পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\\ly জাতীয় পাট গাছ চার অবস্থা অতিক্রম করিলে অৰ্দ্ধ জলমগ্ন থাকিলেই ভাল ফসল পাওয়া যায়। এই সকল কারণে পূৰ্ব্ববঙ্গ এবং আসামের মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের চর ও পাশ্ববর্তী গ্রাম্য বিল সমূহে সৰ্ব্বাপেক্ষ ভাল পাট হয়। যে সকল জমি বর্ষাকালে জলমগ্ন হয় না, সে সকল জমির জন্য মিঠাপাট বিশেষ উপযোগী। সিরাজ গঞ্জে দেখা যায়, এই জাতীয় পাট বর্ষাকালে অৰ্দ্ধ শুষ্ক জমি এবং বাস্তু ভূমিতে বন্ধিত হইতেছে ; কিন্তু তিতাপাট ৩৪ এবং বংশভেদে ৫৮ ফুট জলমগ্ন থাকিলেও অতি সতেজে বৰ্দ্ধিত হয়। এবং নারায়ণগঞ্জ, চাদপুর, ভৈরব প্রভৃতি স্থানে অনেক সময় দেখা যায় কৃষকেরা ডুব দিয়া ডুব দিয়া পাট কাটিতেছে। এ কথা মনে রাখা কৰ্ত্তব্য যে যদিও সিক্ত উষ্ণ বায়ু এবং আর্দ্র পলি ভূমি পাটের বিশেষ উপযোগী—তথাপি পাট গাছ ছোট চারা অবস্থায় থাকা কালীন যদি অত্যন্ত বর্ষ। হইয়া জমিতে জল দাড়ায় তবে সকল জাতীয় পাট গাছই মরিয়া যায়। উপযুক্ত পরিমাণ জল পাইলে সকল মাটিতেই ভাল পাট হয় বটে, তথাপি সাধারণ ভাবে একথা বলা যায় যে দোয়াস (Loam) এবং আটাল (clay-loam) মাটিতে যে পাট হয়, তাহার আঁস অতি উৎকৃষ্ট, এবং বেলে মাটিতে (sandy loam) যে পাট হয় তাহার অঁাস নিকৃষ্ট। তবে অঁাসের গুণের উপর মূল্যের তারতম্য যতদিন উপযুক্ত মত না হয়—ততদিন কৃষকগণ পণ্য পাটের পরিমাণের উপরই দৃষ্টি রাখিবে । জল বায়ু যদি ঠিক থাকে তবে, মাটি বেলে কি আটাল, উৎপন্ন পণ্য পাটের পরিমাণ সম্বন্ধে বেশী কিছু আসে যায় না। তবে আটাল মাটির চাষে, বেলে এবং দোয়াস মাটী অপেক্ষ খরচ অধিক পড়ে।. পাটের চাষের জন্য যতদূর সম্ভব গভীর চাষ করিয়া মাটি চূৰ্ণ করিয়া ধূলার মত করিতে হয়। অল্প খরচে চুক্তি করিয়া হল চালনা করাইলে পাটের উপযুক্ত চাষ হওয়া সম্ভব নয়। পুরোহিত যেমন চারি আনার চণ্ডীও জানে, এক আনার চণ্ডীও জানে—কৃষকও তেমনি আট আনার হল চালনাও জানে বার আনার হল চালনাও জানে। প্রবাসী । | ১২শ সংখ্যা । ] নিজের হল * দ্বারা निश्च ਜਿਸ করিলে যেরূপ ੇ শক্ত হইয়া গেলে জলের সুবিধা থাকিলে “বুর” দিয়া অথবা গভীর করিয়া চাষ করা যায় ; চুক্তির হাল গরু দ্বারা এমন কি অসন্তুষ্ট কম বেতনের চাকর দ্বারাও সেইরূপ হইবে না। অসন্তুষ্ট চাকর লাঙ্গলের কটি এমন করিয়া ধরিবে যে ফাল ভাসিয়া ভাসিয়া জমির ২৩ ইঞ্চি মাত্র খুড়িয়া চলিয়া যাইবে। তাছাতে গরুর বা মানুষের কিছুই পরিশ্রম হইবে না। আবার সন্তুষ্ট প্রভূর হিতৈষী চাকর লাঙ্গলের কটি এমন করিয়া ধরিবে যে আমাদের এই ক্ষীণজীবী । গরুতেই ফল ৬৭ ইঞ্চি পর্যন্ত গভীর মাটি খুড়িয়া যাইবে, কিন্তু এরূপ করিলে গরু এবং মানুষ উভয়েরই পরিশ্রম হইবে। পাটের চাষ উপযুক্ত মত গভীর হওয়া চাই। এজন্ত অতি যত্নের