পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ー

  • Rev. L.

や° や গ্রন্থখানি প্রকাশের একান্ত উপযোগী, কিন্তু স্থানাভাব প্রযুক্ত তাহা হইতে নমুনা উদ্ধত করিতে না পারিয়া দুঃখিত হইলাম। এই গ্রন্থের ভাষা অতি সরল। ‘বৃন্দাবন লীলা’, ‘শ্ৰীবৃন্দাবন পরিক্রমা’ প্রভৃতি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগের রচিত কতিপয় গ্রন্থও এইরূপ সরল ভাষায় লিখিত হইয়াছে। ইহাতে ব্যাকরণের নিয়ম মানিত হয় নাই ; সম্ভবত: তৎকালে কোনো বাঙ্গলা ব্যাকরণ প্রচলিত ছিল না। না থাকিলেও পদ্যসাহিত্যে এরূপ বহুল প্রয়োগব্যভিচার দৃষ্টিগোচর হয় না। - অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হইতে এতদ্দেশে ইংরেজপ্রভাব প্রবর্ধিত হয়। ইংরেজগণ শাসনকার্য্যের সৌকাৰ্য্যার্থে ও দেশীয়গণের মধ্যে খৃষ্টধৰ্ম্মপ্রচারের অভিপ্রায়ে বাঙ্গলা ভাষার উন্নতি ও পুষ্টিসাধনে মনোনিবেশ করেন। এই সময় হইতে উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পৰ্য্যস্ত গদ্য সাহিত্যের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করিয়া, বর্তমান কালে সাহিত্যোন্নতির জন্য কি পন্থী অবলম্বন করা কর্তব্য তাহার আলোচনা করিতে সচেষ্ট হইব । সপ্তদশ শতাব্দীর আরো বহুতর সহজিয়া গ্রন্থে গদ্য সাহিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু তৎসমুদয়ের আলোচনা একদিনের একটা প্রবন্ধে করা দুষ্কর ; কাযেই সে বাসন পরিত্যক্ত হইল। পূৰ্ব্বোক্ত সময়ের মধ্যে মার্সম্যান, কেরা, ফষ্টার প্রভৃতি ইয়ুরোপীয়গণ দেশীয় গপ্ত সাহিত্য প্রচারের প্রভূত চেষ্টা করিলেও পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যেও তাদৃশ কোনো উন্নতি করিতে পারেন নাই। তাই রেভারেও লং সাহেব আক্ষেপ করিয়া লিথিয়াছিলেন যে, ঈষ্ট ইণ্ডিয়া বাস ইংরেজফিরিঙ্গীগণের দেশীয় ভাষা শিক্ষাকরার বিশেষ - সুবিধা থাকিলেও তাহারা বাঙ্গলা ভাষায় উৎকৃষ্ট গ্রন্থ প্রণয়নে~ষমর্থ- হন নাই। (১) তাহাদের ভাষাকে সাধারণতঃ খৃষ্টানী ভাষা’ নামে অভিহিত করা হইত। এতৎসত্ত্বেও আমরা যখন দেখিতে পাই যে, কতিপয় (3) “East Indians, though children of the soil, and so favourably sittated in many cases for gaining a good - knowledge of the native language, have done scarcely anything in Bengali composition. Russia can boast that her Milton, Poushkin is a Mulata of Negro origin, bft Bengal has never had either East Indians or Portuguese who were good vernacular writers."