পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উড়িষ্যায় টেকিতে ধানভান । ৩য় সংখ্যা । ] সম্বন্ধের মধ্যে কোনো পাপই ছিল না, ইংরেজই মুসলমানকে আমাদের বিরুদ্ধ করিয়াছে। ইংরেজ যদি মুসলমানকে আমাদের বিরুদ্ধে সত্যই দাড় করাইয়া থাকে, তবে ইংরেজ আমাদের একটি পরম উপকার করিয়াছে-দেশের যে একটি প্রকাও বাস্তব সত্যকে আমরা মূঢ়ের মত না বিচার করিয়াই দেশের বড় বড় কাজের আয়োজনের হিসাব করিতেছিলাম, একেবারে আরম্ভেই তাহার প্রতি ইংরেজ আমাদের দৃষ্টি ফিরাইয়াছে। ইহা হইতে কোনো শিক্ষাই না লইয়া আমরা যদি ইংরেজের উপরেই সমস্ত রাগের মাত্রা চড়াইতে থাকি তবে আমাদের মৃঢ়তা দূর করিবার জন্ত পুনৰ্ব্বার আমাদিগকে আঘাত সহিতে হইবে -যাহা প্রকৃত যেমন করিয়াই হোঁক তাহাকে আমাদের বুঝিতেই হইবে –কোনো মতেই তাহাকে এড়াইয়া চলিবার কোনো পন্থাই নাই। এই সঙ্গে একটা কথা বিশেষ করিয়া মনে রাখিতে হইবে যে, হিন্দু ও মুসলমান, অথবা হিন্দুদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ বা উচ্চ ও নীচবর্ণের মধ্যে মিলন না হইলে আমাদের কাজের ব্যাঘাত হইতেছে অতএব কোনোমতে মিলনসাধন করিয়া আমরা বললাভ করিব এই কথাটাই সকলের চেয়ে বড় কথা নয়, সুতরাং ইহাই সকলের চেয়ে সত্য কথা নহে। আমি পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, কেবলমাত্র প্রয়োজন সাধনের সুযোগ এবং কেবলমাত্র সুব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি না হইলে মানুষের প্রাণ বঁাচে না। যিশু বলিয়া গিয়াছেন মানুষ কেবলমাত্র রুটির দ্বারা জীবনধারণ করে না; তাহার কারণ, মামুষের কেবল শারীর জীবন নহে। সেই বৃহৎ জীবনের খাদ্যাভাব ঘটিতেছে বলিয়া ইংরেজরাজত্ব সকল প্রকার মুশাসন সত্ত্বেও আমাদের আনন্দ শোষণ করিয়া লইতেছে। কিন্তু এই যে খাদ্যাভাব এ যদি কেবল বাহির হইতে .ঘটত তাহা হইলে কোনো প্রকারে বাহিরের সংশোধন করিতে পারিলেই আমাদের কার্য্য সমাধা হইয়া যাইত। আমাদের নিজের অন্তঃপুরের ব্যবস্থাতেও দীর্ঘকাল হইতেই এই উপবাসের ব্যাপার চলিয়া আসিতেছে। আমরা হিন্দু ও মুসলমান, আমরা ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশীয় হিন্দু জাতি এক জায়গায় বাস করিতেছি বটে কিন্তু মানুষ মানুষকে a تمتصحفصـ সমস্যা। >&> রুটির চেয়ে যে উচ্চতর খাদ্য যোগাইয়া প্রাণে শক্তিতে আনন্দে পরিপুষ্ট করিয়া তোলে আমরা পরস্পরকে সেই খাদ্য হইতেই বঞ্চিত করিয়া আসিয়াছি। আমাদের সমস্ত সহযোগিতা, হৃদয়বৃত্তি, সমস্ত হিতচেষ্টা, পরিবার ও বংশের মধ্যে, এবং এক একটা সঙ্কীর্ণ সমাজের মধ্যে এতই অতিশয় পরিমাণে নিবন্ধ হইয়া পড়িয়াছে যে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাধারণ আত্মীয়তার যে বৃহৎ সম্বন্ধ তাহাকে স্বীকার করিবার সম্বল আমরা কিছুই উদ্ধৃত্ত রাখি নাই। সেই কারণে আমরা দ্বীপপুঞ্জের মতই খণ্ড খণ্ড হইয়া আছি, মহাদেশের মত ব্যাপ্ত বিস্তৃত ও এক হইয়া উঠিতে পারি নাই । প্রত্যেক ক্ষুদ্র মানুষটি বৃহৎ মানুষের সঙ্গে নিজের ঐক্য নানা মঙ্গলের দ্বারা নানা আকারে উপলব্ধি করিতে থাকিবে। এই উপলব্ধি তাহার কোনো বিশেষ কাৰ্য্যসিদ্ধির উপায় বলিয়াই গৌরবের নহে, ইহা তাহার প্রাণ, ইহাই তাহার মনুষ্যত্ব অর্থাৎ তাহার ধৰ্ম্ম। এই ধৰ্ম্ম হইতে সে যে পরিমাণেই বঞ্চিত হয় সেই পরিমাণেই সে শুদ্ধ হয়। আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে বহু দিন হইতেই ভারতবর্ষে আমরা এই শুষ্কতাকে প্রশ্রয় দিয়া আসিয়াছি। আমাদের জ্ঞান, কৰ্ম্ম, আচার ব্যবহারের, আমাদের সর্বপ্রকার আদানপ্রদানের বড় বড় রাজপথ এক একটা ছোট ছোট মণ্ডলীর সম্মুখে আসিয়া খণ্ডিত হইয়া গিয়াছে। আমাদের হৃদয় ও চেষ্টা প্রধানত আমাদের নিজের ঘর নিজের গ্রামের মধ্যেই ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে, তাহাবিশ্বমানবের অভিমুখে নিজেকে উদঘাটিত করিয়া দিবার অবসর পায় নাই। এই কারণে আমরা পারিবারিক আরাম পাইয়াছি, ক্ষুদ্র সমাজের সহায়তা পাইয়াছি কিন্তু বৃহৎ মানুষের শক্তি ও সম্পূর্ণত হইতে অনেক দিন হইতে বঞ্চিত হইয়া দীন হীনের মত বাস করিতেছি। সেই প্রকাও অভাব পূরণ করিবার উপায় আমরা নিজের মধ্যে হইতেই যদি বাধিয়া তুলিতে না পারি তবে বাহির হইতে তাহ পাইব কেমন করিয়া ? , ইংরাজ চলিয়া গেলেই আমাদের এই ছিদ্র পূরণ হইবে আমরা এ কল্পনা কেন করিতেছি ? আমরা যে পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি নাই, আমরা ষে পরম্পরকে চিনিবার মাত্রও চেষ্টা করি নাই, আমরা যে এতকাল "ঘর হইতে আঙিনা বিদেশ” করিয়া