পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্জধারা শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্যাণীয়াকু আমাকে অনেকে ভুল বুঝে থাকেন, তুমিও বোধ হয় বুঝেচ । প্রথম কথা, আমি মস্ত কেউ একজন নই ৷ তাতে কিছু আসে যায় না। তোমরা যে-কেউ আমাকে যা মনে করে তার সঙ্গেই আমার কিছু-না-কিছু মিশ খেয়ে যায়। তার কারণ, কিশোর বয়স থেকে আমার মনকে নানাথান ক'রে আমি নানা কথাই বলেচি— এ ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই। স্বামার উপর যদি কেবল এক স্বরের ফরমাস থাকত তাহ’লে সহজে দিন কেটে যেত। যেঙ্গ কোনো সমজদার আমাকে চিনে নিয়েচে ব’লে ইফে ছাড়ে অমনি উলটো তরফের কথাটা ব’লে বসি, লোকে সহ করতে পারে না । আমি নিগুণ নিরঞ্চল নিৰ্ব্বিশেষের সাধক এমন একটা আভাস তোমার চিঠিতে পাওয়া গেল । কোনো একদিক থেকে সেটা হয়ত সত্য হতেও পারে—সেখানে সমস্তই শূন্ত সেখানেও সমস্তষ্ট পূর্ণ-যিনি তিনি আছেন এটাও উপলব্ধি না করব কেন ? আবার এর উণ্টে। কথাটাও আমারই মনের কথা । যেখানে সব-কিছু আছে সেখানেই সবার অভাক্ত সব হয়ে বিরাজ করেন এটাও যদি না জানি তাহ’লে সেও বিস্ম ফাকি । আজ এই প্রৌঢ় বসস্তের হাওয়ায় বেলফুলের গন্ধশিঞ্চিত প্রভাতের আকাশে একট। রামকেলি রাগিণীর গান থাকে ব্যাপ্ত হয়ে,—স্তব্ধ হয়ে একা একা বেড়াই যখন, তখন সেই অনাহত-বীণার আলাপে মন ওঠে ভরে । এষ্ট হ’ল গানের অস্তলীন গভীরভা । তারপরে হয়ত ঘরে এসে দেখি গান শোনবার লোক বসে আছে—তখন গান ধরি, “প্যাল ভর ভর লায়ারি” । সেই ধ্বনিলোকে দেহুমন স্বরে স্বরে মুখরিত হ’য়ে ওঠে, যা-কিছুকে সেই স্থর স্পর্শ করে তাই হয় অপুৰ্ব্ব । এও তে। ছাড়বার জে নেষ্ট । স্বরের গান, না-কুরের গান, কাকে ছেড়ে কাকে বাছব ? আমি দুইকেই স্বীকার ক’রে নিয়েfচ । এক জায়গায় কেবল আমার বাধে । খেলনা নিয়ে নিজেকে ভোলাভে আমি কিছুতেই পারিনে । এট। পারে নিতান্তই শিশুৰধু। সার্থী আছেন কাছে বসে তার দিকে পিছন ফিরে খেলনার বাক্স খুলে বসা একেবারেই সময় নষ্ট কর । এতে ক'রে সত্য অনুভূতির রস যায় ফিকে হয়ে । ফুল দিতে চাও দাও না, এমন কাউকে দাও যে-মার্ক্সব ফুল হাতে নিয়ে বলবে বাং—তার সেই সত্য খুশি সত্য আনন্দে গিয়ে পৌছয়। শিলাইদহের বোষ্টমী আমার হাতে আম দিয়ে বললে, তাকে দিলুম। এই তো সত্যকার দেওয়—আমারষ্ঠ ভোগের মধ্যে তিনি আমটিকে পান । পূজারা ব্রাহ্মণ সকালবেলায় গোলকটাপার গাছে বাড়ি মেরে ফুল সংগ্ৰহ ক’রে ঠাকুরঘরে ধেত—ভার নামে পুলিসে নালিশ করতে ইচ্ছ, করত—ঠাকুরকে ফ্যাক দিচ্চে ব’লে । সেই ফুল আমার মধ্যে দিয়েই ঠাকুর গ্রহণ ক’রবেন বলেই গাছে ফুল ফুটিয়েছেন আর আমার মধ্যে ফুলে আনন্দ আছে । কত মাতুষকেই বঞ্চিত ক'রে তবে আমরা এই দেবতার খেলা থেলি । ঠাকুরঘরের নৈবেদ্যের মধ্যে আমরা ঠাকুরের সত্যকার প্রাপ্যকে প্রত্যহ নষ্ট করি । এর থেকে একটা কথা বুঝতে পারবে, আমার দেবতা মানুষের বাইরে নেই । নিৰ্ব্বিকার নিরঞ্জনের অবমাননা হচ্চে ব'লে আমি ঠাকুরঘর থেকে দূরে থাকি একথা সত্যু ময়-মানুষ বঞ্চিত হচ্চে ব’লেই আমরা নালিশ করি । যে-সেবা যে-প্রতি মানুষের মধ্যে সভ্য ক'রে তোলবার সাধনাই ক’চে ধৰ্ম্মসাধন। তাকে আমরা খেলার মধ্যে ফাকি দিয়ে মেটাবার চেষ্টায় প্রভূত অপব্যয় ঘটাচ্চি ।