পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o بیان ک নীতিকেই উহা বহিষ্কৃত করে না, ক্ষুদ্র বৃহৎ যেরূপ দেবতাই হউক, যে পদবীর দেবতাই হউক, সকলকেই স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক আপনার মন্দিরে স্থান দিয়াছে। একই মন্দিরের মধ্যে, এমন কি, একই বেদীর উপর, পাশাপাশি বিভিন্ন দেবমূৰ্ত্তি স্থাপিত অথচ তাহাদের মধ্যে কোন প্রকার শক্রতা নাই। ইহা কি কম আশ্চর্য্যের বিষয় ? তাই আমি বলি, ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম এমন একটি ধৰ্ম্ম, যাহার বিশেষত্ব ধৰ্ম্মবিশ্বাস নহে, পরমার্থবিদ্যা নহে, আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া কলাপ নহে-তাহার বিশেষত্ব ব্রাহ্মণের প্রাধান্ত ; ব্রাহ্মণই পুরোহিত, ব্রাহ্মণই প্রভু। ব্রাহ্মণ্য-ধৰ্ম্ম যেমন একদিকে অবারিতদ্বার, আতিথেয়, সৰ্ব্বগ্রহণশীল, ব্রাহ্মণ্যের অন্তর্গত সমাজটি আবার তেমনি রুদ্ধ ; ইহা বৰ্ণভেদ ও কৌলিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রামকে বুঝিবার পক্ষে বর্ণভেদপ্রথা যেরূপ আমাদিগকে সাহায্য করে, বর্ণভেদএখা বুঝিবার পক্ষে গ্রামও সেইরূপ সাহায্য করে। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, এক-দলের সুর আর এক দল ক্রমান্বয়ে আসিয়া একই ভূমিখণ্ডের উপর গোড়ায় উপনিবেশ স্থাপন করে ; এবং প্রত্যেক দল নিজ নিজ স্বত্বাধিকার ও স্বতন্ত্রত প্রাণপণে রক্ষা করে - এই আগস্তক দলগুলিই বিভিন্ন বর্ণ হইয়া দাড়াইয়াছে। এই দল ও বর্ণের মধ্যে একটা স্বম্পষ্ট সাদৃশু হয়। এখন যাহা বর্ণ, গোড়ায় অনেক সময়ে তাহাই একটা উপনিবেশিকের দল ছিল। ভূস্বামী, কুম্ভকার, নাপিত—ইহারা প্রত্যেকেই এখন একএকটা বর্ণভুক্ত ; তাহারই অনুরূপ গোড়ায় গায়ের রং ও বংশ অনুসারে পার্থক্য সংঘটিত হয়। উভয়ের মধ্যে এইরূপ একটা সাদৃশু স্পষ্ট উপলব্ধি হয়। কোন ব্যক্তি জন্মাধিকারসূত্রেই কোন বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ; তাহাকে জাতিচু্যত না করিলে সে তাহ হইতে কখনই বাহির হইতে পারে না। জাতিচু্যত হইলেই সে চণ্ডাল কিংবা পারিয়া হইয়া যায়। যে বর্ণের যে লোক, সে সেই বর্ণের মধ্যেই বিবাহ করে, সেই বর্ণের লোকদিগেরই সহিত এক সঙ্গে আহারাদি করে। বিবাহ ও ভোজন এই দুইটিই বর্ণভেম্বপ্রথার মুখ্য জিনিস। এই বর্ণভেদ, বাহচিত্ত্বের দ্বারাই প্রত্যক্ষ উপলব্ধি হয়। ব্রাহ্মণের যজ্ঞোপবীত, মুণ্ডিত মস্তকের চূড়াদেশে কেশগুচ্ছ ধারণ...ইহার দ্বারা চিত o প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ । | হয়, কোন এক ব্যক্তি পুরাতন আৰ্য্য-শাখা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। তা ছাড়া আরও দেখা যায়, এই বর্ণভেদপ্রথ প্রত্যেক বর্ণের অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তির সামাজিক ক্রিয় কৰ্ম্মের উপর একটা যেন বিশেষ ধরণের ছাপ বসাইয়া । দিয়াছে ; জন্ম বিবাহ ভোজ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে, প্রত্যেক বর্গের । মধ্যেই একটু নুতনত্ব পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যেক বর্ণের - নীতিতন্ত্র স্বতন্ত্র, অন্য বর্ণের নীতির সহিত তাহার মিল নাই। ২য় সংখ্যা । ] ്.