পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& S8 AASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS বঙ্গসাহিত্যে যাহা প্রকাশিত হয়, সকল শিক্ষিত বঙ্গবাসী তাহা পাঠ করেন কিনা সন্দেহ ! বক্তিয়ার থিলিজির বঙ্গ গমনের ষষ্টি বর্ষ পরে, সুবিখ্যাত মুসলমান ইতিহাসলেখক মিনহাজ-ই-সিরাজ এদেশে উপনীত হইয়াছিলেন। তিনি “তবকাৎ-ই-নাসেরী” নামক দিল্লী-সাম্রাজ্যের যে ইতিহাস রচনা করিয়া গিয়াছেন, তাহার বিংশ পরিচ্ছেদে প্রসঙ্গক্রমে বঙ্গভূমির কিছু কিছু সংক্ষিপ্ত কাহিনী উল্লিখিত হইয়াছে। তাহাতে লিখিত আছে—বক্রিয়ার সপ্তদশ অশ্বারোহী লইয়। “নওদিয়া” লক্ষ্মণসেনের পলায়ন । নামক রাজধানীতে উপনীত হইবামাত্র, “রায় লছমনিয়া” নামক হিন্দু নরপতি পলায়ন করিয়াছিলেন। মিনহাজ বিচারনিপুণ ঐতিহাসিকের স্তায় এই কাহিনীর সত্যাসত্য নির্ণয়ে অগ্রসর না হষ্টয়া, লিথিয়া গিয়াছেন—যাহারা বক্তিয়ারের সহিত বিজয়-যাত্রায় বহির্গত হইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে যাহারা তখন পর্য্যন্ত জীবিত ছিল, তাহাদের মুখে এই কাহিনী শ্রবণ করিয়াছিলেন। মিনহাজের গ্রন্থ প্রমাণ প্রবাসী । দিল্লীর ইতিহাসলেখকগণ দিল্লীর গৌরব ঘোষণা ক"ি| রূপে উল্লিখিত করিয়া, বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে এই কালি৷ - সংকলিত হইবার পর, ইহা ক্রমশ: সৰ্ব্বত্র প্রচারিত হইয়া পড়িয়াছে। ইহার মূল প্রমাণ মিনহাজের গ্রন্থএকমাত্র প্রমাণ মিনহাজের গ্রন্থ,—তাহারও একমাত্র প্রমাণ বৃদ্ধ সৈনিকের পুরাতন আখ্যায়িক ! বক্তিরা খিলজির বঙ্গগমনের ষষ্টবৰ্ষ পরে এদেশে আসিয়া, মিনার যে বৃদ্ধ সৈনিকের নিকট এই অলৌকিক কাহিনী শ্রবণ করিয়াছিলেন বলিয়া লিখিয়া গিয়াছেন,—তিনি তখন অণী তপর বৃদ্ধ —তাহার সত্যনিষ্ঠ বা আত্মগৌরক ঘোষণার প্রবল প্রলোভন কতদূর প্রবল ছিল, এতকাল ৷ পরে তাহার মীমাংসা করিবার সম্ভাবনা নাই! মুসলমানাগমনের অব্যবহিত পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী যুগে যাহার এ দেশের রাজসিংহাসন অলংকৃত করিতেন, সেই সকল স্বগৃহীতনাম নরপালগণের নানা শাসন-লিপি আসি ৷ হইয়া, আমাদিগের নিকটে যে সকল পুরাতত্ত্বের দ্বা। উদঘাটিত করিয়া দিয়াছে, তাহা সপ্তদশ অশ্বরোহী অলৌকিক দিগ্বিজয়কাহিনীর সামঞ্জস্য রক্ষা করিতে পারে। না। বাঙ্গালার ইতিহাসের প্রধান দুর্ভাগ্য সকল যুগেী সমানভাবে বর্তমান,—সকল যুগেই তাহ বিজেতার বিদ্বেন্ধ পূর্ণ বিকৃত লেখনী হইতে প্রস্থত হইয়াছে—কোন স্থা দেশের লোকে দেশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করিবার আয়েঞ্জা করেন নাই ! - বক্তিয়ার স্বাধীনভাবে প্রাচ্যভারতে সাম্রাজ্যসংস্থাপনে অগ্রসর হইয়া, কিয়ুৎপরিমাণে কৃতকার্য হইবামাত্র, ীি