পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ーと)○rb" ইতেছে l - নিজের প্ৰতি ললিতার মনের ভাব সম্বন্ধে যদি তাহার মনে, সন্দেহ উপস্থিত ন হইত তবে তিনি বাহিরের কথায় কিছুমাত্র কান দিতেন না। কিন্তু যদি বিনয়ের প্রতি ললিতার অনুরাগ জন্মিয় থাকে তবে সে স্থলে তাহার কর্তব্য কি সে প্রশ্ন তিনি বরাবর নিজেকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। প্রকাশ ভাবে ব্রাহ্মধৰ্ম্মে দীক্ষা লওয়ার পর তাহার পরিবারে আবার এই একটা সঙ্কটের সময় উপস্থিত হইয়াছে। সেই জন্য একদিকে একটা ভয় এবং কষ্ট তাহাকে ভিতরে ভিতরে পীড়ন করিতেছে অন্যদিকে তাহার সমস্ত চিত্তশক্তি জাগ্রত হইয়া উঠিয়া বলিতেছে, ব্রাহ্মধৰ্ম্ম গ্রহণেৰ সময় যেমন একমাত্র ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি রাথিয়াই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছি, সত্যকেই মুখ সম্পত্তি সমাজ সকলের উদ্ধে স্বীকার করিয়া জীবন চিরদিনের মত ধন্ত হইয়াছে এখনো যদি সেইরূপ পরীক্ষাৰ দিন উপস্থিত হয় তবে তাহার দিকেই লক্ষ্য রাথিয়া উত্তীর্ণ হইব। ললিতার প্রশ্নের উত্তরে পরেশ বাবু কহিলেন—“বিনয়কে আমি ত খুব ভাল বলেই জানি। তার বিষ্ঠাবুদ্ধিও যেমন, চরিত্রও তেমনি।” একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয় ললিতা কছিল—“গেীর বাবুর মা এর মধ্যে দুদিন আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। মুচিদিদিকে নিয়ে তার ওখানে আজ একবার যাব ?” পরেশ বাবু ক্ষণকালের জন্য উত্তর দিতে পারিলেন না। তিনি নিশ্চয় জানিতেন বর্তমান আলোচনার সময় এইরূপ যাতায়াতে তাহদের নিন্দ আরো প্রশ্ৰয় পাইবে। কিন্তু তাহার মন বলিয়া উঠিল, যতক্ষণ ইহা অন্যায় নহে ততক্ষণ আমি নিষেধ করিতে পারিব না। কহিলেন “আচ্ছা যাও ! আমার কাজ আছে, নইলে আমিও তোমাদের সঙ্গে যেতুম!” বুদ্ধ সমাজ-সংস্কারক, ন। মুক্তি-প্রচারক ? (রি-দে লাফের ফরাসী হইতে) এখন যদি আমরা বুদ্ধ-জীবনের সমস্ত উপাখ্যান-ভাগকে শুধু কবিকল্পনা বলিয়া নিৰ্দ্ধারণ করি, তবে বুদ্ধজীবনের _কোন অংশটিকে ঐতিহাসিক বল যাইতে পারে ? প্রাচীন - প্রবাসী । কালের মহাকাব্য মাত্রই গৌর-উপাখ্যান-জৰ্ম্মান পণ্ডিত ! [ ৮ম ভাগ । দিগের একটি নবা সম্প্রদায় এইরূপ যে একটি মত প্রকাশ করিয়া থাকেন, এস্থলে সে সম্বন্ধে আমরা কোন তর্ক উত্থাপন কবিব না। senart তাহার বুদ্ধ-উপাখ্যান নামক প্রবন্ধে, বুদ্ধজীবনের উপাখ্যানকে সৌর-উপাখ্যান বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। তাছার মতে, বুদ্ধের জননী মায়াদেবী-সন্তান প্রসব করিবার পরেই যাহার মৃত্যু হয়— তিনি সেই প্রাভাতিক বাপ যাহা স্বৰ্য্য-কিরণের দ্বারা অপসারিত হইয়া থাকে ; বুদ্ধ—যিনি মায়াদেবীর কুক্ষি হইতে নিঃস্থত হইয়াছেন, তিনি সেই স্বৰ্য্য যাহা তিমিররাশির মধ্য হইতে বাহির হইয়া থাকে। বুদ্ধ-বিনি বোধি-বৃক্ষতলে বসিয়া পাপ-পুরুষ মারের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন তিনি সেই সৌর বীর যাহার চারিদিকে শৃঙ্খলমুক্ত ঝটিক ছুটয় বেড়ায় –আর বোধিবৃক্ষ কি – না, মেঘরূপ বৃক্ষ। বুদ্ধদেব যে “ধৰ্ম্মচক্র” প্রবর্তিত করিয়া ছিলেন, তাহা কি ?