পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Ꮼ8 রাখিবার প্রতি বরদাসুন্দরীর একান্ত বেদনাপূর্ণ সচেতনতাকে ব্রাহ্মগৃহিণী মাত্রেরই পক্ষে একটি সুদৃষ্টান্ত বলিয়া সকলের কাছে প্রকাশ করিলেন। তাহার এই প্রশংসার মধ্যে পরেশ বাবুর প্রতি বিশেষ একটু খোচা ছিল। হারান বাবু একদিন পরেশ বাবুর সন্মুখেই স্বচরিতাকে কহিলেন, “শুনলুম না কি আজকাল তুমি ঠাকুরের প্রসাদ খেতে আরম্ভ করেচ ?” সুচরিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল কিন্তু যেন সে কথাটা শুনিতেই পাইল না এমনিভাবে টেবিলের উপরকার দোয়াতদানিতে কলমণ্ডলা গুছাইয়া রাথিতে লাগিল । পরেশ বাবু একবার করুণনেত্রে স্বচরিতার মুথের দিকে চাহিয়া হারান বাবুকে কহিলেন, “পাল্লুবাবু, আমরা যা কিছু থাই সবই ত ঠাকুরের প্রসাদ।” হারান বাবু কহিলেন, “কিন্তু স্বচরিতা যে আমাদের ঠাকুরকে পরিত্যাগ করবার উদ্যোগ করচেন।” পরেশ বাবু কহিলেন, “তাও যদি সম্ভব হয় তবে তা নিয়ে উৎপাত করলে কি তার কোনো প্রতিকার হবে ?” হারান বাবু কহিলেন, “স্রোতে যে লোক ভেসে যাচ্চে তাকে কি ডাঙায় তোলবার চেষ্টাও করতে হবে না ?” পরেশ বাবু কহিলেন– “সকলে মিলে তার মাথার উপর ঢেলা ছুড়ে মারাকেই ডাঙায় তোলবার চেষ্টা বলা যায় না। পাম্বাবু আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি এতটুকু বেলা থেকেই স্বচরিতাকে দেখে আসচি। ও যদি জলেই পড়ত তাহলে আমি আপনাদের সকলের আগেই জানতে পারতুম এবং আমি উদাসীন থাকতুম না।” হারান বাৰু কহিলেন—“স্বচরিতা ত এখানেই রয়েচেন। আপনি ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন না। শুনতে পাই উনি সকলের ছোয়া থান না। সে কথা কি মিথ্যা ?” সুচরিতা দোয়াতদানের প্রতি অনাবশ্যক মনোযোগ দূর করিয়া কহিল, “বাবা জানেন আমি সকলের ছোয়৷ থাইনে। উনি যদি আমার এই আচরণ সহ করে থাকেন তাহলেই হল ।* আপনাদের যদি ভাল না লাগে আপনার যত খুসি আমার নিন্দ করুন কিন্তু বাবাকে বিরক্ত করচেন কেন ? উনি আপনাদের কত ক্ষমা করে চলেন তা প্রবাসী । MMMMMMMM MMMMMMMMMAMMMAMAMMMMMMSSMMSMMMMMMSSMMSMMMMMMMS [ ৮ম ভাগ। হারান বাবু আশ্চৰ্য্য হইয়া ভাবিতে লাগিলেন—“স্বচরি৷ তাও আজকাল কথা কহিতে শিথিয়াছে।” - পরেশ বাবু শান্তিপ্রিয় লোক ; তিনি নিজের বা পরের সম্বন্ধে অধিক আলোচনা ভালো বাসেন না। এ পর্য্যন্ত্র ব্রাহ্মসমাজে তিনি কোনো কাজে কোনো প্রধান পদ গ্রহণ করেন নাই ; নিজেকে কাহারে লক্ষ্যগোচর না করিয়া নিভৃতে জীবন যাপন করিয়াছেন। হারান বাবু পরেশের : এই ভাবকেই উৎসাহীনতা ও ঔদাসী বলিয়া গণ্য করিতেন, এমন কি, পরেশ বাবুকে তিনি ইহা লইয়া ভং, সনাও করিয়াছেন। ইহার উত্তরে পরেশ বাবু বলিয়াছিলেন, ঈশ্বর, সচল এবং অচল এই দুই শ্রেণীর পদার্থই সৃষ্টি করিয়াছেন, আমি নিতান্তই