পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

308 কথা বুঝিতেছে। আর একটু বেশী যাওয়া যাক ; দেশ-শোষণকারী বিদেশীদের অবস্থান প্রযুক্তই, দেশীয় স্বার্থরক্ষার জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন বর্ণ বিভিন্ন জাতি যাহারা এতদিন পরম্পরের বিরোধী ছিল সেই পাসি, সেই শিখ, সেই হিন্দু সকলেই একত্রিত হইয়াছে। এই জাতীয় ভাবের নূতন কল্পনাটি, যাহা বাস্তবতায় পরিণত হইতে এখনও বহু বিলম্ব আছে,– ভারতের মনে জাগিয় উঠিয়াছে। ভারতের এই দৃষ্টান্ত সমাজতত্ত্ববেত্তাদের পক্ষে খুব ঔৎসুক্যজনক সন্দেহ নাই ; কেননা, সপ্রমাণ হইতেছে যে, পালেমেণ্টের কল্পনা ও জাতীয়তার কল্পনা একসূত্রে গ্রথিত, উভয়ই মানব সমাজের অধিকার সমর্থন করে, এবং উভয়ই স্বাভাবিক নিয়মানুসারে আপন হইতেই উৎপন্ন क्ष्म्न । এ একটা ভারী নূতন ব্যাপার। কিন্তু পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, ভারতের ইংরেজ কর্তৃপক্ষ ইহার প্রতিকুল। সে এক সুখের দিন ছিল যখন উহাদিগকে ঈশ্বর ভিন্ন আর কাহারও নিকট কাজের জন্য জবাবদিহি করিতে হইত না ; যে সময়ে না ছিল কংগ্রেস, না ছিল সভাসমিতি, না ছিল ব্যবস্থাপক সভা, ছিল শুধু অভ্রান্ত ও নিরঙ্কুশ স্বেচ্ছাচারিতা ! কিন্তু প্রথমে ঘরের লোকেরাই কংগ্রেসকে আক্রমণ করিল। স্বচাগ্রের উপর প্রতিষ্ঠিত পিরামিডের ষ্ঠায় টলমলায়মান সমাজ পাছে কোন কিছুর ধাক্কা লাগিয়া ধসিয়া যায়, রক্ষণশীল হিন্দুর এই ভয়ে ভীত হইয়া পড়িল। বিপদগ্ৰস্ত সরকারকে তাহার ‘তেহার’ ঘেরের মধ্যে রাখিবার জন্ত প্রস্তাব করিল। সে তিনটি ঘের ;–সন্মান, ভক্তি ও ভয়। কতকগুলি লোক, — যে পক্ষই হোক, কোন এক পক্ষের হইয়া যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইল ; তাহার। আপাদমস্তক অস্ত্রশস্ত্রে মুসজ্জিত হইয়৷ প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। রাজপুত ও ঠাকুরের এই উদীয়মান গণশাসনতন্ত্রের (democracy) আবির্ভাবে শঙ্কিত হইল। একজন রাজা—উহারি মধ্যে যে একটু চিন্তাশীল —সেই কাশীর রাজা তাহাদের নেতা হইল। সমস্ত ভারতের প্রচণ্ড উৎসাহের মুখে, ও সমস্ত খড়ের মত ভাসিয়া যাইত, যদি না ভারত-সমাজের আর একটি প্রধান অঙ্গ ৬ কোটি যাহাদের সংখ্যা, সেই মুসলমানের আসিয়া তাহদের সমস্ত ভার তোলদণ্ডের অন্যদিকে নিঃক্ষেপ করিত। প্রবাসী । - to ৩য় সংখ্যা । ] আজকাল ভারতবর্ষে মুসলমান-সমস্তাই একটি প্রধা | o দৈরে মনােভাবগুলিকে ੋਗ তুলিতে সাহায্য সমস্তা। জনসংখ্যার পঞ্চমাংশ লোক কংগ্রেসের প্রতিকূল কেন, তাহার কারণ স্পষ্টই রহিয়াছে। হিন্দুদিগকে বিজিত প্রজার জাতি বলিয়া মনে করে, মুসল মানেরা দেখিতেছে যে, হিন্দুরা অন্ত প্রকার যুদ্ধক্ষেত্রে—অর্থাং বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাজারে, সরকারি চাকুরিতে জয়লাভ করিয়া তাহাদের উপর প্রতিশোধ লইয়াছে। ইংরেজের আমলে, হিন্দুদের দ্রুত উন্নতি দেখিয়া উহার যে উদ্বিগ্ন হইবে তাহাতে বিচিত্রতা কি ! সরকারের সমস্ত অনুগ্রহ, সমৃদ্ধি ও উচ্চ পদ । হিন্দুদেরই উপর বর্ষিত হইতেছে! এই বিপদ নিবারণের একটি মাত্র উপায়—মুসলমানদের অপরিসীম অজ্ঞতাকে একেবারে ধ্বংস কর । চীৎকার করিয়া নিজের জাতভাইকে সাবধান করিয়া দিলেন তাহার নাম সৈয়দ অর্থাৎ মহম্মদের উত্তরাধিকারী। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে, আলিগড়ে তিনি একটি কালেজ স্থাপন করিয়াছিলেন। কালেজটি বেশ উন্নতি লাভ করিতেছিল, এমন সময় খবর আসিল, কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। হিন্দুরা কেমন দ্রুত অগ্রসর হইতেছে । যাহারা পিছাই। পড়িয়াছে তাহদের পক্ষে সমূহ বিপদ। সৈয়দ একলান্ধে সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং ‘যুদ্ধংদেহি বলিয়া কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিলেন। মুসলমানের অধিকাংশই তাহার অনুগামী হইলেন । ইংরেজ ভাল খেলোয়াড়, টপ করিয়া গোলাটা ধরিয়া ফেলিল। বিবাদ উস্কাইয়া দিবার এমন সুযোগ তাহার কি ছাড়িতে পারে ? দেশের লোক ইংরেজকে যে দিন বুঝিবে সেই দিনই ইংরেজ বোচক বুচকি বাধিতে আরম্ভ করিবে ; কিন্তু এখনও আরম্ভ করে নাই। কিন্তু যদি অভিজ্ঞতা হইতে ইংরেজ না জানিয়া থাকে যে ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় প্রচণ্ড দ্বেষানল এখন শুধু ছাই-চাপা আছে মাত্র, তাহ হইলে তাহারা প্রচণ্ড ধৰ্ম্মোন্মত্ততা জাগাইয়া তুলিবার ঝুঁকি স্বীকার করিয়াও, এইরূপ বিপদ বাধাইবার চেষ্টা করিবে, ' স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। তাছাড়া হিন্দুরা যেরূপ দ্রুতবেগে ঠেলিয়া আসিতেছে, তাহাদিগকে আটকানো আবর্তক। আলিগড়-কালেজে, ইংরেজ মুসলমানের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হইয়া গেল। কালেজের প্রধান অধ্যক্ষ থিওডোর মুসলমানেরা এখনে বিপদ দেখিয়া সৰ্ব্বপ্রথমে যিনি o ভাবাপন্ন। করিলেন এবং তাছার অনেকগুলি কল্পনাকে ফুৎকার দ্বার উস্কাইয়া দিলেন। সৈয়দ ইংরেজি ভাল জানিতেন না ; বেক সৈয়দের হইয়া ইংরাজিতে বস্তৃতা করিলেন, প্রবন্ধ লিখিলেন। তিনি কংগ্রেসের রাজবিদ্রোহিত প্রমাণ প্রয়োগ দ্বারা দেখাইয়া দিলেন, এবং “ভারতের বিপদ আসন্ন" এই বলিয়া একটা চীৎকার তুলিলেন। সেই ধ্বনি উর্দুতে, বাঙ্গলায়, মরাঠিতে প্রতিধ্বনিত হইল :-সকল প্রদেশের ও সকল জাতির অস্তুভূত রক্ষণশীল দল ভৗত হইয়াৰ্তাহার লিখিত পুস্তিকাকে এক একটা প্রবন্ধের দ্বারা পিাইয়া তুলিল। অদ্ভূত ব্যাপার! দেশানুরাগ কোমর বধিয়া অগ্রসর হইল। দেশানুরাগকে এখন দেখাইতে হইবে যে কংগ্রেসওয়ালাদের অপেক্ষ উহার জাতীয় ভাব সমধিক। বেক্, কাশীর রাজা, সৈয়দ আহম্মদ, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, “ভারতের দেশানুরাগী সভা" নামে একটা সভা স্থাপন করিলেন । এই সভার একটা দোষ এই যে ইহার ইটা মাথা—দুই মাথা দুই বিভিন্ন দিকে শরীরটাকে সবেগে টানিবার চেষ্টা করিতেছে। স্কচ্‌ টেরিয়ারের সহিত ইহার কতকটা সাদৃশু আছে। স্কচ টেরিয়ারের গা রোয়য় এরূপ আচ্ছন্ন যে উহার কোথায় মাথা, কোথায় লেজ তাহ বলা

