পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাইতে পাইত না । Q8や2 তাহার সুঠাম দেহ, তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ অনিন্দ্য সুন্দর...কি অনুরাগ, কি বিদ্বেষ—কিছুতেই তার আসক্তি নাই ; তিনি প্রিয়দর্শন, মধুর প্রকৃতি, দ্যায়ানুসারিণী ও হিতবাদিনী, তিনি লজ্জাশীল ও সতীসাধ্বী, তিনি ধৰ্ম্ম পালন করিয়৷ থাকেন। তিনি গৰ্ব্বশূন্ত, কার্কগুরহিত, চাপল্যহীন ; প্তাহার কাপট্য কিম্বা ছলনা নাই। তিনি ইচ্ছামুখে ত্যাগ স্বীকার করেন, তিনি সকলের হিতকামনা করেন। তিনি কৰ্ম্মের মাহাত্ম্য বোঝেন, তিনি কখন মিথ্যা বাক্য প্রয়োগ করেন না, তিনি সৰ্ব্বদাই সত্য পথে বিচরণ করেন, এবং তাহার মন মুসংযত। সমস্ত পৃথিবীতে পরিখ্যাত রমণীদের মধ্যে যে সকল দোষরাশি পরিলক্ষিত হয়, সে সব দোষ তাহাতে নাই, ধৰ্ম্মের নিয়মানুসারে, তপস্বিনীর স্থায় তিনি কঠোর ব্ৰতাচরণে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিতা। রাজার অনুমতি পাইয়াছেন, ৩২ মাস তিনি কামপ্রবৃত্তির অনুবৰ্ত্তিনী হইবেন না। তিনি দাড়াইয়া থাকুন, বসিয়া থাকুন, শুইয়া থাকুন,—যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন, শুভ কৰ্ম্মের জ্যোতিতে তাহার সমস্ত জীবন উদ্ভাসিত হইতেছে। কি দেব, কি দানব, কি মানব, কেহ তাহার প্রতি কুদৃষ্টিপাত করিতে পারে না—সকলেই তাহাকে জননী রূপে দুহিত। রূপে দর্শন করে মায়াদেবীর স্বকৃতির প্রভাবে, বৃহৎ রাজপরিবারের নিযুত উন্নতি হইতেছে। পাশ্ববত্তী রাজার রাজ্য আক্রমণ করেন না বলিয়া এই নৃপতির খ্যাতি প্রতিপত্তি বৰ্দ্ধিত হইয়াছে। যেমন মায়া উপযুক্ত পাত্র, তেমনি সেই পরমারাধ্য পুরুষও অপূৰ্ব্ব মহিমায় দীপ্তি পাইতেছেন। এইরূপে দেখা যায়, পুত্র ও তাহার মাত মায়াদেবী—উভয়ই সৰ্ব্বপ্রকার উৎকৃষ্ট গুণে ভূষিত।” (৩০) সমস্ত প্রখ্যাত মহাপুরুষদিগের দ্যায়, ভগবান বুদ্ধেরও জন্ম শুভসূচক নিমিত্ত সমূহের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল ; একজন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ রাজা শুদ্ধোদনের নিকট ভবিষ্যদবাণী করে— তাহার যে পুত্র জন্মগ্রহণ করিবে, সে হয় একজন বড় রাজা, নয় একজন প্রখ্যাত মুনি হইবে। এইরূপ ভবিষ্যদবাণীতে রাজা ভীত হইয়া, পুত্র জন্মিবা মাত্র তাহাকে তিনটি বৃহৎ প্রাসাদের মধ্যে বদ্ধ করিয়া রাখিলেন, তাহার বাহিরে সে কেবল যুবকবৃন্দ ও সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর রূপসা ললনার তাহার নিকট যাইতে পারিত, এবং দরিদ্র, আতুর প্রবাসী । জঙ্ঘা এন-হরিণের ন্তায় ; তাহার হস্ত পদ অতীব শোভন ও [ ৮ম ভাগ। জরাগ্রস্ত লোকদিগের প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ সৰ্ব্বতোভাবে নিষিদ্ধ ছিল। শুন্ধোদন ভাবিয়াছিলেন এইরূপ উপায়ে / মানবদুঃখের দৃপ্ত সমূহ পুত্রের দৃষ্টিপথে কখনই পড়িবে না। ১৬ বৎসর বয়সে, পুত্রের বিবাহ দিয়া, রাজা তাহাকে রাজেচিত সৰ্ব্ব প্রকার ঐশ্বৰ্য্য ও ভোগবিলাসের দ্বার পরিবেষ্টিত করিয়া রাখিলেন। ক্ষণেকের জন্য র্তাহার মনে