পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- ৬২৬ “কোকিলকলালাপবাচাল যে মলয়াচলানিল সে উচ্ছলচ্ছাকরাত্যচ্ছনিঝরান্ত:কণাচ্ছন্ন হইয়া আসিতেছে” ইহাষ্ট তখনকার আদর্শ ভাষা ছিল। এবিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র “আলালের ঘরের দুলালে”র মুখবন্ধে যাহা বলিয়াছেন তাহা উল্লেখযোগ্য। অধ্যাপকের ঘিকে “আজ্য" বলিতেন, কদাচ "তো নামিতেন। খইকে "লাজ", চিনিকে “শর্কর” ইত্যাদি ব্যবহার করিয়া ভাষার সৌষ্ঠব বৰ্দ্ধন করিতেছিলেন। যাহাহউক নুতন বস্তায় সে ঢেউ চলিয়া গেল। বসন্তের অতৃপ্ত কোকিল বঙ্কিমচন্দ্রের লেখনীতে যেমন একদিকে বিরহের উচ্ছ,সিগীতিকা গাহিতে লাগিল, আবার ‘আনন্দমঠে। স্বদেশপ্রেমিকতার ভৈরবনিনাদ, অপরদিকে সংযম, আত্মনিবৃত্তি, যোগ, অনুশীলন, স্বথ, দুঃখ, ইত্যাদির উচ্ছাসে বঙ্গদর্শন বঙ্গদেশে নুতন যুগ আনয়ন করিল। সেই অলোকসামান্ত প্রতিভায় উদ্ভাসিত হইয়া আজ বাঙ্গলা সাহিত্য সমগ্র ভারতসাহিত্যের শীর্ষস্থান অধিকার করিয়াছে। অক্ষয়কুমার, দীনবন্ধু, কালীপ্রসন্ন, রমেশচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি এই ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিভাবারি সিঞ্চন করিয়া উর্বরতা সাধন করিয়াছেন ও করিতেছেন। ঈশ্বরগুপ্ত, শ্ৰীমধুসূদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ এই সাহিত্যের কাব্যাংশ কনকাভরণে সাজাইয়া চিরস্মরণীয় হইয়াছেন। কিন্তু এসমস্ত সত্ত্বেও আজ আমাদের সম্মুখে একটি ভীষণ বিপদ উপস্থিত। আমাদের সাহিত্যের আংশিক উন্নতি হইয়াছে বটে, সাহিত্যের উপন্যাস ও কাব্যাংশের পূর্ণ বিকাশ হইতেছে ইহাও সত্য বটে, কিন্তু একটি মাত্র কারণে ভাষার সৰ্ব্বাঙ্গীন উন্নতি হইতে পারিতেছে না। শারীর তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ বলেন, যে অঙ্গের চালনা হয় সেই অঙ্গ দৃঢ় ও সবল হইতে থাকে, আবার যে অঙ্গের চালনা হয়ন - – তাহী ক্ষীণ হইতেও ক্ষীণতর হইয়া পরে একেবারে নিক্রিয় হইয়া পড়ে। আমাদের সাহিত্যে বিজ্ঞানবিষয়ক পুস্তকের একান্তই অভাব। প্রাচীন ভারতে সত্যের ও নূতন তত্ত্বের অনুসন্ধানের জন্য ঋষির ব্যস্ত থাকিতেন। কিন্তু মধ্যযুগে এ সমস্ত লুপ্ত হইল। চৌষটি কলার অন্তভূক্ত যিনি যত বিদ্যায় পারদর্শিত লাভ করিতেন, তিনি শিক্ষিত সমাজে তত জ্ঞানবান বলিয়া প্রবাসী । পাঠ্যপুস্তক প্ৰবােধচন্ত্রক . তাহার બન્ને উদাহরণ আদৃত হইতেন। বাৎস্তায়নের ‘কামসূত্র অতি आशेन |. १भा । ] { গতি হয় নাই। বাঙ্গল সাময়িক পত্রিকায় তখন বিজ্ঞান স্বীয় স্থান অধিকার করিয়াছিল। - অক্ষয়কুমার “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা"য় পদার্থবিদ্যা বিষয়ক যে সকল প্রবন্ধ প্রকাশিত করিয়াছিলেন, রাজেন্দ্রলাল “বিবিধার্থ সংগ্রহে” ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ক যে সকল প্রবন্ধ লিথিয়াছেন তাহা বাঙ্গলা সাহিত্যের অস্থিমজ্জাগত হইয়৷ থাকিবে। বাঙ্গলা সাহিত্যে বিজ্ঞানের যাহা কিছু সমাবেশ ইষ্টয়াছে তজ্জন্ত এই দুই মহাত্মার নিকট আমরা চিরঞ্চণী থাকিব। ইহাদের কিছু পূৰ্ব্বে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় né ztség" * INTE-II Encyclopædia Bengalensis অথবা “বিদ্যাকল্পদ্রম” আখ্যা দিয়া কয়েক থও পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করেন। ইহাতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনতত্ত্ব সকল প্রকাশিত হইত। রাজেন্দ্রলাল ও কৃষ্ণমোহন উভয়েই অশেষশাস্ত্রবিৎ ও নানা ভাষাভিজ্ঞ ছিলেন। যদিও তাহদের রচনা অক্ষয়কুমারের রচনার দ্যায় স্থায়ী প্রচলিত সাহিত্যের (Classics) মধ্যে গণ্য হুইবে না তথাপি তাহারা বঙ্গসাহিত্যের অভিনব পথপ্রদর্শক বলিয়া চিরকাল মান্ত হইবেন । কিন্তু ইহাদের পূৰ্ব্বেও বাঙ্গলা সাহিত্যের উন্নতি ও প্রসারের জন্ত বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হইয়াছিল। শ্রীরামপুরের মিশনারীগণকে বর্তমান বাঙ্গালা গদ্য সাহিত্যের জন্মদাতা বলিলেও অত্যুক্তি হয় না ; তাহারাই আবার বাঙ্গলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারেরও প্রথম প্ৰবৰ্ত্তক । আমাদের জাতীয় অভিমান আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলিয়া একথা আমাদের ভুলিয়া যাইলে, কিম্বা খুষ্টানী বাঙ্গলা বলিয়া তাহাদের কৃত কার্যাকে উড়াইয়া দিলে চলিবে না। ঐতিহাসিক, ন্যায়ের ও সত্যের তুলাদও হস্তে ক রয়া যাহার যে সম্মান প্রাপ্য তাহাকে তাহা প্রদান করিবেন। ১৮২৫ খৃঃ অঃ উইলিয়ম ইয়েটস্ প্রথমে পদার্থ বিদ্যা সার’ বাঙ্গল ভাষায় প্রকাশিত করেন। ইহাতে পদার্থ বিদ্যা ভিন্ন মৎস্ত, পতঙ্গ, পক্ষী ও অন্তান্ত জীবের বর্ণনা আছে। এতদ্বভিন্ন “কিমিয়া বিদ্যাসার” নামক রসায়নবিদ্যা সম্বন্ধীয় গ্রন্থ শ্রীরামপুর হইতে প্রচারিত হয় । সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় ত্রযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবুে মহাশয় এই পুস্তকের সবিস্তার সমালোচনা করিয়া%ে l داد খৃ: [ ৮ম ভাগ । গ্রন্থ। উক্ত গ্রন্থ পাঠে জানা যায় ধাতুবাদ ( Chemistry and Metalurgy ) ঐ সকল কলার মধ্যে পরিগণিত হইত। চরকে বনৌষধি চিনিয়া ও বাছিয়া লইবার জন্ত উদ্ভিদ-বিদ্যালাভের প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শিত হইয়াছে এবং মুশ্রীতে শবব্যবচ্ছেদ করিয়া অস্থিবিদ্যা শিখিবার ব্যবস্থা দৃষ্ট হয়। অষ্টাঙ্গ আয়ুৰ্ব্বেদের মধ্যে শলাতন্ত্ৰ (Surgery) একটি প্রধান অঙ্গ। স্বশ্ৰতে যে ক্ষারপাকবিধি বর্ণিত আছে তাহ নব্য রসায়ন শাস্ত্রের এক অধ্যায় বলিয়া অবিকৃত ভাবে গ্রহণ করা যাইতে পারে। কিন্তু হায়, যে ভারতের পূৰ্ব্বকালীন ঋষিগণ জ্ঞানে ও ধৰ্ম্মে বর্তমান জগতেরও আদর্শ, র্যাহাদের কাব্য ও দর্শন আজও সভ্য জগতের সাহিত্য মধ্যে স্থান লাভ করিয়াছে, যে সামগান একদিন ভারতের বন-ভবনে উচ্চারিত ও গীত হইয়া ভারতে ধৰ্ম্মের যুগ আনয়ন করিয়াছিল, যে তটশালিনী গঙ্গাযমুনা আবহমান কাল হইতে কুলুকুলু নিনাদে বহিয়া, বক্ষে প্রাচীন ইতিহাস ধারণ করিয়া আজও হিন্দুস্থান পবিত্র করিয়া সাগরসঙ্গমে ধাইতেছে, সেই ভারতের, সেই পুণাদেশ আর্যাবর্তের জ্ঞানরবি, দুর্ভাগ্য বংশধর আমাদিগের দোষে, অস্তমিত হইল! সত্যই কবি গাহিয়াছেন :– “অবসাদ হিমে ডুবিয়ে ডুবিয়ে । তুমি যে তিমিরে, তুমি সে তিমিরে।” অমুসন্ধিৎসা তিরোহিত হইল, ঔষধ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদ পরিচয়ের ভার বেদিয়া জাতির উপর সমৰ্পিত হইল। অস্ত্র চালনার দুঃসাধ্য ভার নরসুন্দরের উপর ন্যস্ত হইল। যাহা হউক, অতীতের আলোচনা ও অনুশোচনায় প্রবৃত্ত হইবার আর প্রয়োজন নাই। এখন