পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ سbوا۔ যে মাইকেল মধুসূদন দেশীয় আচার ব্যবহার, পোষাক পরিচ্ছদ প্রভৃতি ত্যাগ করিয়া বিজাতীয় রমণীর কণ্ঠলগ্ন হইয়াছিলেন, তিনিও অবশেষে জাতীয় ভাবে উদ্বুদ্ধ হইয়। উঠিয়া গাহিতে আরম্ভ করেন,— “হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন, তা সবে ( অবোধ আমি ) অবহেলা করি, পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।” মাইকেলের এই কথাগুলি স্বর্ণীক্ষরে ক্ষোদিত হইয়া চিরকাল আমাদের জাতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে আসন প্রাপ্ত হইবে। এই সময় হইতেই বঙ্গভাষা শতমুখী গঙ্গাপ্রবাহের ন্যার উচ্ছ,সিত হৃদয়ে নানা দিদেশের অভ্যন্তর দিয়া প্রবাহিত হইতে আরম্ভ করে। পূৰ্ব্বোক্ত সাহিত্যরৰিগণের প্রত্যেকের রচনা উদ্ধৃত করিয়া প্রদর্শন করিবার অবসর আমার নাই, পরস্তু বর্তমান যুগের বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাস সংকলনের সময়ও উপস্থিত হয় নাই। বাঙ্গলা পষ্ঠ সাহিত্য যেমন সহস্ৰ বৎসর পূর্ব হইতেই উন্নতির পরিচয় দিয়া আসিতেছিল, গদ্য সাহিত্য সেরূপ পারে নাই । উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ হইতেই গল্প সাহিত্যের উন্নতি সুচিত হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতায় দেশমধ্যে যে প্রবাহ প্ৰবৰ্ত্তিত হয়, তাহাতেই বাঙ্গালী বাঙ্গলাকে চিনিতে চেষ্টা করে, তাহাতেই বাঙ্গালী নিজেদের শোচনীয় অবস্থা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে। বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্য-মার্গে নূতন যুগের প্রবর্তন করেন। তিনিই সাহিত্য মধ্যে নূতন ভাব, নূতন চিন্তা, অভিনব কল্পনার প্রবর্তন করিয়া বঙ্গবাসীকে আনন্দরসে আপ্লত করিয়া ে কেনা জানে, সেকালে তাহার |' ‘चत्रमर्थन' "নিমিত্ত সকলে উৎকণ্ঠিত চিত্তে মাসের দিন গণনা করিতেন। শেষাবস্থায় তিনি ধৰ্ম্ম-তত্বালোচনায় প্রবৃত্ত হন। আমি বহুপূৰ্ব্বে একবার বলিয়াছিলাম যে, সেই দেবদত্ত অয়ুধারণ প্রতিভা-সমম্বিত মস্তিষ্ক যেদিন ধৰ্ম্মতত্বের স্তুর বিষ্ঠাসে নিয়োজিত হইয়াছিল, সেই দিনই বঙ্গোপন্যাস-লক্ষ্মী আপনার অঞ্চলকোণে উচ্ছসিত নয়নবারি সংবরণ করাছিল। তাহার কণ্ঠের সেই অফুট রোনধ্বনি দার্শনিক ঢঙ্কার সঙ্গোর আক্ষালন বশত: বঙ্কিমচন্ত্রের প্রবাসী। . [ ৮ম ভাগ । কৰ্ণপটহে অগ্রসর হইবার অবসর পায় নাই। আমরা ধৰ্ম্মতত্ত্বের কাঙ্গাল ছিলাম না, আমাদের দেশ, আমাদের সাহিত্য, আমাদের জাতীয়তা ধৰ্ম্মপটে সমাচ্ছাদিত – তাহারই তত্ত্বে আমরা জগতের মধ্যে বরণীয় জাতি। আমরা আবার নুতন করিয়া ধৰ্ম্মতত্বের জন্য কাঙ্গাল সাজিব কেন ? যাহারা সমগ্র জগতের ধৰ্ম্মপিপাসার বারি সঞ্চয় করিতে পারে, তাহাদিগকে গঙুষপূর্ণ জলের জন্য লালারিত হইলে শোভা পাইবে কেন ? যাহা ছিল না, বঙ্কিম না জন্মাইলে যাহা আমাদের ভাগ্যে কোন দিন ঘটিত না, যাহার জন্য আমাদের ভাষা আবার বিদ্বজ্জন সমাজের আশীৰ্ম্মাল্যে নবভাবে বিভূষিত হইয়া তাহার মৃতজননীর কীৰ্ত্তিরক্ষা করিতে