পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ - WikitanvirBot (আলাপ)്WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)........................... তীর্থযাত্রী হিয়ুয়াং-থ্যাং একটা অদ্ভূত কাহিনী বিবৃত করিয়াছেন –“অসাধারণ দীর্ঘকায় একজন অর্থান কোন পৰ্ব্বতগুহায় নেত্র নিমীলিত করিয়া বসিয়াছিলেন। ঘন নিবিড় কেশগুচ্ছ ও শ্মশ্ররাজিতে তাহার স্কন্ধ ও মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন–রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন—এলোকটিকে ? একজন শ্রমণ উত্তর করিলেন —ইনি একজন অর্থন, ইনি সংসার ত্যাগ করিয়া, চিত্তবৃত্তি নিরুদ্ধ করিয়া সমাধিস্থ হইয়াছেন। বহুবর্ষ ধরিয়া এই ভাবেই কালাতিপাত করিতেছেন। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন কি উপায়ে ইহাকে জাগ্রত করা যায় ? শ্রমণ উত্তর করিলেন –বহুবর্ষব্যাপী অনাহারের পর যদি একবার সমাধিভঙ্গ হয়, তবে ঐ যোগীপুরুষের শরীর গলিত হইয়া ভূতলে পতিত হইবে। প্রথমে মাখন ও ছন্ধের দ্বারা ইহার শরীরকে সিক্ত ও শরীরের পেশীগুলাকে নরম করা আবশ্যক। তাহার পর উহাকে বেড়াইবার জন্য ও জাগাইবার জন্ত কঁশির বাজাইতে হইবে।” “শ্রমণের এই উপদেশ-অনুসারে, তখনই সেই মৃত কলেবরে দুগ্ধ সেচন করা হইল, ও কাশর বাজানো হইল। অৰ্হান, চক্ষু উল্মীলিত করিয়া চতুষ্পাশ্বের লোকদিগকে দুই চারিট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন, পরে স্বকীয় দীর্ঘ কেশগুচ্ছ হস্তে তুলিয়া ধরিয়া ধীরগম্ভীর ভাবে আকাশে উঠিলেন।” হিন্দুগ্রাম দেখিয়া আমার এই গল্পটি মনে হয়। এই রুদ্ধ,*নিস্তন্ধ শ্মশানবৎ গ্রাম্যজীবন,—ঐ কঙ্কালসার অর্থানের যোগনিদ্রার অনুরূপ। মৃত, ন, নিদ্রিত?— কে জানে কি। কিন্তু যদি উহার সমাধিভঙ্গ করিবার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা না যায়, যদি উহার শরীর অনভিজ্ঞ ও অনিপুণ হস্তের সংস্পর্শে আইসে, তবে উহাও অচিরাৎ গলিত হইয়া ভূতলে পতিত হয়। শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতে ব্রিটিশ শান্তি। , The agency which maintains order may cause miseries greater"than the miseries caused by disorder. Herbert Spencer ইংরেজ বণিকবেশে যখন এ দেশে প্রবেশ করে, রাজবেশ ধারণ করিবার তাহার কোনই আকাঙ্গ ছিল না। আর দশ জন বিদেশী যেমন বাণিজ্যের জন্য ভারতে আসিয়া প্রবাসী । ছিল, সেও তেমনি আসিয়াছিল। কিন্তু বুদ্ধির জোরে সে রাজদণ্ড ধারণ করিয়াছে। যখন মোগল শক্তি ক্ষীণ হইয়া পড়িল তখন মহারাষ্ট্র শক্তির অভু্যদৰে সকলেই মনে করিয়াছিল ঐ শক্তির আশ্রয়ে ভারত অরাজ কত হইতে উদ্ধার পাইবে। কিন্তু যখন তৃতীয় পাণিপ। যুদ্ধে মহারাষ্ট্র শক্তি বিনষ্ট হইল তখন থও ভারতকে অথও সাম্রাজ্যে পরিণত করিবার মত শক্তি আর রহিল না। চারিদিকে ঘোর অশাস্তি উপস্থিত হইল। ছলে বলে কৌশল্প [ ৮ম ভাগ। ২য় সংখ্যা । ] ঘটনাচক্রে পড়িয় | এই অশান্তি নিবারণের ওজুহাত লইয়া ইংরাজ ভারত । ক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইল এবং ভারতবাসীও অবস্থার ফেরে । পড়িয়া ঐ শাস্তি স্থাপনকে ইংরাজের বিধাতৃনির্দিষ্ট কার্য বলিয়া