সহিত এক লাঙ্গলের খনিত গর্ভের । উপর দিয়া তাহারই পশ্চাৎ পশ্চাৎ আর একটী লাঙ্গল । চালাইয়া জমি ১-১২ ইঞ্চি গভীর করিয়া খুঁড়িয়া দিতে হয়। নিজের ভাল চাকর ভিন্ন এইরূপ পরিশ্রম কেহ করিবে না। চুক্তির চাকর ২/৩ ইঞ্চির বেশি গভীর করিয়া বড় চাষ করে না। সাধারণতঃ খেতের ধান বা অন্ত শস্ত উঠিয়া গেলেই পাটের চাষ আরম্ভ হয়। যে সকল নীচ জমী কাৰ্ত্তিক অঘ্রাণ মাসেও না শুকায়, তাহাতে কলাই সরিষা প্রভৃতি রবি শস্তের সুবিধা হয় না। এরূপ নীচ জমিতে আমন ধাঙ্গ উঠিরা গেলেই পৌষ মাসে অথবা | জমি শুকাইবা মাত্র, অর্থাৎ অত্যন্ত শুকাইয়া শক্ত ইবার পূৰ্ব্বেই প্রথম চাষ দিতে হয়। চাষ দিতে বিলম্ব করিলে মাটি অত্যন্ত শুকাইয়া শক্ত হইয়া যায়। এবং চাষ করিতে অধিকতর পরিশ্রম ও সময় লাগে। আটাল মাটির জমি হইলে, তাহ অতিরিক্ত শুকাইলে এত শক্ত হইয়া যা ! যে তাহার উপযুক্ত কর্ষণে ব্যয় অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যদি অনিবাৰ্য্য কারণ বশতঃ জমি অতিরিক্ত শুকাইয়া শক্ত হইয় পড়ে তবে কিছুকাল অপেক্ষা করিয়া প্রথম বৃষ্টি হইলে, অথবা জল সিঞ্চনের বিশেষ সুবিধা থাকিলে জল সেচন বা “বুর” দিয়া (flooding) মাটি যখনই একটু শুষ্ক অথচ নরম থাকে তখনই চাষ দিতে হইছে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ দোফসলি জমিতে কলাই সরিষা প্রভৃতি রবি শং হয়। এরূপ জমিতে মাঘ কি ফান : রবি শস্ত উঠা গেলেই প্রথম চাষ দিঢ় ক-এ লও আট শুকাই । - যেই প্রথম বৃষ্টি হইয়া মাটি কিঞ্চিৎ শুষ্ক অথচ নরম হইবে তখনই প্রথম চাষ দিতে হইবে। অন্ততঃ চৈত্র মাসের মধ্যে প্রথম চাষ দিতেই হইবে। প্রথম চাষের অন্ততঃ ১•১৫ দিন পর বৃষ্টির দিন দেখিয়া জমিতে ভাল, পচা গোবর সার ছড়াইয়া দিতে হয়, এবং বৃষ্টির জলট কিঞ্চিৎ শুকাইলে দ্বিতীয় চাষ দিয়া মই দিতে হয়। কৃষকের সৰ্ব্বদাই স্মরণ রাখা উচিত যে, একটা চাষ দিয়া, দ্বিতীয় চাষ দিবার পূৰ্ব্বে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়া আবশ্যক। যেন অম্লজান বায়ু (Oxygen) স্বর্যরশ্মি এবং মাটিস্থিত বীজামু (Bacteria) মাটির স্তরে স্তরে রাসায়নিক পরিবর্তন সংঘটিত করিয়া তাহতে উদ্ভিদের সহজপাচ্য খাদ্য প্রস্তুত করিয়া সঞ্চয় করিতে পারে। দ্বিতীয় চাষ ফাল্গুন কি চৈত্রের মাঝামাঝি শেষ হওয়া উচিত। তৎপরে ৭ হইতে ১৫ দিন অথবা যতদূর সম্ভব ফাক রাথিয়া জমি অনুমারে যে কয়টা চাষ প্রয়োজন তাছা দিতে হইবে ; এবং প্রথম চাষের পর প্রত্যেক চাষের সঙ্গে সঙ্গে এক একবার মৈ দিতে হইবে। যদি মাটিতে চেলা বন্ধে, তবে দ্বিতীয় চাষের পরই মুগুরে পিটিয়া ঢেলা ভাঙ্গিয়া দেওয়া আবশ্যক। শেষ চাষ দিয়া বিদে বা আচড়া দ্বারা আবর্জন একত্র করিয়া ফেলিয়া দিতে হয়। অথবা yశ পুতিয়া ফাস প্রস্তুত করিয়া জমিতে ব্যবহার করিলে আরও ভাল