পারিত ; একদিন বঙ্গভাষা প্রস্থতি যে অতুলনীয় গৌরব গৰ্ব্বে স্ফীত হইয়া আপনার কোলের সন্তান "শকুন্তলা’কে সৰ্ব্বভাষার সৌন্দর্য্যাধার করিয়া তুলিয়াছিল ;–তাহারই জন্য আমরা কাঙ্গাল সাজিয়াছিলাম। দারিদ্র্য ঘুচিয়া আসিয়াছিল, চরণে স্বপূর পাইয়াছিলাম, কটিতটে কন্থ পাইয়াছিলাম, বুঝিবা কণ্ঠের হারও মিলিয়াছিল কিন্তু শিরোপরি সেই বিজয় কিরীট কোথায় ? এখন আর আমাদের ভাষা নিরাভরণা নহে— মুকুটহীনা। ধৰ্ম্মতত্ত্বের স্রোত অসময়ে প্রবাহিত না হইলে সে শিরোভূষণ বঙ্কিম দিতে পারিতেন। বঙ্কিম বাচিয়া থাকিতেই সে আশা মরিয়া গিয়াছে। বঙ্গিমের নামের সহিত আমাদের বাঙ্গল উপন্যাসের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। বঙ্কিমচন্দ্রের মহিমাম্বিত প্রতিভা কিরণে বাঙ্গল উপন্যাসের জন্ম। বঙ্কিমের কৃষ্ণকেশ শুভ্ৰ হইতে না হইতেই, তাহার সৌন্দর্য্য, তাহার যৌবন ফুরাইয় আসিয়াছিল। স্তরের এরূপ অপূৰ্ব্ব ক্ষিপ্র উন্নতি এবং পরক্ষণে এরূপ শোচনীয় অবনতি সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। সে উন্নতির রশ্মি এতই উজ্জল যে, স্বদুর ইংরাজি সাহিত্যসাম্রাজ্ঞীও মুগ্ধনয়নে চকিতচিত্তে তাহার পানে চাহিয়াছিলেন,—সে আভরণ এমনই মূল্যবান যে, তিনি আপনার ভূষণ বিনিময়ে শ্বেতাঙ্গে তাহ ধারণ করিবার লোত সম্বরণ করিতে পারেন নাই। কিন্তু হায়! সে আভরণ অঙ্গাভরণ, শির আভরণ নহে। আমুরে এ ক্ষে/বিনি দূর করিতে \, কোনো দেশের কোনো ভাষার কোনো | ১২শ সংখ্যা । ] পারিতেন, তিনি করেন নাই। ভবিষ্যতে কেছ পরিবেন কি না, সে আলোচনা এখন শোভন হয় না। গদ্য সাহিত্য যেরূপভাবে নানা অবস্থা নানা সংকীর্ণতা পরিহার করত: বর্তমান অবস্থায় উপনীত হইয়াছে, তাহ সংক্ষেপে আপনাদের গোচরীভূত করিয়াছি। কিন্তু আমার সময়ের অল্পতায় এবং অবসরাভাব হেতু পূর্ণ-সফলকাম হইতে পারিয়াছি বলিয়া আমার নিজেরই ধারণা হয় না। এরূপভাবে অসম্পূর্ণ ও অজ্ঞরচনা এরূপ পণ্ডিত সন্মিলনীতে উপস্থিত করা নিতান্তই ধৃষ্টতার পরিচায়ক সন্দেহ নাই। কিন্তু সম্পাদক মহাশয়ের পুনঃ পুনঃ অনুরোধ উপেক্ষা করিয়া একাৰ্য্য হইতে পশ্চাৎপদ হওয়াও আমি তুল্যরূপে ধৃষ্টতা বলিয়া মনে করি। সাহিত্যের অপর শাখা-পদ্য ; উহা মাণিকচাদের, গোপীচাদের গানের মধ্যদিয়া জন্মলাভ করিয়া, ডাক ও খনার বচনের মধ্য দিয়া পুষ্টিলাভ করত: শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণুব লেখকগণের কৃপায় উন্নতির সোপানে আরোহণ করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূর অভিনব প্রেম-তরঙ্গে নদীয় যখন "ডুবু ডুবু, তখন নানা দিগেশ হইতে নানা জাতীয় ভক্ত আসিয়া তাহার প্রেম-মন্দাকিনী-স্রোতে নিমজ্জিত হয়। এই সময় একেশ্বরবাদী মোসলমানগণও বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের মহিমাচ্ছটায় আকৃষ্ট হইয়া বৈষ্ণবরসের রসিক হইয়া উঠে এবং স্বললিতপদে গোঁর গুণগান কীৰ্ত্তনে মনোনিবেশ রে। এইভাবে নানা দিক হইতে ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায়ের নানা উত্তেজনা লইয়া বঙ্গসাহিত্য সাগর-সঙ্গমে মিলিত হয়। . এখন কথা এই—বঙ্গ সাহিত্য বৰ্ত্তমান সময়ে যে অবস্থায় সমানীত, তাহাই কি তাহার পূর্ণাবস্থা, না আর কোন বিষয়ে কোনো ভাবে তাহার উন্নতির উপায় অনুস্থত হইতে পারে। এই সঙ্গে বর্তমান সাহিত্য সম্মিলনের উদেশু ও প্রয়োজনীয়তাও আমরা হৃদয়ঙ্গম করিতে চেষ্টা করিব। কিন্তু সৰ্ব্ব প্রথমেই একটা কথা বলিয়া রাখি Ç¥, এবিষয়ে সকলে সহসা একমত হইতে পারেন না ; নানা জনের নানামত অবশুম্ভাবী। অনেকেই অনেক রকম প্রস্তাব উত্থাপিত করবেন জানি। আমি যাহা বলিব, তাহা যে অভ্রান্তরূপে পরিগৃহীত হইবে, সেরূপ আশা আমার নাই। তবে আপনারা সকলে আমার কথাগুলি - *. - উত্তরবঙ্গ সাহিত্য-সম্মিলন I - Ψb"Σ প্রণিধান করিবেন, যুক্তি তর্কের দ্বারা তাহার বৈধ অবৈধতা প্রতিপাদন করিবেন, ইহাই প্রার্থনা। . বাঙ্গালী পরাধীন—ইংরেজরাজের অধীনে বাস করিতেছে। ইংরেজি আজ রাজভাষা ; রাজকাৰ্য্য, ব্যবসায় বাণিজ্যের কার্য্য, শিক্ষা কাৰ্য্য সমস্তই আজ ইংরেজি ভাষা সাহায্যে নিৰ্ব্বাহিত হইতেছে। বাঙ্গালীর দেশে বাঙ্গালীর ভাষা প্রচলনের যে কোনরূপ সার্থকতা বা প্রয়োজনীয়তা আছে তাহা আমাদের কৰ্ত্তাদের বিবেচনায় আইসে না । সময়ের স্রোতে দেশবাসীও নীয়মান, সকলেই স্ব স্ব পুত্র পৌত্ৰাদিকে ইংরেজি শিক্ষার নিমিত্ত ইংরেজি স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করিতেছেন। সকল বালকই যে এইভাবে বিদ্বান হইয়া আসিতেছেন, তাহা নহে। সৰ্ব্বোচ্চ পরীক্ষায় অতি সামান্ত মাত্র বাঙ্গালী উত্তীর্ণ হইয়া থাকে। যাক সে কথা। এখন কথা এই ষে—পরাধীন জাতি হইলেই কি মাতৃভাষা ত্যাগ করিয়া বিজেতার ভাষা গ্রহণ করিতে হয়? জগতের ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্ত কুত্ৰাপি পাওয়া যায় বলিয়া আমার জানা নাই। বিশ্ববিজয়ী রোম যখন কালচক্রের পরিবর্তনে বৰ্ব্বরদিগের হস্তে স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়, তখন সে কোন ভাষা শিক্ষা করিয়াছিল ? প্রাচীন গ্রাস তুরস্কের বাহুবলে পরাজিত হইয়া কি স্বীয় জাতীয় ভাষা বিসর্জন দিয়াছিল । তারপর জন্মন, স্যাক্সন প্রভৃতি অনেক জাতিরই এক সময় ভাগ্য বিপৰ্য্যয় সংঘটিত হইয়াছিল, কিন্তু তাহাদের কেহই তো মাতৃভাষা ত্যাগ করিয়া বিজ্ঞাতীয় ভাষা—বিজেতার ভাষা গ্রহণ করে নাই। যাহার তদ্রুপ করিয়াছে, তাহারা সম্ভবত মরিয়া গিয়াছে তাহদের . অস্তিত্বটুকুও অনস্তগর্ভে নিমজ্জিত হইয়া গিয়াছে। তবে - কি বাঙ্গালী, তুমিও নিজের অস্তিত্বটুকু—সত্তাটুকু পৰ্যন্ত, বিলুপ্ত করিতে ইচ্ছা কয় ? না, ব্রতধারণ পূৰ্ব্বকৰ্মাতৃভাষার সেবায়ু মন প্রাণ সমৰ্পণ করিবে ? আজ যে আমরা মানা দেশের বাঙ্গালী এথায় সমবেত হইয়াছি, কি উদ্দেশ্যে ? আজ আমাদের জাতীয় সাহিত্য—বাঙ্গলা ভাষা দীন নহে, আভরণ বিহীন নহে, পরস্তু উহা বিপুল সম্পৎসারে গৌরবান্বিত, তবে এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য কি ? আমি বলি প্রথমতঃ বাঙ্গলা ভাষায় উচ্চ শিক্ষা দানের নিমিত্ত বাঙ্গলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা উচিত। ಗೀ, ॰न् ।