পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৫৪ - তাহার মনে পড়িল। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া নিজেকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি অবিবেচনার কাজ করিয়াছি ? র্তাহার অন্ত কোনো মেয়ে হইলে বিশেষ চিন্তার কারণ ছিল না—কিন্তু ললিতার জীবন যে ললিতার পক্ষে অত্যন্ত সত্য পদার্থ ; সে ত আধাআধি কিছুই জানে না ; মুখ দুঃখ তাহার পক্ষে কিছু-সত্য-কিছু-ফাকি নহে! ললিতা প্রতিদিন নিজের জীবনের মধ্যে ব্যর্থ ধিক্কার বহন করিয়া বাচিয়া থাকিবে কেমন করিয়া ? সে যে সম্মুখে কোথাও একটা প্রতিষ্ঠা, একটা মঙ্গল পরিণাম দেখিতে পাইতেছে না। এমনভাবে নিরুপায় ভাসিয়া চলিয়া যাওয়া তাহার স্বভাৰসিদ্ধ নহে। সেইদিনই মধ্যাহ্লে ললিতা স্বচরিতার বাড়ি আসিরা উপস্থিত হইল। ঘরে গৃহসজ্জা বিশেষ কিছুই নাই। মেঝের উপর একটি ঘর জোড়া সতরঞ্চ, তাহারই একদিকে স্বচরিতার বিছানা পাতা ও অন্য দিকে হরিমোহিনীর বিছানা। হরিমোহিনী খাটে শোন না বলিয়া সুচরিতাও তাহার সঙ্গে এক ঘরে নীচে বিছানা করিয়া শুইতেছে। দেয়ালে পরেশ বাবুর একখানি ছবি টাঙানো। পাশের একটি ছোটো ঘরে সতীশের খাট পড়িয়াছে এবং একধারে একটি ছোটো টেবিলের উপর দোয়াত কলম খাতা বই শ্লেট বিশৃঙ্খলভাবে ছড়ানো রহিয়াছে। সতীশ ইস্কুলে গিয়াছে। বাড়ি নিস্তব্ধ । আহারান্তে হরিমোহিনী তাহার মাদুরের উপর গুইয়া নিদ্রার উপক্রম করিতেছেন, এবং স্বচরিতা পিঠে মুক্তচুল মেলিয়া দিয়া সতরঞ্চে বসিয়া কোলের উপর বালিশ লইয়া একমনে কি পড়িতেছে। সম্মুখে আরো কয়খানা বই পড়িয়া আছে। ললিতাকে হঠাৎ ঘরে ঢুকিতে দেখিয়া স্বচরিত যেন সজ্জিত হইয়া প্রথমটা বই বন্ধ করিল, পরক্ষণে লজ্জার দ্বারাই লজ্জাকে দমন করিয়া বই যেমন ছিল তেমনিই রাখিল। এই বইগুলি গোরার রচনাবলী | হরিমোহিনী উঠিয়া বসিয়া কহিলেন—“এস, এস, মা ললিতা બિન ! তোমাদের বাড়ি ছেড়ে সুচরিতার মনের মধ্যে কেমন করচে সে আমি জানি । ওর মন খারাপ হলেই ঐ বইগুলো নিয়ে পড়তে বসে। এথনি আমি প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ । শুয়ে গুয়ে ভাবছিলুম তোমরা কেউ এলে ভাল হয়—আমনি : তুমি এসে পড়েছ—অনেকদিন বঁাচবে মা !” ললিতার মনে যে কথাটা ছিল, স্বচরিতার কাছে বলিয়া সে একেবারেই তাছা আরম্ভ করিয়া দিল। সে কহিল “সুচিদিদি, আমাদের পাড়ায় মেয়েদের জন্যে যদি একটা ইস্কুল করা যায় তাহলে কেমন হয় ?” হরিমোহিনী অবাক হইয়া কহিলেন—“শোনো একবার । কথা ! তোমরা স্কুল করবে কি !” সুচরিতা কহিল—“কেমন করে করা যাবে বল ? কে আমাদের সাহায্য করবে ? বাবাকে বলেছিস্ কি ?” ললিতা কহিল—“আমরা দুজনে ত পড়াতে