পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-8 তাহার সাহায্যে কষ্টম হাউসের পরীক্ষা হইতে উত্তীর্ণ হইলাম। ইংরাজি মুদ্রার (যাহা বোম্বাই হইতে লইয়া গিয়াছিলাম ) বিনিময়ে কিছু ফরাসী মুদ্রা সে আমায় আনিয়া দিল। বন্দর হইতে ষ্টেশন চারি মাইল ব্যবধান। বলিল—“ষ্টেশনেও আমাদের লোক আছে, সে আপনাকে ট্রেণে চড়িতে সাহায্য করিবে।” গাড়ীখানি ব্ৰহামের আকার। সমুদ্রের তীরে তীরে কিয়দর ছুটিয়া, গাড়ী নগরে প্রবেশ করিল। তখনও মাসেলস্ নিজ প্রাতরাশ শেষ করে নাই। সেই কারণে পথে লোকসংখ্যা অল্প । ষ্টেশনে পৌঁছিয়া, কুকের লোককে কোথাও দেখিতে পাইলাম না। গাড়ী বিদায় করিয়া, মুটের জিন্মায় জিনিষ রাখিয়া, কুকের লোককে খুজিতে লাগিলাম। ট্রেনের তখনও বিলম্ব ছিল, তাহা আমি পূৰ্ব্বাবধিই অবগত ছিলাম। ষ্টেশনের নানা স্থানে খুজিয়া বেড়াইতে লাগিলাম, অবশেষে দেখি, বাগানে একখানা বেঞ্চিতে কুকের কৰ্ম্মচারী বসিয়া আছে, একজন জুতাবুরুষওয়ালা তাহার জুতা বুরুষ করিয়া দিতেছে। সে বলিল, দশটার সময় ট্রেন ছাড়িবে, ঘণ্টা থানেক বিলম্ব আছে। যথা সময় আমায় ট্রেনে উঠাইয় দিবে। ষ্টেশনে ফিরিয়া, আমার জিনিষপত্রগুলির কাছে একখানি বেঞ্চিতে বসিয়া রছিলাম । বসিয়া বসিয়া বিরক্ত বোধ হইল। উটিম একটু ইতস্ততঃ বেড়াইতে লাগিলাম। এক স্থানে দেখিলাম, ষ্টেশনের ভোজনশালা, বহু লোক থাইতে বসিয়াছে। আমারও ক্ষুধাটা বিলক্ষণ পাইয়াছিল। একবার ভাবিলাম, প্রবেশ করিয়া বসিয়া যাই, কিন্তু একটা বিষয়ে আশঙ্কা হইল। শুনিয়াছিলাম, ফরাসীরা নাকি বেঙ খায়। কি জানি মহাশয়, যদি না জানিয়া বেঙ থাইয়া ফেলি ? ভাষাও জানিনা যে জিজ্ঞাসা করিব। এই ভয়ে, ক্ষুন্নিবৃত্তি করিতে সাহস হইল না। অভূক্ত অবস্থায় জাহাজ হইতে নামিয় আসিয়াছি বলিয়া, নিজের বুদ্ধিকে শত ধিক্কার দিতে লাগিলাম। ক্রমে সময় হইল ; কুকের লোক আসিয়া আমায় ট্রেনে উঠাইয়া দিল। তখন তাহাকে বলিলাম—“আমায় কিছু খাস্তদ্রব্য কিনির দিতে পার?” সে বলিল—“নয়ন” প্রবাসী । [ MMMMMMMMMMMMMMMSSMMMMSMMMMMMSMMSMMSMMSMMSMMSMMSMMSMMMMMMMMMMM MMMMMMMMMMMMS ৮ম ভাগ। ്WikitanvirBot (আলাপ).--------- পূৰ্ব্বকথিত ভোজনশালায় তাহার সঙ্গে গিয়া, একথা রুটি, একটু মাগন, খানিকটা রোষ্ট মটন এবং কিছু ফল ল ৷ করিলাম। ফিরিয়া আসিয়া, গাড়ীতে আরোহণ করি। যাহা দেখিলাম, তাহাতে আমার চক্ষু স্থিা হইয় গেল! দেখিলাম, আমার হাতবাক্সট, যাহাতে আমার টাকা ক:ি সমস্তই ছিল, তাহ সেই খালি কামরার বেঞ্চির উপর । রহিয়াছে —ডালাটি খোলা। আমিই তাড়াতাড়িন্তে অসাৱধানতায়, বাক্সটি ওরূপ পোলা অবস্থায় রাথিয়া, পাবার কিনিতে নামিয়া গিয়াছিলাম। বাক্সতে আমার সম্বর দশটি স্বর্ণমুদ্র ছিল। কেহ যদি তাহ লইয়া থাকে ? জ। এ বিদেশপথে কি বিপদেই