পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSbー কারণ আস্থার সংগ্রহ। আধুনিক পৃথিবীতে বাণিজ্যরক্ষার যে অজুহাত উঠিয়াছে তাহার অর্থ অন্ত কিছুষ্ট নহে, কেমন করিয়া কোন জাতি মুখস্বচ্ছন্দে উদর পূৰ্ত্তি করিয়া থাকিতে পারিবে। যদি বিজ্ঞানের দরবারে তাহার সমস্ত মীমাংসিত হইয়া যায় তবুে আর যুদ্ধ বিগ্ৰহাদির কারণ কি থাকিবে ? মানুষের বাসস্থান লইয়া পুরাতন পৃথিবীতে বহু যুদ্ধাদি অবগুই সংঘটিত হইয়াছে—কিন্তু তৎসম্বন্ধেও একটু বিবেচনা করিলেই বুঝা যায় মানব যে দেশে শস্যাদি উৎপন্ন হটবার সুবিধা দেখিয়াছে সেই দেশের প্রতি লোলুপত বশতঃই এক দল অপর দলের সহিত সমরে লিপ্ত হইয়াছে। স্বাস্থ্যকর কি অস্বাস্থ্যকর বিবেচনা না করিয়া যেখানে ভাল রকম শস্ত উৎপন্ন হয় সেই খানেই সকলে মাথা গুজিবার চেষ্টা করিয়াছে। এই প্রকারে বহু অস্বাস্থ্যকর, জররোগের আকর, সিক্ত নিম্নভূমি মানবের বাসস্থান হইয়াছে ও তথাকার অধিবাসীরা বহুব্যাধিগ্রস্ত হইয়া অকালে প্রাণত্যাগ করিতেছে। অনেক জাতির শারীরিক অবনতির প্রধান কারণই তাহাদের অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান। বার্থেলো বলেন, মানবকে আহারের জন্য শস্তক্ষেত্রের প্রতি আর তাকাইয়৷ থাকিতে না হইলে মানব স্বাস্থ্যকর উচ্চ ভূমিতে গিয়া বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিবে। আজ যাহা মরু বলিয়া পরিচিত ও পরিত্যক্ত, বিজ্ঞানের আমলে তাহাই মনোরম উষ্ঠান সমন্বিত মানবের স্ববাসস্থানে পরিণত হইবে । বহু অর্থ ব্যয়ে শৈলাবাস নিৰ্ম্মাণ করিয়া কেবল ধনীই এখন তাহার মুখভোগ করিতে সমর্থ কিন্তু বিজ্ঞানের রাজত্ব ক্রমশঃ উপরে উঠতে থাকিলে উদ্ধে উচ্চ পৰ্ব্বতশিখরগুলিতেও সৰ্ব্বসাধারণ মানব কর্তৃক নগর উপনগর প্রভৃতি স্থাপিত - হইয়া আসিবে। শেষ কথা, ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে অনেকেরই বিষম সন্দেহ ও আশঙ্কা আছে। অনেকেই মনে করেন বিজ্ঞানের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্মের ক্ষেত্র ক্রমশঃ খাট হইয়া আসিবে— বিজ্ঞানবাস্ত্র ধর্মের মেষশাবকটাকে বুঝি উদরসাৎ করিয়া ফেলিবে—অথৰ বিজ্ঞানের ভাষায় বলিতে গেলে, বিজ্ঞানের প্রথর তাপে ও জ্ঞানচক্ষুর বৈছাতিক বিশ্লেষণে জলমতিতরলং ধৰ্ম্মটুকু বুঝি হাওয়া হইয়া উড়িয়া যাইবে। কিন্তু এই শ্রেণীর সন্দেহবাগিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, ধৰ্ম্মকর্তা প্রবাসী । --WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি).------ ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)...WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) ও বিজ্ঞানকৰ্ত্ত কি দুই, ধৰ্ম্মের ফলভোগী যে মানব বিজ্ঞানের ফলভোগীও কি সেই মানব নহে ? যদি জিজ্ঞাসা করা যায় । যে, যে মানব ইষ্টকামনায় কঠোর তপস্তায় গুহানিছিন্ত ধৰ্ম্মতত্ত্বকে অনুসন্ধান করিয়া বাহির করে সেই মানবই কি সত্যসন্ধ বেশে গিরিশৃঙ্গে, অতল জলধিতলে, বোমাকাশে, ভূগর্ভে প্রবিষ্ট অগাধখাতে প্রকৃতি দেবীর অনুসরণ করিয়া কঠোর আরাধনায় তাহার সন্তোষসাধন পূৰ্ব্বক বরস্বরূপে একটা একটা বিজ্ঞানতত্ব