মুসলমান বাদশাহ, তাহাকে দিল্লীসাম্রাজ্যের अं| করিবার জন্য লালায়িত হইয়া উঠিয়াছিলেন। ইহার জন্তু প্রথম হইতেই দিল্লীসাম্রাজ্য এবং গৌড়ীয়সাম্রাজ্যের মধে| কলহ সংঘটিত হইবার স্বত্রপাত হয়,–এবং ইহার छब्लों (গৌড়ীয় সাম্রাজ্যের কলঙ্ক কীৰ্ত্তন করিয়া) ইতিয়া রচনা করিতে প্রবৃত্ত হন। যে সকল মুসলমান বীর শেরি ক্ষয় করিয়া গৌড়ীয় সাম্রাজ্যে অধিকার বিস্তার করিা: ছিলেন, দিল্লীশ্বর তাহাদিগের কোনরূপ সহায়তাসাধন | করিয়াই, তাহাদিগের বিজয়গৌরবের ফলভোগ কবি জন্য লালায়িত হইয়া উঠিয়াছিলেন। দিল্লীসাম্রাজা ১০ম সংখ্যা । ] ...------------------ ইতিহাস লেখকের পক্ষে এই সকল কারণে গোঁড়ায় ফুলমানগণের দিগ্বিজয় ব্যাপাৰকে অন্যাসগন্ধ অকিঞ্চিংকর গৌরব বলিয়া ব্যাখ্যা করা অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। নিজের কাহিনী আদৌ কোনও বৃদ্ধ সৈনিকের নিকট ষ্টেতে সংকলিত, অথবা তাহার কপোলকল্পিত মাত্র, স্তবিয়েও সন্দেহশূন্ত হইবার উপায় নাই ! - যাহা হউক, বক্তিয়ার খিলিজির বঙ্গাগমন সময়ে এদেশ রাঢ়, মিথিলা, বরেন্দ্র, বঙ্গ এবং বাগড়ী নামক ভাগপঞ্চকে বিভক্ত থাকিবার কথা আমরা মুসলমান লেপকদিগের গ্রন্থেই দেখতে পাই । তৎকালে এই পঞ্চবিভাগ গৌড়ীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ও এক রাজার অধীন ছিল । বিক্রমপুর, লক্ষ্মণাবতী এবং লক্ষ্মেীর নামক তিন স্থানে তিনটি রাজধানী প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই বর্ণনায় “নওদিয়া" নামক স্থানে কোনও রাজধানী সংস্থাপিত থাকিবার উল্লেখ নাই। “নওদিয়া” কোথায় ছিল,— তাহা রাজধানী হইলে, তৎপ্রদেশে মুসলমান জায়গীর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল কিনা,—রায় লছমণিয়াই বা কাহার নাম-এ সকল প্রশ্নের কোনরূপ সদুত্তর প্রাপ্ত হইবার উপায় নাই । গৌড়ীয় ধ্বংসাবশেষের মধ্যবৰ্ত্ত থালিমপুর নামক আধুনিক গ্রামে ধৰ্ম্মপাল নামক নরপালের যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত ও স্বৰ্গীয় উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয়ের যত্নে প্রকাশিত হয়, তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায়,—ধৰ্ম্মপালের রাজধানী পাটলপুত্রেই সংস্থাপিত ছিল । তিনি মগধাধিপতি হইয়াও, গৌড়ীয় সাম্রাজ্যের কিয়দংশে অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন। মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত দেবপাল নামক নরপালের তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায়,—তৎকালে রাজধানী মুরগিরি নগরেই সংস্থাপিত ছিল। তাহার পর বঙ্গভূমির নানা স্থানে-পূৰ্ব্ব এবং উত্তর বঙ্গে—পালনরপালগণের রাজ্য ও