পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগ্রেহায়ণ 蔓 চার জনকে অন্ন দেওয়া হয়ত আমাদের সাধ্যে কুলাষ্টতে পারে, ইহাদের সকলকে অল্প দেওয়া আমাদের সাধ্যাতীত । দুই-চার জনকে অল্প দিয়া এই অবিরাম রোদনধ্বনিকে শেষ করা যায় না ; বরং সেই অল্পের গন্ধ পাইয়া বুভূক্ষুরা আরও বেশী করিয়া দল বাধিয়া আসিয়া আমাদের বাড়ীর সম্মুখে ধরনা দেয়, তাহাদের ক্ৰন্দন আরও তীক্ষ, তীব্র হইয়া উঠে। আর ইতাদের সকলকে যদি অন্ন দিতে ঘাই, সকলের পেট ভরিবার বহু পূৰ্ব্বেই আমাদের নিজের ভাণ্ডার শূন্ত হইয়া যাইবে, তার পর আমাদেরও ইহাদেরই মত ভিক্ষাপাত্র হাতে লইতে হইবে । সে অবস্থাটা আমরা কল্পনা করিতে পারি না । এই জন্যই বাধ্য শ্লষ্টয়া আমাদেরও আত্মরক্ষার উপায় খুজিতে হয়। দ্বারের বাহিরে ইতাদের করাঘাত যতই অধীর ও উন্মত্ত হইয় উঠে, আমরাও ততই অধিকতর যত্নে দ্বারের অর্গল দৃঢ় করি। আকাশে বাতাসে ইহাদের আৰ্ত্তনাদ যতই তীব্র হইয়া উঠিতে থাকে, সেই শবকে ডুবাইয়া দিবার জন্য আমরাও ততই প্রাণপণ করিয়া নিজেদের আনন্দ-কল্লোলের মাত্র বাড়াই, গান-নাচরেডিও-গ্রামোফোনের কোলাহল তুলিয়া নিজের কানকে নিজেই আচ্ছন্ন করিয়া রাখি,–যেন উহাদের ক্ৰন্দন কানে না আসে । আমাদের সেই কোলাহল মানসিক আনন্দের পরিচায়ক নয়, পরিচায়ক দৌৰ্ব্বল্যের । সেটা আমরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে করি না, করি আত্মরক্ষার উদভ্ৰান্ত ব্যাকুলতায় । হরিচরণরা অসহায় । আমরা যে আরও বেশী অসহায়, সে সন্ধান কেহ রাখে না। বহু পুরুষের অভ্যস্ত আভিজাত্য ও বিলাসের শৃঙ্খলে আমরা বাধা । সে শৃঙ্খল ছিড়িয়া বাহির হইবার মত শক্তি ও সাহস আমাদের নাই । তাই মানুষের দুঃখে ব্যথা আমাদের মনে যদি বা জাগে, দয়া দেখাইতে আমরা পারি না । সেই দয়াকে এবং দয়া দেখাইবার অক্ষমতাকে যতই গোপন করিতে চাই, নিজেরই উপরে ঘৃণার তাড়নায় বাহিরের আচরণ আমাদের ততই রুক্ষ রূঢ় হইয়া উঠে । আমাদের সেই রূপটাই মামুযের চক্ষে পড়ে। তাহারা জানে, আমরা হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর । चौिवत्र ۹ میچ ইহার পরে প্রায় দেড় মাস আমি বরিশালে ছিলাম । হরিচরণকে আমাদের বাসায় দেখি নাই। কিন্তু পথেঘাটে দেখা দিয়া আমার শক্রতা করিতেও সে ছাড়ে নাই । টিকিট কাটিয়া সিনেমায় ঢুকিতেছি, সম্মুখে দাড়াইয়া হরিচরণ ; ড্যাবডেবে দুই চক্ষু মেলিয়া আমার দিকে চাহিয়া আছে। তাহার চক্ষে অম্বুযোগ নাই, ভংসনা নাই, শুধু নিম্প্রাণ চক্ষে সে আমাকে দেখিতেছে। পথে চলিতে একটা সুন্দর খেলনা চোখে পড়িয়াছে, জানি তাহার আয়ু বেশী ক্ষণ নয় তবু পকেট খালি করিয়া সেইটাকে কিনিয়াছি ; দুই পা গিয়াই দেখি, রাস্তার পাশে বসিয়া হরিচরণ তাহার বাধা স্বরে হু উ উ উ করিয়া কাদিতেছে । চকিতের মত মনে হইয়াছে, এই পুতুলটা না-কিনিয়া পয়সাটা উহাকে দিলেও হইত। কিন্তু তখন পকেটে আর পয়সা নাই, এবং পুতুলটা বিনা অজুহাতে ফিরাইয়া দেওয়াও চলে না। বাসায় গিয়া ছোট বোনটাকে পুতুল দিয়াছি, সে ও তাহার দিদির খুশী হইয়াছে। হরিচরণও যে ঐ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল সে কথাটা তাহাজের বলি নাই। বলিলে হরিচরণের দুঃখ দূর হইত না ; অথচ ইহাদের আনন্দে মালিন্ত মিশিত। লাভ কি বলিয়া ? ইহারই মধ্যে আবার এক দিন একটা কাও ঘটিল । বিকালবেলা বেড়াইতে বাহির হইয়াছি, সঙ্গে একটি আত্মীয়া তরুণী । চকবাজারের রাস্ত পার হইয়া তিনি হঠাৎ বলিলেন, টফি কেন । পকেটে অল্পই পয়সা ছিল, সমস্ত দিয়া টফি কিনিলাম। গোটা-দুই টফি মুখে পুরিয়া বাকিগুলা পকেটে রাখিয়া চলিয়াছি, কালেক্টরির পুকুরপাড়ে বসিয়া হরিচরণ । সাধারণত: সে পথের পাশে বসিয়াই কাদে, মুখ খুলিয়া ভিক্ষা চায় না। এ-দিন একেবারে উঠিয়া আমার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । পরম পরিচিতের মত হাত পাতিয়া কহিল—দাস্থ, একখান পয়সা দিয়া যায়ন, মুরি খামু । তার পর একটু খামিয়া আবার কহিল—আইজ আর কিছু থাই নায় । সে ঠিক সামনেটায় আসিয়া দাড়াইয়াছে, খামিতেই