌকাডুবি পাঠ করিতে করিতে পাঠক এমন অনেক স্থান পাইবেন যেখানে নায়কনায়িকার কোনো চিন্তু বা বিশেষ কোন মানসিক অবস্থা অবিকল তাহার নিজের বলিয়া মনে হইবে। এই দুইখানি গ্রন্থের মধ্যে এমন অনেক স্থান পাইবেন যেখানে চিন্তার ভাষা শরীরে এবং মনে অদ্ভূত Sensation উৎপাদন করে। জর্জ ইলিয়ট (আসল নাম মেরী এ্যান ইভান্স) এই অদ্ভূত শক্তির জন্যই প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন। সম্প্রতি একজন স্ববিখ্যাত মার্কিন লেখক তাহার সম্বন্ধে লিথিয়াছেনGeorge Eliot's contribution, to history lies in the sad that she has given the best picture to be found in all literature of English provincial life in the reign of Queen Victoria. Sir Leslie Stephen says: “She has done for it what Scott did for the Scottish peasantry, or Fielding for the eighteenth century Englishmen, or Thackeray for the higher social stratum of his time." রবিবাবুর উপন্যাসাবলী সম্বন্ধে ভবিষ্যৎ বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাস লেখক এইরূপ সাক্ষ্য দিতে পরিবেন তাহাতে আর সন্দেহ কি ? একটা কথার উল্লেখ করিয়া এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধ শেষ ৯ম সংখ্যা । ] করিব। . মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস সৰ্ব্বসাধারণের জন্ত নয়। উপন্যাস হইলেই যে সকলের নিকট সহজবোধ্য হইবে এরূপ আশা কই যায় না। বঙ্কিমচন্দ্রের সর্বজনপ্রিয় এবং গৰ্ব্বজনপঠিত উপন্যাসগুলিও স্থানে স্থানে গভীর এবং জটিল ভাবে পূর্ণ। অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের নিকটই এই শ্রেণীর উপন্যাসের সমাদর আশা করা যাইতে পারে। যেমন উচ্চতর গণিতবিজ্ঞান সাধারণ সংযোজন ও বিয়োজন নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত হইলেও সাধারণ গণিত বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তির পক্ষে অনধিগম্য, তেমনি মানবমনের নিগুঢ় রহস্ত সকল চিন্তা করিতে ও তাহার রহস্তজাল ভেদ করিতে অনভ্যস্ত ও অক্ষম পাঠকের নিকট রবিবাবুর উপন্যাসগুলি অনেক স্থলে শুধু “মিছে কথা গাথা” ব্যতীত আর কিছু নয়। রবিবাবুর উপন্যাসের আখ্যানবস্তু সম্বন্ধে অনেকে অনেক কথা বলিয়াছেন, সহৃদয় পাঠকবর্গ সে সকল সমালোচনা হইতে সার সঙ্কলন করিতে পারিবেন। বর্তমান প্রবন্ধে শুধু তাহার প্রবর্তিত রীতি সম্বন্ধেই যৎকিঞ্চিৎ আলোচনা করা গেল । শ্ৰীইন্দুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী । পণ্ডিতগণের অন্তান্ত ধৰ্ম্মের মধ্যে ভবিষ্ণুৎ উক্তি করা অন্যতম প্রকৃতি। 