bア>8 প্রবাসী—চৈত্র, ১৩৩৬ [ ২৯শ ভাগ, ২য় খণ্ড , অভিভূত করে দিলে। আমার যদি তখন মনে হ’য়ে থাকে ধে, আমার ধ্যানের দেবী—আমার স্বপ্লেব মায়াপুরিকা মুষ্টি পরিগ্রহ করে নেমে এসেছে—শুধু আমারই সোনার কাঠির স্পশটুকুর অপেক্ষ-ত তাতে কিছু আশ্চৰ্য্য হবার নেই। আর কোনো সময়ে এবং অন্ত কোন বাড়ীতে এ সামান্ত দৃশুটুকুর মধ্যে কিছু নুত্তনত্ব পাওয়া ধেত না ; কিন্তু ভবানীপুরে, সেই নিঝুম দুপুরে, সেই পরিপাটি, স্থবিন্যস্ত অথচ বিসদৃশভাবে জনহীন বাড়ীর শুধু একটিমাত্র ঘরে একটি নিদ্রিত নারীর সেরূপ হঠাৎ আবির্ভাব,—এতে আর অন্য রকম ধারণার অবসরই ছিল না—বিশেষ ক’রে আমার মনের সে-সময়ের অবস্থায় । মাথার মধ্যে বন্ধুর ঠাট্টাচ্ছলে-বলা কথাটাও ঘনিয়ে ঘনিয়ে উঠছিল—“মালীর মতে ওটা ‘তানাদের’ নীলেভূমি —যাদের বল অশরীরী আত্মা, তাদের।” সকলের ওপরে ছিল বোধ হয় ও-বাড়ীর মালীর ওরকম নির্লিপ্তভাবে ফটক বন্ধ ক’রে চলে যাওয়া ; যাতে ক'রে মনে হ’ল তা'র সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারেই বাড়ীটার মধ্যে একটা কাও ঘটে চলেছে।—প্রদীপের ধৰ্ম্মে রাজকল্পার শয্যা যে স্বরক্ষিত রাজপুরীর মধ্যে থেকে উঠে গিয়ে অন্তর দাখিল হ’ত, এ-ঘটনাটি যেন ঠিক সেই জাতীয় । নিৰ্ণিমেঘ চোখে চেয়ে রইলাম। ক্রমে আমার সমস্ত শরীর মন যেন একটিমাত্র স্বতীব্র আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত হ’য়ে উঠল । রাস্তা দিয়ে তীক্ষ্ণ হর্ণ দিয়ে একটা মোটরগাড়ী চ'লে গেল –পাশের বাড়ীর ঝি খুব আড়ম্বরের সঙ্গে বাসন মাজতে স্বরু ক’রে দিয়েছে – পরিচিত সেই শিক্ষানবীশের ক্ল্যারিয়োনেটের কল্লোল উঠল—আজ অসময়েই। ভবানীপুর আমার এই যুগ এবং এই পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্তে অশেষ চেষ্টা করতে লাগল। কানে যাচ্ছিল সব, কিন্তু ওই দুখানি ক্ষুদ্র চরণ যুগাতীত লোক্যতীত কি এক মোহ বিস্তার করে আমায় অমোঘ আকর্ষণে সব থেকে টেনে নিতে লাগল। কোথায় গিয়ে দাড়ালে আমার মোহিনীকে সমগ্রভাবে দেখা যায়, নির্ণয় করবার জন্তে চটিজুতাট পায়ৈ দিয়ে উঠতে যাব, এমন সময় বন্ধুবর এসে উপস্থিত। হাতে একটা ষ্টেটসম্যান, বললেন—"ওহে, ওদিকে আফগানিস্থানের খবর যে গুরুতর হয়ে উঠল ; বাচ্চ-ই-সাঙ্কাও...... ও কি ! আজি তোমার স্তব্ধপুরীর জানাল খোলা ষে — যাক, বাচা গেল ; তবে লোক এসেছে। কি জান ? লোক নেই জন নেই অথচ সেজেগুজে ফিট্ফাটু হ’য়ে রয়েছে, এরকম বাড়ী যতসব কুসংস্কারের জন্মদাতা । আমি ঐ নিয়ে আজকাল একটু মাথা ঘামাচ্ছি কিনা। সেদিন বল্লাম না তোমায় মালীর কথাটা ?... ---” বন্ধুর সেদিন অবসর ছিল,—বিকাল পর্য্যস্ত নানারকম গল্প চলল। দিন বুঝেই কি অবসর হতে হয় ? কয়েক দিন একলা আছি । ডাক্তার দূর মফঃস্বলে একটা ‘কলে গেছেন। একলা আছি শরীরে —মনটা একটা অপূৰ্ব্ব রাঙ্গে বিচরণ করছে। সে-রাজ্যের স্বষ্টিকেন্দ্ৰ দুখানি চরণ, কিন্তু সেই অল্পকেই আশ্রয় ক’রে কত হাসি-কান্না ভাঙাগড়ার লীলা দিনরাত বয়ে চলেছে------ - # রজনী আমার কোন এক বিচিত্র প্রবাস-বিলাসে কাটে। ভোরে, জাগরণের সঙ্গে যখন ফিরে আসি, দেখি জানলা দুয়ার সব বন্ধ,—এই রহস্যপুরীতে প্রবেশের আবেদন নিয়ে দিনের আলো বাইরে অপেক্ষা করছে। আমি ব্যাকুল উদ্বেগ নিয়ে চেয়ে থাকি, আশা হয় এই এখনই জানলা মুক্ত হবে ; দুখানি ভুজবল্লরী জানলার পল্লব দুটিকে মুক্ত করতে করতে আলিঙ্গনের* আকারে প্রসারিত হয়ে পড়বে—আর বাহিরে অপেক্ষমান ' পৃথিবীর আলো, বাতাস, আকাঙ্কা তার পূর্ণ অঙ্গের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে,—সে বর অঙ্গের আভাস দুখানি রাতুল চরণে পাওয়া গেছে। জানল। কিন্তু মুক্ত হয় না। বাড়ীও থাকে নিস্তন্ধ, নির্জন ;-এক সেই বৃদ্ধ মালী ছাড়া। ঘনপল্পবিত বৃক্ষলতার মধ্যে মাঝে মাঝে তা’কে এখানে সেখানে দেখা যায়— শীর্ণ, পলিত-কেশ—মনে হয় যেন হাওয়ার মধ্যে মূর্ত হ’য়ে উঠে আবার মিলিয়ে গেল । مِ ۔ দুপুরে উঠে দেখি পরিচিত জানলাটি খুলে গেছে, " শুভ্র দেওয়াল থেকে ঠিকরে পালঙ্কের পাশভলায়
পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।