পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ سtb) এইক্ষণে বিষ্কার ব্যাপ্তি জনসাধারণের মধ্যে হইতে চলিল, সুতরাং বৰ্ত্তমান অনভিজাতের আর বড় অভিজাতদিগের নেতৃত্বে সস্তুষ্ট নহেন। তাহারা বুঝিতে পারিয়াছেন যে, বিস্তা, ধন প্রভৃতি মানবীয় অভূদিয়কারী যে সকল জিনিষ আছে, তাহাতে মনুষ্যমাত্রেরই তুল্যাধিকার। এইগুলি একমাত্র অভিজাতদিগের স্বাধিকৃত হইতে পারে না। এই কারণে পৃথিবীতে আভিজাত্য ও অনাভিজাত্য লইয়া একটা সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়াছে ; ভগবানই নিশ্চয়রূপে বলিতে পারেন কোনপক্ষ বিজয়লক্ষ্মী লাভ করিবে। তবে সম্ভাবনা এই যে, সংখ্যা, উৎসাহ ও কাৰ্য্যপটুতার গুরুত্ব বা আধিক্যে অনভিজাতেরাই এই সংগ্রামে বিজয়ী হইবেন । অধিকন্তু সংগ্রামকালে উভয় পক্ষের মধ্যে কোন পক্ষই শাস্তিমুখ উপভোগ করিতে পারেন না, উভয়কেই বিজয়াশাপ্রণোদিত হইয়া রণসম্ভার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকিতে হয়। তাই আজ পৃথিবীর কোথাও শাস্তিদেবীকে বিরাজমান দেখিতে পাওয়া যায় না ; সৰ্ব্বত্রই যেন অশাস্তির তপ্ত প্রস্রবণ বহিতেছে। পূৰ্ব্বে যাহারা যে অভিজাত বিশেষের আজ্ঞাবহ ভৃত্যত্ব বা উচ্ছিষ্ট ভোজনেও আপনাকে ধন্ত মনে করিত, তাহারা আর এক্ষণে র্তাহাদিগকে আপনা হইতে শ্রেষ্ঠ বলিয়াও মানিতে চাহে না । এই ত গেল অনভিজাতের কথা । আবার অনেক অভিজাত মহোদয় বিদ্যাশূন্ত ভট্টাচাৰ্য্য বা “স্তম্ভেন নীবীর ইবাবশিষ্ট” উক্তির লক্ষ্য হইয়াও আমার বৃদ্ধ প্রপিতামহ অথবা তাহার বৃন্ধু প্রপিতামহ পণ্ডিত এবং সম্পন্ন ছিলেন বলিয়া ডিম্ম্- করিতে ছাড়েন না। এই উভয় গুণধরদিগের কৃতিনৈপুণ্যে সমাজে একটা অভিনব বিশৃঙ্খল ভাব আসিয়া পড়িয়াছে। আভিজাত্যকে প্রধানতঃ চারিভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে। প্রথম ধৰ্ম্মের আভিজাত্য, দ্বিতীয় বিদ্যার আভিজাত্য, তৃতীয় ভূমির আভিজাত্য ও চতুর্থ ধনের আভিজাত্য। প্রথম ও দ্বিতীয় আভিজাত্যের মূলে অন্তায় বা অধৰ্ম্ম দেখিতে পাওয়া যায় না,পরস্তু তৃতীয় ও চতুর্থ আভিজাত্যের ভিত্তি তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিলে অন্তায় এবং অধৰ্ম্ম ছাড়া বড় কিছু দেখিতে পাওয়া যায় না। পাওয়া যাইবে কি প্রকারে ? পরমেশ্বর জমির স্বষ্টি করিয়াছেন জীব মাত্রের অথবা মানব মাত্রের জন্ত, তাহাতে বলদৃপ্ত হইয়া অন্তের প্রবাসী । উপভোগ্য অংশ স্বায়ুক্ত করিয়া লওয়া ডাকাতিরই নামান্তর মাত্র । কোটী কোট নরনারী দারিদ্র্যের তীব্র নিষ্পেষণে নিষ্পেষিত হইতেছে, ইহার অর্থ কি ইহা নহে যে , উহাদের প্রাপ্য অংশ ছলে বলে কৌশলে ধনিমহোদয়ের আত্মসাৎ করি। ছেন ? ধনরাশি যদি কোষাগারে তাহদের শ্রীঅঙ্গ হইতে আপন আপনি ঝর ঝর করিয়া পড়িত, তবে বলিতে পারিতাম যে, ঐগুলি একমাত্র উহাদের প্রাপ্য। একজন ধনকুবের হইলেন, আর তার সঙ্গে সঙ্গে সহস্ৰ লোকের স্বন্ধে দুরারোহ অকিঞ্চনত