পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- o " > ०२ প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। ২যু সংখ্যা । ] দেবদূত । రి পাঠাইলা বনবাসে। জগতী ভিতর একান্ত বহুল ভাবে পুরাকালে ছিল প্রচলিত ; অর। —মহান চরিত্র নাই! বিশ্বে একাধারে কহিলা না ; শুধু, স্বীয় অদৃষ্টেরি’পরে সত্য কহিতেছি বন্ধু, শুনি নাই কখনো এমন কিন্তু, তবু—দেশ-কাল-পাত্রের অতীত মহত্তর চিত্র কভু কেহ নাহি পারে হাহাকারে করিলা ধিক্কার । হইয়াছে সতীত্বের ঘোর নির্য্যাতন। যে সাৰ্ব্বজনীন ধৰ্ম্ম স্মৃষ্টির আদিম কাল হ’তে কল্পনা করিতে ! বিশেষ পড়ে মনে— বিনা দোষে, অকারণে, প্রজাপুঞ্জে তুষ্ট রাখিবারে, মানব-বুদ্ধিতে প্রতিষ্ঠিত এ জগতে ; o ধৈৰ্য্যে, ত্যাগে, পুণ্যে ভরতের সম পুনঃ, সেই মিলনের ক্ষণে । কে কবে শুনেছে কহ—হেন অবিচারে নিৰ্ম্মম বিধান হেন ভীষণ, কঠোর ? স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব সখা, মনে কর যদি – সে ভাবে শ্রীরামচন্দ্র গুরুতর কৰ্ত্তব্যে তাহার উপেক্ষা করিয়াছিল। পুনঃ, বিধাতার রমণীবৃন্দের প্রতি পুরুষের আছে স্বমঙ্গন যে কৰ্ত্তব্য, রামচন্দ্ৰ—ক্ষত্রিয়-প্রধান— সে কৰ্ত্তব্য পালনেও উদাসীন ; বিরক্ত অন্তর, উদ্যম-বিহীন পঙ্গুসম। তারপর, নিন্দিত প্রজার প্রতি সে কৰ্ত্তব্য বিহিত রাজার— সত্য পক্ষে নিরস্তর করা সুবিচার ; সে পক্ষেও রামচন্দ্র সিংহাসনে রহি অধিষ্ঠিত স্তায়াশ্রিত রাজধৰ্ম্মে হইলা পতিত মূঢ় সম। জায়, নারী, পরিহার করি’ এ চিন্তারে, শুদ্ধ যদি প্রজারূপে মহিষী সীতারে কর মনে ; ভাবে যদি—সীতা শুদ্ধ রাজার সাক্ষাতে বিচার-প্রাথিনী প্রজা ; তবু, সে চিন্তাতে রামের চরিত্র নাহি হয় সমর্থিত ; অকারণে, দেবীরে নিষ্পাপ জানি আপনার মনে, নির্দোষারে রামচন্দ্র-শুদ্ধ অবিমিশ্র যশো-আশে মিথ্যা অপবাদ সমর্থিয়া, বনবাসে নিৰ্ব্বাসিলা স্বেচ্ছাচারে । অজয় । আপনার অস্তিত্বের সনে সীতারে অভিন্ন রাম ভাবিতেন মনে,— এমনি নিবিড় প্রেমে চির-বন্ধ আছিলেন দোহে! তাই অস্তরের মাঝে মহা দুঃখ সহে,’ মুখ-স্বার্থে বিসর্জিয়া, সীতারে পাঠায়ে নিৰ্ব্বাসন, আপনার অৰ্দ্ধাঙ্গের করিয়া ছেদন প্রজার রঞ্জন রাম সাধিলা অতুল ধৈৰ্য্য ভরে। অর। এই কি প্রণয়রীতি ! প্রেম অকাতরে চাহেগো প্রিলুর লাগি বলিদান দিতে আপনারে ; স্বার্থের লাগিয়া সে তো কভু নাহি পারে প্রিয়েরে করিতে নিৰ্ব্বাসিত। বৃথা, কোরোনা এমম অন্ধ সংস্কারের বশে রামে সমর্থন । সে গৰ্হিত আচরণ অনুমোদনেরো যোগ্য আর নহে