পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৭২ গাছেরও প্রায় সেইরূপ অবস্থা হয়। ইহাও একপ্রকায় FRS FRl æfst (Pythium de Baryanum) 1 fSF মাটিতে কচি কচি শালগম প্রভৃতি চারাও এই রোগে অনেক সময় মরিয়া যায়। ঠিক্‌ গাছের গোড়াতে এই রোগ প্রথম আক্রমণ করে। ক্রমে সমস্ত গাছের শরীরে বিস্তৃত হয়। অণুবীক্ষণের সাহায্যে এই রোগ বেশ প্রত্যক্ষ করা যায় এবং বৈজ্ঞানিকের এই রোগ সম্বন্ধে অনেক আশ্চৰ্য্য কথা আবিষ্কার করিয়াছেন। তাহার এ স্থলে উল্লেখ করা গেল না। চারা অত্যন্ত ঘন করিয়া বুনিলে এবং সেই সঙ্গে জমি খুব ভিজা হইলে রোগের আশঙ্কা বেশী। এই রোগের চিকিৎসা অতি-সহজ-এবং বিনা ব্যয়েই করা যায়। যে সকল গাছ ঢলিয়া পড়িয়াছে সেগুলিকে তৎক্ষণাৎ উৎপাটিত করিয়া অনেক দূরে নিক্ষেপ করিবে। তারপর জমির জলপ্রণালীগুলি (Drain) কোদাল দিয়া ভাল করিয়া খুলিয়া দিবে। এবং জলপ্রণালীর সংখ্যা ও এই পরিমাণ বৃদ্ধি করিয়া দিবে যেন অল্পকাল মধ্যে জমিটা শুকাইয়া, বিদে বা আচড়া দিবার যোগ্য হয়। এবং বিলম্ব না করিয়া বিদে দিতে পারিলে দিবে। কিম্বা হাতে নিড়াইয়া বাছাই দিবে। অন্তত আক্রান্ত গাছের চতুঃপার্শ্বস্থ গাছগুলি হাতে নিড়াইয়া বাছাই দিবে। গাছের গোড়ায় এবং শিকড়ে বাতাস প্রবেশ করিতে পারিলে, এবং মাটি কিঞ্চিৎ শুকাইলেই এই রোগ নিবারণ হয়। সাধারণ কৃষকেরা এই রোগকে “হাজা” বা “পেকচিপা” লাগা বলে । (ক্রমশঃ) ঐদ্বিজদাস দত্ত। উত্তরবঙ্গ সাহিত্য-সম্মিলন।* কালচক্রের পরিবর্তনে বাঙ্গালীর অবস্থা দিন দিনই শোচনীয় হইয়া পড়িতেছে। যে বাঙ্গালীর বাহুবল-কাহিনী, যে বাঙ্গালীর বীরত্বগাথা যুগ যুগান্তর এরিয়া ইতিহাসের পত্রে * পত্রে জহস্ত ভাষায় কীৰ্ত্তিত হইয়া আসিয়াছে, স্মরণাতীত কাল হইতে যে বাঙ্গালীর গৌরব-গরিম দিদেশে বিস্তৃত • রংপুরন্থ উত্তরবঙ্গ সাহিত্য-সম্মিলনের প্রথম অধিবেশন ( ১৩ই . আষাঢ় ১৩১ সাল) উপলক্ষ্যে লিখিত। প্রবাসী । - হইয়া পড়িয়ছে, সেই বাঙ্গালী—বঙ্গ-জননীৰু প্রিয় সস্থান বাঙ্গালী আজ দুৰ্ব্বল কাপুরুষ বলিয়া নিন্দিত । বাঙ্গলার যে সকল স্বাধীন নরপতির অজেয় প্রতাপে শত্রুকুল সাসৰ্ব্বদা সশঙ্কিত থাকিত, যে শূরবংশীয়, পালবংশীয় ও সেনবংশীয় নরপতিগণের বীরত্ব-গৌরবৃ-পরিচয় দেশের নানা স্থানে অস্থাপিও দৃষ্টিগোচর হইয় থাকে, যে বাঙ্গালী প্রতাপাদিত্য, সীতারাম, কংসনারায়ণ, কেদার রায় প্রভৃতি ভূইয়াগণের অতুল প্রতাপে জল স্থল প্রকম্পিত হইত; বেশিদিনের কথা নহে,—যে যুদ্ধ-বিশারদ মোহনলাল, মেনাহাতী, জানকীরাম প্রভৃতি সেনাপতিগণের দুদ্ধৰ্ষরণনীতি সমগ্র দেশকে বিস্ময়াবিষ্ট করিয়া রাথিত, হায় সেই বাঙ্গলাদেশের সেই বাঙ্গালী বংশেরই আজ কি শোচনীয় পরিণাম! আজ পাশ্চাত্য দেশাগত নবীন শ্বেতজাতির বীরত্ব ও মহত্ত্বে প্রাচ্য দেশ মুখরিত। ভারতবর্ষ তাহাদের বিজয়লৰ । সম্পত্তি বলিয়া তাহারা শ্লাঘা প্রকাশ করিতেছে। ইংরেজ ইতিহাস-লেখকগণ জগতের সমক্ষে প্রকটত কুরিয়া গিয়াছেন যে,-পঞ্চনদের পুণ্য-ক্ষেত্রে, পলালীর আস্ত্র কাননে—সৰ্ব্বত্রই বাঙ্গালী, ভারতবাসী, ইংরেজদের বাহুবলে ও বুদ্ধিকৌশলে পরাজয় ও বহুত স্বীকার করিয়াছে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, ইহাই কি সত্য ? ভারতবর্ষ কি সত্য সত্যই ইংরেজদের বিজয়লব্ধ সম্পত্তি ? ভারতবর্ষ কি সত্য সত্যই ইংরেজদের বাহুবলে বিজিত, না ভারতবাসীখনজেরাই আপনাদিগকে ইংরেজের অধীনে আনয়ন করিয়াছে। [ ৮ম ভাগ । I ১২শ সংখ্যা । ] - মধ্যে মুবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়াছে—দেশবাসীর ও উন্নত হইতে পারে না। এ কার্য্য স্বদেশের কার্য্য তাহারা নিজেরাই কি ইংরেজের হস্তে দেশের শাসনভার । অর্পণ করে নাই ? ভারতবর্ষ আপনিই কি আপনাকে জয় করে নাই ? আমরা বহুদিন ইংরেজদিগের লিখিত এবং প্রকার অসত্য অলীক ইতিহাস পাঠ করিয়া সত্য সত্যই আপনাদিগকে মমুষ্যেতর শ্রেণীর মধ্যে গণনা করিয়া আসিতেছিলাম, পাশ্চাত্য অন্ধ-শিক্ষার মোহে আপনাকে ভুলিয়া, আপনার প্রাচীন ইতিহাস ভুলিয়া, বিদেশীয় ভাবে দেশীয় হৃদয় গঠিত করিয়া আসিয়াছি এবং স্বার্থপরতার কঠিন নিগড়ে সকলে শৃঙ্খলিত হইয়া রহিয়াছি। যে শিক্ষায় আস্তে তত্ত্ব জাতীয় উন্নতি সাধন হইয়া থাকে, ভারতবাসী গণে যে শিক্ষা লাভ বহুদিন ঘটে না। কিন্তু ই কুপার দেশে প্রাণের সাড়া পাওয়া যাইতেছে। যে পাশ্চাত্য অন্ধশিক্ষণ নিজের স্বার্থসাধনের পন্থাম্বেষণ করিয়া” আসিতেছিলাম, এক্ষণে সেই প্রবৃত্তি পরিবর্ধিত—সেই অন্ধ-মোহ দূরীভূত হইতে চলিয়াছে। আমাদের পূৰ্ব্ব-স্বরূপ লাভ করিতে হইলে, সৰ্ব্বাগ্রে জাতীয় ভাষার সাহায্যে জাতীয় শিক্ষার প্রবর্তন ও প্রাচীন ইতিহাস পাঠের ব্যবস্থা করিতে হইবে। জাতিত্ব বন্ধনের মূলই জাতীয় সাহিত্য। যে জাতির মধ্যে জাতীয় সাহিত্য জনসাধারণের যত উপযোগী হইবে, ততই উহা জাতীয় ভাবে অনুপ্রাণিত হইবে এবং এক জাতীয় প্রত্যেক ব্যক্তির হৃদয়েই একজাতীয়তার ভাব অঙ্কুরিত ও পরিবদ্ধিত হইতে থাকিবে। এক বিজ্ঞ সমালোচক লিথিয়াছেন,–‘সমগ্রজাতির মঙ্গলের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া সাহিত্য রচনা করিলে সাহিত্যুের সাহায্যে বড় বৃহৎ, বড় মহৎ, বড় সুন্দর, বড় পবিত্র কার্য্য করিতে পারা যায়। সাহিত্য বড় সামান্য সামগ্ৰী নহে, বড় সহজ সামগ্ৰীও নহে। স্বপ্রণালীতে রচিত ইলে, উহা জাতি গড়িবার কাৰ্য্যে যেমন সহায়তা করে, কুপ্রণালীতে রচিত হইলে, জাতি ভাঙ্গিবার পক্ষে তেমনই কাৰ্য্যকর হয়, জাতি গঠনের তেমনই প্রতিবন্ধকতা করে। গঠনেঃ গুণে সাহিত্য যেমন স্বন্দর, যেমন অমৃতময় ফল করে, গঠনের দোষে তেমনই কদৰ্য্য, তেমনি বিষময় স্কুল প্রদান করে। যে সাহিত্যের ফল কদৰ্য্য ও বিষময়, বে সাহিত্য জাতি ভাঙ্গে বা জাতি গড়িতে দেয় না, তাহা জাতীয় সাহিত্যও নহে, প্রকৃত সাহিত্যও নহে।’ শিশু ভূমিষ্ঠ হইয়া যে ভাষা ব্যবহার করে, যে ভাষায় স্বী হর্ষ বিষাদ, যাতন আনন্দ, মুখ দুঃখ জ্ঞাপন করে— তাহ তাছার মাতৃভাষা। এই সাহিত্য ও জাতীয় সাহিত্য এক জিনিষ নহে। অবশু মাতৃভাষার শেষ পরিণতি জাতীয় সাহিত্যে-চৰ্চার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সাহিত্যের নিকটবৰ্ত্তী ইয়া থাকে। মাতৃভাষার শিক্ষক রক্ষক যেমন শিশুর মাতৃগণ, জাতীয় সাহিত্যের রক্ষকও তেমনি দেশের জনসাধারণ। দেশে সৰ্ব্ব শ্রেণীর সর্ব্বজাতীয় লোকের সাহচৰ্য্য शैठ, অক্লাস্ত অখণ্ড ব্যতীত জাতীয় সাহিত্য গঠিত মোহে অভিভূত হইয়া আমরা স্বদেশ ও স্বজাতিকে ভুলিয়া ৬৭৩ স্বদেশবাসী প্রত্যেক নরনারীর কার্য্য ; হৰ্ম্ম্য অট্টালিকাবাসী মহারাজাধিরাজ রাজচক্রবত্তী হইতে দীন কুটিরবাসী নিরন্ন নিরাশ্রয় ভিক্ষা-সম্বল ভিখারী—সকলকেই ইহার সেবার মন প্রাণ সমর্পণ করিতে হইবে । এক্ষণে আমি প্রাচীন সাহিত্যের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করতঃ অস্তকার আলোচ্য বিষয়ের অর্থাৎ উত্তর বঙ্গীয় এই সাহিত্য-সম্মিলনের উদ্দেশু ও কাৰ্য্যপ্রণালী-গঠন সম্বন্ধে আলোচনা করিব । আমাদের বর্তমান জাতীয় ভাষা ও সাহিত্য- বাঙ্গলা । কিন্তু চির দিনই বাঙ্গলা আমাদের জাতীয় সাহিত্যের গৌরবময় আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। কত দিন হইতে বাঙ্গলা ভাষার স্বত্রপাত হইয়াছে, কতদিন হইতে বাঙ্গলা বাঙ্গালীর লিখিত ভাষারূপে গণ্য হইয়াছে, তাহ এখনো নির্ণীত হয় নাই। তৎসম্বন্ধে নানা জনের নানা মত প্রচলিত আছে, তাহার আলোচনা এক্ষণে নিম্প্রয়োজন। বৈদিক ভাষাই আৰ্য্যজাতির আদি ভাষা ছিল, পরে সংস্কৃত ভাষার প্রচলন হয়। সমাজ-বিপ্লব ধৰ্ম্ম-বিপ্লব ও রাষ্ট্র-বিপ্লব প্রভৃতি সমস্ত বিপ্লবই ভারতবর্ষের বুকের উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে। এই সকল বিপ্লবে দেশের আভ্যন্তরীন অবস্থা যেমন পরিবৰ্ত্তিত হয়, দেশের ভাষাও সেই সঙ্গে প্রভূত পরিমাণে পরিবর্তিত হইয়া থাকে। সংস্কৃত ভাষা বহুকাল এদেশে প্রভুত্ব বিস্তার করিলেও অকস্মাৎ বৌদ্ধ-বিপ্লবে তাহার আসন বিকম্পিত হইয়া উঠে, দেশের মধ্যে এক নব ভাষা মস্তক উত্তোলন করিয়া দণ্ডায়মান হয়। এই ভাষার নাম—পালী ; বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বীরা এই ভাষার সাহায্যেই তাহাম্বের ধৰ্ম্মগ্রন্থ, নীতিগ্রন্থ, ব্যবহারশাস্ত্র প্রভৃতি যাবতীয় গ্রন্থ কাৰ্ব্বৱতে আরম্ভ করিল। ইহা আড়াই হাজার বৎসর পূর্কের কথা। এই সময় হইতে সংস্কৃত ভাষা নিম্প্রভ হইতে আরম্ভ হয়। তৎপর বৌদ্ধধর্মের অবসানে ও ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনরুখানে - পুনরায় সংস্কৃত ভাষার চর্চা আরব্ধ হয়, কিন্তু পূৰ্ব্বের নবাগত . ভাষাটর সাহায্যে দেশে যে প্রাকৃত ভাষার স্তর হই হইয়াছিল, তাহ বিলুপ্ত হইল না। এই প্রাকৃত ও সংস্কৃতের মিশ্রণে গৌড়ীয় ভাষার হাট। খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর . .