পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ゞや - - অমর বলিল—তুমি ভাই, এমন খাতির করলে তো আমাকে বিধেয় নিতে হয় এখুনি। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতটি অপ্রতিভের মত হাসিল মাত্র, উত্তর দিতে পারিল না। অমর বলিল—তুমি শুধু বন্ধু নও। তুমি আমাদের গৌরব। সেদিন কাগজে যখন ঐ লেখাটা পড়লাম শশী, তখন বলব কি তোমাকে, আনন্দে আমার চোখে জল এল । আমাদের মেসের প্রত্যেককে আমি কাগজখানা দেখিয়েছি, আর বলেছি—দেখ, আমাদের গ্রাম কেমন দেখ ! শশীর চোখমুখ এবার প্রদীপ্ত হইয়া উঠিলেও লজ্জিত ভাবে বৃষ্টিধারনমিত ফলবান বৃক্ষের মতই মাথা নত করিল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করিয়া শশী বলিল—তোমাকে পত্র আমি লিখতাম অমর, তা দেখা হয়ে গেল ভালই হ’ল । কিছু চাদা তোমাকে লাগবে ! —তোমার টোলের জন্তে ? —না না । আমাদের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রায়বাহাদুর সুধাকৃষ্ণ মুখুজে মশায় উদ্যোগ করে জেলাতে এবার পণ্ডিত-সভা আহবান করেছেন, আমায় করেছেন সম্পাদক । অবশ্য টাকাকড়ি সায়েবের ঠেলাতেই উঠবে। তবু সম্পাদক যখন হয়েছি তখন আমি দু-দশ টাকা যা পারি তুলবার চেষ্টা করছি। অমর একেবারে লাফাইয়া উঠিল । বলিল—নিশ্চয় দেব । আর কলকাতায় আমাদের জেলার যে-সব লোক আছেন—তাদের কাছেও যাব আমি । তুমি বরং সায়েবের সষ্ট-করা কয়েকখান চিঠি আমায় দিয়ে । জ্যেঠামশায় নিশ্চয় সভাপতি হবেন ? —ম, তাকে অভ্যর্থনা-সভার সভাপতি করা হয়েছে। কাশীর মহামহোপাধ্যায় গ্যামাচরণ তর্করত্ব হবেন সভাপতি । —বা:, চমৎকার ব্যবস্থা হয়েছে। তার পর নীরবে কিছুক্ষণ অমর যেন কল্পনায় সভার ভাবী রূপ দেখিয়া লইয়া আবার বলিল—তোমরা বাপ-বেটায় একদিকে দাড়ালে যেখান থেকেই যিনি আমুন শশী, আমাদের জেলারই জয় হবে এ একেবারে নিশ্চিত । প্রবাসী وع 8كي لا শশী চুপ করিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল –পরাধীন দেশে পাণ্ডিত্যের কোন অর্থ হয় না অমর। আর্থিক ব্যর্থতার কথাই শুধু বলছি না আমি ; পরাধীনতার জন্যে এমন মনোভাব হয়েছে যে প্রাচীন পণ্ডিত ভুল বললেও তার প্রতিবাদ করাটা পৰ্য্যন্ত অন্যায়ের তালিকাভুক্ত হয়ে পড়েছে। অমর বলিল—তার জন্যে ভাবনা কি তোমার, জ্যেঠামশায় তোমার পাশে থাকবেন, তিনি তো আর নবীন নন। কথাটা শেষ করিয়া অকস্মাৎ সে হাসিয়া ফেলিল, বলিল, নবীন বলতে একটা কথা মনে হ’ল। তোমার বউ কোথায় ? হাসিয়া শশী বলিল—বাড়ীতে । —এখানে নিয়ে এস। কত আর হাত পুড়িয়ে খাবে ? —তোমারও তো তাই । ঐ যে বললাম, ও স্বাধীনতা পয্যন্ত আমাদের নেই। অমর সরবে হাসিয়া উঠিয়া বলিল—কথাটা বড় ভাল বলেছ এই বিংশ শতাব্দীতেও জেলার সদর শহরটি পণ্ডিতসভার অধিবেশনে চঞ্চল-উৎসুক হইয়া উঠিয়াছিল। জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট রায়বাহাদুর স্বধাকৃষ্ণবাবু বয়সেও প্রাচীন এবং হিন্দুধৰ্ম্মেও অনুরাগী ব্যক্তি। দীঘকাল শাসন-বিভাগে কাজ করিয়া মধুচক্র হইতে মধুনিষ্কাশনের কৌশলেও তিনি সিদ্ধহস্ত। তাঙ্গর পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ সংগৃহীত হইয়াছিল প্রচুর । তিনি নিজে অধিবেশনে উপস্থিত থাকায় জেলার ধনী জমিদার, রায়ুসাহেব, রায়বাহাদুর, এমন কি জেলার একমাত্র রাজাসাহেব পৰ্য্যস্ত সভা অলঙ্কত করিয়া হাজির ছিলেন । সাহেব হাসিলে তাহারা হাসিতেছিলেন, গম্ভীর হইলে গম্ভীর গুইতেছিলেন আর কোন পণ্ডিতের বক্তব্য শেষ হইলে হাততালি দিতেছিলেন—সজোরে । অধিবেশন প্রারম্ভে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব সভার উদ্বোধন করিলেন, বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলিলেন -এই জেলায় এখনও ংস্কৃত-চর্চার গৌরব অটুট আছে। বিশেষ ক’রে পণ্ডিত শিবশেখর ন্যায়তীর্থ ও তার পুত্র পণ্ডিত শশিশেখর স্বায়তীর্থের গৌরবে এ জেলা গৌরবান্বিত। পণ্ডিত শশিশেখরকে এই প্রসঙ্গে ধন্যবাদ না দিয়ে থাকতে পারছি