পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক পিতা-পুত্র Sæ. ভ্র কুঞ্চিত করিয়া কয়েক মুহূৰ্ত্ত চিস্তা করিয়া ন্যায়তীর্থ বলিলেন, মণি, আমার চাদরখানা দাও তো । জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট স্বধাকৃষ্ণবাৰু শশীকে সত্যই স্নেহের চক্ষে দেখিয়াছিলেন, তিনি মানুষও ছিলেন সত্যকার গুণগ্রাহী ব্যক্তি । আজিকার এই আহানের মধ্যে আরও একটু উদেখা তাহার ছিল। পিতা-পুত্রের এই আকস্মিক মতদ্বৈধের রূঢ়তাটুকু মুছিয়া দিয়া উভয়ের সম্বন্ধের স্বাভাবিক অবস্থার প্রতিষ্ঠাও ছিল গোপন সঙ্কল্প । শশীকে ও তিনি আহবান করিয়াছিলেন । ন্যায়তীর্থকে সাদরে অভ্যর্থনা করিয়া বসাইয়া বলিলেন—আপনার সঙ্গে পরিচয় ক’রে আমি গৌরব অহুভব করছি ন্যায়তীর্থ। পরম আনন্দ লাভ করলাম । দ্যায়তীর্থ সবিনয়ে বলিলেন—আপনি জেলার বাজপ্রতিনিধি ; আপনার সঙ্গে পরিচয় আমার পরম সৌভাগ্য। রাজা-রাজপ্রতিনিধিরাই আমাদের রক্ষক, আপনারাই তে৷ আমাদের ভরস । স্বাকৃষ্ণবাবু বলিলেন—অতি সত্য কথা। ক্রটি আমাদেরই—আমরাই আপনাদের সন্ধান রাখি না, সন্মান করি না । সেই সায়েবের লেখার প্রতি এবার সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আপনাদের সম্মান সরকার করতে চান । হায়তীৰ্থ বলিলেন—আমাদের সৌভাগ্য। —সম্মান অবশ্ব উপাধি দিয়ে। তা সরকারের পত্র পেয়ে আমি হাসলাম । উপাধি মহামহোপাধ্যায়ে ন্যায়তীর্থের গৌরব বৃদ্ধি আর কি হবে! নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর । ন্যায়ুতীর্থ বলিলেন—অকিঞ্চিৎকর হ’লেও যখন রাজার দান এবং আমার প্রাপ্য তখন না নিলে উপায় কি, বলুন ! অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এবং আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করব । স্বধাকৃষ্ণবাৰু চুপ করিয়া গেলেন ; কিছুক্ষণ পর বলিলেন—খুব সুখী হলাম আপনার কথা শুনে। সরকারকে আমি জানাব। শশিশেখরকেও আমরা দু-এক বছরের মধ্যেই উপাধি দেব। আর একটা কথা, শশী আজ বড়ই অন্যায় করেছে—তাকে আপনাকে মার্জনা করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে অনুতপ্ত হয়েছে । - কঠিন হাসি হাসিয়া ন্যায়ুতীর্থ বলিলেন—ত হ’লে বলছেন, অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। স্বপ্নাতুর বা তন্দ্রাতুর অবস্থা থেকে জাগ্রতাবস্থায় অবস্থান্তর । আহবানের তা হ’লে প্রয়োজন আছে । সুধাকৃষ্ণবাবু হাসিলেন, বলিলেন-তরুণ বয়সের ধৰ্ম্মকে সহ ক’রে নিতে হবে ন্যায়তীর্থ মশাই, না নিলে উপায় কি ? ন্যায়তীৰ্থ বলিলেন —দু-দিন পরে, দু-দিন পরে, আজ আদেশ করবেন না, পারব না। আজ আমি যাই । ন্যায়তীর্থের খড়ম ধ্বনিত হইয়া উঠিল । হায়তীর্থ চলিয়া যাইতেই সুধাকৃষ্ণবাবু পাশের ঘরের দিকে উদ্দেশ করিয়া ডাকিলেন –পণ্ডিত ! শশীকে তিনি পাশের ঘরেই বসাইয়া রাখিয়াছিলেন । কিন্তু কেহ উত্তর দিল না। সুধাকৃষ্ণবাবু উঠিয়া পাশের ঘরে গিয়া দেখিলেন, ওপাশের দরজা খোলা, ঘরে কেহ নাই । শশী সমস্তই শুনিয়াছিল। সে উদভ্ৰাস্তের মতই ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িয়াছিল। আজ সে স্পষ্ট অনুভব করিল তাহার প্রতিষ্ঠায় তাহার পিতার ঈর্ষা ; জীবনের প্রতিটি ঘটনা আজ নূতন আলোকে আলোকিত হইয়া নূতন রূপে তাহার চোখে দেখা দিল। সহসা তাহার মাকে মনে পড়িয় গেল । তাহার সম্মুখে সে দাড়াইবে কেমন করিয়া ! চলিতে চলিতে সে হুচোট খাইল, চাটটা ছিড়িয়া গেল । কিন্তু সেদিকে তাহার ভ্ৰক্ষেপ ছিল না। ধিক্কারে লজ্জায় তাহার মন ছি ছি করিয়া সারা হইতেছে । মাথার ভিতরটা কেমন করিতেছে! মনে ইচ্ছা হইল—দুই হাতে দলিয়া পৃথিবীর সব কিছু যদি সে মুছিয়া দিতে পারত ! চারি দিকে অন্ধকার ঘন হইয়া আসিতেছে, সে বিভ্রান্তের মত লোকালয় ছাড়িয়া চলিল । কে যেন তাহাকে তাড়াইয়া লইয়া চলিয়াছে ! সে তাহার পিতা— দাস্তিক ন্যায়তীর্থ। শহর পার হইয়া ঘন জঙ্গল-জঙ্গলের