প্রাগৈতিহাসিক ড্র্যাগলের বর্তমান বংশধর 63. গোসাপ আঙ্গারান্বেষণ কবিতেছে ডোরা কাটা । দিবসের অধিকাংশ সময়ই ইহারা নালড়োবা অথবা এদো পুকুরের মধ্যে শিকারান্বেষণে ঘুরিয়া বেড়ায় । ইহাদের উজ্জল বর্ণবৈচিত্র এবং বিশাল আকুতি দর্শনে প্রাণে একটা অস্বাভাবিক অস্বাচ্ছন্দোর স্পষ্ট হয়। অথচ ইহাদের স্বভাব মোটেই উগ্র নয় ; সৰ্ব্বদা ভয়চকিত দুষ্ট এবং লোকের দৃষ্ট এড়াইয়া চলিতেই ব্যস্ত। ইহারাই শণ-গুষ্টল’ বা স্বর্ণ-গোধিকা নামে পরিচিত। কোন কোন জাতের লোকেরা ইহাদের মাংস উপাদেয় বোধে ভক্ষণ করিয়া থাকে। চণ্ডিকা-মঙ্গলে ব্যাধ কালকেতুর মাংস সংগ্ৰহাৰ্থ স্বর্ণ-গোধিক শিকারের কথা উল্লিখিত আছে । ইহার সাধারণত: মাছ, জলচর পাখী, জলঢোড়া প্রভৃতি সাপ ও ৮িম খাইয়া উদর পূর্ণ করিয়া থাকে । পাড়াগায়ে লোকেরা মাছ ধরিবার জন্য ঘুণি পাতে। এই উভচর গোসাপের স্থকৌশলে ঘুণির ভিতর হইতে মাছ চুরি করিয়া খায়। মাছ চুরি করিতে গিয়া অতি লোভের ফলে সময় সময় যে বেকায়দায় না-পড়ে এমন নহে । কখনও কখনও দেখা যায়, মামুষের সমান উচু বড় বড় ঘুণিতে এই গোসাপ আটকা পড়িয়া গিয়াছে। অনেক দিন আগের একটা ঘটনার কথা মনে পড়িতেছে । জঙ্গলের পাশ্ববৰ্ত্তী একটা ডোবার জলে ঝাপটা-ঝাপটির শব্দ শুনিয়া কয়েক জন ছুটিয়া গেলাম। ডোবার উপর অনেকগুলি ধেতের গাছ কুইয়া পড়িয়াছে। তাহীদের কতকগুলি কণ্টকাকীর্ণ স্বদীর্ঘ আঁকড়া লম্বা চুলের গোছার মত এক স্থানে জলস্পর্শ করিয়া ঝুলিতেছিল। মাঝারি আকৃতির একটা স্বর্ণ-গোধিক কেমন ক্ষরিয়া যেন সেই আঁকড়ার গোছার অগ্রভাগ গিলিয়া ফেলিয়। বড়শীর মত গাথিয়া গিয়াছে। যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া ব্যর্থ আক্রোশে সে তাহার বিরাটু লেজের আস্ফালনে জল তোলপাড় করিয়! ফেলিতেছিল। লোকসমাগমে ভীত হইয়া সে আরও প্রবল বেগে ঝাপটা-ঝাপটি সুরু করিয়া দিল এবং তাহার ফলে ক্রমশঃ নিজীব হইয়া প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রাণত্যাগ করিল। অতুসন্ধানে জােনা গেল, কেহ একটা কর্তিত পার্থীর পালক ও পরিত্যক্ত চৰ্ম্ম ন্যাকড়ার পুটুলি করিয়া ঐ স্থানে ছুড়িয়া ফেলিয়াছিল। খুব সম্ভব সেটা বেতের আঁকড়ায় আটকাইয়া যায় এবং সেই পুটুলি গিলিতে গিয়াই গোসাপটার ঐরুপ দুর্দশ ঘটিয়াছিল। আমাদের দেশে চার-পাচ ফুট লম্বা ধূসর বর্ণের স্থলচর গোসাপই বেশী দেখিতে পাওয়া যায় । ইহারা সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্য্যস্ত সারাদিন আহারান্বেষণে বনে-জঙ্গলে ঘুরিয়া বেড়ায় এবং পায়ের ধারালে নখের সাহায্যে স্থানে স্থানে মাটি খুড়িয়া কেঁচো, পোকামাকড়, সাপ - প্রভৃতি ধরিয়া খায় । সাপের ইহার ভয়ানক শত্রু। কোন এক পাড়াগায়ে এক বার ইহাদের সপ-শিকার প্রত্যক্ষ করিবার সৌভাগ্য ঘটিয়াছিল। একটা বাগানের পাশ দিয়া যাতায়াতের রাহা আঁকিয় বাকিয়া চলিয়া গিয়াছে। গোসাপের লড়াই
পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।