—ন সেই স্বৰ্য যাহার অগ্নিময় চক্র আকাশে বিঘূর্ণিত হইয়া থাকে। যে নগরে বুদ্ধ জন্মগ্রহ করিয়াছিলেন সেই কপিলবস্তু কি ?--না, বায়ুমণ্ডলের একটি নগর । এই মতটিতে একটু গুণপনা মাত্র প্রকাশ পাইতে পারে ; তাহ ভিন্ন আর কিছুই নহে। Oldenberg, উহার বুদ্ধসম্বন্ধীয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থে, এই ফরাণী পণ্ডিতের মতটি তা তন্ন রূপে আলোচনা করিয়া, হার সমস্ত আপত্তি খণ্ডন করিয়াছেন। নিজের আদর্শ অনুসাকৈ অন্তকে বিচার করা, নিজের ধারণা নিজের আচার ব্যবহার, নিজের রীতি-নীতি অন্ততে আরোপ করা–এইরূপ একটা গৰ্হিত প্রবণতা আমাদের মধ্যে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা আমরা ভাবি না, যে যুগ আমাদের যুগ হইতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন সেই যুগের কথা বিচার করিতে হইলে সেই যুগে আপনাকে লইয়া যাইতে হয়। আমাদের মধ্যে যদি জীবন-চরিত লিখিবার একটা বাতিক থাকে—যে বাতিকের জোরে, আমাদের প্রখ্যাত লোকদিগের জীবনের ক্ষুদ্ৰাদপি-ক্ষুদ্র ঘটনা সকলও আমরা । লিপিবদ্ধ কৰিয়া থাকি,—তাই বলিয়, ঐ বাতিব ? পুরাকালের সভ্য জাতিদিগের ম ে৪ কিবে, এরূপ সিদ্ধাস্ত করা ঠিক নহে। বস্তুত তা ঐ বিপরীতই দেখা ১২শ সংখ্যা । ] যায়। এই কারণেই পুরাকালের প্রসিদ্ধ লোকদিগের— বিশেষত ধৰ্ম্ম প্রবর্তকদিগের—যাহাকে প্রকৃত জীবন-চরিত বলে-সেরাপ কোন জীবন-চরিত প্রাপ্ত হওয়া যায় না। জরথুস্ত্র, কংফুচু, মূসা, বুদ্ধ—তাহদের শৈশবে কি করিতে পারিতেন না পারিতেন, তাহাতে প্রাচীনদিগের কিছুই আসিয়া যাইত না ; তাহদের প্রবর্তিত ব্যবস্থাই প্রাচীনদিগের নিকট গৌরবের জিনিস বলিয়া মনে হইত। কাজের দ্বারাই মানুষের যোগ্যতা নিৰ্দ্ধারিত হয়। কাজের ভাল মন্দ আলোচনা করিয়াই কাৰ্য্যকৰ্ত্তাকে বিচার করিতে হয়। ধৰ্ম্মপ্রবর্তকদিগের সম্বন্ধে এই একটা বিশেষত্ব দেখা যায় ষে তাহদের শৈশব ও নৌবনের ঘটনাসমূহ প্রায়ই তমসাচ্ছন্ন ! মিসর দেশ হইতে প্রস্থান করিবার সময় মূসার বয়স ৮০ বৎসর ছিল এবং তিনি হেলিয়োপোলিসের পুরোহিত ছিলেন—এই দুইটি তথ্য ভিন্ন Exodus গ্রন্থ হইতে আর কিছুই জানা যায় না। জরথুস্ত্রা সম্বন্ধেও এই একই রূপ নীরবতা। বুদ্ধ যিনি ৪০ বৎসর বয়সে ধৰ্ম্ম প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হয়েন এবং মহম্মদ যিনি ঐ একই বয়সে প্রবক্তার কার্য্য আরম্ভ করেন-ইহাদের সম্বন্ধেও এই একই কথা। Evangeles গ্রন্থেও খুষ্ট্রের শৈশবের কথা কিছুই নাই ; ৩০ বৎসর বয়ক্রম কালে খুষ্টের প্রচার কাৰ্য আরম্ভ হয়। অতএব, বুদ্ধ কিরূপ ছিলেন জানিতে *বুদ্ধের প্রচার ও উপদেশ সম্বন্ধে যে সব গ্রন্থ আছে, সেই সব গ্রন্থের মধ্যে অনুসন্ধান করিতে হয়। তাহার যেরূপ অসাধারণ বুদ্ধি ছিল, তিনি যেরূপ গম্ভীর-প্রকৃতি ও চিন্তাশীল ছিলেন, তাহাতে ভারতের তদানীন্তন