সময় আসিয়াছে। গত কয় বৎসর বাঙ্গলা ভাষায় যে সকল বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে তাহার প্রায় সমস্ত গুলিই পাঠ্যপুস্তকশ্ৰেণীভূক্ত। দুই একখানি মাত্র সাধারণ পাঠোপযোগী। ইহা আলোচনা করিলে আমরা দেখিতে পাই যে আমাদের বর্তমান সাহিত্য হইতে বিজ্ঞান স্থানচ্যুত হইয়াছে। বিজ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ভারতবর্য হইতে নিৰ্ব্বাসিত হইয়া ইউরোপAে ও আসিয়ার পূর্বপ্রাস্তে আশ্রয় লইয়াছেন। বাস্তবিক ༤༠།༢༽ཐ༤༡།༢ পূৰ্বেও বাঙ্গল সাহিত্যের এ প্রকার 'বঙ্গসাহিত্যে-বিজ্ঞান । ৬২৭ শ্রীরামপুরের মিশনারীগণ ‘সমাচার-দপণ’ নামে সৰ্ব্ব প্রথম বাঙ্গালা সংবাদপত্র প্রকাশিত করেন, এবং তাহারাই আবার দিগ্‌দৰ্শন’ নামক নানাতত্ত্ববিষয়িনী পত্রিক পরিচালিত করিতেন। এই পত্রিকাতেই বাঙ্গলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রথম স্বত্রপাত হয়। ইহার পর ১৮২ খৃঃ “বিজ্ঞান অনুবাদ সমিতি” (Society for translating European Sciences) নামে একটা সমিতি স্থাপিত হয়। প্রফেসর উইলসন এই সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হন ও উক্ত সমিতির চেষ্টার ‘বিজ্ঞান সেবধি’ নামক গ্রন্থের ১৫ খণ্ড প্রকাশিত হয়। #&R of Sv45 q: *: Vernacular Literary society নামে আর এক সমিতি স্থাপিত হয়। বাঙ্গল সাহিত্যের উন্নতি ও প্রসার এই সমিতির প্রধান উদ্দেশু হইলেও যাহাতে বাঙ্গালীর অন্তঃপুরে জ্ঞানালোক প্রবেশ করিতে পারে তদ্বিষয়ে ইহার বিশেষ লক্ষ্য ছিল। মহাত্মা বেথুন ও বাবু জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় এই সভার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ; এতদ্ভিন্ন গবর্মেন্ট মাসিক ১৫০ চাদ দিয়া ইহার আমুকুল্য করিতেন। এই সভার উযোগেই ডাঃ রাজেন্দ্রলাল মিত্র "বিবিধার্থ সংগ্ৰহ” প্রকাশ করেন। মহামতি হজসন প্রাষ্ট্র এই সমিতির স্থাপয়িতাদিগের মধ্যে অন্যতম উদ্যোগী সভ্য ছিলেন। তিনি উক্ত সমিতির উদ্দেশু সম্বন্ধে যাহা লিখিয়া গিয়াছেন তাহার স্থল মৰ্ম্ম এই :– “ৰাঙ্গলার অধিবাসীদিগকে ইংরাজী ভাষায় শিক্ষা দিয়া পাশ্চাত্য বিজ্ঞানাদিতে ব্যুৎপন্ন করার আশা একেবারেই অসম্ভৰ। হতরাং ! জাতীয় ভাষায় ইহাদিগের শিক্ষার পথ প্রসরতর করা কওঁৰ্য। এই নিমিত্ত বাঙ্গল সাহিত্যের উৎকর্য সাধন করা একান্ত প্রয়োজনীয়। * * ইছাদের নিমিত্ত সরল স্বথপাঠ্য গ্রন্থ প্রচার করিয়া পাঠলিঙ্গার স্বষ্টি করিতে হইবে। জানার্জনের নিমিত্ত তৃষ্ণা বুদ্ধি করিতে হইৰে । নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে, পল্লীতে পল্লীতে অল্পমূল্যের গ্রন্থ প্রচার করিতে হইবে। সেই সকল গ্রন্থে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও মানবশরীরতত্ত্ব সম্বন্ধীয় সহজ ও চিত্তাকর্ষী প্রবন্ধ থাকিবে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্বন্ধেও প্রবন্ধাদি লিখিয় প্রচার করিতে হইবে। নীতিপ্রভৃতি উপদেশসূচক গ্রন্থ প্রচারও অতি প্রয়োজনীয়, ইহাতে সমাজের যথেষ্ট উন্নতি হইৰে । এই সকল প্রয়োজন সাধনের নিমিত্ত সহজ ও সরল সাহিত্য প্রচার অতি আৰঙ্গক। এই সমিতিকে এই কার্যের ভার গ্রহণ করিতে হইবে।" ( বিশ্বকোষ ) বিজ্ঞান প্রচার সম্বন্ধে এই সমিতির আশা তানী ফলবতী হয় নাই। ১৭ খানি পুস্তক প্রকাশের পর সমিতি