গ্রহণ করিতেছে না? তবে তাছাদের কি উত্তর আছে জানি না। ধৰ্ম্মের সহিত বিজ্ঞানের শক্রতা বা বিরোধভাব হইবার সম্ভাবনা কোথা র্তাহারা কি বুঝাইয়া দিবেন জানি না। বার্থেলোও বলেন ধৰ্ম্ম ও বিজ্ঞান মধ্যে কোন বিরুদ্ধ ভাব নাই, হওয়াও সম্ভব নহে। যে ধৰ্ম্ম যে যুগে উদ্ভূত হইয়াছে তৎধৰ্ম্ম তাৎকালির বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি গাথিয়াই দাড়াইয়াছিল কিন্তু বিজ্ঞান কিছু স্বাধীন, কারণ অল্পসংখ্যকের মুখাপেক্ষী, তাহারা আবার জ্ঞানবৰ্ত্তিকার উদ্দীপনায় অগ্রসর ও তৎপর, সুতরাং অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতি । তাই বিজ্ঞান অন্ধকারকে ফেলিয়া রাখিয়া আগে আগে চলে, ধৰ্ম্ম বহুভারাক্রান্ত, অন্ধকারকে সঙ্গে টানিয়া লইয়া চলিতে হয় বলিষ্ট কিছু ধীরে পিছু পিছু হাটে ; এই দূরত্বেই ভ্রম হয় উভয়ের মধ্যে যেন বিরুদ্ধভাব থাকা বশতঃ উভয়ে ক্রমশ: বিচ্ছিন্ন হইয় পড়িতেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানই ধৰ্ম্মের জন্ত পথ প্রস্তুত করিয়া অগ্রবর্তী হয়, ধৰ্ম্ম তাহার পশ্চাদবর্তী থাকে। বিজ্ঞান সচল, ধৰ্ম্মও আচল নহে-দৃষ্টিভ্রম বশতঃ তন্ত্রণ বোধ হয় মাত্র । উদাহরণ দিয়া বার্থেলে বুঝাইয়াছেন বিজ্ঞান ও ধৰ্ম্ম উভয়েই যেন দুই ব্যক্তির দ্যায় কোন উচ্চ চূড়া আরোহণ করিতেছে, বিজ্ঞান আগে আগে ধৰ্ম্ম পিছে পিছে। উপরের স্তরে উঠতে উঠিতে বিজ্ঞানের দৃষ্টিপথে যে নূতন । নূতন দৃপ্ত আবির্ভূত হয় সে সৰ্ব্বদাই তাহ ঘোষণা করিতেছে কিন্তু ধৰ্ম্ম নীচের স্তরে থাকায় তাহার দৃষ্টি শক্তির প্রসার এখনো তত বিস্তৃত হয় নাই বলিয়া প্রথমে তাহা অবিবাদ করিতেছে কিন্তু যেই অগ্রসর হইয়া বিজ্ঞানের পুরাতন স্থানে পৌছিতেছে তখন বিজ্ঞানের পূর্ব উক্তির সত্যন্ত সম্যক্ উপলব্ধি করিতেছে বটে কিন্তু ইত্যবসরে আরওঁ উপরে উঠয় বিজ্ঞান যে আবার নূতন ঘোষণা করিতেছে [৮ম ভাগ। ১০ম সংখ্যা । ] তদ্বিষয়ে আবার সন্দিহান হইতেছে ; ধৰ্ম্ম পুনরায় বিজ্ঞানের স্থলনে পৌছিলে বিজ্ঞানের এই উক্তির বিষয়ে তাহার যে সন্দেহ তাহা দূর হইবে বটে, কিন্তু বিজ্ঞানের নূতনতর ঘোষণা বা প্রচারে পূৰ্ব্ববৎ সন্দিহান থাকিয়াই বাইবে । এষ্টরূপে বিজ্ঞান ও ধৰ্ম্ম আগু পিছু হইয়া উভয়েই অগ্রসর হইতেছে। বিজ্ঞান আগে হঁটিলেই ধর্মের গতির সম্ভাবনা হয়, বিজ্ঞানের উন্নতির অভাবে ধৰ্ম্ম নিশ্চল হইয়া পড়ে। বিজ্ঞান রেলগাড়ীর এঞ্জিন, আগুন জলে সিদ্ধ ইষ্টয়, তাপতাড়না সহ করিয়া তাহাকেই আগে মাথা ঠেলিতে হয় ; ধৰ্ম্ম সুখদায়ক গাদি আঁটা আরোহীর গাড়ী; গন্তব্য পথে যাইতে হইলে মানব ইহারই আশ্রয় গ্রহণ করে ফুট কিন্তু বিজ্ঞানের দপ্ত এঞ্জিনের গতি না থাকিলে, অনুগ্রহ করিয়া ইঙ্গকে যুড়িয়া না লইলে সুখাসন ধৰ্ম্মযানের সাধ্য নাই মানুষকে ঠিক যায়গায় পৌছাইয়া দেয়। অনাদি অনন্ত কাল বিজ্ঞান ও ধৰ্ম্মের এইরূপ দূরত্ব থাকিয়া যাইতে পারে। কিন্তু তাহার কারণ দ্বন্দ্ব নহে ধৰ্ম্মের প্রতি বিজ্ঞানের আকর্ষণ ও বিজ্ঞানের প্রতি ধৰ্ম্মের সম্যক নির্ভরই তাহার একমাত্র কারণ। বিজ্ঞানের প্রতি ধৰ্ম্মবিশ্বাসীর যে সন্দেহ তাহা ভ্রান্তিমূলক ; সুতরাং বিজ্ঞানভয়ে ভীত ধৰ্ম্মাচরণীর জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অকৃতজ্ঞতা পাপে লিপ্ত হওয়া হেতু প্রকৃত ধৰ্ম্ম অর্জন হয় কিনা তদ্বিষয়েও ঘোরতর সন্দেহ হইতে পারে। এইরূপ নানা কথায় মুসো মার্সিলিস্ বার্থেলে তাহার প্রসঙ্গ সমাপ্ত করিয়াছেন। ইহার সত্যাসত্য, যৌক্তিকতা অযৌক্তিকতা, সম্ভবত অসম্ভবত, ভ্রাতৃবর্গের নিজ নিজ বিবেচ্য। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি কৌতুক উদেখেই অন্তকার এই প্রবন্ধ উপস্থিত করা হইয়াছে সুতরাং এই প্রবন্ধের কোন অংশ কাহারে কোন বিশ্বাস বা জ্ঞানের কিম্বা ধারণার* বিরুদ্ধবাদী হইলে প্রবন্ধপাঠককে তজ্জন্ত দায়ী করিবেন না। ত্ৰযোগেশচন্দ্র দত্ত। ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৫ । দিনাজপুর। আকাশ পদক দিনাজপুর জাতীয় বিদ্যালয়ে পটত। বৌদ্ধধর্মের বিশ্বপ্রেম। SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSAAAA Q○s বৌদ্ধধর্মের বিশ্বপ্ৰেম । ( পৌষের প্রবাসীতে প্রকাশিত অংশের পর। ) ঐ গ্রন্থেরই আর এক স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়— বোধিসত্ত্ব স্থির সঙ্কল্প করবেন -“আমি এই কুশল-মূল দ্বারা সৰ্ব্বজীবের নয়ন-স্বরূপ হইব, যাহাতে তাছাদের সমস্ত দুঃখরাশি নিবৃত্ত হয় ; আমি সমস্ত জীবের সমস্ত ক্লেশ পরিমোচন করিয়া তাহাদের ত্রাণস্বরূপ হইব ; আমি সমস্ত জীবকে সমস্ত ভয় হইতে রক্ষা করিয়া তাহদের শরণ হইব । সমস্ত স্থানে অনুগমন করিয়া আমি তাহদের গতি স্বরূপ হইব ; •••এবং তিমিরহীন জ্ঞান সন্দর্শন করাইয়া আমি তাহাদের আলোক স্বরূপ হইব...। সমস্ত জীব গুণ-জ্ঞানে অভিচ্ছাদিত হইয়া সমস্ত ক্লেশ হইতে নিমুক্ত হউক ;-সমস্ত জীব দশবলরূপ বিজ্ঞানযুক্ত হইয়া সংসারের ছত্র-স্বরূপ হউক, এবং সমস্ত জীব বুদ্ধবিক্রম রূপ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইয়া সমগ্র জগতের অবলোকনীয় হউক!" ‘আর্য্য বজ্ৰধরস্থত্রে এই বিষয়টি অতিবিস্তৃত ও অতিগম্ভীর ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। এ স্থানে তাহা সঙ্কলন করা অসম্ভব। কেবল দিগদর্শন মাত্র করিয়া সম্প্রতি বিরত হইতে হইতেছে। ‘আৰ্য্য গগনগঞ্জস্বত্র’ নামক গ্রন্থে একটা অতি ক্ষুদ্র কথায় বিশ্বপ্রেমের ভাবটি স্বপ্রকাশিত হইয়া উঠিয়াছে :– “মাতৃং তন্মম কুশলমূলং, ধৰ্ম্মজ্ঞান কৌশলং বা, যন্ন সৰ্ব্বজীবোপভোগ্যং ভবেৎ।” “আমার যেন সেরূপ পুণ্যমূল বা ধৰ্ম্মজ্ঞানে কুশলতা না হয়, যাহা সমগ্ৰ জীবের উপভোগ্য না হইবে।” ‘বীরদত্ত পরিপৃচ্ছায় লিথিত হইয়াছে —“শকটের স্থায় ভার বহন করিবার জন্ত ধৰ্ম্মবুদ্ধিতে এই শরীরকে বহন করিতে হইবে।” - ভগবান ‘বোধিসত্ত্বপ্রাতিমোক্ষে বলিয়াছেন—“শারিপুত্র, এই ধৰ্ম্ম বন্ধচ্ছেদের জন্ত, এই ধৰ্ম্ম জন্মজরা, ব্যাধি-মরণ, ও শোকদুঃখাদির ছেদের জন্ত ; ইহাকে রত্ন বলিয়া, ঔষধ বলিয়া চিন্তা করিবে ; ইহা সমস্ত জীবের রোগপ্পানি উপশমনের জন্য। সমস্ত জীবের রোগপ্লানির উপশমনের জন্ত আমাদের এইরূপ ধৰ্ম্মই অভিলষণীয়।” - ‘অষ্ট সাহত্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতায় (৩০ অঃ ৪৯৫ পৃ: )