পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক বিচিত্র বুদ্ধমূৰ্ত্তি Հջ ৰাষ্ট্র। কনিক্ষের রাজত্বের তৃতীয় বর্ষে নিৰ্ম্মিত একটি বিশাল বুদ্ধমূৰ্ত্তি মথুরা হইতে সারনাথে আনীত হইয়াছিল। তারিখযুক্ত মূর্জির মধ্যে এইটিই বোধ হয় সৰ্ব্বপ্রাচীন । এই মূৰ্ত্তি এখন সারনাথের যাদুঘরে আছে। এই মূৰ্ত্তির মত মূৰ্ত্তি সারনাথেও গঠিত হইয়াছিল। এই মূৰ্ত্তিগুলি চেপ্টা ও স্থল। মধ্য-এশিয়া হইতে নবাগত রাজগণ তাহাদের নিজেদের আদর্শে এই মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। গান্ধার শিল্প ও কুষাণ শিল্প বিদেশী ভাব দ্বারা উদ্বুদ্ধ হইয়া জন্ম লাভ করিয়াছিল। পোষাক ইত্যাদিতে গ্রীক-প্রভাব আছে । গ্রীক-শিল্পের দৈহিক সুষম বা ভারত-শিল্পের ধ্যানপরতা ইহাতে নাই। প্রথম দিকে যে স্থূলতা দেখা গিয়াছিল তাই ক্রমে কাস্তির দিকে আলিগাছিল, কিন্তু বোধ হয় সম্পূর্ণ ভারতীয়তা লাভ করিতে পারে নাই । ভারতবর্ষের চরম ও সৰ্ব্বাঙ্গীণ বিকাশ হইয়াছিল গুপ্তযুগে। গুপ্ত-যুগকে অন্যান্য দিক দিয়া যেমন স্বর্ণযুগ বলিয়া মনে করা হয়, বৌদ্ধ শিল্পের দিক দিয়াও ইহা সেইরূপ । এই যুগের প্রসিদ্ধ সারনাথ বা স্বলতানগঞ্জের বুদ্ধমূৰ্ত্তি দেখিলে স্পষ্টই মনে ভয় এত দিন পরে ভারতবর্ষ তাহার শিল্পী আত্মার চরম বিকাশ দেখাইয়াছে। গান্ধার-যুগের সৌন্দর্য্যচর্চা, কুষাণ-যুগের স্থূলতা পার হইয়া বৌদ্ধ শিল্প এখন ভারতীয় শিল্পরীতির প্রধান ও শেষ লক্ষ্য যে ধ্যানময়ত তাঙ্গ প্রকাশ করিতে পারিয়াছে । সুডৌল গড়নের সঙ্গে এই ধ্যানপরতা যোগ হওয়াতে শিল্প তাহার উচ্চতম লক্ষ্যে পৌছিয়াছিল। পূৰ্ব্বে ভাস্কর্য্যের চর্চা বেশী ছিল, এই যুগে চিত্রশিল্পও উহার সঙ্গে সমানে পা ফেলিয়া চলিয়াছে দেখা যায়, যেমন অঞ্জণ্টায়। ইহা সম্পূর্ণ ভারতীয় এবং ইহার প্রভাব বহুদূরব্যাপী হইয়াছিল। বুদ্ধমূৰ্ত্তি আলোচনা করিতে হইলে আমাদিগকে এই গুপ্ত-যুগের ভারতীয় মূৰ্ত্তিকে আদর্শ ধরিয়া অন্যান্য দেশের ও কালের মূৰ্ত্তিগুলির বিচার করিতে হইবে। দেশবিদেশের সকল শিল্পীই মহাশ্রমণের মূলভাব ফুটাইবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু গুপ্ত-যুগের শিল্পীর হাতে বুদ্ধমূৰ্ত্তিতে যে দেহ ও ভাবগত পরিপূর্ণতা সাধিত হইয়াছিল তাহা আর কোন সময়েই হয় নাই। এই যুগের বুদ্ধমূৰ্ত্তির م প্রধান লক্ষণ এই যে, ইহাতে আড়ম্বর নাই, খুটিনাটি ও পরিচ্ছদ পারিপাট্যের দিকে দৃকপাত নাই, এমন কি পরিচ্ছদ এমন স্বচ্ছ যে উল গায়ের সহিত লাগিয়া আছে, কিন্তু যাহা শিল্পের প্রাণ তাহা এমন ভাবে ফুটিয়াছে ধে ইহা হইতে উচ্চতর ও মুন্দরতর অথচ অনায়াসকৃত আর কিছু ভাবা যায় না। দেহ ও আত্মার মহামিলনের এরূপ নিদর্শন পৃথিবীর অন্যত্র দেখা যায় না। ইহার পর ভারতের নানা প্রদেশে বৌদ্ধ শিল্পের চর্চা হইয়াছিল। কিন্তু ব্রাহ্মণ্য প্রভাব বেশী হইতে থাকায় বৌদ্ধ শিল্প সৰ্ব্বত্র পরিপুষ্ট হইতে পারে নাই। পাল-যুগে গৌড়-মগধে একটি নিজস্ব ধারা চলিয়াছিল । এই ধারায় বোধ হয় বুদ্ধমূৰ্ত্তি অপেক্ষ বৌদ্ধ দেবদেবীর মূৰ্ত্তির দিকে বেশী ঝোক দেওয়া হইয়াছিল । ভারতের বৌদ্ধ শিল্প শুধু ইহার সীমানার মধ্যেই আবদ্ধ থাকে নাই। ইহা ভারতের বাহিরে উত্তর, পশ্চিম, পূৰ্ব্ব, দক্ষিণ সকল দিকেই ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। যে-দেশে শিল্পের চর্চা ছিল না সে-দেশে ইহা শিল্পের জন্মদান করিয়াছিল, যে-দেশে ছিল সেখানে ইহা নূতন ও উন্নত আদর্শ স্থাপন করিয়াছিল। গান্ধার-যুগের সময় হইতেই বৌদ্ধ শিল্প আফগানিস্তান ও মধ্য-এশিয়ার পথে চীনের দিকে অগ্রসর হইয়াছিল । বহু পণ্ডিতের বহু বৎসরের অক্লান্ত চেষ্টায় এখন বামিয়ান, কাসগড়, কুচ, করাশহর, তুরফান, খোটান, মিরণ, এমন কি সীস্তান ও দণ্ডান-উইলিক প্রভৃতি স্থানে বৌদ্ধ শিল্পের নিদর্শন আবিষ্কৃত হইয়াছে । বৌদ্ধশিল্প যে এই সব স্থানের আত্মাকে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল তাহার প্রমাণ ইহা হইতেই পাওয়া ধায় যে, প্রথম প্রথম গান্ধার শিল্পের গ্রীক ধরণ-ধারণ অমুকুত হইলেও পরে উহাদের নিজেদের অন্তর হইতে একটা নিজস্ব শিল্পধারা উৎসারিত হইয়াছিল । পরে আমরা দেখিতে পাই তুকিস্তানে বুদ্ধকে আর গ্রীক পোষাকে সজ্জিত করা হয় নাই—তাহীদের নিজেদের পোষাক দিয়াছে। ভারতীয় লক্ষণযুক্ত মূৰ্ত্তি বা চিত্রও এই সব অঞ্চলে দেখা যায় । মধ্য-এশিয়ার শিল্পধারা চীনকে প্রভাবিত করিয়াছিল । চীনের সর্ব-পশ্চিম প্রান্তে টুন-হুয়াঙ্গে বৌদ্ধগুহা আবিষ্কৃত