সামাজিক -অবস্থা দেখিয়া সমাজ-সংস্কারের কথা যে তাহার মনে উদয় হয় নাই, ইহা কখনই সম্ভব নহে। তিনি যেরূপ গভীর তত্ত্বায়ুশীলনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তাহাতে তৰজ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে তখনকার পণ্ডিত দিগকে ছাড়াইয়া উঠিবারই কথা। কাজেও দেখা যায়, তিনি ধৰ্ম্মসংক্রান্ত ও দর্শনসংক্রান্ত বাগ্‌বিতণ্ডায় নিয়ত প্রবৃত্ত হইতেন। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও, কোন চিন্তাশীল দার্শনিককে বৌদ্ধধৰ্ম্ম কিছুই শিক্ষা দিতে পারে নাই ; তাহার কারণ, কোন ধৰ্ম্মই কোন উ.-দৰ্শনতন্ত্রের উচ্চতম অংশের ব্যাখ্যা করে না ; পরস্তু নম্নতম গুণাই যাবা করিয়া বুদ্ধ সমাজ-সংস্কারক, না মুক্তি-প্রচারক ? どの ぶ。 থাকে ; কেন না, ধর্মের উপদেশ সেই জনসাধারণের উদ্দেশেই প্রদত্ত হয় যাহারা নিবোধ ও চিন্তা করিতে অসমর্থ। তাই ধৰ্ম্মব্যবস্থাপক মাত্রই স্বকীয় জ্ঞান ও ধীশুক্তি হইতে এরূপ একটা বীজমন্ত্র বাহির করিতে চেষ্টা করেন বাহা সৰ্ব্বসাধারণের প্রতিই প্রযুঘ্য ; এবং এই অর্থেই তাহাদিগকে তাহাদের মতবাদ অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ বলিয়া বিবেচনা করা উচিত। শাক্যমুনির চরিত্রগত বিশেষ লক্ষণ কি ?—ন, দয়া । বিশ্বমানবের দুঃখকষ্টে অনুকম্পান্বিত হইয়া তিনি চিন্তাশীল দার্শনিকের উচ্চভূমি পরিত্যাগ করিলেন ; নিম্নবর্ণের লোকদ্বিগের শোচনীয় অবস্থা দেখিয়া তাহার হৃদয় বিগলিত হইয়াছিল ; তাহাদের ঐহিক জীবনে কেবলই শ্রম, শ্রাস্তি, রোগ, দুঃখক্লেশ এবং পারত্রিক জীবনে, স্বদীর্ঘ দুঃখময় জন্মপরম্পরার কথা চিন্তা করিয়া, এই রাজকুমার,—যিনি জাত্যংশে ক্ষত্রিয় ও জ্ঞানাংশে ব্রাহ্মণ,—সকলের জন্ত মুক্তির একটি বাজমন্ত্র আবিষ্কার করিতে অভিলাষী হইলেন। রাজপরিচ্ছদের পরিবর্তে ভিক্ষুর বেশ ধারণ করিয়া, তিনি পৃথিবীর সমস্ত অধিকারচু্যত ব্যক্তিদিগকে আহ্বান করিলেন ; ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদিগের জন্ত মঠ নিৰ্ম্মাণ করিলেন ; উহাদিগকে ব্রহ্মচৰ্য্যব্রতে ব্ৰতা করিলেন ; এইরূপে, এক আঘাতেই বর্ণভেদের লৌকিক প্রাচীর ভগ্ন করিলেন ; এবং তাহার চিস্তাপ্রবাহকে নিম্নলিখিত স্বত্রের আকারে পরিণত করিলেন —“আমার এই ধৰ্ম্ম সকলের পক্ষেই হিতজনক ; এবং যাহা সকলের পক্ষে হিতজনক সে ধৰ্ম্মটি কি ? সে এমন একটি ধৰ্ম্ম যাহা অবলম্বন করিয়া, . দুৱাগত প্রভৃতির স্থায় অতি দীনহীন ভিক্ষুকও আপনাদিগকে ধৰ্ম্মশীল করিয়া তুলিয়াছে।” যে যুণ্ডের এই কথাগুলি, সেই যুগে যদি আপনাকে লইয়া যাও, এবং মন্থসংহিতা, বর্ণভেদের যে ছৰ্লঙ্ঘ্য প্রাচীর উঠাইয়াছে তাহা ষাদ বিবেচনা করিয়া দেখ, তাহা হইলে বুঝিবে এই কথাগুলির মধ্যে কতটা মহত্ত্ব আছে। s কতকগুলি পণ্ডিতের মত অনুসরণ করিয়া, বুদ্ধকে সমাজ-সংস্কারকরূপে দাড় করিতে যাওয়া একটা ভারী ভুল। রাষ্ট্রনীতি আসলে গৌণ-শ্ৰেণীয় নীতির মধ্যে ধর্তব্য, কেননা, উহা বিশ্বমানবের কিয়দংশের স্বাৰ্থ লইয়াই ব্যাপৃত -