মস্তক পাতিয়া গ্রহণ করিল। সিপাহী যুদ্ধের সময়ে যে ভারতবাসী বিদেশীর সহায়তা করিয়াছিল তাহার কারণ এই যে তখনও ইংরাজ আপনার স্বমূৰ্ত্তি প্রকাশ করে নাই, তথনও শাস্তির আবরণ তাহার গাত্রে জড়িত ছিল । দেশের অশান্তি দূর করিবার জন্য ইংরাজ তখন শাস্তির জল ছিটাইতেছিল, গুর্থ স্থাকায় নাই, রেগুলেশন লাঠি চালায় নাই, পিটুনি পুলৗশ বসায় নাই ; উদারনৈতিক সাম্য ও মৈত্রীর ঘোষণাপত্রের দ্বারা অশাস্ত দেশকে শাস্ত করিতে চেষ্টা করিয়াছিল ; তাই আবার দেশে শাস্তি ফিরিয়া আসিল। কিন্তু আমরা যে শাস্তি পাইলাম, এ শাস্তিতে আমাদের কি কেবলই লাভ হইল ? আমরা অশান্তির বিরোধী, কিন্তু শাস্তিও প্রকৃত মঙ্গলজনক হওয়া চাই। শান্তি কিম্বা মুখ জীবনের উদ্দেশ্য নহে। মনুষ্যত্বের বিকাশই একমাত্র উদ্দেশু। এখন দেখা যাক, এ উদেপ্ত কি পরিমাণে সাধিত হইয়াছে। এক শ্রেণীর লোক আছে, তাহারা সংগ্ৰামভীরু ; অর্থাৎ যাহা কিছু আয়াসসাধ্য তাহ হইতেই তাহারা বিমুখ। কোন রকমে নিৰ্ব্বিবাদে জীবন যাত্রা নিৰ্ব্বাহ করাই তাহাদের জীবনের আদর্শ। এই সমস্ত মানুষকে নরাকার পশু বলা যাইতে পারে। কেন না, পশুর স্তায় ইহাদের মধ্যে কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই, মনুষ্যত্ববৃদ্ধির কোনও চেষ্টা নাই। ইহারা পশুর দ্যায় নিৰ্ব্বিঘ্নে আহার বিহার করিয়াই সন্তুষ্ট। ইহারা চায় এই নিম্নস্তরের শান্তিশাস্তিতে ধন উপার্জন কর, শাস্তিতে সস্তান উৎপাদন কর, শাস্তিতে তাহাদের "শিক্ষা"র ব্যবস্থা কর, এবং শক্তিতে . -l.സ..............r്. তাহাদের জন্য একটু কাজ কৰ্ম্মের ব্যবস্থা কর। এই তাহদের জীবনের আদর্শ। ইহার মধ্যে এক স্বদেশী ও স্বরাজের হাঙ্গামা উপস্থিত করিয়া দেশে কি এক মহা অনর্থ টানিয়া আনিয়াছে। . সুতরাং এই লোকগুলিকে ধরিয়া শূলে দাও। এই শ্রেণীর জীবে ও পশুতে কোনই বিভিন্নত নাই। ইহারা কোনও উচ্চতর জীবনের আকাঙ্গ রাখে না। তাই ইহারা ভারতে ব্রিটিশ শাস্তির বড়ই পক্ষপাতী। শাস্তি তো সকলেই . --Rয়, অশান্তি চায় না ; কিন্তু যাহা মনুষ্যত্বের বিনাশকারী তাহা কি মানুষের পক্ষে একটা আদরের বস্তু হইতে পারে ? যে শান্তি কেবল নিৰ্ব্বিঘ্নে খাওয়া পরার ব্যবস্থা করে তাহা কি শাস্তি নামের যোগ্য ? সে শাস্তি আর মনুষ্যত্বের বিনাশ এ দুইয়ে বিভিন্নতা কি ? উহা মৃত্যুর নিশ্চেষ্টতার নামান্তর মাত্র। কিন্তু যে শাস্তি সেই সকল কৰ্ম্মের সুযোগ ও সুবিধা প্রদান করে যাহা দ্বারা মানব আপনার পুরুষার্থের দিকে অগ্রসর হইতে পারে, আপনার উচ্চতর আদর্শ ও আকাঙ্গার চরিতার্থতাকে সাধন করিতে পারে, তাহাই প্রকৃত শাস্তি। তাহাই একমাত্র লোভনীয় জিনিষ। নতুবা যে শাস্তি উন্নত কৰ্ম্মচেষ্টার সকল দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়া মানুষকে খাওয়া পরা রূপ স্বার্থপর জীবনের নিম্ন গওঁীতে আবদ্ধ করে সেই শাস্তির স্বথকে যাহারা একটা মস্ত আদর্শ করিয়া তুলিয়াছে, এই ব্রিটিশ শাস্তি তাহাদিগকে কিরূপ মনুষ্যত্ববিহীন করিয়া সৰ্ব্বপ্রকার উচ্চ আকাজ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে, এই শাস্তির মহিমা কীৰ্ত্তন ও তজনিত আত্মপ্রসাদেই তাহার উজ্জল প্রমাণ। কৰ্ম্মময় জীবনের সকল সংগ্রামকে