পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১৬ প্রবাসী—ফাঙ্কণ, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড অনতিস্ফুট পরিচয়ই একটা আবরণ, তার অন্তরালে আসঙ্কোচে আপন মনে কথা ব’লে যেতে পার । - ছুটি ছিল,—না টেনেছিল আসল কাজে, না জমেছিল বাজে কাজ। তাই আমিও তোমাকে চিঠি লিখতে পেরেচি। কিন্তু যখন নাম্বে বর্ষা, কাজের বাদল, তপন আর সময় দিতে পারব না । আর বেশী দেরি নেই । ইতিমধ্যে দুই একদিন ছবি আঁকার পাকের মধ্যে পড়েছিলুম, ভুলেছিলুম পুথিবীতে এর চেয়ে গুরুতর কিছু আছে । যদি পূরোপুরি আমাকে পেয়ে বসত তাহলে আর কিছুতেই মন থাকত না। ওদিকে কাজেরও দিন এল ব’লে, তখন সময়ের মধ্যে র্যণক প্রায় থাকবে না । আমার সময়ের উপর আমার ব্যক্তিগত অধিকার খুব কম, অবকাশের তহবিল সম্পূর্ণ আমার জিন্মায় নেই, তাকে যেমন খুশী ব্যয় করতে পারি নে। তোমাদের পূজাৰ্চনার সঙ্গে বিজড়িত দিনরুত্যের যে ছবি দিয়েচ, তার থেকে নারী প্রকৃতির একটি ঝুম্পষ্ট রূপ দেখতে পেলুম । তোমরা মায়ের জাত, প্রাণের পরে তোমাদের দরদ স্বাভাবিক ও প্রবল। জীবদেহকে খাইয়ে পরিয়ে নাইয়ে সাজিয়ে তোমাদের আনন্দ । এর জন্য তোমাদের একটা বুভূক্ষ আছে। শিশুবেলাতেও পুতুল-খেলায় তোমাদের সেই সেবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়। ঠাকুরের সেবার যে বর্ণনা করেচ তাতে স্পষ্ট দেখতে পাই সেই মাতৃহৃদয়েরই সেবার আকাঙ্ক্ষাকে পূজাচ্চলে পরিতৃপ্তি দেবার এই উপায় । ঠাকুরকে ঘুম থেকে তোলা, কাপড় পরানো, পাছে র্তার পিত্তি পড়ে এই ভয়ে যথাসময়ে আদর ক'রে খাওয়ানো ইত্যাদি ব্যাপারের বাস্তবতা আমার মত লোকের কাছে নেই, তোমাদের কাছে আছে তোমাদের স্ত্রী প্রকৃতির নিরতিশয় প্রয়োজনের মধ্যে -যেমন ক’রে হোকৃ সেই প্রকৃতিকে চরিতার্থতা দেবার মধ্যে। প্রাণের বেদনা ষে আমার প্রাণেও বাজে না, তা নয়, কিন্তু সে বেদন যথাস্থানেই কাজ খোজে, কাল্পনিক সেবায় নিজেকে তৃপ্ত করবার চেষ্টা একেবারেই অসম্ভব। মন্দিরেও আমার ঠাকুর নয়, প্রতিমাতেও নয়, বৈকুণ্ঠেও নয়—আমার ঠাকুর মানুষের মধ্যে—সেখানে ক্ষুধা তৃষ্ণ সত্য, পিত্তিও পড়ে, ঘুমেরও দরকার আছে— যে-দেবতা স্বর্গের তার মধ্যে এসব কিছু সত্য নয়। মামুষের মধ্যে যে-দেবতা ক্ষুধিত তৃষিত রোগাওঁ শোকাতুর, তার জন্তে মহাপুরুষেরা সৰ্ব্বস্ব দেন, প্রাণ নিবেদন করেন, সেবাকে ভাববিলাসিতায় সমাপ্ত না ক’রে তাকে বুদ্ধিতে বীর্ষ্যে ত্যাগে মহৎ ক’রে তোলেন । তোমার লেখায় তোমাদের পূজার বর্ণনা শুনে আমার মনে হয় এ সমস্তই অবরুদ্ধ অতৃপ্ত অসম্পূর্ণ জীবনের আত্মবিড়ম্বন । আমার মানুষরূপী ভগবানের পূজাকে এত সহজ করে তুলে র্তাকে র্যারা বঞ্চিত করে তারা প্রত্যহ নিজে বঞ্চিত হয়। তাদের দেশে মানুষ একান্ত উপেক্ষিত, সেই উপেক্ষিত মামুষের দৈন্তে ও দুঃখে সে দেশ ভারাক্রাস্ত হয়ে পৃথিবীর সকল দেশের পিছনে পড়ে আছে। এ সব কথা ব’লে তোমাকে ব্যথা দিতে আমার ইচ্ছে করে ন!—কিন্তু যেখানে মন্দিরের দেবতা মানুষের দেবতার প্রতিদ্বন্দ্বী, যেখানে দেবতার নামে মানুষ প্রবঞ্চিত সেখানে আমার মন ধৈর্য্য মানে না। গয়াতে যপন বেড়াতে গিয়েছিলেম তখন পশ্চিমের কোন এক পূজামুগ্ধ রাণী পাণ্ডার প৷ মোহরে ঢেকে দিয়েছিলেন– ক্ষুধিত মাহুষের অল্পের থলি থেকে কেড়ে নেওয়া অল্পের মূল্যে এই মোহর তৈরি । দেশের লোকের শিক্ষার জন্তে অল্পের জন্তে আরোগ্যের জন্যে এরা কিছু দিতে জানে না, অথচ নিজের অর্থ সামর্থ সময় প্রতিভক্তি সমস্ত দিচ্চে সেই বেদীমূলে যেখানে ত নিরর্থক। মানুষের প্রতি মাছুষের এত নিরেীৎস্থক্য এত ঔদাসীন্য অন্য কোনো দেশেই নেই, আর সেই জন্তে এ দেশে হতভাগা মানুষের সমস্ত প্রাপ্য দেবতা অনায়া:ে নিচ্চেন হরণ ক’রে । ইতি ৩১শে জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