--l.---?.............................. --- চেটিই প্রধান অভিনেতা। এমন যে চমৎকার ব্যবস্থাপ্রণালী স্বাহা’গ্ৰাম্য সমাজের কার্য্যনিৰ্ব্বাহপক্ষে অতীব প্রয়োজনীয়— দুঃখের বিষয় ইহা ক্রমশই লোপ পাইতেছে ; তা ছাড়া একথাও বলা আবশ্বক, যুরোপীয় শাসনাধীনে দেশের যত কিছু অনিষ্ট ঘটিয়াছে, তাহার মধ্যে ইহাও একটি। বর্ণ-বংশানুক্রমিকতা। কোন এক বিশেষ বর্ণের লোক, যাহার বিবাহ, আহার ক্রিয়াকৰ্ম্ম ও আচার ব্যবহারের BB BBBBBBB BBB BBB BB BBSBBS BB BBBB BB BB BBBB BBBB BBBS BBB "ঠগ”। একজন মুচিও আপনার দলের মধ্যে “হাম-বড়া।” “স্ববর্ণের ভিতরে সবই ভাল, স্ববর্ণের বাহিরে সবই মন্দ"। সমাজের এই বিভিন্ন অংশের মধ্যে, মিলিয়া-মিশিয়া কাজ করা একটু কঠিন। এই সমস্ত সমস্তার মীমাংসার পক্ষে হিন্দুর ধৈর্য্যও যথেষ্ট নহে। এই জন্যই প্রত্যেক গ্রামে, পুরাতন কুলপতি-শাসনতন্ত্রের ধরণে (Patriarchal) একএকটি ক্ষুদ্র পালেমেণ্ট অর্থাৎ পঞ্চায়ং প্রতিষ্ঠিত। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি,মুনিসিপ্যালিটির সহিত পঞ্চায়েতের একটু প্রভেদ o আছে। প্রচলিত প্রথা, সামাজিক আচার ব্যবহার, নীতি । রক্ষা, সাহায্যদান-পঞ্চায়েতের উপর এই সমস্ত বিষয়সম্বন্ধে মীমাংসার ভার। সন্ধ্যাকালে বুদ্ধের গ্রামের গাছতলায় আসিয়া সমবেত হয়। তাহারা পদমর্য্যাদার নিয়ম নিৰ্দ্ধারণ করে—(এইরূপ সমাজে ইহা একটা গুরুতর কাজ)—জাতি । চু্যতির দণ্ডবিধান করে,ব্যভিচারীকে শাস্তি দেয়, স্বামী স্ত্রীকে পৃথক করিয়া রাখে, কিংবা তাহদের মধ্যে মিলন ঘটাইয় দেয়, অশক্ত অক্ষম লোকদিগের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করে। স্বজন্মার বৎসরে গ্রামের মধ্যে একটিও দরিদ্র, একটিও পরিত্যক্ত লোক দেখা যায় না। দরিদ্রদের সাহায্যার্থে পঞ্চায়ৎ, গ্রাম হইতে চাদ উঠায়। গ্রামের নীতিরক্ষা করা যেমন প্রয়োজনীয়, গ্রামের দারিদ্র্য মোচন করাও তেমনি প্রয়োজনীয়। গ্রামের জমি বণ্টন করা, হিসাব ঠিক করা, জমি ও ভিটার সীমানা নিৰ্দ্ধারণ করা–এই সমস্তই পঞ্চায়তের অধিকারায়ত্ত কাজ, কিংবা একসময়ে অধিকারারাত্ত কাজ ছিল। কিন্তু এখন এই ক্ষুদ্র পালেমেন্টের অধিকার অনেক কমিয়া গিয়াছে। এখন ইংরাজ-স্থাপিত জেলা আদালতে, মোকদ্দামা-মাম্বলাই প্রচণ্ডবেগে চলিতেছে। এই আদালতের রঙ্গভূমিতে চাষা অপেক্ষা কর্ণমা কিংবা আপনার গণ্ডির মধ্যেই বংশবৃদ্ধি করিতেছে। সেই গণ্ডির মধ্যে আর কেহই প্রবেশ করিতে পারে না। বংশামুক্রমিকতাই যেন প্রথার জীবন্ত মূৰ্ত্তি। এই রক্ষণশীল সমাজে প্রত্যেক কাৰ্য্যই যেন একটা নজীর। গ্রামবাসীদের সকল কাজই নজীরের উপর, চির-অভ্যাসের উপর, চিরপ্রথার উপর স্থাপিত। নুতন কিছু প্রবর্তিত করাই পাষণ্ডতা— নাস্তিকতা। বর্ণের দ্যায় কৰ্ম্মও বংশানুক্রমিক। আমাদের এই কুম্ভকারের পিতাও কুম্ভকার। নটীর মেয়ে নটী, বেতার মেয়ে বেঙ্গা ; এবং তাহারাও অন্তের স্থায় স্বকীয় গোষ্ঠী ও কুলের জন্য গৰ্ব্বিতা। এ দেশে এমন কি আছে যাহা বংশানুক্রমিক নহে? এখানকার লোকেরা সভ্যতা-স্বর্যের গতিরোধ করিয়াছে ; সচল জগতের মধ্যে থাকিয়া অচলভাবে জীবন যাপন করা—ইহাই