'বেগুণ গাছে আকুসি দিয়া বেগুণ পাড়িতে হইবে যেমন একদল মানবশক্তির হ্রাসলক্ষ্যকারী হতাশ অভিভূত পণ্ডিতদলের কৌতুহলজনক ভবিষ্যদ্বাণী আছে, বর্তমানে মানবশক্তির উৎকর্ষ ও বৃদ্ধি লক্ষ্যকারী আশাপ্রদৃপ্ত পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক মানবের ভবিষ্যৎ ক্ষমতা ও অবস্থার কল্পনাও তদপেক্ষা কম কৌতুকজনক নহে। অবশুই বিশ্বাসীর নিকট তাহা সত্যের আভাস বলিয়া পরিগৃহীত হইতে পারে কিন্তু বিশ্বাসী অবিশ্বাসী নিৰ্ব্বিশেষে সকলের নিকটই বড় কৌতুহলপ্রদ। কিছু দিবস পূৰ্ব্বে ফরাসী বৈজ্ঞানিক মুসো মার্সেলিস বার্থেলে,—যাহার রাসায়নিক উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার প্রতি লক্ষ্য করিলে যেন বোধ হয় তিনি প্রকৃতির কৰ্ম্মশালা পরিদর্শন করিয়া, তথাকার কার্য্য সন্তোষজনক নহে প্রচার পূর্বক o বিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী । ন। মানব কর্তৃক উচ্চ আদর কৰ্ম্মশালা স্থাপনের বাবা রত « »ፃ হইয়াছিলেন, যাহার দীর্ঘজীবনের স্বভাবের সহিত ঘনিষ্ঠতার বোধ হয় প্রকৃতি যেন তাহার নিকটে ধরা পড়িয়া জ্ঞাপন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন এতদিন মনুষ্যহস্তের চালনার অভাবেই প্রকৃতি সম্যক পরিস্ফুট হইতে পারেননাই,-সেই রসায়ন শাস্ত্রের সিদ্ধার্থ অতিরথ বার্থেলো মানবের ভবিষ্যৎ আহাৰ্য্য, কাৰ্য্য, ভোগ, লক্ষ্য সম্বন্ধে যে আভাস দিয়াছেন তাহা যুগপৎ বিস্ময় ও কৌতুক উৎপাদন করে। রসায়ন বিদ্যাই তাহার প্রধান অবলম্বন। এই বিস্কা সম্বন্ধে তাহার পূর্ববৰ্ত্তী পণ্ডিতগণের যে মত ও তাঁহাদের কর্তৃক এই বিদ্যার যেটুকু ক্ষেত্র বলিয়া গণ্য হইত তিনি তাহাতেই আবদ্ধ থাকেন নাই। র্তাহার পূর্ববর্তিগণ এই বিদ্যার এইরূপ সংজ্ঞা দিয়া আসিতেন যে, রসায়ন শাস্ত্রের কার্য্য বিশ্লেষণপ্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ—ইহার কার্য্য ভাগ, বিভাগ, প্রতি-বিভাগ দ্বারা নৈসর্গিক বস্তুর পরিচয় গ্রহণ করা মাত্র। পণ্ডিত ল্যাভোসিয়র এই সংজ্ঞার প্রবর্তক এবং বার্থেলোর পূর্ববর্তী সকলেই ইহা মানির আসিতেন। বস্তুতও রসায়ন শাস্ত্র বহুকাল হইতেই এই শিক্ষা দিয়া আসিতেছিল মাত্র যে জল, অম্লজান ও হাইড়োজেন সংমিশ্রণে উদ্ভূত ; কিন্তু ঐ দুই জানের সংমিশ্রণে জল প্রস্তুত প্রণালী রসায়ন শাস্ত্রের কার্য্য নহে, আয়ত্তাধীনও নহে সকলেরই বিশ্বাস ছিল। ভাঙ্গিয়া চুরিয়া বস্তুর পরিচয় গ্রহণ করাই এই বিস্কার সীমা, গঠন-রহস্ত প্রকৃতির গুপ্তধন ; মানুষের তাহাতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। পুরাতন রাসায়নিকের ইহাই সংস্কার ছিল। কিন্তু বিংশতি বর্ষে পদার্পণ করিবার পূৰ্ব্বেই বার্থেলো ঘোষণা করিলেন— এই সংস্কার যে সত্য ইহা যে কুসংস্কার নহে, তাহার প্রমাণ, কোথায় ? যদি প্রকৃতি মূল পদার্থসমষ্টির সংমিশ্রণে যৌগিক পদার্থ গঠন করিতে পারে তবে আমি তাহা করিতেঅসমর্থ থাকিব কেন ? প্রকৃতি যে শক্তির সহায়তায় উহা সংসাধিত করে সে শক্তি আমা হইতে গোপন থাকিতে পরিবে কেন ? বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের প্রকৃতির স্তায় প্রকৃতি বুড়ী তাহার যে গুপ্ত স্ত্রীধন ভাবী উত্তরাধিকারী হইতে সৰ্ব্বদা গোপন রাখিত যুবক বার্থেলে তাহাকে হস্তগত করিবার প্রয়াসে বদ্ধপরিকর হইলেন।