রাজধানী সংস্থাপিত হইবার পরিচয় নানা শাসনলিপিতে প্রাপ্ত হওয়া যায়। পাবনার অন্তর্গত মাধ্যইনগরে আবিষ্কৃত লক্ষ্মণসেন দেবের একখানি তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায়,–"কন্নটি ক্ষত্রিয়বংশের” সেন নরপালগণ বঙ্গভূমিতে কিরূপে অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন। এই রাজবংশের বিজয়ুসেন দেব নামক নরপাল রাজসাহীর লক্ষণসেনের পলায়ন-কলঙ্ক ।

  • লক্ষ্মণাবতীর

(ඵ( অন্তর্গত বরেন্দ্র প্রদেশে প্রহ্লামেশ্বর মন্দির নামক মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ে যে ফলকলিপি রচনা করাষ্টয়াছিলেন, তাহাতে বিজয়সেন দেবের বিজয় কাহিনী উল্লিখিত আছে। বিজয়সেনের পুত্র বল্লালসেন গৌড়াধিকার করিয়া, “গৌড়েশ্বর” নাম গ্রহণ করেন। তিনিও বীরকীৰ্ত্তির জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। তাহার পুত্র লক্ষ্মণসেন দেব পশ্চিমে কাশী এবং পূৰ্ব্বে কামরূপ পর্যাস্ত বিজয় লাভ করিয়া, বীরকীৰ্ত্তির জন্য বিখ্যাত হইয়া উঠিয়াছিলেন। মুসলমানইতিহাসলেখকগণ বলেন,—এই নরপতির নামানুসারেই পুরাতন গৌড়নগরের নাম “লক্ষ্মণাবতী” বলিয়া পরিচিত হইয়া উঠিয়াছিল। অনেক দিন পর্য্যস্ত এদেশের মুসলমান রাজ্য দিল্লীর ইতিহাসলেখকদিগের গ্রন্থে “লক্ষ্মণাবতীরাজ্য” বলিয়াই উল্লিখিত আছে। লক্ষ্মণসেনের বীরপুত্র বিশ্বরূপসেনের শাসনলিপিতে দেখিতে পাওয়া যায়,—তিনি বাহুবলে আত্মরক্ষা করিয়া— “গর্গ্যবনাম্বয় প্রলয় কালরুদ্র” নামে পরিচিত হইয়াছিলেন। মিনহাজ যখন এদেশে পদার্পণ করেন, তখনও ( বক্তিয়ার থিলিজির বঙ্গগমনের ষষ্টিবৰ্ষ পরেও) পূৰ্ব্ববঙ্গ লক্ষ্মণসেনের পুত্ৰগণের অক্ষুন্ন অধিকারে বর্তমান ছিল,—তদেশে তখন পর্য্যস্তও মুসলমানশাসন বিস্তৃত হইতে পারে নাই। - শাসনলিপির ও মুসলমান-ইতিহাসলেখকের এই সকল উক্তির সমালোচনা করিলে বুঝিতে পারা যায়,—বক্তিয়ার সহজে এদেশে অধিকার বিস্তার করিতে পারেন নাই ;– তিনি যেখানে অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন, তাহ নিকটবৰ্ত্তী কয়েকটি পরগণা মাত্র ; এবং সেখানেই মুসলমানদিগের সর্বপ্রথম জায়গীর লাভের প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। অধ্যাপক ব্লকম্যান পুরাতন বঙ্গভূমির - ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক তথ্য সংকলনের জন্ত প্রভূত অধ্যবসায় স্বীকার করিয়া ষে প্রবন্ধ রচনা করিয়া গিয়াছেন, তাহাতে তিনিও লিখিয়া গিয়াছেন,—“দিনাজপুরের অন্তর্গত দেবকোট নামক স্থানে একটি সেনানুিবাস সংস্থাপিত করিয়া, বক্তিয়ার যুদ্ধকলহে লিপ্ত ছিলেন এবং সেই সেনানিবাসই তাহার বিজয়রাজ্যের পূৰ্ব্বোত্তর সীমা বলিয়া পরিচিত ছিল।” এই সেনানিবাসে ১২০৫ খৃষ্টাব্দের সম