কর্তৃ। হয়ত বা হেন ব্যবহার সেই ধৰ্ম্মে কহে—হেন আচরণ অতীব অল্পায়। শুদ্ধ যশোলিপসা আর রাজ্যের মায়ায়— সতীর এ ঘোর অপমান, আর এই অবিচার সমাজের চক্ষে চির-অযোগ্য ক্ষমার । অজয় । তা’ হ’লে, সত্যের লাগি বনবাসে রামেরে পাঠা'য়ে জ্ঞান-বৃদ্ধ দশরথো করিলা অন্যায় ? সত্য-পালনের তরে রামের সে লক্ষ্মণ-বর্জন, হয় নাই ত’াও সমুচিত ? * অর। অকারণ বাধাবন্ধহীন হেন সত্য করা—অতি দুৰ্ব্বলতা, যা’র লাগি নির্দোষীরে এ রূপে অযথা সহিবারে হয় দুঃখ মোর দুৰ্ব্বদ্ধির তরে কড় কোন মতে অপরে তো নহে দায়ী ; তবু, কোন স্বত্বে করি আমি অন্তেরে কঠোর দুঃখ দান বিনা কোন অপরাধে ? এ হেন বিধান অসঙ্গত । কর্তৃপদে পরিবারে যে জন প্রধান শীর্ষ দেশে করিছেন যিনি অধিষ্ঠান, তাহার উচিত—শুদ্ধ সংসারেরি কল্যাণের তরে আদেশ প্রচার করা । সেরূপ না করে? যে জন আপন স্বার্থে উপেক্ষিয় অস্তিত্ব সবার করেন নিয়ত বন্ধু, অতি অবিচার ;– পরিবার-ভুক্ত সবে মনে মানি’ সম্পত্তি আপন তৈজসাদি সম নিত্য করি অযতন, স্বেচ্ছাচারে, স্বার্থ-আশে করি’ছেন সদা অবহেলা— ন’ন তিনি যোগ্য নেতা —এ তো নহে খেলা বিধিস্তষ্ট প্রাণ নিয়া।—হোক না সে পুত্ৰ-ভ্রাতা মোর, তবু, তা’র আছে এই ধরণী ভিতর ব্যক্তিগত জীবনের অনন্ত কৰ্ত্তব্য নিশি দিন ; সে-ও জন্মিয়াছে বিশ্বে-স্বতন্ত্র, স্বাধীন, অমৃতের পুত্ৰ হ’য়ে। অকারণে পেষিলে তাহারে হ’ব আমি অপরাধী বিধির বিচারে। অজয়। কহ-শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য রামায়ণে তবে, তব কাছে কোন চিত্ৰ সৰ্ব্বাপেক্ষ ভাল লাগিয়াছে ? অর। সীতা ! সেই সতীত্বের অনুপম পুণ্য-গরিমায় বিশ্বে যিনি চির-মহিয়সী ! যা’র পায় কল্পনা লুটায়ে পড়ি’ করিছে বন্দনা অনিবার। অজ। তিনি ভিন্ন নাহি কি গো দিব্য চিত্র আর মহাকাব্যে ? কে কবে দেখেছে রাজা ? চির অনুপম ভ্রাতৃস্নেহে বীরবর লক্ষ্মণের সম আছে কেবা ? বীর হনুমান সম সখা, প্রভূ-সেবা কে কবে করেছে ? কৌশল্যার মত আদর্শ গৃহিণী ধরাতলে উদিয়াছে কোথা আর ?—যিনি স্বীয় সুত রামচন্দ্র পিতৃ আজ্ঞা পালনের তরে বনবাসে করিলে গমন, সমাদরে, স্নেহভরে ভরতেরে জিজ্ঞাসিয়া কুশল-সংবাদ, অকপটে করিলেন শুভ-আশীৰ্ব্বাদ বাৎসল্যে বিস্মরি’ পুত্র-শোক। পড়ে মনে-তারপরে রামচন্দ্রের জীবন।