— ong. প্রবাসী। { ৮ম ভাগ। বিদেশীয় ব্যক্তি আমাদের জাতীয় নবীন সাহিত্যপ্রচারের নিমিত্ত এরূপ অর্থব্যয় ও পরিশ্রম করিয়া গিয়াছেন, তখন স্বতই আমাদের মন কৃতজ্ঞতা রসে আপ্লত হইয় উঠে। মিশনারীগণের নাম এই ভাবে বাঙ্গলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিবে । মি: হালহেড ইয়ুরোপীয়দের মধ্যে সৰ্ব্ব প্রথম বাঙ্গলা ভাষা শিক্ষা করেন এবং ১৭৭৮ অব্দে একখানি বাঙ্গলা ব্যাকরণ প্রণয়ন করেন। ইংরেজ সিভিলিয়ানদিগকে বঙ্গভাষা শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্ত ১৮• • অব্দে কলিকাতায় ‘ফোর্টউইলিয়ম কলেজ স্থাপিত হয়। কতিপয় সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত অধ্যাপনা কাৰ্যো নিযুক্ত হন। রামনাথ স্থায়বাচস্পতি, রামরাম বম্ব, কালীপ্রসাদ তর্কসিদ্ধান্ত, শিবচন্দ্র তর্কালঙ্কার, পরে বিদ্যাসাগর, মদনমোহন প্রভৃতি সকলেষ্ট ফোটউইলিয়মে নিযুক্ত থাকিয় বঙ্গসাহিত্যের উন্নতিকল্পে যথেষ্ট পরিশ্রম করিয়াছেন। এই সময়ের অধিকাংশ গ্ৰন্থই সুদীর্ঘ সমাসবদ্ধ শব্দ যোজন স্থার উৎকট । কাষেই এই সকল গ্রন্থ দ্বারা সাধারণের তাদৃশ উপকার দর্শায় নাই। আমরা এস্থলে এই সময়ে কতিপয় গ্রন্থের পরিচয় প্রদান করিলাম। বেণ্টো সাহেবের "প্রশ্নোত্তরমালা’ অন্ধে প্রকাশিত হয়। ইংরেজশাসন আরস্তের ইহাই সৰ্ব্বপ্রথম গদ্যগ্রন্থ বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকে। তৎপর রাজা রামমোহন রায় বাঙ্গলা সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ \». হিন্দুদিগের পৌত্তলিক ধৰ্ম্মপ্রণালী’ গ্রন্থই তাহার সর্ম প্রথম রচনা। রামমোহনের পিতা পুস্তকথানু পাঠ করিয়া নাকি পুত্রের উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। অতঃপর রামমোহন বহুতর গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ১৭৬৫ গ্রন্থে তৎকালীন দেশীয় সমাজের যে জীবন্ত চিত্র চিত্রিত হইয়াছে, তাহার অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করিবার প্রলোভন সম্বরণ করিতে পারিলাম না। - দুইটা রমণী ঘরকন্নার কথা বলিতেছে — “প্রথমা।—তোদের বেী কেমন রাধিতে বাড়িতে পাবে ? / ' দ্বিতীয়া।—ই বুন সেই বই স্বাক রান্ধে ? মেয়ের é z हेश* পর আমরা কেরী সাহেবের গ্রন্থ দেখিতে পাই। তদীয় । l ১২শ সংখ্য। ] কেহ এখানে নাই । আপনি কাচা বাচ। নিয়া নড়িতে পারি না। সকল কাযি বড় বউ করে। ছোট বৌড বড় হিজলদাগুড়া অঙ্গ লাড়ে না আর সদাই তার ঝকড়া । কি করিব বুন সহিতে হয় যদি কিছু বলি তবে লোকে বলিবে দেখ এ মাগী বেীদের দেখিতে পারে না। কিন্তু বুন কানা হাড়ি পানে চাহিয়া বড় বেটা অতি ভাল। এ সংসারে কায কাম করে আর ছেল্যা পিল্যা খাওয়াইয়া আচিয়া দেয় আর আমাদের সেবা সুস্থ করে। তাহার জন্ত আমাদের কোন ব্যামোহ নাই।” ১৮১২ অব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস হইতে “ইতিহাসমালা” নামে একখানি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ; তাহা হইতে একটা দেশীয় সমাজ চিত্র সভা মহোদয়গণকে উপহার প্রদান করিলাম। “এক কৃষক লাঙ্গল চসিতে গিয়া কোন খালে, গোট। চব্বিশেক মৎস্ত ধরিয়া গৃহে আনিয়া আপন গৃহিণীকে পাক করিতে দিয়া আপনি