কাৰ্ত্তিক কবি মনোহর দাস משא হিসাবের অঙ্কপাত তাহাতে করিবে কোন বেরসিক ! কাজেই অপটু মনোহরের পিতৃবৃত্তিটুকু বজায় রহিল না। উমা পাকা গৃহিনীর মত বলিল, “বাবার শ্রাদ্ধে সবই তো খরচ করলে, সংসার চলে কিসে ? মনোহর দাস নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিলেন, “সে তুমি জান আর জানেন ভগবান ।” আট বছর বয়স হইতে যাহাকে সংসার চিনাইবার জন্য মনোচরের পিতা কত দিন পরিশ্রম করিয়া আসিয়াছেন, সে ভগবান ভরসা করিয়া ভক্তি গদগদ চিত্ত হইবে কোন সাধনায় ? মুখের রেখা কয়টি তাহার চক্ষুর দৃষ্টর সঙ্গে কঠিন হইয়া উঠিল। ঈষৎ বেগের সহিত উমা উত্তর দিল, ‘হু, তা না হ’লে আর পুরুষ বলেছে কেন। উপায় করব আমি !’ মনোহর দাস শিস দিয়া গান ধরিলেন, "আমায় দে মা তবিলদারী—’ “থাম, লজ্জা করে না।’ হাহা করিয়া হাসিয়া মনোহর দাস বলিলেন, ‘লজ্জা ! লজ্জা কিসের !" পরে মুরে বলিলেন, বলো বলে ননfনদী বলে নাগরে, ডুবেছে রাই রাজনন্দনী কৃষ্ণ-কলঙ্ক-সাগরে । রাগ করিয়া উমা চলিয়া গেল, মনোহর দাস থাভা খুলিয়া বসিলের। কিন্তু থাত খুলিয়া তিনি হিসাব দেখিতেই বসিলেন। নীরস কঠিন অঙ্ক, মনোহর দাস ঘামিয়া উঠিলেন। ইচ্ছা হইল, এক বfর নদীর ধারে বেড়াইয়া আসেন । কাছেই নদী। এ-পারের নিম্ন বালুতট ঝাউবনের সীমানায় মাথা রাখিয়াছে, ঘাসের উপর ছলছলfং শব্দে জলতরঙ্গ বাজিতেছে। মনোহর দাস ধূসর আকাশের পানে চাহিলেন । আশ্চর্যা, সেপানে কবিতা লেখার কোন উপকরণ নাই, নীরস অঙ্কের বৃহে রচনা করিয়া গৃহিণী উমার সংসার ক্রমশ দুষ্প্রবেশু হইয়া উঠিতেছে । বিভ্রান্ত মনোহর আর বার চাহিলেন নদী তরঙ্গের পানে বাধাইৗন অসংথ্য ঢেউয়ে নদী অবাধে বহিয়া চলিয়াছে। না, এখানেও দুরূহ উমার দুষ্প্রবেশু সংসার। সন্ধ্যাদীপ জালিবার সঙ্গে সঙ্গে মনোঃপু দাস গৃঙ্গে ফিরিলেন। কিশোরী উমা মান করে নাই, হাসিমুখে সন্ধ্যাদাপ হস্তে মনোহরের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল। স্নিগ্ধ কল্যাণী মূৰ্ত্তি। চোখে মুখে আসন্ন রাত্রির প্রসন্নত, দেহভঙ্গিতে রাত্রির রহস্তের অনেকখানি ধরা পড়ে। মনোহয় তাহার আঁচল টানিয়া হাসিমুথে বলিল, “কি গো কল্যাণী ? খিল খিল করিয়া হাসিয়া উমা বলিল, "এক বেলায় এত ভুল ! কল্যাণী নয়, উমা ? অঞ্চলের আড়াল অস্তৰ্হিত হওয়াতে দমকা বাতাসে প্রদীপ নিবিয়া গেল । মনোহর দাসের বাহুবন্ধনে বাধা পড়িয়া উমার আর তুলসীতলায় যাওয়া হইল না। উমার সংসারে মেঘরৌদ্রের খেলা কিন্তু বেশী দিন চলিল না। মনোহরের বিষয়ুবুদ্ধিতে ঘা দিয়া উমা কূটবুদ্ধি সাংসারিক মনোহরকে সংসার অঙ্গনে দাড় করাইতে পারিল না । তিনটি বৎসরের অক্লাস্ত পরিশ্রম উমার ব্যর্থ হইয়া গেল । সংসারে মনোহর দাস পা দিলেন না । কিন্তু কবিতাও তো মনোহর এই তিনটি বংসরে বেশী লিখিতে পারেন নাই। নাতিবৃহৎ খাতাথানির অৰ্দ্ধেকের উপর পাতাগুলিতে কালির রেখা নাই ; বাহিরের কোন : ব্যক্তিকে শুনাইবার জন্যও তিনি খেয়ালের ছন্দ সাজাইয়া বসেন নাই । যেদিন সংসারের চক্রে তৈলাভাব ঘটিত, উমার মূথ ভার ও নিজের অৰ্দ্ধাশনে কুটীরের চারি দিকে বিষন্ন গম্ভীর হাওয়া নামিত, সেই দিনই উমাকে প্রফুল্প করিবার জন্য মনোহর দাস খাতা খুলিয়া বসিতেন। বলিতেন, ‘শোন উমা, কেমন লিখেছি।” প্রথমটা র:ণ, কিছু অমনোযোগ এবং সর্বশেষে পরম মুগ্ধার মত মনোহরের কবিতা শুনিতে শুনিতে উমা প্রশ্ন করিত ‘তার পর, তার পর ? ‘তার পর নেই, উমা।’ উমা প্রফুল্ল মুখে বলিত, ‘এমন স্বন্দর তুমি লেখ! ‘খুব স্বন্দর লাগে, উমা ? মনোহর দাসের মুখ r="~ ঞ্জল হইয়া উঠিভ। 'এক কাজ কর না কেন গো । লেখ, পয়সা হবে-নাম হবে।’ -শতরেব মাশন ঔজ্জ্বল্য নিম্প্রভ হষ্টয়া উঠিত, তিনি যাত্রীর পালা
পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।