আসিয়া চাপিল। আমাদের বোধ হয় রাজত্ব ও ধনাগমের এইরূপ করাল দৃপ্ত দেখি৷ বা অনুভব করিয়া ভারতের প্রাচীন ঋষিবৃন্দ নিখিল আভি জাত্যের মধ্যে ধৰ্ম্ম ও বিদ্যার আভিজাত্যকে সৰ্ব্বোচ্চ আসন দিয়াছিলেন। এইক্ষণেও ভারত হইতে ঐ প্রকার ভাব নিৰ্ম্মল হয় নাই ; আজ ও অকিঞ্চন মহাপুরুষকে রাজ্যেথা পৰ্য্যন্ত ভূমিষ্ঠ হইয় প্রণাম করেন, আজও শাকান্নভোজী মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত মহারাজেরও অভ্যর্থনায় বঞ্চিত নহেন ; তবে এইমাত্র বলিতে পারি যে, দিন দিন যেরূপ প্রতীচ্যভাবের প্রসার হইতে চলিল, ইহাতে অদূর ভবিষ্যতেই উহ অদৃশু হইতে পারে। বর্তমান পৃথিবীতে তৃতীয় ও চতুর্থ আভিজাত্যের অধিক গৌরব—এই দুই আভিজাত্যের মধ্যে একটৗও যাহাদের আছে, তাহাদিগকে বক্ষ স্ফীত করিয়া চলিতে দেখা যায়। কেবল ইহা হইতেই যদি গুণধরেরা তৃপ্তিলাভ করিতেন তবে তত অনৰ্থপাতের আশঙ্কা হইত না। কিন্তু তাছার অনভিজাতদিগের উন্নতিকে চক্ষুর শূল মনে করেন ; প্রভূত্র চাহেন যে, অনভিজাতেরা শ্রমজীবী বা কৃষক শ্রেণীতে পরিণত থাকিয় তাহাদের আজ্ঞাবহ ভূত্যত্ব বা অধমৰ্ণ পদষ্ট অলঙ্কত করুক। এই শ্রেণীর মহাপুরুষদিগের ধারণা যে, স্বথ সম্ভোগ ও শাস্তি প্রভৃতি সদগুণ কেবল অভিজাতদিগের জন্য নিয়মিত হইয়াছে। আহা প্রভূর কি অপরূপ ধারণ করিয়া বসিয়াছেন ! জিজ্ঞাসা করি, অনভিজাতেরা কি লোঃ বা উপলখণ্ডের দ্যায় মুখ সংভোগের শক্তিতে বঞ্চিত রহিয়াছে ? তাহারা বিদ্যা বুদ্ধি ও সুনীতি প্রভৃতিতে কি অভিজাতদিগের প্রতিযোগিতা করিতেছে না ? অন"ি পক্ষান্তরে কতকগুল লোক ধনী হইয়াছে আর. t . [ ৮ম ভাগ। | ১০ম সংখ্যা । ] জাতেরা দিবারাত্রি পরিশ্রম করুক, আর তোমরা তাহাদের পরিশ্রমলব্ধ দ্ৰব্যদ্বারা কেহ রাজসিংহাসন সুশোভিত কর, কেহ বিলাসনন্দনবনের পুরন্দর হও—এই অদ্ভূতনীতির সমাদর তোমাদের নিকট হইতে পারে ; পরস্তু কোন উদারচেতা মনীষীই ইহা অনুমোদন করিতে পারেন না। পাঠক বুঝিতে পারিলেন যে যাহার রাজ্য ও ধনের আভিজাত্য লইয়া অহঙ্কারে ফুলিয়া থাকেন, তাহারাই পৃথিবীতে দারিদ্র্য প্রসারিত হইবার মূলে রহিয়াছেন। পৃথিবীতে যত ধন ও জমি আছে ঐগুলি যদি সমভাগে জনসাধারণে বিভক্ত হয় তবে দারিদ্র্যই দরিদ্র হইয়া যায়। বিচারচক্ষু খুলিয়া দেখিলে ভূস্বামী ও ধনীদিগকে আমরা লৌকিক চক্ষে যেরূপ দেখিতে পাই তাহার বিপরীতভান ঘটয়া থাকে। বোধ হয়, যেন তাহারা অনভিজাতদিগের বক্ষে ছুরিকা প্রহার করিতেছেন। রাজ্য ও ধনের অভিলাতেরা সকল বিষয়ে অন্যথাসিদ্ধ ন হইলেও যে, অনভিজাতদিগের অভু্যদয়ক্ষেত্রে পঙ্গপাল স্বরূপ, এই বিষয়ে সন্দেহ করিবার কোন কারণ দেথা যাইতেছে না। জমি ও ধন যদি একশ্রেণীর লোকের স্বাধিকৃত রছিল, তবে যে অন্তান্ত শ্রেণীর লোকের দৈন্ত ও দুঃখে কাল হরণ করিবে, এইরূপ হইবারই কথা। তাহার কারণ এই যে এই দুইএর উপর লৌকিক স্বথ নির্ভর করিতেছে। পক্ষান্তরে দীন ও দুঃখীর বিদ্যা ও সভ্যতা প্রভৃতি সদগুণ আসিতে পারে