অচল। আমার মত লোকের দ্বারা যে কাজ পাওয়া সম্ভব ঈশ্বর তাহা আদায় করিয়া লইবেন । যাহা সম্ভব নহে তাহার জন্য চঞ্চল হইয়া কোনো লাভ নাই। আমার বয়স যথেষ্ট হইয়াছে ; আমার কি শক্তি আছে আর কি নাই তাহার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। এথন আমাকে ঠেলাঠেলি করিয়া কোনো ফল পাওয়া যাইবে না। হারান বাবুর ধারণা ছিল তিনি অসাড় হৃদয়েও উৎসা সঞ্চার করিতে পারেন ; জড়চিত্তকে কৰ্ত্তব্যের পথে ঠেলিয়া দেওয়া এবং স্খলিতজীবনকে অনুতাপে বিগলিত করা একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা ; তাছার অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং একাগ্র শুভ ইচ্ছাকে কেহই অধিকদিন প্রতিরোধ করিতে পারে না এইরূপ র্তাহার বিশ্বাস । তাহার সমাজের লোকের ব্যক্তিগত চরিত্রে যে সকল ভাল পরিবর্তন ঘটয়াছে তিনি নিজেকেই কোনো না কোনো প্রকারে তাহার প্রধান কারণ বলিয়া নিশ্চয় স্থির করিয়াছেন । তাহার অলক্ষ্য প্রভাবও যে ভিতরে ভিতরে কাজ করে ইহাতে তাহার সন্দেহ নাই। এ পর্য্যস্ত সুচরিতাকে যথনি তাহার সম্মুখে কেহ বিশেষরূপে প্রশংসা করিয়াছে তিনি এমনভাব ধারণ করিয়াছেন যেন সে প্রশংসা সম্পূর্ণই তাহার। তিনি উপদেশ, দৃষ্টান্ত এবং সঙ্গতেজের দ্বারা মুচরিতার চরিত্রকে এমন করিয়া গড়িয়া তুলিতেছেন যে এই সুচরিতার জীবনের দ্বারাই লোক-সমাজে তাহার আশ্চৰ্য্য প্রভাব প্রমাণিত । s I i সঙ্কট হইতে উদ্ধারের যে পথ কোথায় তাহ মুচরিতা ১০ম সংখ্যা । ] সেই সুচরিতার শোচনীয় পতনে নিজের চাপাইলেন পরেশ বাবুর স্বন্ধে। পরেশ বাবুকে লোকে বরাবর প্রশংসা করিয়া আসিয়াছে কিন্তু হারান বাবু কখনো তাহাতে যোগ দেন নাই ; ইহাতেও তাহার কতদূর প্রাজ্ঞতা প্রকাশ পাইয়াছে তাহা এইবার সকলে বুঝিতে পরিবে এইরূপ তিনি আশা করিতেছেন । হারান রাবুর মত লোক আর সকলি সহ করিতে পারেন কিন্তু যাহাদিগকে বিশেষরূপে হিতপথে চালাইতে চেষ্টা করেন তাহারা যদি নিজের বুদ্ধি অনুসারে স্বতন্ত্র পথ অবলম্বন করে তবে সে অপরাধ তিনি কোনোমতেই ক্ষমা করিতে পারেন না। সহজে তাহাদিগকে ছাড়িয়া দেওয়া প্তাহার পক্ষে অসাধ্য ; যতই দেখেন তাহার উপদেশে ফল হইতেছে না ততই তাহার জেদ বাড়িয়া যাইতে থাকে ; তিনি ফিরিয়া ফিরিয়া বারম্বার আক্রমণ করিতে থাকেন। কল যেমন দম না ফুরাইলে থামিতে পারে না পতনিও তেমনি কোনোমতেই নিজেকে সম্বরণ করিতে পারেন না ; বিমুখ কর্ণের কাছে এক কথা সহস্রবার আবৃত্তি করিয়াও হাঁর মানিতে চাহেন না। ইহাতে মুচরিতা বড় কষ্ট পাইতে লাগিল,—নিজের জন্য নছে, পরেশ বাবুর জন্ত । পরেশ বাবু যে ব্রাহ্মসমাজের সকলের সমালোচনার বিষয় হইয়া উঠিয়াছেন এই অশান্তি নিবারণ করা যাইবে কি উপায়ে ? অপর পক্ষে স্বচরিতার মাসিও প্রতিদিন বুঝিতে পারিতেছেন যে, তিনি একান্ত নম্র