পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩২ আমার উত্তর । পূর্বকালে অনেক কবি হেঁয়ালি প্রবন্ধে কালজ্ঞাপন করিতেন। (১৩৩৬ সালের পৌষ মাসের প্রবাসীতে কবি-শকাঙ্ক’ পশু ) । এতদ্বারা কবি বিদগ্ধজা প্রকাশ করিতেন, আর লিখিতেন, ‘মূখেতে বুঝিতে নারে বৎসর চল্লিশে । শত বৎসর পূর্বেও এই রীতি ছিল। দ্ব্যর্থ বাক্যের সমষ্টিতে গ্রহেলিকা। কোন অর্থ গ্রহণ করিতে হইবে সেটি নিশ্চয় করা সকলের পক্ষে সহজ হয় না। ভারতচন্দ্র “অন্নদামঙ্গলে’র রচনা-শক জানাইতে লিখিয়াছেন, বেদ লয়ে ঋধি রসে ব্রহ্ম নিরূপিলা । ইহার সামান্য অর্থ, ঋষিগণ বেদের আনন্দরস দ্বারা ব্ৰহ্ম নিরূপণ করিলেন। বাস্তবিক একমাত্র রস আনন্দ, এবং ব্রহ্ম আনন্দঘন কিনা, সে কথা আদৌ বিচার্য নয়। ভারতচন্দ্র সে রস আস্বাদন করিয়াছিলেন কিনা তাহাও চিস্তনীয় নয়। শব্দগুলি সংখ্যা-বাচক, সমুদ্বয়ের অর্থ ১৬৭৪ । সেইরূপ চ-চরিতের হেঁয়ালি বুঝিতে হইলে অস্পষ্টার্থ ধরিতে হইবে। প্রোফেসর শ্ৰীযুত রামশরণ ঘোষ পৌষ মাস এই অর্থ করিয়াছিলেন । আমি ক্লাস্তিবশে ভাবিতে, পারি নাই। আমার মনে হয় মাঘ মাস কবির উদ্দিষ্ট ছিল । সংস্কৃত "শিশুপাল-বধ” কাব্যের কবির নাম মাঘ । কাব্যটিও মাঘ-কাব্য নামে খ্যাত ; অর্থাৎ কতা ও কম এক নামে ব্যক্ত হয়। পূর্বকালে কোন কোন কবি অল্পবুদ্ধি পাঠকদের সংশয় দূর করিতে প্রকারাস্তরে একই কাল বলিতেন । এই কবিও সন্ন্যাসী আনিয়ু প্রকারান্তরে বলিতেছেন, মাঘ মাস বুঝিতে হইবে। কিন্তু একবার বলিতেছেন বুদ্ধদেব গৃহশূন্য, আবার বলিতেছেন তিনি ঘরে আছেন । ইহার অর্থ এই, বিমুক্ত হইলে লোকে সন্ন্যাসী হয় ; বিমুক্ত অবস্থার নাম দশমী । অতএব বুদ্ধদেব গৃহশূন্ত অর্থাৎ সন্ন্যাসী দশম ঘরে আছেন। বৎসরের দশম মাস মাঘ মাস। অন্য প্রকারেও এই অর্থ আনা যাইতে পারে। চ-চরিতের বহু স্থানে দেখা যায়, কবি “ত্রিকাগুশেষ” অভিধান অভ্যাস করিয়াছিলেন । এই অভিধানে বুদ্ধদেবের অনেক নাম আছে । এক নাম ‘বীতরাগ’ । শ্ৰীমৎ শীলভদ্রের টাকায় ইহার অর্থ, যাহার জন্যে লোকে গৃহত্যাগ করে। উক্ত অভিধানে বুদ্ধদেবের éबाजौ 象 কোথায় পাইলেন ? মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কালে পুরাণাদির ১৩৪৬ আর এক নাম দশভূমীশ’, যিনি দশভূমির ঈশ্বর অর্থাৎমিমি দশতলা গৃহে থাকেন। ইহাতেও দশম মাস আসিতেছে। (প্রকৃত অর্থ যিনি দশ পারমিতার ঈশ্বর।) অতএব গৃহশূন্য সন্ন্যাসী পাইলেই হেঁয়ালির অর্থ পাওয়া যায়। তিনি বুদ্ধদেব কি আর কেহ, তিনি সত্য সত্য মাঘ মাসে গৃহত্যাগ করিয়াছিলেন কিনা জানিবার প্রয়োজন নাই । (বস্তুতঃ বুদ্ধদেব-চরিত মতে তিনি আষাঢ়ী পূর্ণিমায় গৃহত্যাগ করিয়াছিলেন । ) কবি আর এক স্থানেও (২২৪। ১ পৃ) হেঁয়ালিতে শক দিয়াছেন। ইদানীর কোন কবি দিতেন ? (৩) আমরা ঐতরেয় আরণ্যকের নামও শুনি নাই। কবি কোথায় শুনিলেন ? ঐতরেয় আরণ্যকে সাথে রঙ্গমন । শ্ৰীকৃষ্ণ রাধার সঙ্গ হইতে মিলন । ( ৬২২ পু ) আমাদের দেখিতে হইবে, কথাটা সভা, না মিথ্যা। যদি মিথ্যা হয়, তবে বুঝিতে হইবে জালিকের প্রতারণ, যদি সত্য হয়, তবে সাধু পণ্ডিতের কম। আমি ইহার টীকা করি নাই, আরও অনেক শাস্ত্র উক্তির করি নাই । আমাদের অনেকের ধারণা আছে যে, রাজ রামমোহন রায়ের পূর্বে এদেশে কেহ উপনিষদাদি অধ্যয়ন করিতেন না ।১ ব্রাহ্মণের পৌরোহিত্য করিতেন, কেইবা সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবতাদি দুষ্ট একখান পুরাণ পড়িতেন । আমরা ভুলিয়া যাই নবদ্বীপে নব্য ন্যায়ের স্মৃষ্টি হইয়াছিল, চৈতন্যদেবকে বহু সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সহিত বিচার করিতে হইয়াছিল। রঘুনন্দন ভট্টাচার্য তাইrর “স্মৃতিতত্ত্বে" স্থানে স্থানে শ্রুতিবাক্য উদ্ধত করিয়াছেন। সে সকল বাক্য গুস্থসূত্র হইতে বটে, কিন্তু যিনি একটা সুত্র অধ্যয়ন করেন তিনি আরও কিছু করেন । সে সব পণ্ডিতের কথা ছাড়ি । ভারতচন্দ্র বিষয়ী লোক ছিলেন, তিনি ষড়দর্শনের সারমম' • রামমোহন রায়ের সমকালে বা তাছাৰ কিছু আগে বুঙ্গে সাধারণতঃ কোন উপনিষদাদি পঠিত হইত না, ইহা সত্য হইতে পারে । কিন্তু তাইার দুই তিন চারি শত বৎসর আগেও কেহ বঙ্গে শ্রীতি অধ্যয়ন করিতেন না, এ রকম বিশ্বাস কাহারও আছে বলিয়া আমি অবগত নহি ।—প্রবাসীর সম্পাদক ।