পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o } ২১৬ প্রবাসী g ১৩৪৬ মন কেমন করিলে নিজেকে উপহাস করিয়া বলিতাম-- কিসের দুলালী ? দুলালী আমার কে ? মুক্তি, মুক্তি, অবাধ মুক্তি। আবার নূতন জীবন, নূতন পরিবেশ, নূতন বন্ধুবান্ধব, নৃতন পরিচয় । মন আমার যেন দুইটি পক্ষ বিস্তার করিয়া বাধাবিহীন অজানার সন্ধানে উড়িয়া চলিল । כא মেসোপোটেমিয়ার রুটিন-বাধা জীবন দুলালীর চিস্তার পক্ষে আমার রক্ষাকবচের মত হইয়াছিল। মন্দ কিছু বোধ হইতেছিল না—অন্তত মন্দ বোধ হইতে দিতাম না। খুটিনাটি করিতে করিতেই আপিসের বেলা হইয়া যাইত। আটট হইতে দশটা আপিস -আবার বারটা হইতে চারটা । বৈকালে কাজকৰ্ম্ম সারিয়া কথন কখন শহরের দিকে ঘুরিতে যাইতাম-অকারণে এ-দোকানে চকোলেট ওদোকানে সিগারেট কিনিয়া সময় কাটাইতাম । এক দিন শহরের একটা বিখ্যাত স্টোরে গিয়াছি আবশ্যক কিছু সওদা করিবার উদ্দেশ্যে। জিনিয বাছাবাছি করিতেছি এমন সময় প্রকাণ্ড একটা জুড়িগাড়ী দোকানের দরজায় আসিয়া থামিল এবং ফেজ মাথায় সাহেবী পোষাক পরা একজন পারসীক ভদ্রলোক আসিয়া দোকানে প্রবেশ করিলেন। দেখিলাম মেসোপেটেমিয় ইংরেজদের কবলে আসিবার পর ভারতীয়দের মতই ইহারা উঠিয়া পড়িয়া সাহেব বনিবার সাধনায় লাগিয়াছে। লোকটিকে দেখিয়া আরব দোকানী তটস্থ হইয়া উঠিল এবং তাহীদের স্বভাবসিদ্ধ আদব কায়দায় আগস্তুককে প্রচুর অভ্যর্থনা করিয়া তাহার খিদমতে লাগিয়া গেল। বুঝিলাম লোকটা নিতাস্ত একটা ‘কেওকেটা নয়। জিনিষ কিনিয়া দাম দিবার সময় একখানি কাগজ অজ্ঞাতে র্তাহার বিপুলায়তন কুরিয়ার ব্যাগের মধ্য হইতে পড়িয়া গিয়াছিল—কেহই তাহা লক্ষ্য করে নাই । ভদ্রলোকটি চলিয়া যাইবার পর আমার নজরে প্রথম তাহা পড়িল । কুড়াইয়া লইলাম। প্রথমে ভাবিলাম দোকানদারকে দিয়া দিই, সে অনায়াসে যাহার কাগজ তাছাকে পৌছাইয়া দিতে পারিবে। কিন্তু কেমন খেয়াল হইল, কাগজখানা দিলাম না । দোকানীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম ইনি একজন পারসীক ধনী ওমরাহ শ্রেণীর লোক—শহরের বাহিরে এক অট্টালিকায় বাস করেন । ভাবিলাম, এই সুযোগে এখানকার অভিজাত শ্রেণীর সহিত পরিচিত হইবার সুবিধা হইতে পারে । পরদিন রবিবার—ছুটির দিন। অন্য বারের মত আলস্য ও আমোদে দিন না কাটাইয়া সকালে উঠিয়া যথাসাধ্য প্রসাধন করিলাম। সাহেবী পোষাক না পরিয়া চুনট-করা গরদের ধূতি ও পাঞ্জাবী কাশ্মীরী শাল উড়াইয়া বাহির হইলাম। উৎসবাদিতে পরিবার জন্য এক সুট দেশীয় পোষাক সঙ্গে লইয়াছিলাম। ভাবিলাম সাহেবিয়ানায় উহাদের কাছে থই পাইব না। এই ভাল। বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করিল—কোথায় হে ? হাসিয়া উত্তর দিলাম—অভিসারে । বন্ধুরা বিশ্বাস অবিশ্বাসে মিশাইয়া এক প্রকার করিয়া হাসিয়া বলিল গুড়, লাক । আমাদের ছাউনি ছিল ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস ৭ আর ও দুইটি ছোট নদীর চতুমুখ সঙ্গমে-নাম সাটল আরাব, ইহা পারস্য উপসাগর হইতে অল্প দূরে এবং বসরা শহরের মাইল তিনেক দক্ষিণে। সুবিস্তৃত কুলহীন সাটল অ্যারাবের ধারে ধারে দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও খর্জুরকুঞ্জে সাজানো দেশটি আমার মনকে সেদিন কবিত্বরসে পূর্ণ করিতেছিল। দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মাঝে মাঝে কুটার এবং কুটীরের অঙ্গনে বিদেশী চাষী গৃহস্থের জীবনলীলা সেদিন সকালবেলা বড় মধুর হইয়া আমার নিকট প্রকাশ পাইল। মনে হইল সত্যই এক অভিসারে চলিয়াছি যেন । মাইল তিনেক অতিক্রম করার পর ঠিকানা ও চিহ্ন অনুসারে যে-বাড়ীর দেউড়িতে আসিয়া দাড়াইলাম— নদীর প্রায় ভিতর হইতে লাল পাথরে গাথিয়া-তোলা সেট একটা বিরাট অট্টালিকা। দস্তুরমাফিক কার্ড দিয়া ভিতরে গেলাম। বেহার আমাকে একটা স্ববিস্তৃত কক্ষে লইয়া গিয়া বসাইল । কিন্তু চোখে না দেখিলে তাহার সাজসজ্জা কল্পনাও করা যায় না। যে সাহেবী পোষাক পরা ভদ্রলোকটিকে দেখিয়া ইউরোপীয় ধরণে