পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぐうの ieeMMMMABBiABB “কাজ বলতে যা বোঝায় সে রকম কিছু নয়—এই যাওয়াটাই একটা কাজ !” আনন্দময়ীকে একটু খানি চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া গোরা কহিল—“ম, দোহাই তোমার, আমাকে বারণ করতে পারবে না। তুমি ত আমাকে জানই, আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাব এমন ভয় নেই। আমি মাকে ছেড়ে বেশি দিন কোথাও থাকৃতে পারিনে।”, মার প্রতি তাহার ভালবাসা গোর কোনোদিন মুখে এমন করিয়া বলে নাই—তাই আজ কথাটা বলিয়াই সে লজ্জিত হইল । পুলকিত আনন্দময়ী তাড়াতাড়ি তাহার লজ্জাট চাপ দিয়া কহিলেন—“বিনয় সঙ্গে যাবে বুঝি ?” গোরা ব্যস্ত হইয়া কহিল--"না, মা, বিনয় যাবে না। ঐ দেখ, অমনি মার মনে ভাবনা হচ্চে, বিনয় না গেলে তার গোরাকে পথে ঘাটে রক্ষা করবে কে ? বিনয়কে যদি তুমি আমার রক্ষক বলে মনে কর-স্ট্রে তোমার একটা কুসংস্কার ; –এবারে নিরাপদে ফিরে এলে ঐ সংস্কারটা তোমার ঘুৰে।” আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন “মাঝে মাঝে খবর পাব ত ?” می গোরা কহিল, "খবর পাবে না বলেই ঠিক করে রাখ— তার প্রশেযদি পাও ত খুসি হবে। ভয় কিছুই নেই ; তোমার গোরাকে কেউ নেবে না মা,—তুমি আমার যতটা মূল্য কল্পনা কর আর কেউ ততটা করে না। তবে এই বোচ্‌কাটির উপর যদি কারো লোভ হয় তবে এটা তাকে দান করে দিয়ে চলে আসব ; এটা রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দান করব না—সে নিশ্চয় ।” গোরা আনন্দময়ীর পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল— তিনি তাহার মাথায় হাত বুলাইয় হাতচুম্বন করিলেন—কোনো প্রকার নিষেধ মাত্র করিলেন না। নিজের কষ্ট হইবে বলিয়া অথবা কল্পনায় অনিষ্ট আশঙ্কা করিয়া আনন্দময়ী কখনো কাহাকেও নিষেধ করিতেন না। নিজের জীবনে তিনি অনেক বাধা বিপদের মধ্য দিয়া আসিয়াছেন, বাহিরের পৃথিবী তাহার কাছে অপরিচিত নহে ; তাহার মনে ভয় বলিয়া কিছু ছিল না। গোরা চে কোনো বিপদে পড়িবে সে ভয় তিনি এনে প্রবাসী । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোনো কাজ আছে ?" গোরা কহিল— - ৮ম ভাগ। আনেন নাই—কিন্তু গোরার মনের মধ্যে যে কি একটা বিপ্লব ঘটিয়াছে সেই কথাই তিনি কাল হইতে ভাবিতেছেন। ... আজ হঠাৎ গোরা অকারণে ভ্রমণ করিতে চলিল শুনি৷ তাহার সেই ভাবনা আরো বাড়িয়া উঠিয়াছে। " গোরা পিঠে বোচক বাধিয়া রাস্তায় যেই পা দিয়াছে এমন সময় হাতে ঘনরক্ত বসোরা গোলাপযুগল সযত্নে লই৷ বিনয় তাহার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। গোর কহিল—“বিনয়, তোমার দর্শন অ্যাত্রা কি স্থযাত্রা এলরে তার পরীক্ষা হবে।” বিনয় কহিল—“বেরচ না কি ?” গোরা কহিল—“হঁ৷ ” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল—“কোথায় ?” গোরা কহিল—“প্রতিধ্বনি উত্তর করিল কোথায় ।” বিনয়। প্রতিধ্বনির চেয়ে ভাল উত্তর নেই না কি ? গোরা। না। তুমি মার কাছে যাও, সব শুনতে পাবে। আমি চলুম।—বলিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেল। | বিনয় অন্তঃপুরে গিয়া আনন্দময়ীকে প্রণাম করিয়া তাহার পায়ের পরে গোলাপফুল দুইটি রাখিল। আনন্দময়ী ফুল তুলিয়া লইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“এ | কোথায় পেলে বিনয় ?” বিনয় তাহার ঠিক স্পষ্ট উত্তরট না দিয়া কহিল –“ভাল । জিনিষটি পেলেই আগে মায়ের পূজোর জন্যে সেটি দিতে ইচ্ছা করে।” তার পরে আনন্দময়ীর তক্তপোষের উপর বসিয়া বিন । কহিল—“ম, তুমি কিন্তু অন্তমনন্ত আছ।” আনন্দময়ী কহিলেন—“কেন বল দেখি ?" l বিনয় কহিল, “আজ আমার বরাদ্ধ পানটা দেবার কথা : ভুলেই গেছ।” * আনন্দময়ী লজ্জিত হইয়া বিনয়কে পান আনিয় দিলেন । তাহার পরে সমস্ত দুপর বেলা ধরিয়া দুইজনে কথাবার্তা বিনয় কোন কথা পরিষ্কার বলিতে পারিল না। আনন্দময়ী কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করিলেন “কাল