পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१३ দুৰ্ব্বৎসরের কিছু ধার শোধ আছে—মহাজনের কাছ থেকে কবে যে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। অতএব, নন্দ বুঝে দেখলে, চিকিৎসা এবং আনুষঙ্গিক ওষুধের দাম কোথাও পাচ্ছে না সে। বুড়ো শ্রীনাথের বাপের মত দিনে দিনে তিলে তিলে মরতেই হবে তাকে । আমরণ সংসারের চাকা নানান দুর্ভাবনায় আরও কষ্টেশ্বষ্টে ঠেলতে হবে তাকে । মনে মনে বিদ্রোহী হয়ে উঠল নন্দ,—না আর সে পারে না। অস্বখ হয়েছে তার—আর সে পারে না। এখনও বারুণী, ভুলো তার দিকে তাকিয়ে আছে কেন ! ডুবে মরলে কেমন হয় । নন্দ ভাবলে, নন্দ ডুবল। কিন্তু এক সঙ্গে অনেক কিছু মনে পড়ে গেল তার ব্যক্তিগত দুঃখ ছাপিয়ে ; বহু পরিচিত গ্রামের আনাচ-কানাচ, গ্রামের অনেক চেনা মুখ আর অনেক দিনের বারুণী, সে হয়ত ভাত বেড়ে ব’সে আছে—আর ভুলে ধূলিধূসর–খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত মাটিতেই, ভাঙা ভাড়, ফুটো ফুল-লতাপাত, রং-চটা কাঠের পুতুলটা পড়ে আছে তার পাশে— স্থাপিয়ে উঠে পড়ল নন্দ । জলের নীচের কল্পনার গ্রাম দিনের কড়া আলোয় বহুদূর থেকে বহুদূরে নিঃশব্দে পড়ে আছে, তাকিয়ে তাকিয়ে নন্দর চোখে জল এল। সব থাকবে শুধু তাকেই চলে যেতে হবে। বুড়ে স্ত্রনাথের ঘরে তৈরি কড়া তামাক আর তার সঙ্গে বহু দুৰ্ব্বৎসরের বহুবার শোনা ইতিহাসের প্রচও আকর্ষণ হঠাৎ কমে গেল আজ তার । ঘর ছেড়ে আজ আর কোথাও যেতে ইচ্ছে হ’ল না নন্দর । ভারি এক মনে হ’ল তার। সকলের মাঝখানে ভারি এক লে— আর সবাই আনন্দে মেতে যেন তাকে অবহেলা করে । সন্ধ্যে উৎরে গেল । ভূলো ঘুমিয়ে পড়েছে মাটিতে, তার জন্তে বারুণীকে একটু বকে দিলে নন্দ । তার পর নিজেই ভুলোকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুষ্টয়ে দিতে চলল। বকুনি খেয়ে বারুণী পেছন থেকে উলটে বিদ্রপ করলে নন্দর এই হঠাৎউথলে-ওঠা দরদ নিয়ে । বলুক বারুণী। পৃথিবীর তুচ্ছতম কাজটিও যেন 猶 ●वांजौ • Seges নন্দের জন্তে আঞ্জ বাকী পড়ে আছে। সে জাজ ঘন হয়ে মিশে যেতে চায় সকলের সঙ্গে—সকল কাজের অন্তরালে । কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে গেল ডাক্তারের সাবধান-বাণী জার শ্ৰীনাথ বুড়োর সশস্ক ঘোলাটে চোখ ; ঘুমন্ত ভূলোর মুখটা যে খুবড়ে আছে তার বিষাক্ত কীটদষ্ট বুকটার উপরে ! নন্দর বেষ্টন থেকে ধপ ক’রে ভূলো পড়ে গেল আর গলা ফাটিয়ে চীৎকার ক’রে উঠল । বকতে বকতে বারুণী রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এল । বললে, দিলে ছেলেটাকে আছড়ে তো ? দেখ দিকিন এখন আমি ওকে থামাই, না রাধতে যাই । সব সময় এমন জালাতন কর—তুমি বেরোও ঘর থেকে । রাগে আর হাসিতে অপূৰ্ব্ব স্বন্দর হয়ে উঠল বারুণী । নন্দ শুধু একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ভূলোকে তুলে নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল বারুণী-নন্দ দরজার কাছে ব’সে তেমনি ক’রে তাকিয়ে রইল নিনিমেষে 2 বারুণী আড়চোখে যত বার দেখলে তত বারই । তার পর ঠোট চেপে হেসে অনাবৃত পিঠটা চেড়া শাড়ীর আচল দিয়ে ঢেকে দিলে বারুণী, নন্দ তবু তাকিয়ে আছে তার দিকে তবু । অসহায় বারুণীর সমস্ত আবরণ যেন তুচ্ছ হয়ে গেল । ভীরু একটা লজ্জা—স্বতঃ উৎসারিত কেমন একটা মুখাম্বভূতিতে চোখ বুজে মাথা নীচু করে দুষ্ট, ভুলোকে ধমকাতে গিয়ে তার মুখে মুখ চেপে ধরল বারুণী। তরল অাদরে আর কোমলতায় কথাগুলি ওর স্পষ্ট হ’ল না—ফিস্ ফিস্ ক’রে বললে –না, দস্ত্যিপনা . করে না। ওই তার কোলে গিয়ে লক্ষ্মী বাবুর মত ঘুমিয়ে পড় তখন তুলে খাওয়াব । কেমন ? কিন্তু তুলোকে ঠেলে দিয়ে নন্দ চীৎকার ক’রে উঠল । যে গালাগালি দিলে নন, বারুণীর তা অকারণ মনে হ’ল । তার পর আবার খাওয়ার সময় তুলোকে নন্দর পাতে বসাতে গিয়ে প্রচণ্ড ধমক খেলে বারুণী, কিন্তু নম্বর এই নূতন মেজাজের কোন কারণ খুজে পেলে না বারুণী । তৰু মলিন হয়ে গেল কোন অজ্ঞাত অপরাধের ভয়ে । রাত্রির মত সমস্ত গৃহকাজ এক সময়ে শেষ হ’ল বারুণীর। নন্দ অকাতরে ঘুমোচ্ছে। ভুলে শুয়েছে