পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

f “ সত্যম শিবম সুন্দরম।” “ নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ ৷ ” শ্রাবণ, ১৩১৫। দেখিল। এই নিভৃত প্রকাও গ্রাম্য ভারতবর্ষ যে কত বিচ্ছিন্ন, কত সঙ্কীর্ণ, কত দুৰ্ব্বল ; সে নিজের শক্তি সম্বন্ধে | গোরা। গোরা যখন ভ্রমণে বাহির হইল তখন তাহার সঙ্গে অবিনাশ, মতিলাল, বসন্ত এবং রমাপতি এই চারজন সঙ্গী ছিল। কিন্তু গোরার নির্দয় উৎসাহের সঙ্গে তাহারা তাল রাথিতে পরিলনা। - অবিনাশ এবং বসন্ত অসুস্থ শরীরের ছুতা করিয়া চার-পাচ দিনের মধ্যেই কলিকাতায় ফিরিয়া গেল। নিতান্তই গোরার প্রতি ভক্তি বশত মতিলাল ও রমাপতি তাহাকে একলা ফেলিয়া চলিয়া যাইতে পারিলনা। কিন্তু তাহাদের কষ্টের সীমা ছিলনা ; কারণ, গোরা চলিয়াও শ্ৰান্ত হয় না আবার কোথাও স্থির হইয়া বাস করিতেও তাহার বিরক্তি নাই। গ্রামের যে কোনো গৃহস্থ গোরাকে ব্রাহ্মণ বলিয়া ভক্তি করিয়া ঘরে রাখিয়াছে তাহার বাড়িতে আহার ব্যবহারের যতই অসুবিধা হৌক দিনের পর দিন কাটাইয়াছে। তাহার আলাপ শুনিবার জন্য সমস্ত গ্রামের লোক তাহার চারিদিকে সমাগত হইত, তাহাকে ছাড়িতে চাহিত না। ভদ্রসমাজ, শিক্ষিতসমাজ ও কলিকাতা সমাজের বাহিরে আমাদের দেশটা যে কিরূপ গোর তাই এই প্রথম যে কিরূপ নিতান্ত অচেতন এবং মঙ্গল সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও উদাসীন প্রত্যেক পাচ সাত ক্রোশের বুদ্বধানে তাহার সামাজিক পার্থক্য যে কিরূপ একান্ত ; পৃথিবীর বৃহৎ কৰ্ম্মক্ষেত্রে চলিবার পক্ষে সে যে কতই স্বরচিত ও কাল্পনিক বাধায় প্রতিহত ; তুচ্ছতাকে যে সে কতই বড় করিয়া জানে এবং সংস্কার মাত্রেই যে তাহার কাছে কিরূপ নিশ্চলভাবে কঠিন ; তাহার মন যে কতই মৃগু, প্রাণ যে কতই স্বল্প, চেষ্টা যে কতই ক্ষীণ, তাহা গোর গ্রামবাসীদের মধ্যে এমন করিয়া বাস না করিলে কোনো মতেই কল্পনা করিতে পারিন্তনা। গোরা গ্রামে বাস করিবার সময় একটা পাড়ায় আগুন লাগিয়াছিল-এত বড় একটা সঙ্কটেও সকলে দলবদ্ধ হইয়া প্রাণপণ চেষ্টায় বিপদের বিরুদ্ধে কাজ করিবার শক্তি যে তাহদের কত অল্প তাহ দেখিয়া গোরা আশ্চর্যা হইয়া গেল। সকলেই গোলমাল, দৌড়াদৌড়ি, কাজাকাটি করিতে লাগিল কিন্তু বিধিবদ্ধভাবে কিছুই করিতে পারিল না। সে পাড়ার নিকটে জলাশয় ছিল না ; মেয়ের দূর হইতে জল বহিয়া অনিয়া ঘরের কাজ চালায় ; অথচ প্রতিদিনেরই সেই অসুবিধা লাঘব করিবার জন্ত ঘরে একটা স্বল্পব্যয়ে