হইয়াছিল, সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ যে ভবিষ্যদবাণী করিয়াছিল তাহাই ফলিবে—তাহার পুত্র চক্ৰবৰ্ত্তী রাজা হইবে। বিজ্ঞান শিল্পকলা ব্যায়াম প্রভৃতি ক্ষত্রোচিত সমস্ত শিক্ষিতব্য বিষয়ই তাহাকে উত্তমরূপে শেখান হইল। এবং জনশ্রুতি এইরূপ, সেই সকল বিষয়ে যুবা সিদ্ধার্থ বিলক্ষণ পারদর্শী হইয় উঠিয়াছিলেন। কিন্তু বিধাতা এই রাজপুত্রের জন্য আর একটি মহত্তর জীবন নিৰ্দ্ধারিত করিয়াছিলেন-পৃথিবীতে যতগুলি বৃহৎ ধৰ্ম্মমত আছে তাহারই একটির তিনি নেতা হইবেন বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছিলেন। শাক্যরাজ সিদ্ধার্থের লক্ষ লক্ষ প্রজা থাকা সত্ত্বেও তাহার নাম বিস্মৃতিসাগরে নিমগ্ন হইল ; পক্ষাস্তরে, সেই সিদ্ধার্থ জ্ঞান ও ধৰ্ম্মের প্রভাবে বুদ্ধত্ব লাভ i করিয়া ৪০ কোটিরও অধিক লোকের নিকট এক্ষণে পূজিত হইতেছেন। তিনি সুদৰ্শন ও প্রিয়বাদী ছিলেন ; বিশিষ্ট লোকের সমস্ত লক্ষণই তাহাতে ছিল । তাছার জননীর ন্যায়, তিনিও ৩২টি মহাপুরুষের লক্ষণে এবং ২৪টি গৌণ গুণে বিভূষিত ছিলেন। ললিতবিস্তরে এইরূপ কতকগুলি গুণের বর্ণনা ১০ম সংখ্যা । ] o ਾਰੋ ੋਸ অশক্ত বৃদ্ধকে দেখিতে পাইলেন। বিস্থিত ইয়া, এই অদৃষ্টপূৰ্ব্ব অদ্ভূত ব্যক্তি সম্বন্ধে তিনি তাহার পরিচারককে জিজ্ঞাসা করিলেন। পরিচারক বলিল, সকল দ্যই ঐ বৃদ্ধের মত হইবে এবং তিনিও একদিন এইরূপ হইবেন। এই কথা শুনিয়া বিষন্নভাবে তিনি তার প্রাসাদে ফিরিয়া গেলেন। আর একদিন, ক্ষতাচ্ছন্ন একজন আতুরকে দেখিতে পাইলেন; পরিচারককে জিজ্ঞাসা করায় সে বলিল, সকল মনুষ্যই রোগগ্রস্ত হইয়া থাকে। তৃতীয় দিনে একটা গলিত শৰ দেখিতে পাইলেন; এইবার তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হইলেন, কেন না, তিনি জানিতে পারিলেন, মৃত্যু হইতে কাহারও অব্যাহতি নাই। পরিশেষে তিনি মুণ্ডিত-মস্তক, কষায়বস্ত্র-পরিহিত একজন ধৰ্ম্মব্রত বৃদ্ধ ভিক্ষুকে দেখিতে পাইলেন। এইবার তিনি শান্তি ও মোক্ষের নিদর্শন প্রাপ্ত হইয়া একেবারে স্থিরসঙ্কল্প হইলেন; কেন ন৷ তিনি জীবনের ক্ষণভঙ্গুরতা ও নশ্বরতা প্রত্যক্ষ দেখিয়াছিলেন ও বুঝিয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি দুঃখ-শোক-জরা-মৃত্যু ও অবশ্যম্ভাবী পুনর্জন্মের কারণ এবং ঐ সমস্ত নিবারণের উপায়ুচিস্তনে প্রবৃত্ত হইলেন। আরও ভাবিলেন, ইহাতে সুসিদ্ধ হইতে হইলে, | পিতৃগৃহে, স্বকীয় প্রাসাদ, স্বকীয় পরিবার—এমন কি, যাহা কিছু তাহার ধ্যানের ব্যাঘাত করিতে পারে, সমস্তই পরিত্যাগ করিতে হইবে । এই সময়ে তিনি শুনিলেন, তাহার একটি পুত্র জন্মিয়াছে ; ইহাতে যে সংসার হইতে পলাইতে উষ্ঠত হইয়াছেন, সেই সংসারবন্ধনেই আবার বদ্ধ হইতে হইবে আছে :–“যুবপুরুষ সিদ্ধার্থের চুড়াদেশ তুঙ্গ ছিল। তাহার ললাট বিশাল ও সমান ; নেত্র ঘোর কৃষ্ণবর্ণ ; ৪৩টি দন্ত সমান, ঘনসন্নিপিষ্ট ও শুভ্র ; চৰ্ম্ম স্থা ও স্বর্ণাভ। দেহের বহিরংশ সিংহের ষ্ঠায়। গঠন স্তগ্রোধ বৃক্ষের ন্যায়; তাছার স্বকুমার। তাছার মস্তক বৃহৎ ও পরিপুষ্ট, তাহার কেশ কৃষ্ণবর্ণ ও কুঞ্চিত। তিনি সম্পূর্ণরূপে