পুনৰ্ব্বার চসিতে গেল। তাছার গৃহিণী সে মৎস্ত কয়ট পাক করিয়া মনে বিবেচনা করিল ষে মৎস্ত পাক করিলাম কিন্তু কি প্রকার হইয়াছে চাথিয়া দেথি । ইহা ভাবিয়া কিঞ্চিং ঝোল লইয়া খাইয়া দেখিল যে ঝোল স্বরস হইয়াছে। পরে পুনৰ্ব্বার মনে ভাবিল মৎস্ত কিরূপ হইয়াছে তাহাও চাথিয়া দেখি ইহা ভাবিয়া একটা মৎস্ত থাইল । পুনৰ্ব্বার চিন্তা করিল ওটি রিপ হইয়াছে তাহাও চাৰিতে হয় ভাবিয়া সেটাও খাইল। এইরূপ থাইতে থাইতে একটা মাত্র অবশিষ্ট রাখিল । পরে কৃষক ক্ষেত্র হইতে বাট আইলে তাহার গৃহিণী সেই মৎস্তট আর অন্ন তাহাকে দিলে কৃষক কহিল যে, এ কি ? চব্বিশটি মৎস্ত আনিয়াছি আর কি হইল ? তখন তাহার স্ত্রী মৎস্তের হিসাব দিল –

  • মাছু আনিলা ছয় গও চিলে নিল দুই গণ্ডা বাকী রইল ষোল। তাহা ধুতে আটটা জলে পলাইল ॥ e < তবে থাকিল আট।

দুইটায় কিনিলাম তুই আট কাট ॥ ভ"াকিল क्तानि । উত্তরবঙ্গ সাহিত্য-সন্মিলন। প্রতিবাসীকে চারিটা দিতে হয়। - তবে থাকিল দুই । তার একটা চাখিয়া দেখিলাম মুই ॥ তবে থাকিল এক । অই পাতপানে চাহিয়ে দেখ ॥ এখন হইল যদি মানসের পো - তবে কাটা থান থাইয়া মাছখান থো ॥ আমি যেই মেয়ে । ८उँठे श्निांव ग्निगाभ काग्र ॥” বিদেশীয়দিগের এই সরল সমাজ-চিত্রের সহিত আমাদের দেশীয় পাণ্ডিত্যাভিমানী সংস্কৃতজ্ঞদিগের রচনা একবার তুলনা করিয়া দেখুন। গোলক শৰ্ম্মার হিতোপদেশ, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘পুরুষ-পরীক্ষা’ ও ‘প্ৰবোধচন্দ্রিকা, রামরাম বস্বর প্রতাপাদিত্য-চরিত্র’, চণ্ডীচরণ মুন্সীর তোতার ইতিহাস’, তারিণীচরণ মিত্রের "ঈশপের গল্প', রামমোহন রায়ের ‘বেদান্তস্বত্র ভাষানুবাদ' প্রভৃতি এবং অপরাপর" গ্রন্থকারগণের রচিত ‘মনোরঞ্জন ইতিহাস’, ‘নীতিকথা’, শঙ্করাচাৰ্য্যকৃত ‘আনন্দলহরী ও ইলিয়ড, কাব্যের গদ্যান্থবাদ, রাজা রাধাকান্ত দেবের স্ত্রীশিক্ষাবিষয়ক গ্রন্থ, আত্ম-তত্ত্বকৌমুদী, কলিরাজার যাত্র প্রভৃতি এই সময় পর পর প্রকাশিত হয়। তৎপর মদনমোহন তর্কালঙ্কারের বাসবদত্ত, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গ্রন্থাবলী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের হিতকর-প্রভাকর, বোধেন্দুবিকাশ প্রভৃতি গ্রন্থ মুদ্রিত হইয়াছিল। আমরা প্রথমত: পূৰ্ব্বোক্ত খুষ্টানীভাষা’ ও ‘পাওতি ভাষার ব্যবধান দেখাইতে চেষ্টা করিতেছি। ". বিদেশীয় সিভিলিয়ানদের পাঠ্য ‘প্ৰবোধ চন্দ্রকা’রমুখবন্ধ ;–“অকারাদি ক্ষকারাস্তা ক্ষরমাশা পঞ্চাশৎ * সংখ্যক কিম্বা একপঞ্চাশত কিম্ব সপ্তপঞ্চাশৎ সংখ্যা পরিমিত হউক তথাপি এতাবন্মাত্র কতিপয় বর্ণাবলী বিদ্যাস বিশেষ বশত: বৈদিক লৌকিক-সংস্কৃত প্রাক্কত পৈশাচাদি অষ্টাদশ ভাষা ও নানাদেশীয় মনুষ জাতীয় ভাষা, বিশেষ বশত: অনেক প্রকার ভাষা বৈচিত্র শাস্ত্রতে লোকত: প্রসিদ্ধ আছে।” আর না, - ইহাই যথেষ্ট । ছাত্রের পক্ষে এই ভাষা আয়ত্ব করা কিরূপ দুরূহ তাহা ।