উহাদের চরম আদর্শ। এই মাত্র আমি সামাজিক নাস্তিকতার উল্লেখ করিয়াছি। এ দেশে কোন প্রকার ধৰ্ম্মমতে নাস্তিকতা হয় না। যেমন একদিকে মনোরাজ্যের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা,তেমনি আবার সমাজের মধ্যে ভীষণ দাসত্ব। এখানে ধৰ্ম্ম একটিমাত্র নহে; সমাজের ছায় ধৰ্ম্মও ধাপে ধাপে উঠিয়াছে। ধৰ্ম্ম সকলের জন্ত, ধৰ্ম্ম প্রত্যেকের জন্ত। বড় বড় দেবতা বাদে প্রত্যেক বর্ণেরই পৃথক পৃথক নিজস্ব দেবতা আছে, পৃথক ধৰ্ম্মানুষ্ঠান আছে, পৃথক পূজাপদ্ধতি আছে। কাহারও দেবতা হনুমান, কাহারও কৃষ্ণ, কাহারও গণেশ। ভারতে যে সকল আদিম নিবাসী লোককে হিন্দুধৰ্ম্ম আপনার ক্রোড়ে স্থান দিয়াছিল, বর্ণভূক্ত করিয়া লইয়াছিল, তাহারাই নিজের দেবতাদিগকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছিল। হিন্দুধৰ্ম্ম সেই দেবতাদিগকে শীঘ্রই আপনার করিয়া লইল, বৈধ করিয়া লইল, মন্ত্রপূত ও বিশোধিত করিয়া লইল। ষে সকল নীচবর্ণের লোক সমসাময়িক ভারত । গ্রামের উপকণ্ঠে বাস *a-gerare ভীষণ শীতলা দেবীকে, ওলা-দেবীকে নৈবেষ্ঠের দ্বারা, মন্ত্রের দ্বারা প্রশমিত করিতে পারে। ঐ সব মন্ত্র তাহাঙ্গেরই একচেটিয়া। ব্রাহ্মণ্যের মধ্যে যত প্রকার বর্ণ ও জাতি আছে, ততপ্রকার বিশেষ ধৰ্ম্মমতও তাহার মধ্যে স্থান পাইয়াছে। তাই, প্রকৃত ধৰ্ম্ম যে কি, মনের কোন অবস্থাকে গোড়ামী বলা যায়—হিন্দুর নিকট তাহা দুৰ্ব্বোধ্য। উচ্চতর ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম, কতকগুলি বাছা-বাছা দীক্ষিত লোকদিগের মধ্যেই বদ্ধ। তাহার Fontenelleএর এই কথাটি বোধ হয় সন্তোষের সহিত আবৃত্তি করিতে পারে —“আমি যদি মুঠা-ভরা সত্য পাই, আমি কখনই আমার মুঠ খুলি না।” তবে এই ধৰ্ম্মটি কি ?--সামাজিক অনুষ্ঠান মাত্র। ভারত, পুরোহিত-তন্ত্রের দ্বারা একেবারে অসুবিদ্ধ। এই ধৰ্ম্ম কিংবা বাহানুষ্ঠান ( যাহা এ স্থলে একই কথা ) প্রত্যেক ব্যক্তির-প্রত্যেক বর্ণের ক্ষুদ্রতম কাৰ্য্যের মধ্যে বর্তমান,—গ্রামের সমস্ত আমোদ-আহলাদের মধ্যে, গ্ৰাম্যজীবনের ভুষণ্ড-ক্ষিণশের মধ্যে বর্তমান। ধৰ্ম্মোৎসব, ব্রাহ্মণভোজন,তীর্থযাত্রা-ইহারই সমষ্টি হিন্দুধৰ্ম্ম। কি ব্যক্তিগত কাৰ্য্য, কি পারিবারিক কাৰ্য্য, কি নহে। ঔষধের একটি বড়ি খাইতে চাও, বিদেশে যাত্রা করিতে চাও, একটা ভারী জিনিস যন্ত্রের দ্বারা উঠাইতে চাও, ক্ষেত্রে বীজ বপন করিতে চাও,—যে কোন কাজই কর, তাহার পূৰ্ব্বে দেবতার সম্মতি চাই –ব্রাহ্মণকে মধ্যস্থ করিয়া দেবতারা আপনার বৃত্তি এই প্রকারে নিয়মিতরূপে আদায় করিয়া থাকেন। - ব্রাহ্মণ! এই মহাপুরুষ সম্বন্ধে এখনও আমি কিছু বলি নাই। ব্রাহ্মণই এই সমাজ-গৃহের কুঞ্চিকা; তাহাতেই এই তিনটি মুখ্য শক্তি মূৰ্ত্তিমান হইয়া রহিয়াছে –বর্ণভেদ কৌলিকতা, ধৰ্ম্ম। ব্রাহ্মণ হওয়া মহা অহংকারের বিষয়, উহা ভারতীয় আভিজাত্যের মুখ্য পদবীঃ বহু জন্মের তপস্তার ফলে ব্রাহ্মণ হইয়া পুনৰ্ব্বার জন্মগ্রহণ করা—ইহাই ভক্ত হিন্দুর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা। - ব্রাহ্মণের বর্ণ বলিতে পুরোহিতের বর্ণততটা বুঝায় না যতটা আভিজাত্যের বর্ণ বুঝায় ; অথবা আরও যথাযথরূপে বলিতে ت" من