পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মাতৃঋণ ૯૨૯ খুলিয়া দিল, প্রতাপকে দেখিয়া মহোল্লাসে চীৎকার করিয়া বলিল, “ঠাকুমা প্রতাপকাক এসেছে, ও ঠাকুম৷ ” প্রভাপ বলিল, “আরে থাম থাম, অত চেচাতে হবে না। পিসিমা কোথায় ?” পিসিমা এই সময় দোতলার সরু বারান্স হইতে মুখ বাড়াইয়া বলিলেন, "এস বাব, উপরেই উঠে এস। কাকু দরজাটা ভাল ক'রে বন্ধ করে আসিস, ষ দিনকাল পড়েছে।” প্রতাপ কাতুকে সঙ্গে করিয়া উপরে উঠিয়া গেল । পিলিমা একখানা মাছর পাতিয়া কাথা শেলাই করিতে বসিয়াছেন, চারিদিকে ছেড়া পাড় এবং রং-বেরঙের স্বভার পুটুলি ছড়ানো। প্রতাপ বলিল, “আপনার ত এখনও বেশ চোখের তেজ আছে দেখি, পিসিম ?” পিসিম বলিলেন, “তা আর থাকবে না বাছ, পাড়ীগেয়ে মানুষ। শহরের ধোয়। আর ধুলো আর বিজলি বাতি এক্ট সবেই ত চোখ নষ্ট হয় ।” পিসিমার শহরের সব জিনিষের প্রতি অসীম অবজ্ঞা, একবার এ বিষয়ে কথা আরম্ভ হইলে তাহার আর শেষ থাকে না । স্বতরাং সে-প্রসঙ্গ চাপা দিয়া প্রতাপ বলিল, “সেঙ্গদ বাড়ি নেই বুঝি ? বৌদি কি করছে ? পিসিম বলিলেন, “ওমা, সবে চারটে, এখন কি সে বাড়ি আসে ? তার বাড়ি আসতে যার নাম সন্ধ্যে ছ’টা । রাস্তার আলে জলে যায়, তবে বাছা বাড়িতে পা দেয় । বড় খাটুনি। বৌমা আর কি করবেন, ঘুমুচ্ছেন। তোমাদের একালের শহুরে মেয়ে, দুপুরে তারা কি আর বসতে পারে ? ছেলেটাকে স্বদ্ধ ছেড়ে দেয় আমার ঘাড়ে।” উপর হইতে তীক্ষু কণ্ঠে ডাক আসিল, “কাল্প, শীগগির উপরে আয় বলছি।” পিসিমা গলা সামান্ত একটু নামাইয়া বলিলেন, “এমনিতে ত হাজার ডাকে সাড়া পাওয়া যায় না, কিন্তু নিজের নামে একটা কথা হয়েছে কি, অমনি কানে গেছে । তা যাকূগে, আমি কারও তোয়াক্কা রাখি না।” দিতে পারেন । মাণিকতলাটা বড় দূর পড়ছে, এইদিকে একটা কাজ পেয়েছি, কাছাকাছি থাকলে তবু করা চলে, নইলে ট্রামের খরচ জোগাতে হ’লে একেবারেই অসম্ভব ।” পিসীমা অত্যন্তু নিরুৎসাহের সঙ্গে বলিলেন, “দেখছ ত বাবা, আমরা কি ভাবে আছি । নেহাৎ কোনমতে মাথা গুঞ্জে থাকা । সে ক্ষ্যামতা থাকলে তোমাকেই বা যেচে বলতে যেতে হবে কেন ? আমরা নিঞ্জেরাই আদর ক’রে ডেকে আনতাম । জাহা, হরিদাদা যে আমার নিজের ভাই নয় তা কেউ কোনদিন বিশ্বাস করত না, ঠিক যেন এক মায়ের পেটের । তা ভগবান যে দিন কালের সৃষ্ট্রি—” প্রতাপ বাধা দিয়া বলিল, “সে আর কি না জানি, ভূক্তভোগী ত আমরা সবাই। কে কাকে দেখবে বলুন, সে-সব আজকালকার দিনে আশা করাষ্ট বুখ। । আমি বলছিলাম রাজুর ঘরটায় সে ত একলাই থাকে, আমিও যদি একপাশে থাকি, তা হ’লে কি বেশী অস্থfবধা হয় ? খাওয়ার খরচটা কিন্তু আপনাকে নিতে হবে পিসিম, নইলে আমি কিছুতেই আসতে পারব না।” পিসিমা একটু থামিয়া বলিলেন, “তুমি ঘরের ছেলে ঘরে থাকবে, তাতে আবার অথবিধে কি ? তবে গজুকে একবার ব’লে নিলে হ’ছ । জান ত বাবা আজকাল ছেলেরাই হয়েছে কত্তা, মায়েব কথায় ত কাজ হুয়ু না ।” প্রতাপ বলিল, “আমি তাহলে বসি একটু পিসিম, আর একবার যে ঘুরে আসব, সে সময় আমার নেই। আজকের মধ্যে সব ঠিক ক'রে, কাল দুপুরের মধ্যে আমায় গুছিয়ে বসতে হবে । বিকেল থেকে কাজে লাগতে হবে ।” পিসিম বলিলেন, “বোস, বোস, এইখানেই চা-ট। থা। রাজু গজুও এই এসে পড়ল ব'লে। কোথায় কাজ নিলি এ পাড়ায় আবার ? আপিস, আদালত কিছু ত ইদিকে নেই ?” প্রতাপ হাসিয়া বলিল, “আপিস আদালত করবার মত কপাল নিয়ে কি আর জন্মেছি পিসিমা ? কোনমতে দিনমজুরী করেও যদি পেটে খেতে পাই, তাহলে প্রতাপ বলিল, “পিলিমা, জামায় এখানে একটু জায়গা সেটাকেই ভাগ্য বলে মানি । এ ছেলে-পড়ানোর কাজ ।