হইয়া নিজেকে যতই আড়ালে রাখিবার চেষ্টা করিতেছেন ততই এই পরিবারের পক্ষে উপদ্রব স্বরূপ হইয়া উঠতেছেন। এজন্য তাহার মাসীর অত্যন্ত লজ্জা ও সঙ্কোচ স্বচরিতাকে প্রত্যহ দগ্ধ করিতে লাগিল। এই কোনোমতেই ভাবিয়া পাইল না। এদিকে মুচরিতার শীঘ্ৰ বিবাহ দিয়া ফেলিবার জন্য বরদাসুন্দরী পরেশ বাবুকে অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন। তিনি কহিলেন “স্বচরিতার দায়িত্ব আর আমাদের বহন করা চলে না, সে এখন নিজের মতে চলতে আপনারা জানেন ? একি তারই প্রতিফল ?” হইবে এইরূপ র্তাহার আশা ছিল । আরম্ভ করেচে। তার বিবাহের যদি দেরি থাকে তাহ - t –—- গোরা। Q と? SMSMMMAAA AAAASASASS --- ক্ষমতা সম্বন্ধে হলে মেয়েদের নিয়ে আমি অন্ত কোথাও যাব-স্বচরিতার হার গৰ্ব্ব কিছুমাত্র হ্রাগ হইল না তিনি সমস্ত ঘোষ অদ্ভুত দৃষ্টান্ত মেয়েদের পক্ষে বড়ই অনিষ্টের কারণ হচ্চে। দেখো এর জন্ত পরে তোমাকে অনুতাপ করতে হবেই। ললিতা আগেত এরকম ছিল না ; এখন ও যে আপন ইচ্ছামত যা খুসি একটা কাও করে বসে কাকেও মানে না তার মূলে কে ? সেদিন যে ব্যাপারটা বাধিয়ে বসল, যার জন্ত আমি লজ্জায় মরে যাচ্চি ; তুমি কি মনে কর তার মধ্যে সুচরিতার কোনো হাত ছিল না ? তুমি নিজের মেয়েদের চেয়ে সুচরিতাকে বরাবর বেশি ভালবাস তাতে আমি কোনোদিন কোনো কথা বলিনি কিন্তু আর চলে না সে আমি স্পষ্টই বলে রাখচি৷” সুচরিতার জন্ত নহে কিন্তু পারিবারিক অশাস্তির জন্ত পরেশ বাবু চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। বরদাসুন্দরী যে উপলক্ষ্যটি পাইয়া বসিয়াছেন ইহা লইয়া তিনি যে হুলস্থল কাও বাধাইয়া বসিবেন এবং যতই দেখিবেন আন্দোলনে কোনো ফল হইতেছে না ততই দুৰ্ব্বার হইয়া উঠিতে থাকিবেন ইহাতে তাহার কোনো সন্দেহ ছিল না। যদি স্বচরিতার বিবাহ সত্বর সম্ভবপর হয় তবে বর্তমান অবস্থায় স্বচরিতার পক্ষেও তাহ শাস্তিজনক হইতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। তিনি বরদাসুন্দরীকে বললেন, “পায় বাৰু যদি স্বচরিতাকে সম্মত করতে পারেন তাহলে আমি বিবাহ সম্বন্ধে কোনো আপত্তি করব না।” বরদাসুন্দরী কহিলেন—“আবার কতবার করে সম্মত করতে হবে ? তুমি ত অবাক্ করলে! এত সাধাসাধিই বা কেন ? পানু বাবুর মত পাত্র উনি পাবেন কোথায় তাই জিজ্ঞাসা করি। তুমি রাগ কর আর যাই কর সত্যি কথা বলতে কি, স্বচরিতা পায় বাবুর যোগ্য মেয়ে নয়।” পরেশ বাবু কহিলেন, “পামু বাবুর প্রতি স্বচরিতার মনের ভাব যে কি তা আমি স্পষ্ট করে বুঝতে পারিনি। অতএব তারা নিজেদের মধ্যে যতক্ষণ কথাটা পরিষ্কার করে না নেবে ততক্ষণ আমি এবিষয়ে কোনো প্রকারে হস্তক্ষেপ করতে পারব না।” - বরদাসুন্দরী কহিলেন, “বুঝতে পারনি! এতদিন পরে স্বীকার করলে। ঐ মেয়েটকে বোঝা বড় সহজ নয় ! ও বাইরে এক রকম ভিতরে এক রকম।”