না। আসিবে কিরূপে ? তাহারা সৰ্ব্বদাই আত্মীয়ের পোষণ চিন্তায় ব্যস্ত থাকে, এমন কি উদর পূর্ণ করিয়া আহারও প্রাপ্ত হয় না। এদিকে ভূস্বামী ও ধনবানেরা তাহাদের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাৎ করিয়া অজস্র উহার অপব্যবহারে নিযুক্ত আছেন। ভ্ৰমেও তাহদের ঐরূপ শোচনীয় দশার প্রতি প্রভৃদের দৃষ্টি পড়ে না। ইহা কেবল নিজের আত্মীয়বর্গের অথবা সমশ্রেণীর চতুঃসীমার মধ্যে আবদ্ধ রহিয়াছে। তাহারা অসমশ্রেণীর প্রতি যদি কদাচিৎ দয়াও করিতেছেন মানিয়া লওয়া যায়, তথাপি নগ্নপদ আকোমলাঙ্গ কৃষিবল ও শ্রমজীবীর প্রতি ভালবাসার যে স্বপ্নও দেখেন, তাহা কোন প্রকারে স্বীকার করিতে পারা যায় না। পরস্তু বিবেক উপদেশ করে যে, যাহাদিগকে তাহারা ঘৃণা করিতেছেন, তাহাদের উপরেই প্রভুদের জীবনরক্ষার ভার রহিয়াছে। আভিজাত্য । Qbr> কৃষক যদি শস্ত উৎপাদন না করে এবং শ্রমজীবী যদি দ্ৰব্যসম্ভার বহন প্রভৃতি ব্যাপারে বিরত হয়, তবে অবিলম্বেই র্তাহাদিগকে এই সাধের লীলাভূমি হইতে অন্তৰ্ধান করিতে হইবে। সুবর্ণমুদ্রা চৰ্ব্বণ পূর্বক যে, কেহ কথন জীবনধারণ করিয়াছে ইহা শুনিতে পাওয়া যায় কৈ ? যে কৃষক ও তদীয় পত্নী বালক বালিকার সহিত দুঃসহ শীতাতপ সহন পূৰ্ব্বক মানবীয় জীবন রক্ষার মূল বস্তু উৎপন্ন করে, এই পাপ পৃথিবীতে তাহারাই অনাহারে মরিয়া যায়। সংক্রামক ব্যাধিও ঐ হতভাগাদিগকেই আক্রমণ করে। প্লেগে যত লোক মৃত্যুর কবলে পতিত হয় তাহাদের মধ্যে ধনীর সংখ্যা অতি অল্প দেখিতে পাওয়া যায়। সদাশয় ভূস্বামী ও খনিবৃন্দ যদি বিবেকের নির্জন কুটীরে বসিয়া ভাবেন যে তাহদের ঐ ভূমি ও ধন কোথা হইতে অধিকৃত হইল, তবে অবশুই তাহারা এইরূপ দেববাণী শুনিতে পাইবেন যে, “হে ভূস্বামিন ও ধনিবৃন্দ ঐ "ভূমি ও ধন সাধারণের ; ঐগুলি তোমাদের বা ত্বদীয় পিতৃপুরুষদিগের নহে। তোমরা, যদি পাপ হইতে মুক্ত হইতে চাও, তবে অবিলম্বে সাধারণের হিতার্থ ঐগুলিকে উৎসর্গ করিয়া দাও। নতুবা অদূর ভবিষ্যতেই শ্রমজীবী ও কৃষকদিগের অভিসম্পাতে তোমাদিগকে দগ্ধ হইতে হইবে।” অবশুই রাজ্য ও ধনের অভিজাতদ্বিগের মধ্যে সদাশয়ও রহিয়াছেন, পরস্তু ঐ সদাশয়দিগকে সদাশয়তা গুণের জন্ত সম্মান করা উচিত হইলেও কদাপি অভিজাত বলিয়া জনসাধারণ তাহাদিগের অভিনন্দন করিতে পারে না। না, পারিবেন কি প্রকারে ? এইরূপ আভিজাত্য প্রবর্তনের কাহিনী শুনিবা মাত্রই নীতিপরায়ণ সহৃদয় ব্যক্তি কর্ণে অঙ্গুলি প্রদান করেন। অনেকে বলিয়া থাকেন যে, . অভিজাতবংশের রীতিনীতি ভালই হইয়া থাকে। জিজ্ঞাসা করি দুইটা মিষ্ট কথা অথবা কায়দার সহিত ভদ্রলোকের সমক্ষে উপবেশন আদি করাই কি ইহার অর্থ ? যদি এইরূপই হয়, তবে ঐ ভাল হওয়ার জন্ত আভিজাত্যকে সন্মান না দিয়া ভদ্রলোকদিগের সহবাসকে উহা দেওয় যুক্তিসঙ্গত। ধরাধামে এমন অভিজাতও বিরল নহে, যাহাকে একটা মনুষ্যাকৃতি অভিনব বলিবর্দ মাত্র বলিলেও • অত্যুক্তি হয় না। যদি আভিজাত্যের ঐক্ষপ মহিমাই