পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক পাকা-দেখা Գ2, গোটাকতক রসগোল্ল| নামিয়ে দিন না গলা দিয়ে ; জিনিষটা চমৎকার হয়েছে, কষ্ট হবে না ।” কর্তার ইসারায় এক জন তাড়াতাড়ি গোরাচাদের জন্য রসগোল্লা আনিতে গেল । ঘোংনা ততক্ষণ চুচুড়ার বৃষ্টি সম্বন্ধে একটা কাটান খাড়া করিয়াছে, বলিতে যাইবে এমন সময় যে ছেলেটি রসগোল্লা আনিতে গিয়াছিল, ভীত সন্ত্রস্তভাবে বাহির হইয়া আসিয়া কতৰ্ণ ও ত্রিলোচনকে বলিল, “আপনাদের ডাকছেন বাড়ীতে একবার, শীগগির আস্থন।” ぐ。 তাহার পিছনে পিছনে ফ্রস্তগতিতে বাড়ীর মধ্যে উভয়ে প্রবেশ করিল । ছোট ছেলেমেয়েগুলি এবং আরও সবাই তাতাদের অতুসরণ করিল ৷ চারি জনে ভীতভাবে মুখ-চাওয়াচাওয়ি করিতেছিল, এমন সময় একটি ছোকরা ছুটিয়া আসিয়া বুদ্ধকে বলিল, “আপনাকে ডাকছেন বড়কাক’-শীগগির।” বৃদ্ধ উদ্বিগ্নই ছিলেন, উঠিতে উঠিতে বলিলেন, “তাহ’লে এরা ..?” ঘোংনা তাড়াতাড়ি বলিল, “আপনি যান, আমাদের জন্য চিন্তা নেই ।” গোরাচাদ বলিল, “আমরা তো আর পর নয়।” বুদ্ধ চলিয় গেলে গোরাচাদ ফিসফিস্ করিয়া বলিল, “ধ’রে ফেললে না তো রাজেনকে ?” আর সব বাদ দিয়া তাড়াতাড়ি সবচেয়ে বড় ল্যাংড়া আমটায় নাক পৰ্য্যন্ত ডুবাইয়া একটা কামড় দিল । ঘোংলা বিরক্তির সহিত গনশার পানে চাহিয়া বলিল, “এই জন্যেই বারণ করেছিলাম—ওর আবার একটা পিসীমা না ঢুকিয়ে চলল না। এখন নাও পিসীম !" ঘরটা অন্দর থেকে একটু আলাদ, তবু চাপা সম্বন্ত কণ্ঠস্বর ভাসিয়া আসিতেছে। একটা গুরুতর কিছু ষে হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই । গনৃশ। বলিল, “রাজু ধরা পড়লে তো এতক্ষণ মী-স্মার আর কান্নার শব্দ আসত।... ক-ক্কনের ফিট হয়ে যায় নি তো ?” ঘোংনা সেইরূপ বিরক্তির সহিতই তাহার পানে চাহিয়া বলিল, “তোকে দেখবার আগেই ?” ক্রমাগতই থাবা খাইয়া গনশা কি একটা বলিতে যাইতেছিল, এমন সময় ত্রিলোচন চক্ষু ছানাবড়া করিয়া ঘরে ঢুকিয় ঘাড়টা ডাইনে কাং করিয়া একটা টুস্কি দিল। সকলে একসঙ্গে প্রশ্ন করিল, “কি ব্যাপার ?” “রাজু সটকেছে!” একটা চাপা ভয়ের শব্দ করিয়া তিন জনেই উঠিয়া পড়িল । গোরাচাদ একটা আম হাতে করিয়া চৌকাঠের বাহিরে পা দিয়াছে, ত্রিলোচন বলিল, “তোরা সব উঠলি কেন ? ওরা চুচড়োর বৃষ্টির কথা নিয়ে সন্দেহ করছিল বটে, আমি সামলে এসেছি কতকটা ; বললাম, একটু পাগলাটে পাগলাটে ছিলই যেন, একটু খুঁজুন ভাল ক’রে আগে P•••আর সত্যি, গোরার সেই 'মাথাগরমের’ কথা বলা থেকে সর্বদা ও-বেচারার কাছে যেমন এক জন না এক জন সরবতের গেলাস নিয়ে ঘুরছিল, তাতে স্বস্থ মাতুষই পাগল হয়ে যায়। -- ওরা পাগলাটে মেয়েকে সামলে রাখতে পারে নি ব’লে যেন ফাপরে পড়েছে—আমায় বললে, “আমরা ততক্ষণ খুঁজছি চারি দিকে, তুমি বাবাজী ভদ্রলোকদের দেখ তো একটু ৷ ” গোরাচাদ এদিকে কান ও বাহিরের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া শুনিতেছিল, ফিরিয়া পা বাড়াইতেই ত্রিলোচন অতিমাত্র বিস্মিত হইয় প্রশ্ন করিল, “গোরা তোর গোফ ?” এরা তিন জনেই বলিয়া উঠিল, “সত্যি ! তোর বাটারফ্লাই গোফ কোথায় রে ?--সারলে দফা ” গোরাচাদ মুখের উপর দৃষ্টিপাত করিয়া হতভম্ব হইয়া রহিল, বলিল, “তাই তো, গোফ !” খোজ-খোজ •• ত্ৰিলোচনকে বাড়ীর দিকে পাহারা দিতে বলিয়া ইহারা গোফের খোজে লাগিয়া গেল –আসনের চারি ধার, ষেপথ দিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়াছে•••গোফের দেখা নাই! গোরাচাদ এক-এক বার নাকের নীচে হাত ফুলাইয়া হাতটা দেখিয়া বলিতেছে, “তাই তো ” শূন্ত ওষ্ঠ, শূন্ত করতল কোনটার সাক্ষ্য যেন সে বিশ্বাস করিতে পারিতেছে না।