  • ांद्रन ।

যে দিন সভার চোক কান ফুটিবার কথা সেই দিনই সভাটা ভাঙ্গিয়া গেল। এই সকল অভিনেতার অঙ্গভঙ্গীর পিছনে বোধ হয় বিদেশী সাহেবের মুক অভিনয়ের একটু আবছায়া দেখা যাইতেছিল ।... আসলে, এই যুদ্ধকাণ্ডের আতিশয্য ও অতি বিদ্বেষ হইতে কংগ্রেসের অনেকটা কাজ হইয়াছিল। এইরূপে নিদিত, অপবাদগ্ৰস্ত, গোয়েন্দাদৃষ্টির বিষয়ীভূত হইয়া, কংগ্রেস কণ্টকময় পথে চলিতে শিথিল। প্রতিপক্ষীয়েরা কংগ্রেসের উপর কি দোষারোপ করে ?—কংগ্রেস বিদ্রোহীতাই, প্রতি কংগ্রেসের অধিবেশনে কংগ্রেসও স্বকীয় রাজভক্তি, ও বগুতা পুনঃ পুনঃ স্বীকার করিয়া থাকে। কংগ্রেস এমন কোন আন্দোলন করে ন| যাহা বৈধ নহে-যাহ ঠিক আইনসঙ্গত নহে। ভারতের রাষ্ট্রীয় মহাসভা। ෆඵA তথাপি প্রতিপক্ষীয়েরা বলিতে লাগিল,-ভারতের যেরূপ ইতিহাস, ভারত যেরূপ অসংখ্য জাতি ও বর্ণে বিভক্ত, ভারতের যেরূপ প্রকৃতি, ভারতের অজ্ঞতা, তাহাতে ভারত এখনও পালেমেন্টের উপযুক্ত হয় নাই। একটা পালেমেণ্ট এই সকল মূল বিরোধী জাতিদিগকে শাসন করিবে, তাহাম্বের ব্যবস্থাদি প্রণয়ন করিবে ? — ইহা আকাশকুসুমের কল্পনা ! যত বর্ণ, যত জাতি, যত উপজাতি, ততগুলা দলও গঠিত হইবে, আর তা যদি না হয়,—বলবানেরা আপনাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া করিয়া দুৰ্ব্বলদিগকে উৎপীড়ন করিবে । যেখানে মুসলমান অপেক্ষা হিন্দুর সংখ্যা অধিক সেই সকল মুনিলিপ্যালিটিতে এইরূপ ঘটিয়া থাকে। অন্তত একটা লোকমত থাকা আবশুক । কিন্তু এদেশে অজ্ঞতাই একমাত্র বাধা নহে,—রাজনৈতিক বিষয় সম্বন্ধে ঔদাসীন্ত, উপেক্ষা, তাচ্ছিল্য এদেশীয় লোকের একটা প্রকৃতিসিদ্ধ রোগ। চাষা ও ব্রাহ্মণ আইন ও কংগ্রেস লইয়া মাথা বকাইবে । যদি ভারতে প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচনের কোন একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকিত তাহা হইলে উহাদের নির্বাচিত হইবার কি কোন সস্তাবনা থাকিত ?—সেই সব লোক যাহারা ধৰ্ম্মোৎসবের ব্যবস্থা করে, যাহারা মন্দিরের ব্যয় নিৰ্ব্বাহের জন্ত রাজকোষ শোষণ করিবে ; বিশেষত যাহারা কাৰ্য্য-তালিকার শীর্ষদেশে প্রথমেই বড় বড় অক্ষরে লিথিয় রাখিবে “যে কেহ গোহত্যা করিবে তাহার অচিরাং প্রাণদণ্ড হইবে।”... কিন্তু একেবারেই সাৰ্ব্বজনিক নিৰ্ব্বাচন-অধিকার দেওয়া হউক, একথা ত এখন উপস্থিত হইতেছে না। কংগ্রেসের মিতবাদী দল অতটা এখন চাহিতেছে না। বিদেশী ও অস্থায়ী রাজপুরুষদিগের শাসনের উপর যাহাতে দেশীয় লোকের কতকটা কর্তৃত্ব থাকে,—উহার এই টুকু শুধু চাহিতেছে । লাহোরের ‘আকবারি’ নামক মুসলমান সংবাদপত্রের পরিচালকের নামে মুস্তাফা-কামেল আমাকে একটা পরিচয়পত্ৰ দিয়াছিলেন। সেই পত্ৰখানি ও একতাড়া ফরাসী সংবাদপত্র উপহার স্বরূপ র্তাহাকে দেওয়ায়, তাহার সহিত আমার বন্ধুত্ব হইল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম— হিন্দুমুসলমানের মধ্যে এখন কিরূপ সম্বন্ধ ? —“পূৰ্ব্বাপেক্ষা ভালও নহে, মন্দও নহে। যদি