পারব। হয়ত বড়দিদিও রাজি হবে।” স্বচৱিত কহিল—“শুধু পড়ানো নিয়েত কথা নয়। কি রকম করে ইস্কুলের কাজ চালাতে হবে তার সব নিয়ম বেঁধে দেওয়া চাই, বাড়ি ঠিক করতে হবে, ছাত্রী সংগ্ৰহ করতে হবে, খরচ জোগাতে হবে। আমরা দুজন মেয়েমানুষ এর কি করতে পারি!” - ললিত কহিল—“দিদি, ওকথা বললে চলবে না। মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছি বলেই কি নিজের মনথানাকে নি৷ে ঘরের মধ্যে পড়ে আছাড় থেতে থাকুব ? পৃথিবীর কোনে কাজেই লাগব না ?” ললিতার কথাটার মধ্যে যে বেদনা ছিল স্বাৰ্তা বুকের মধ্যে গিয়া তাহ বাজিয়া উঠিল। সে কোটী উত্তর না করিয়া ভাবিতে লাগিল । ললিতা কহিল—“পাড়ায় ত অনেক মেয়ে আছে! আমরা যদি তাদের অম্নি পড়াতে চাই বাপ মারা ত খুীি হবে। তাদের যে ক’জনকে পাই তোমার এই বান্তি এনে পড়ালেই হবে। এতে খরচ কিসের ?” এই বাড়িতে রাজ্যের অপরিচিত ঘরের মেয়ে জর্জ করিয়া পড়াইবার. প্রস্তাবে হরিমোহিনী উদ্বিগ্ন হইয় উঠিলেন। তিনি নিরিবিলি পূজা অৰ্চনা লইয়া শুদ্ধ গু;ি হইয়া থাকিতে চান তাহার ব্যাঘাতের সম্ভাবনার আপlি করিতে লাগিলেন। স্বচরিতা কহিল, “মাসি তোমার ভয় মই, যদি ছাত্রী জোটে তাদের নিয়ে আমাদের নীচে তলা ঘৰেই বা \, - o - - ১২শ সংখ্যা । ] চালাতে পারব, তোমার উপরের ঘরে আমরা উৎপাত করতে আস্ব না। তা ভাই ললিতা, যদি ছাত্রী পাওয়া যায়, তাহলে আমি রাজি আছি।” ললিতা কহিল—“আচ্ছা দেখাই যাকনা।” হরিমোহিনী বারবার কহিতে লাগিলেন, “মা সকল বিষয়েই তোমরা খৃষ্টানের মত হলে চলবে কেন ? গৃহস্থ স্বরের মেয়ে ইস্কুল পড়ায় এ ত বাপের বয়সে শুনিনি।” পরেশ ৰাবুর ছাতের উপর হইতে আশপাশের বাড়ির ছাতে মেয়েদের মধ্যে আলাপ পরিচয় চলিত। এই পরিচয়ের একটা মস্ত কণ্টক ছিল, পাশের বাড়ির মেয়েরা এবাড়ির মেয়েদের এত বয়সে এখনো বিবাহ হইল না বলিয়া প্রায়ই প্রশ্ন এবং বিস্ময় প্রকাশ করিত। ললিত এই কারণে এই ছাতের আলাপে পারতপক্ষে যোগ দিত না। এই ছাতে ছাতে বন্ধুত্ব বিস্তারে লাবণ্যই ছিল সকলের চেয়ে উৎসাহী। অন্ত বাড়ির সাংসারিক ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে তাহার কৌতুহুলের সীমা ছিল না। তাছার প্রতিবেশীদের দৈনিক জীবন যাত্রার প্রধান ও অপ্রধান অনেক বিষয়ই দূর হইতে বায়ুযোগে তাহার নিকট আলোচিত হইত। চিরুণী হস্তে কেশসংস্কার করতে করিতে মুক্ত আকাশ তলে প্রায়ই তাহার অপরাহ্লসভা জমিত। ললিতা তাহার সংকল্পিত মেয়ে ইস্কুলের ছাত্রীসংগ্রহের *. উপর অর্পণ করিল। লাবণ্য ছাতে ছাতে এই প্রস্তাব ঘোষণা করিয়া দিল তখন অনেক মেয়েই উৎসাহিত হইয়া উঠিল। ললিতা খুসি হইয়া স্বচরিতার বাড়ির একতলার ঘর ঝাড় দিয়া