না পড়িব! লণ্ডন অবধি টিকিট অবশু আমার আছে ;–কিন্তু ঘোড়ার গাড়ী ভাড়া,কুকি ভাড়াই বা দিব কোথা হইতে, পথে খাইবই বা কি ৷ আমার মাথা ঘুরিয়া গেল। ব্যাকুল হইয়া বাক্স অনুসন্ধান । করিলাম ; দেখিলাম টাকা গুলি আছে, কেহ লয় নাই। তখন দেহে প্রাণ পাইলাম । গাড়ী যখন ছাড়িল, তখন বােধ হয় সাড়ে দশ । ইহাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়ী আমাদের মধ্যম শ্রেণীর মত। এক একখানি গাড়ী পাঁচ ছয়টি কামরায় বিভক্ত। বসি । যাইবার স্থান মাত্র, শয়নের ব্যবস্থা নাই,স্নানাগারও নাই – | অথচ সমস্ত দিন সমস্ত রাত্ৰি চলিয়া আমরা প্যারিসে পৌছিন্ম গাড়ী ছাড়িল। আমার কক্ষে আরও দুই তিনট । সহযাত্রী। অল্পক্ষণ পরেই নগরসীমা ছাড়াইয়া মাঠের মধ্যে দিয়া যাইতে লাগিলাম। দুই পার্থে শস্তক্ষেত্র—মৰে মাঝে কোনও গ্রামের গির্জার উন্নত চুড়া, দুই চারিখানি শাদ বাড়ী দেখা যায়। একটা বিষয় লক্ষ্য করিলাম, যায় আমাদের দেশ হইতে বিভিন্ন। গাড়ী চলিয়া যে শঙ্কটা ট হইতেছে, তাহ যেন টং টং করিতেছে। আমাদের দেশের মৃত্তিক কোমল, প্রস্তরহীন। তাই শব্দটাও কোমল! - অনুমান করিলাম, এথানকার মৃত্তিক প্রস্তরবহুল হওয়ার | জন্ত শব্দটা বোধ হয় ধাতব শুনা যায়। ষ্টেশনের পর ষ্টেশন অতিক্রম করিতে লাগিলাম। আমার কামরায় কত লোক উঠিতে লাগিল, আবার নামিয়া r যাইতে লাগিল। ফরাসী দেশের প্রথা অনুসারে তাহার আসিয়াই আমাকে স্মিতমুখে অভিবাদন করে, নামি ২য় সংখ্যা । ] যাইবার সময়ও অভিবাদন করে। কেহ কেহ বা আমাকে কি জিজ্ঞাসা করে, আমি তাহার এক বর্ণও বুঝিতে পারি না। আন্দাজি ইংরাজিতে বলি—“আমি ভারতবর্ষ হইতে আসিতেছি”—তাহাও তাহারা বুঝিতে পারে না। অবশেষে উভয়ে হতাশভাবে উভয়ের মুখপানে চাহিয়া থাকি। ক্রমে বামে একটা ক্ষুদ্র নদী দেখা যাইতে লাগিল । একজন সহযাত্রীকে ইংরাজিতে জিজ্ঞাসা করিলাম—“এটা কোন নদী ?” উত্তরে সে ব্যক্তি কি বলিল আমি কিছুই বুঝিলাম না ; আমার প্রশ্নও সে অনুমান করিতে পারে নাই বোধ হয়। গাড়ীতে একথান মানচিত্র ছিল, তাহা হইতে ক্রমে আবিষ্কার করিলাম, নদীটি রোন। নদীটির আকার দেখিয়া নিতান্ত অভক্তি হইল। কলিকাতার বড় বড় রাস্তাগুলি প্রন্থে যতটুকু, নদীটির প্রস্থ তাহার অপেক্ষা অধিক নহে। এই রোণ ! এই নগণ্য নদীরই নাম বাল্যকালে মুখস্থ করিয়া মরিয়াছি ! দিবা অবসান হইবার আর অধিক বিলম্ব নাই। একটি স্থূলকায় প্রৌঢ় ব্যক্তি আসিয়া উঠিলেন। তিনি আমায় ফরাসীতে কি জিজ্ঞাসা করিলেন। আমি আন্দাজি ইংর - জিতে একটা উত্তর দিলাম। শুনিয়া তিনি ইংরাজিতে বলিলেন—“আপনি ইংরাজি কহেন ? আমিও ইংরাজি একটু একটু জানি।”