পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] কথা যখন উঠল, নিজের অভিজ্ঞতার কথাটা বললে আশা করি কেউ দোষ নেবেন না। কিছু দিন পূৰ্ব্বে একটি প্রবন্ধে সংবাদ পাওয়া গেল, আমার কবিতায় সত্ব, রজঃ এবং তম, এই তিন গুণের মধ্যে রজোগুণটাই সাহিত্যিক ল্যাবরেটরিতে অধিক পরিমাণে ধরা পড়েচে । এরকম তাত্বিক কাকুক্তি প্রমাণ করা যায় না, কিন্তু অস্পষ্ট বলেই সেটা শুনতে হয় খুব মস্ত। এসব কথা ড:রী ওজনের কথা । আমাদের শাস্ত্ৰ-মানা দেশে এতে করে লোকেও স্তম্ভিত হয় । আমার আপত্তি এই যে, সাহিত্য-বিচারে এসব শব্দের কোনো স্থান নে । তবু যদি গুণের কথা উঠলই, তাহলে একথা মানতেই হবে আমি ত্রিগুণাতীত নই, দ্বিগুণাতীতও নই, সম্ভবত সাধারণ মামুষের মতো আমার মধ্যে তিনগুণেরই স্থান আছে। নিশ্চয়ই আমার লেখার কোথাও দেখা দেয়, তম, কোথাও বা রজ, কোথাও বা সত্ত্ব। পরিমাণে রজটাই সব চেয়ে বেশি, একথা প্রমাণ করতে ধারা কোমর বাধেন তারা এ-লেখা ও-লেখা, এ-লাইন ও-লাইন থেকে তার প্রমাণ ছেটে কেটে আনতে পারেন। আবার যিনি আমার কাব্যকে সাত্ত্বিক বলে প্রমাণ করতে চান তিনিও বেছে বেছে সাত্ত্বিক লাইনের সাক্ষী সারবন্দী করে দাড় করাতে ঘদি চান মিথ্য সাক্ষ্য সাজাবার দরকার হবে না। কিন্তু সাহিত্যের তরফে এ তর্কে লাভ কী ? উপাদান নিয়ে সাহিত্য নয়, রসময় ভাষা-রূপ নিয়েই সাহিত্য। ম্যাকবেথ নাটকে তমোগুণ বেশি কিন্ধা রজোগুণ বেশি কিম্বা সাংখ্যদর্শনের সবগুণেরই তাতে আবির্ভাৰ কিম্বা অভাব, একথা উত্থাপন করা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। তাত্বিক যে কোনো গুণই তাতে থাক বা না থাকৃ, সব স্থদ্ধ মিলে ঐ রচনা একটি পরিপূর্ণ নাটক হয়ে উঠেচে। প্রতিভার কোন মন্ত্রবলে তা হোলো তা কেউ বলতে পারে না। স্বটি আপনাকে আপনিই প্রমাণ করে, উপাদান বিশ্লেষণ দ্বারা নয়, নিজের সমগ্র সম্পূর্ণ রূপটি প্রকাশ ক’রে । রজোগুণের চেয়ে সত্ত্বগুণ ভালো, এ নিয়ে মুক্তিতত্ত্ব ব্যাখায় তর্ক চলতে পারে, কিন্তু সাহিত্যে সাহিত্যিক ভালো ছাড়া অন্ত কোনো ভালো নেই। সাহিত্য-বিচার ১৩৩ কাটা গাছে গোলাপ ফোটে, এটাতে বোধ করি রজোগুণের প্রমাণ হয়। গোলাপ গাছের প্রকৃতিটা অস্ত্রধারী, জগতে শক্ৰ আছে একথা সে ভুলতে পারে না। এই সন্দেহচঞ্চল ভাবট সাত্বিক শাস্তির বিরোধী, তবুও cशालाश्रृंरक फूल श्निारद निम कब्र बांग्र नl ? 'नकफेक অতিশুভ্র ব্যাঙের ছাতার চেয়ে সে যে রমণীয়তায় হেয়, একথা তত্ত্বজ্ঞানী ছাড়া আর কেউ বলবে না। ভূঁইচাপা ওঠে মাটি ফুড়ে, থাকে মাটির কাছে, কিন্তু ফুলের সময়দার এই রজো বা তমোগুণের লক্ষণটা স্মরণ করিয়ে তাকে সাংখ্যতত্ত্বের শ্রেণীভুক্ত করবার চেষ্টা করে না । আমার কাব্য সম্বন্ধে উপরিলি:পত বিশেষ তর্কট বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের সাহিত্য-সমালোচনায় যে দোযট। সৰ্ব্বদা দেখতে পাওয়া যায় এটা তারি একটা নিদর্শন। আমরা সহজেই ভুলি যে জাতিনির্ণয় বিজ্ঞানে, জাতির বিবরণ ইতিহাসে, কিন্তু সাহিত্যে জাতিবিচার নেই, সেখানে আর সমস্তই ভুলে ব্যক্তির প্রাধান্ত স্বীকার করে নিতে হবে। অমুক কুলীন ব্রাহ্মণ, এই পরিচয়েই অতি অযোগ্য মানুষও ঘরে ঘরে বরমাল্য লুটে বেড়াতে পারে, কিন্তু তাতে ব্যক্তি হিসাবে তার যোগ্যতা সপ্রমাণ হয় না । লোকটী কুলীন কিনা কুলপঞ্জিকা দেখলেই সকলেই সেটা বলতে পারে, অথচ ব্যক্তিগত যোগ্যতা নির্ণয় করতে যে সমজদারের প্রয়োজন তাকে খুজে মেলা ভার। এই জন্তে সমাজে সাধারণত শ্রেণীর কাঠামোতেই মানুষকে বিভক্ত করে ; জাতিকুলের মধ্যাদা দেওয়া, ধনের মধ্যাদা দেওয়া সহজ । সেই বিচারেই ব্যক্তির প্রতি- সৰ্ব্বদাই সমাজে অবিচার ঘটে, শ্রেণীর বেড়ার বাইরে যোগ্যব্যক্তির স্থান অযোগ্যব্যক্তির পংক্তির নীচে পড়ে। কিন্তু সাহিত্যে জগন্নাথের ক্ষেত্র, এখানে জাঙির খাতিরে ব্যক্তির অপমান চলবে না। এমন কি, এখানে বর্ণসঙ্কর দোবও দোষ নয় ; মহাভারতের মতোই উদারতা,— কৃষ্ণদ্বৈপায়নের জন্ম-ইতিহাস নিয়ে এখানে কেউ তার সন্মান অপহরণ করে না, তিনি তার নিজের মহিমাতেই মহীয়ান। অথচ আমাদের দেশে দেবমন্দির প্রবেশেও ধেমন জাতিবিচারকে কেউ নাস্তিকতা মনে করে না,