হয়। অন্ততঃ আবর্জন পুড়াইয়৷ সেই ছাই জমিতে ছিটাইয়া দেওয়া সঙ্গত। পাটের হাল দেওয়া সম্বন্ধে সৰ্ব্বদা মনে রাখা কৰ্ত্তব্য ষে ফাল যেন মাটির খুব ভিতরে প্রবেশ করে। এক ফুট পৰ্য্যন্ত ভিতরে গেলেই খুব ভাল হয়। তবে কৃষকের দুৰ্ব্বল গরু দ্বার তাহা চলে না। এজন্য এক লাঙ্গলের খনিত গর্তের ভিতরে অন্য লাঙ্গল চালাইয়া চাষ যত গভীর করা যায়, | তাহাই করিতে হইবে । চাষ গভীর, মাট আগাছা ও চেলাশূন্ত ধূলির স্থায় চুর্ণীকৃত—এই সকলই পাটের জন্ত বিশেষ প্রয়োজনীয়। বিলাতের পূৰ্ব্বকালের একজন বড় কৃষকের (; thro Tull) একটী কথা আমাদের গরীব কৃষকের সৰ্ব্বদা ন রাখা বিশেষ কৰ্ত্তব্য। তিনি তাহার জমিতে কখনও ক্ষে সার ব্যবহার করিতেন না, এবং পাট বা নালিত । aforsa "sto #1" (Tillage is manure). আমাদের গরীব কৃষক অপরিমিত স্বদ দিয়া টাকা বার করিয়া, সার ক্রয় করিবে আশা করা যায় না। চাষ ভাল করিয়া করিলে বিনা সারেও ভাল শস্ত পাওয়া যায়। চাষ শেষ হইলে পরে মৈ দিয়া জমি সমান করিয়া বীজ ছিটাইয় (বীজের সঙ্গে ছাই ও শুদ্ধ মাট মাখিয়া লইলে সমানভাবে ছিটাইবার স্ববিধা হয় ) সমানভাবে একবার লম্বালম্বি আর একবার পাশাপাশি ফেলিতে হয়। বীজ ফেলিয়া একবার আচড়া দিয়া ঢাকিয়া দিয়া মৈ দিয়া সমান করিবে ও মাটিটা চাপিয়া দিবে। বিঘা প্রতি সোরা সের হিসাবে বীজ ফেলাই ভাল। বেশী ফেলিলে গাছ দুৰ্ব্বল এবং পণ্যপাট নরম হয়। কম ফেলিলে গাছে ডাল পালা বেশী হয় এবং তাহাতে পণ্যপাট খারাপ হয় । চৈত্র বৈশাখ কি জ্যৈষ্ঠ মাসই বীজ ফেলিবার সময়। যে দেশে যখন বর্ষা আরম্ভ হয় তখনই বীজ ফেলিতে হয়। পূৰ্ব্ববঙ্গ ও আসামে চৈত্র বৈশাখ এবং পশ্চিমবঙ্গে বৈশাখ জৈষ্ঠ্যেই পাট বুনিবার সময়। বীজ ভাল হইলে গাছ ভাল হয়, এজন্ত প্রত্যেক কৃষক আপনার ক্ষেত্রের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট পরিপক্ক গাছ বাছিয়া বীজের জন্ত যত্নের সহিত রক্ষা করিবে। অনেকে বলেন যে যে ক্ষেত্রের বীজ সেই ক্ষেত্রে না বুনিয়া অন্ত ক্ষেত্রে বুনিলে অপেক্ষাকৃত ভাল হয়। এজন্ত পার্শ্ববৰ্ত্তী গ্রামের কৃষকেরা যদি আপনাদের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট গাছের বীজ পরস্পরের সহিত বিনিময় করেন, তবে পাট গাছের আরো উন্নতি হইবে এরূপ আশা অনেকে করেন। ফলেন পরিচয়তে”। তবে এইরূপ বিনিময়ে প্রবঞ্চনারও আশঙ্কা আছে। বীজ বুনিবার ৫৭ দ্বিনের ' মধ্যেই চারা বাহির হয়। -- - - -صے* ৮ । পাট গাছের যত্ন । বেলে এবং দোয়াস মাটিতে চারা সহজেই বাহির হইয়া বৰ্দ্ধিত হয়, কিন্তু আটাল মাটির উপরে অনেক সময় এমন শক্ত সরের মত বান্ধিয়া যায়, যে চার বাহির হইয়াও বদ্ধিত হইতে পারে না। এরূপ স্থানে চার গাছের শিকড় মাটিতে ভাল করিয়া ধরিলে পর—অনুমান বুনিবার ৮১০ দিন পরে একবার আচড়া বা বিন্ধে দ্বারা মাটির '