বুদ্ধি তুমি গোরাকে নিয়ে পরেশ বাবুর ওখানে গিয়েছিলে ?” হইতে লাগিল। গোরার নিরুদেশ ভ্রমণের অভিপ্রায় সম্বন্ধে | i. ২য় সংখ্যা । ] दिन अड কল্যকার সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিয়া বলিল। আনন্দময়ী প্রত্যেক কথাটি সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়া শুনিলেন। যাইবার সময় বিনয় কহিল, “ম, পূজা ত সাঙ্গ হল, এবার তোমার চরণের প্রসাদী ফুল দুটাে মাথায় করে নিয়ে যেতে পারি ?” আনন্দময়ী হাসিয়া গোলাপ ফুল দুইটি বিনয়ের হাতে দিলেন এবং মনে মনে ভাবিলেন এ গোলাপ দুইটি যে কেবল ---লার্যের জন্যই আদর পাইতেছে তাহা নহে-নিশ্চয়ই উদ্ভিদতত্বের অতীত আরো অনেক গভীর তত্ত্ব ইহার মধ্যে আছে। বিকাল বেলায় বিনয় চলিয়া গেলে তিনি কতই ভাবিতে লাগিলেন। ভগবানকে ডাকিয় বারবার প্রার্থনা করিলেন—গোরাকে যেন অমুখী হইতে না হয় এবং বিনয়ের সঙ্গে তাহার বিচ্ছেদের যেন কোনো কারণ না ঘটে। ২৩ গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে। কাল রাত্রে গোরা ত পরেশ বাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল—কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব লইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে श्हेंद्रांछ्लि । এই অভিনয়ে ললিতার যে কোনো উৎসাহ ছিল তাহ নছে—সে বরঞ্চ এসব ব্যাপার ভালই বাসিত না। কিন্তু কোনো মতে বিনয়কে এই অভিনয়ে জড়িত করিবার জন্য তাহার মনের মধ্যে যেন একটা জেদ চাপিয়া গিয়াছিল । যে সমস্ত কাজ গোরার মতবিরুদ্ধ, বিনয়কে দিয়া তাহ সাধন করাইবার জন্য তাহার একটা রোখ জন্মিয়াছিল। বিনয় যে গোরার অনুবর্তী, ইহা ললিতার কাছে কেন এত অসহ হইয়াছিল, তাহ সে নিজেই বুঝিতে পারিতেছিল না। যেমন করিয়া হোক সমস্ত বন্ধন কাটিয়া বিনয়কে স্বাধীন করিয়া দিতে পারিলে সে যেন বাচে, এমনি হইয়া উঠিয়াছে। ললিতা তাহার বেণী দুলাইয়া মাথা নাড়িয়া কহিল— "কেন মশায়, অভিনয়ে দোষটা কি ?” বিনয় কহিল—“অভিনয়ে দোষ না থাকতে পারে কিন্তু ঐ ম্যাজিষ্ট্রেটের বাড়িতে অভিনয় কর্তে যাওয়া আমার মনে ভাল লাগচে না।” গোরা। や> ললিতা। আপনি নিজের মনের কথা বলচেন, না আরো কারো ? বিনয়। অন্তের মনের কথা বলবার ভার আমার উপরে নেই—বলাও শক্ত। আপনি হয় ত বিশ্বাস করেন না, আমি নিজের মনের কথাটাই বলে থাকি-কথনো নিজের জবানীতে, কখনো বা অন্তের জবানীতে । ললিতা একথার কোনো জবাব না দিয়া একটুখানি মুচকিয়া হাসিল মাত্র। একটু পরে কহিল—“আপনার বন্ধু গৌরবাবু বোধ হয় মনে করেন ম্যাজিষ্ট্রেটের নিমন্ত্রণ অগ্রাহ করলেই খুব একটা বীরত্ব হয়—ওতেই ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করার ফল হয়।” বিনয় উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “আমার বন্ধু হয় ত না মনে করতে পারেন কিন্তু আমি মনে করি। লড়াই নয় ত কি ! যে লোক আমাকে গ্রাহই করে না, মনে করে আমাকে কড়ে আঙুল তুলে ইসারায় ডাক্‌ দিলেই আমি কৃতাৰ্থ হয়ে যাব তার সেই উপেক্ষার সঙ্গে উপেক্ষা দিয়েই যদি লড়াই না করি তা এক্সে-আত্মসন্মানকে বাচাব কি করে ?” ললিতা নিজে অভিমানী স্বভাবের লোক—বিনয়ের মুখের બરે অভিমানবাক্য তাহার ভালই লাগিল। কিন্তু সেই জন্তই, তাহার নিজের পক্ষের যুক্তিকে দুৰ্ব্বল অনুভব করিয়াই ললিতা অকারণ বিদ্রুপের খোচায় বিনৱতে কথায় কথায় আহত করিতে লাগিল । শেষকালে বিনয় কহিল—“দেখুন আপনি তর্ক করচেন কেন ? আপনি বলুন না কেন, “আমার ইচ্ছ, আপনি অভিনয়ে যোগ দেন।” তা হলে আমি আপনার অনুরোধ রক্ষার খাতিরে নিজের মতটাকে বিসর্জন দিয়ে একটা মুখ পাই।” ললিত কহিল—“বা, তা আমি কেন বলা ? সত্যি যদি আপনার কোনো মত থাকে তাহলে সেটা আমার অনুরোধে কেন ত্যাগ করতে যাবেন ? কিন্তু সেটা সত্যি হওয়া চাই ।” - বিনয় কহিল “আচ্ছা সেই কথাই ভাল। আমার সত্যিকার কোনো মত নেই। আপনার অনুরোধে নাই হল, আপনার তর্কেই পরাস্ত হয়ে আমি অভিনয়ে যোগ দিতে রাজি হলুম।” دی