—যিনি অকাতরে রাজ্য আশা পরিহরি, পিতৃ সত্য পালনের তরে পশিলেন বনবাসে প্রশান্ত অস্তরে নতশিরে। মানি আমি–রামের সে বিশাল জীবন অকলঙ্ক নহে! তবু, তাহার মতন ধৈর্য্যবান, সুসংযমী, জ্ঞানী, কৰ্ম্মী—এ মর-ধরায় একান্ত বিরল। পুনঃ, সেই অসহায় সতীর সে চিত্র মনে আসে—বিনত, মলিন মুখে দাড়াইয়া অগণিত জনের সম্মুখে মা আমার, রামের সে বাক্য রাশি কুলিশকঠোর শুনিছেন দুঃখ-লাজে কম্পিত অন্তর ! তারপরে, এ অনল পরীক্ষা হইলে সমাপন, বহ্নিশুদ্ধ মহোজ্জ্বল স্বর্ণের মতন মিলিলেন যবে আসি পতিদেব সাথে, তবে তা'র প্রেমানন্দ-উদ্বেলিত নয়ন-আসার ধৌত করি’ দিল রামচন্দ্রের চরণ।--সেই প্রেমে, সেইক্ষণে চু্যত হ’য়ে, স্বর্গ এল নেমে’ কলঙ্ক-মলিন এই ধরাতলে ! y পরে, পড়ে মনে-- যবে রাম পাঠাইয়া লক্ষ্মণের সনে না কহিয়া কোন কথা, জ্ঞান-হীন জানকীরে হায়— বিনা অপরাধে, স্বীয় যশের লিপ্তায় ভয়ঙ্কর বনবাসে ; যবে সহি’ লক্ষ্মণ—অশেষ মনোব্যথা, নিবেদিলা রামের আদেশ f মাতৃসমা জানকীরে শুষ্কমুখে, ব্যথা-কুণ্ঠ স্বরে ; | তথন জানকী সেই অবিচার তরে পতিরে ভুলেও কোন রূঢ় বাক্য চাঞ্চল্যের ভরে শুনিয়া আবার পতিদেবতার নিৰ্ম্মম বিধান অগ্নি-পরীক্ষার লাগি,—ত্যজিলা পরাণ তীব্র অপমানে, মরি—প্রচণ্ড, অসহ নিৰ্য্যাতনে জননী আমার ! মাগো, তোর আজীবনে - রাজকন্যা, রাজ্ঞী হ’য়ে পূরিল না কোন আশা হায়! এসেছিলি এ জগতে শুধু যাতনায় ঝরে যে’তে নিঃশেষিয়া, বৃন্তচু্যত প্রস্থনের প্রায় ত্রিদিব-সৌরভ ঢালি এপাপ ধারায় ! বড় যে মনের দুঃখে চলে গেলি জননী আমার শুধু নিজ অদৃষ্টের তরে হাহাকার করি ; শুধু, বারম্বার, দেপিলি যখন—তোরি তরে স্বামীর নাহিক শাস্তি সিংহাসনপরে, রামের কল্যাণ লাগি,—স্বামীর পার্থিব সুখ-পথে নিষ্কণ্টক করি, তাই, ত্যজিয়া মরতে চলে গেলি অভিমানে। মাগো, তুই রামের কণ্টক ! তুই যে মা, রঘুবংশে পুণ্যের আলোক মিগ্ধোজ্জল-অচপল-জ্যোতি । রামাদেশে, মনস্তাপে যবে মাগো, গেলি চলে,”—সেই মহাপাপে, বিধাতার শাপে রাম-রাজ্য ধীরে হইল শ্মশানে পরিণত। এ বিশ্বের লক্ষ্মী-অন্তৰ্দ্ধানে সোনার অযোধ্য পূর্ণ হ’লো হাহাকারে! ( কণ্ঠ বাস্প-রুদ্ধ হইল" ) ভগবান, চিরদিন সতীর এ হেন অপমান সহিতে অশক্ত ভ্রাতঃ। অজ। বন্ধু, মনে করে একবার— তোমারো সে অসহায়া সতী অনিবার তব রূঢ় আচরণে সহিতেছে কি মরম-ব্যথা ! সেও পতি-প্রাণী সতী ! দিওনা অযথা তাহারে বেদনা আর । মুখপানে চাহি ক্ষণতরে তুমি কথা কহিলে—যে ধন্ত জ্ঞান করে আপন জীবন, তারে আর পেষিওনা উপেক্ষায়, ঘৃণাভরে কৰ্ত্তব্যেরে নিয়ত হেলায় কোরোনা—কোরোনা তুচ্ছ। শান্ত মনে করহ পালন বিধাতৃ-নির্দেশ মানি’ কৰ্ত্তব্য আপন। অর। (স্বগত) মাধবী ! মরিরে—সে যে একান্তই ভাল বাসিয়াছে আমারে পরাণ ঢালি’ । আর কেবলমাছে—