জিতেন্ত্রি ছিলেন।” (৩১) একটি আখ্যায়িকা হইতে জানা যায়, কিরূপে তাহার জীবনের কৰ্ত্তব্য নিৰ্দ্ধারিত করিলেন। একদিন যখন তিনি তাহার প্রাসাদের উদ্ধানে বিচরণ করিতেছিলেন সেই সময়ে কার্য্যে পরিণত করিলেন ; যে ঘরে র্তাহার স্ত্রী নিদ্রা বিবেচনা করিয়া তিনি বলিয়া উঠিলেন, “আমার পুত্র রাহুল জন্মগ্রহণ করিয়াছে। উহা আমাকে সংসারে বন্ধ করিবার জন্ত আর একটি শৃঙ্খল ।” র্তাহার স্ত্রী তাঙ্গকে দেখিতে পাইয়া বলিলেন : “ধন্ত সেই মাতার শান্তি, ধন্য সেই পিতার শাস্তি,—যাহারা এইরূপ পুত্র লাভ করিয়াছেন ; ধন্ত সেই পত্নীর শাস্তি— যে এরূপ স্বামী লাভ করিয়াছে।” তখন সিদ্ধার্থ মনে মনে এইরূপ চিন্তা করিলেন :-—“ই, ঠিক্‌ কথা ; কিন্তু যে শাস্তিতে হৃদয়ে সুখ আনয়ন করে, সে শান্তি কোথা হইতে আইসে ?” পরিশেষে, একদিন রাত্রে, তিনি র্তাহার সঙ্কল্পকে বৌদ্ধধৰ্ম্ম । 6.8% যাইতেছিলেন সেই ঘরে গিয়া তাহাৰ প্রতি ও তাহার পুত্রের প্রতি অন্তিম বিদায়-সম্ভাষণ করিয়া এবং শুধু একজন বিশ্বস্ত ভূতাকে সঙ্গে লইয়া নিজ প্রাসাদ চিরকালের জন্য পরিত্যাগ করিলেন। (অনেক বৎসর পরে, ভিক্ষুর বেশে, কমণ্ডলু হস্তে, আর একবার নিজ প্রাসাদে প্রত্যাগমন করিয়াছিলেন )। রাত্রে একাকী পলায়ন করিয়া, শাস্তি লাভের উদ্দেশে, এবং আপনার ও বিশ্বমানবের মুক্তির উপায় নিৰ্দ্ধারণ করিলার জন্ত একটি অরণ্যের অভিমুখে যাত্রা করিলেন। অমনি প্রলোভক মার ছায়ার দ্যায় তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল, এবং দৌৰ্ব্বল্য, কাম, পরিতাপ প্রভৃতি তাহার কোন রন্ধ অন্বেষণে প্রবৃত্ত হইল। মার ভাবিল, এইরূপ কোন রন্ধ পাইলেই,—যে তাঙ্গার হস্ত হইতে সমস্ত মানব-আত্মাকে ছিনাইয়া লইবার চেষ্টা করিতেছে, সেই শক্রকে আবার স্বকীয় বশে আনিতে সমর্থ হইবে। অনোমা নদীর তীরে উপনীত হইয়া, তিনি তাহার সুদীর্ঘ সুন্দর কেশগুচ্ছ অসির দ্বারা ছেদন করিলেন এবং তাহার অস্ত্ৰ শস্ত্র ও অশ্ব ভূত্যের হস্তে সমর্পণ করিয়া তাহাকে কপিলবস্তুতে ফিরিয়া পাঠাষ্টলেন। এখন হইতে, জগতের সহিত তাহার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হইল। সেই যুগের প্রচলিত প্রথানুসারে, সিদ্ধার্থ প্রথমেই কতকগুলি কৃতবিদ্য ব্রাহ্মণের শিক্ষাধীনে তাপসব্রত অবলম্বন করিলেন । ৭ বৎসর কাল ধরিয়া তিনি কঠোর তপশ্চরণ, শরীরনিগ্রহ, দীর্ঘ উপবাস, গভীর ধ্যান ও হুক্স তত্ত্বাদির অনুশীলনে প্রবৃত্ত হইলেন। কিন্তু, তাহাতে র্তাহার মনের শাস্তি হইল না, এবং তিনি যে বীজমন্ত্রের অন্বেষণ করিতেছিলেন সেরূপ মোক্ষপ্রদ কোন বীজমন্ত্রও লাভ করিতে পারলেন না। তাই তিনি তাহার দীক্ষাগুরুদিগকে পরিত্যাগ করিয়া, প্রবজ্য অবলম্বন করিলেন ; এবং ইতস্তত ভ্রমণ করিতে করিতে, নৈরঞ্জন নদীর নিকটবৰ্ত্তী, উরুবেল্লা নামক এক মহারণ্যে উপনীত হইলেন। কঠোর হইতে কঠোরতর তপশ্চরণ করিয়া সেই অরণ্যে দীর্ঘকাল ভ্ৰমণ করিলেন। অলৌকিক পরম জ্ঞান লাভে যাহাতে স্বসিদ্ধ হইতে পারেন এই অভিপ্রায়ে, অপরিহার্য্য দৈহিক প্রয়োজনসমূহের বন্ধন । হইতে মুক্ত হইবার নিমিত্ত, বিবিধ কঠোর কৰ্ম্ম সাধন