—দেখিলাম, তিনি ইংরাজি জানেন বটে, কিন্তু যৎসামান্ত। কষ্টেস্তষ্টে, কোন মতে মনের ভাব প্রকাশ করিতে সক্ষম হন মাত্র। আমি ইংরাজের প্রজা efNNl fsfi Afstøfn—“The Queen of England is very very bad”—তখন বুঝিনাই যে তিনি মহারাণীর স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করিতেছেন। আমি যখন বোম্বাই ছাড়িয়াছিলাম তখন ভিক্টোরিয়া পীড়িত হন নাই। তাহার সাংঘাতিক পীড়ায় সংবাদ আমরা সমুদ্রের উপর কিছুই জানিতে পারি নাই। আমি মনে করিলাম, বৃদ্ধ বুঝি বুয়র যুদ্ধ উপলক্ষ্যে মহারাণীর নিন্দ করিতেছেন। সারাদিন, সারারাত্রি কাটিল। ভোর ছয়টার সময় ট্রেন প্যারিসের মধ্যে প্রবেশ করিল। তখনও স্বর্য্যোদয়ের বিলম্ব আছে, পথে পথে আলো জালাইয়া প্যারিস তখনও নিদ্রিত। আমি উৎসুক হইয়া জানালার বাহিরে মুখ বাড়াইলাম। বড় যে সৌন্দর্য্যের যুরোপে পদার্পণ । bró. থ্যাতি শুনিয়াছিলাম, দেখি কেমন প্যারিস্ ! কিন্তু প্যারিসবধু তখন মুখখানির উপর কুয়াসার ঘোমটা টানিয়া রাথিয় ছিল, ভাল দেখা গেল না। গাড়ী ষ্টেশনে আসিয়া থামিল। ইহা দক্ষিণ-প্যারিস। আমাকে পুনর্যাত্রা করিতে হইবে উত্তর-প্যারিস ষ্টেশন হইতে। সুতরাং নগরের অভ্যস্তর দিয়া ঘোড়ার গাড়ী করিয়া আমায় যাইতে হইবে। ভাবিয়াছিলাম, “কুক” আছে, চিত্ত্ব কি ? আমার সব বন্দোবস্ত করিয়া দিবে। ষ্টেশনে নামিয়া কুক্‌কে অন্বেষণ করিলাম। কিন্তু কোথায় বা কুক্‌ কোথায় বা কে। সেই ভোরে—শতে—আসিবার জন্য তাহার ত বহিয়া গিয়াছে। কি করি ? ইসারা করিয়া একজন মুটেকে ডাকিলাম আমার টিকিটে লেখা ছিল Paris-Nord হইতে যাত্রা করিতে হইবে। জিনিষ দেখাইয়া মুটেকে বলিমাম—“পারী নর্দ”— বলিয়া ঘোড়ার গাড়ীর দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশ করিলাম। লোকটা কয়েক মুহূৰ্ত্ত আমার মুখ পানে চাহিয়া দেখিল। কোন দূর দেশ হইতে কোন বিদেশী আসিয়াছে—বোধ হয় তাহার একটু মায় হইল। গাড়োয়ান পাছে আমার ঠকাইয়া বেশী ভাড়া লয়, এই কারণে বোধ হয় সে নিজের পকেট হইতে একটি ফ্র্যাঙ্ক (আধুলির আকার, মূল্য দশ আন ) বাহির করিয়া, বাম হস্তের উপর রাখিয়া, বাম হস্তের অঙ্গুলির দ্বারায় তাহার উপর বারকতক টোকা দিয়া, আমাকে পঞ্চাঙ্গুলি প্রদর্শন করিল। বুঝিলাম বলিতেছে পাচ ফ্র্যাঙ্ক ভাড়া লাগিবে। গাড়ীতে উঠিলাম। বখশিস করিয়া মুটেকে বিদায় দিলাম। তখনও প্যারিস সমস্ত দুয়ার জানালা বন্ধ করিয়া দিয়া নিদ্রামগ্ন। কচিৎ কোথাও দুই একটি নরনারী বাহির হইয়াছে। বেশ দেখিয়াই বুঝা গেল, তাহারা দরিদ্র। বড় বড় দোকান, সব বন্ধ। পথগুলি আর্দ্র, বোধ করি রাত্রে বৃষ্টি হইয়া গিয়া থাকিবে। দুই একখানা ইলেক্‌টিক ট্রামগাড়ী চলিতে আরম্ভ হইয়াছে। অনুমান, অৰ্দ্ধঘণ্টা পরে উত্তর-ষ্টেশনে পৌছিলাম । কুলি ডাকিয়া, ঘোড়ার গাড়ী বিদায় দিলাম। কুলি জিনিষ পত্র নামাইয়া আমায় কি বলিল। আমি তাহাকে বলিলাম—“ক্যালে—লন্দ্রে”—অর্থাৎ ক্যালে’ হইয়া লণ্ডন