পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক পিতা-পুত্র Տ Ց পড়েছি চারু ! বোধ হয় এমন সমস্যায় জীবনে কখনও পড়ি নি । চারু বলিল—বেশ ! ঠাকুরের কাছে যা ও না । দেশবিদেশের লোক এসে তোমার বাপের কাছ থেকে মুস্কিলের আসান ক’রে নিয়ে যাচ্ছে, আর তুমি ঘরে ব’সে মুস্কিল নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছ ! শশী কথার উত্তর দিল না, একটু হাসিল । চারুর মনে হইল শশী তাঙ্গাকেই অবজ্ঞা করিয়া হাসিল, এই জন্য সে রাগ করিয়াই প্রশ্ন করিল—হাসলে যে ? শশী আবার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল— দরজাট বন্ধ ক’রে দাও । তার পর বলছি । চারু দরজা বন্ধ করিয়া দিল, শশী বলিল-ব’স এইখানে, একট পরামর্শ দাও দেখি । তুমি আমার সচিব, সখী, অনেক কিছু। একথা তুমি ছাড়া আর কাউকে বলার আমার উপায় নেই, মাকে পর্য্যস্ত না । কথা যে বাবাকে নিয়েই । কথাটার ভূমিকা শুনিয়াই চারু ভয় পাইয়া গেল, সে শঙ্কিত দৃষ্টতে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। শশী বলিল অভ্যস্থ মৃদুস্বরে —বাবা যে সংশোধনগুলি করেছেন, সেগুলি ভাষার দিক দিয়েই তিনি সংশোধন করেছেন, দু-এক জায়গায় বৌদ্ধ-শূন্তবাদ সম্পর্কে মস্তব্যে তিনি অত্যন্ত কঠোর হয়ে পড়েছেন । আমার মতে অন্যায় হয়েছে। ভাষার দিক দিয়ে প্রাচীন ধারা অনুযায়ী আধুনিক লেখার সংশোধন খাপ খায় না ; কটু হয় শুনতে, আরও অনেক দোষ হয় । আর বৌদ্ধশূন্তবাদ কেউ গ্রহণ করতে না পারে, কিন্তু বিদ্বেষ নিয়ে তাকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হতে হবে । চারুর মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল, ভয়ার্ক অথচ মুম্বুস্বরে সে বলিল-না না, ওগো বাবাকে তুমি অমান্ত কর না। শশী চিস্তিত ভাবে বসিয়া থাকিতে থাকিতে অস্বীকারের ভঙ্গীতে ধীরভাবে বার কয় মাথা নাড়িয়। মৃদুস্বরে বলিল—না । জ্ঞান হ’ল সত্য, সত্যের মর্য্যাদা আমি ক্ষুন্ন করতে পারি না চারু। বহুদিনের রঙ-করা মাটির পুতুলের মতই চারু বসিয়া | কিন্তু দুই-ই গেলে গ্রস্থ কারকে ধৰ্ম্মভ্ৰষ্ঠ কয়েক দিন পর সে দিন প্রাতঃকালেই টোলের একটি ছাত্র বাড়ীর ভিতর আসিয়া শশিশেখরকে ডাকিল, অধ্যাপক মশায় ডাকছেন আপনাকে । শশী সঙ্গে সঙ্গেই উঠিয়া আসিল । টোলের ছেলেরা বারান্দায় বসিয়া পড়িতেছে, ন্যায়ুতীর্থ অভ্যাসমত ছোট চৌকীটির উপর বসিয়া আছেন, শশী আসিয়া বিনীত ভাবে প্রশ্ন করিল, আমাকে ডেকেছেন ? দ্যায়তীৰ্থ বলিলেন —ষ্ট্র্যা । ব’স । তোমার সঙ্গে কিছু পরামর্শ আছে । ব’স কম্বলের উপর ব’স । দেখ, কয়েক দিন ধরেই আমি একটা কথা ভাবছি। ন্যায়তীর্থ চুপ করিলেন, শশীও প্রশ্ন না করিয়া নীরবে প্রতীক্ষা করিয়া রহিল । ন্যায়তীৰ্থ বলিলেন, ভাগবতধৰ্ম্মের তত্ত্বব্যাখ্যা বোধ হয় আমার লিপিবদ্ধ ক’রে যাওয়া উচিত । কি বল তুমি ? শশী উৎসাহিত হইয় আপনার কর্তব্য ব’লে আমার মনে হয় । —তা হ’লে আরম্ভ ক’রে দেওয়াই উচিত, কি বল ? এটা বলিল-আজ্ঞে হঁ্য । —আঞ্জে হ্যা । এবার মুক্ত হাসিয়া ন্যায়ুতীর্থ বলিলেন—দেখ, কাজটা আমি আরম্ভ ক’রে দিয়েছি । অপেক্ষা কর, আমি আসছি। বলিয়া তিনি উঠিয়া ব্যস্ত হইয়া খালি পায়েই বাড়ীর ভিতরে চলিয়া গেলেন । শশী চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। বাপের প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি সত্ত্বেও তাহার আজিকার এই উৎসাহ দেখিয় সে মনে মনে কৌতুক বোধ না করিয়া পারিল না। চারি দিকে ছাত্রের মৃদুগুঞ্জনে পড়িতেছে ; তাহারই মধ্য হইতে সহসা একটা কথা যেন তাহার কানে আসিয়া খট কথাটা—বিম্পষ্ট । শশী ছেলেটিকে ডাকিয়া বলিল – শোন । ‘বিষ্পষ্ট’ ন; ব’লে ‘সুস্পষ্ট বল। ‘বিপষ্ট' কথাটা ধ্বনির দিক দিয়ে রূঢ় আর ব্যবহারেও প্রায় অপ্রচলিত । ছেলেটি বলি –আজ্ঞে না, ওটা বিশেষ রূপে স্পষ্ট কিনা । স্ব-শব্দে স্বনারদ্যোতক—ওতে কাব্যের মাধুৰ্য্য আছে । হাসিয়া শশী বলিল—ত হ’লে স্ব কঠিন প্রয়োগ বিধিটা ভুল হ’ত। প্রচলনভেদে ধাতুগত অর্থের তারতম্য হয়ে করিয়া বাজিল ।