ধুইয়া সাজাইয় প্রস্তুত করিতে লাগিল । - - কিন্তু তাহার স্কুলঘর শূন্তই রহিয়া গেল। বাড়ির কৰ্ত্তারা তাদের মেয়েদের ভুলাইয় পড়াইবার ছলে ব্রাহ্ম বাড়িতে লইয়া যাইবার প্রস্তাবে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয় ॐणन । धशन कि, यहे खेभगtभाड़े शश्वन डाशश জানিতে পারিলেন পরেশ বাবুর মেয়েদের সঙ্গে তাহাদের মেয়েদের আলাপ চলে তখন তাহাতে বাধা দেওয়াই তাহার কর্তৃব্য বোধ করিলেন। তাহদের মেয়েদের शष्ठ ॐ वैर् इहेबाब cब श्हेन ७वः बाकअडिग्रनेत्र মেয়েদের সাধু সংঘ স্বর v { འུ་ এতি, হাৱা ༡རྣམས་ য়াগ গোরা । , করিলেন

  • Hot) وق\

না। বেচারা লাবণ্য যথাসময়ে চিরুণী হাতে ছাতে উঠিয়া দেখে পাশ্ববর্তী ছাতগুলিতে নবীনাদের পরিবর্তে প্রবীণদের সমাগম হইতেছে এবং তাছাদের একজনের নিকট হইতেও সে সাদর সম্ভাষণ লাভ করিল না। ললিতা ইহাতেও ক্ষান্ত হইল না। সে কহিল অনেক গরীব ব্রাহ্মমেয়ের বেথুন ইস্কুলে গিয়া পড়া সাধা, তাঙ্গাদের পড়াইবার ভার লইলে উপকার হইতে পরিবে । - এইরূপ ছাত্রী সন্ধানে সে নিজেও লাগিল হুধীরকেও লাগাষ্টয়া দিল । সেকালে পরেশ বাবুর মেয়েদের পড়াশুনার খ্যাতি বহুদূর বিস্তৃত ছিল। এমন কি, সে খ্যাতি সত্যকেও অনেক দূরে ছাড়াইয়া গিয়াছিল। এই জন্য ইহার মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াইবার ভার লইবেন শুনিয়া অনেক পিতামাতাই খুসি হইয়া উঠলেন। প্রথমে পাঁচ ছয়টি মেয়ে লষ্টয়া দুষ্ট চার দিনেই তাহার ইস্কুল বসিয়া গেল। পরেশ বাবর সঙ্গে এই ইস্কুলের কণা আলোচনা করিয়া ইহার নিয়ম বাধিয়া ইহার আয়োজন করিয়া সে নিজেকে একমুহূৰ্ত্ত সময় দিল না। এমন কি, বৎসরের শেষে পরীক্ষা হইয়া গেলে মেয়েদের কিরূপ প্রাষ্টজ দিতে হইবে ভাহা লইয়া লাবণ্যর সঙ্গে ললিতার রীতিমত তর্ক বাধিয়া গেল-ললিতা যে বইগুলার কথা বলে লাবণ্যর তাহা পছন্দ হয় না, আবার লাবণ্যর সঙ্গে ললিতার পছন্দরও মিল হয় না। পরীক্ষা কে কে করিবে তাহা লইয়াও একটু তর্ক হইয়া গেল। লাবণ্য মোটের উপরে যদিও · হারান বাবুকে দেখিতে পারিত না কিন্তু তাহার পাণ্ডিত্যের । খ্যাতিতে সে অভিভূত ছিল। হারান বাৰু তাহদের । বিদ্যালয়ের পরীক্ষা অথবা শিক্ষা অথবা কোনো একটা কাজে নিযুক্ত থাকিলে সেটা যে বিশেষ গৌরবের বিষয় হইবে এ বিষয়ে তাহার সন্দেহ মাত্র ছিল না। কিন্তু ললিত কথাটাকে একেবারেই উড়াইয়া দিল-হারান বাবুর সঙ্গে তাহদের এ বিদ্যালয়ের কোনো প্রকার সম্বন্ধই থাকিতে পারেন। দুই তিন দিনের মধ্যেই তাহার ছাত্রীর দল কমিতে কমিতে ক্লাশ শূন্ত হইয়া গেল। ললিতা তাহাঁর নিঞ্জন ক্লাসে বসিয়া পদশব্দ শুনিবামাত্র ছাত্রী সম্ভাবনায় সচকিত •