এক আদর্শের অনুবর্তী করিয়া দিয়া জীবনের সকল বিভাগের কৰ্ম্মকে এক উচ্চ আকাজার অধীন করিয়া দিয়া মানুষ যে শাস্তি লাভ করে তাহাই প্রকৃত শাস্তি। নতুবা যেখানে কৰ্ম্ম নাই, প্রতিকূল অবস্থার সহিত সংগ্রাম নাই, সেখানে আবার শাস্তি কি ? আমরা কি ব্রিটিশ রাজত্বে এই উচ্চতর শাস্তি এই প্রকৃত শান্তি লাভ করিয়াছি ? শাস্তি দুই প্রকারে লাভ হইতে পারে। এক তমোগুণাচ্ছন্ন শান্তি, আর সত্ত্বগুণাশ্রিত শাস্তি। যেখানে রজোগুণের আবির্ভাব হয় নাই, যেখানে কৰ্ম্মচেষ্টা নাই বা বাহির হইতে পশুবলে কৰ্ম্মচেষ্টাকে চাপিয়া রাখা হইতেছে, সেখানে যে শান্তি তাহা তমোগুণাচ্ছন্ন, এই শান্তিই ভারতে ব্রিটিশ শাস্তি নামে অভি সমসাময়িক ভারত । ԳՏ হিত। এখানে তো মনুষ্যত্বের বিকাশ সম্ভবই নয়, ইহা পশুকেও জড়ভাবাপন্ন করিয়া তুলে। সত্বগুণাশ্রিত যে শাস্তি, তাহাতে কৰ্ম্মকে চাপিয়া রাখা হয় না, তাহাতে বরং রজোগুণের পূর্ণ ৰিকাশ। কৰ্ম্ম সেখানে আপনাকে পূর্ণতা প্রদান করিয়া নিজেই নিজেকে নিয়মিত করে। সকল কৰ্ম্ম মানবের পুরুষাৰ্থ সাধনে নিযুক্ত হইয়া আদর্শের দ্বারা স্বতঃই নিয়মিত । হইয়া যায়, আর সংগ্রাম থাকে না। ইহাই প্রকৃত শাস্তি। আমেরিকায় ব্রিটিশ শাসনেও শাস্তি ছিল আবার এখনও শাস্তি আছে। কিন্তু বিভিন্নতা কি ? পূৰ্ব্বেছিল কৰ্ম্মহীনতার শান্তি, এখন আছে কৰ্ম্মশীলতার শাস্তি। কৰ্ম্মহীনতার উপর কৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করিল, সৰ্ব্বপ্রকার জড়তার অবসান হইল। যে শক্তি কৰ্ম্মকে চাপিয়া রাখিয়াছিল সে শক্তি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইল। কৰ্ম্ম আপনার ক্ষেত্র লাভ করিল। নুতন সমস্ত উপস্থিত হইল। বাহিরের শক্তি এত দিন যে সমস্ত বিরোধী শক্তিকে চাপিয়া রাখিয়াছিল তাহারা মাথা তুলিল। উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশ বিবাদে প্রবৃত্ত হইল। কিন্তু এই বিবাদের দ্বারা বিরোধের চির মীমাংসাহইয় গেল, আমেরিকায় প্রকৃত শাস্তি স্থাপিত হইল। এত দিন কৰ্ম্মহীনতা ও নিশ্চেষ্টতাকে শাস্তি মনে হইতেছিল ; কৰ্ম্ম আসিয়া নিশ্চেষ্টতাকে বিনাশ করিল, সঙ্গে সঙ্গে কৰ্ম্মহীনতার অন্তরালে যে অশাস্তির বীজ নিহিত ছিল তাহাকেও অপসারিত করিয়া প্রকৃত শাস্তি স্থাপন করিল। প্রকৃত শাস্তির এই একমাত্র পথ"। দেড়শত বৎসর পূৰ্ব্বে যখন ইংরাজ এ দেশে রাজ্যভার গ্রহণ করে, ঐতিহাসিকগণ বলিতেছেন, তখন পরস্পরে বিবাদ করিয়া আমরা উচ্ছন্ন যাইতেছিলাম, সুতরাং ইংরাজের পক্ষে সকলের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আর এই দেড়শত বছরের পরও শুনিতেছি, ইংরাজ চলিয়া গেলে আমরা পরম্পর মারামারি কাটাকাটি করিয়া বিনাশ পাইব। তবে জিজ্ঞাসা করি, এই দেড়শত বৎসর ইংরাজ শাসনের শান্তিতে বাস করিয়া আমাদের লাভটা হইল কি ? মনুষ্যত্বের দিকে কি এক পদও অগ্রসর হই নাই ? তাই যদি ফু, তবে যত দিন এই শাস্তি থাকিবে, ততদিনই তো আমাদের মনুষ্যত্ব চাপ পড়িয়া থাকিবে, প্রকৃত শাস্তি লাভ হইবে না ; ইহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে এ শাস্তির বিড়ম্বনায় প্রয়োজন কি ? প্রকৃত শাস্তির রাজ্যে কৰ্ম্মের দরজা দিয়া শুপ্রবেশ করিতে