পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] মাতৃঋণ Գe Տ কানের কাছে কান্থর শানাইয়ের মত গলার স্বর শুনিয়া সে চমকিয়া উঠিল। কাল্প তাহার দিকে একখানা পোষ্ট্রকার্ড অগ্রসর করিয়া দিয়া বলিল, “এই দেখ তোমার চিঠি এসেছে।” প্রতাপ পোষ্টকার্ডধান লইয়া দেখিল বাড়িরই চিঠি, মেস হইতে কেহ রিডাইরেক্ট করিয়া দিয়াছে। দাদা লিথিয়াছেন বাড়িতে র্তাহাদের অবর্ণনীয় দুৰ্গতি হইতেছে, ধার করিয়া, ভিক্ষা করিয়া একবেলা খাওয়াও আর জোটে না। প্রতাপ যদি অবিলম্বে কিছু পাঠাইতে ন। পারে, তাহা হইলে তাছাদের অনাহারে মৃত্যু ভিন্ন "ার কোনো গতি থাকিবে না। বহুচেষ্টা করিয়াও সে কাজ কিছু জোটাইতে পারে নাই। মা এবং বোন দুটির পরিধেয় বস্ত্র শত ছিল্প হইয়া গিয়াছে, তাহারা লজ্জায় কাহারও সামনে বাহির হইতে পারেন না। . প্রতাপ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া উঠিয়া বসিল । হায় রে স্নাথ, হায় নিশ্চিন্ততা ! এ সব কি জগতে সত্যই কোথাও আছে ? দরিদ্রের জন্য অন্ততঃ নাই। মাহিনার টাকা পাইতে এখনও একমাস দেরি, ততদিন কি করিয়া চলিবে ? স্থলে বা নৃপেন্দ্রবাবুর কাছে একদিন মাত্র কাজ করিয়া আগাম টাকা কিছুতেই পাওয়া যাইবে না। চাহিবেই বা সে কোন মুখে ? চাহিতে গেলে টাকা পাওয়ার পরিবর্তে চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। তাহার এমন কিছুই নাই, যাহা বিক্রয় করা বা বন্ধক দেওয়া চলিতে পারে। দেশেও সেই অবস্থা। কুঁড়ে ঘরটুকু নষ্ট করা চলে নাতাহা হইলে সকলকে পথে বসিয়া থাকিতে হইবে, বরং না থাইয়া নিজের ঘরের ভিতর মরিয়া থাকে, সে-ও ভাল । ধারই বা সে চাহিবে কার কাছে ? কলিকাতায় তাহাকে কে চেনে, কে বিশ্বাস করিয়া টাকা ধায় দিবে ? মেসের লোকের কাছে এখনও তাহার ধারই বাকি, সে দিকে ত তাকানই যায় না। তাহার পরিচিত যাহারা আছে, তাহাদের কেহ প্রতাপকে খাতির করিয়া আট আন পয়সাও দিবে না । পিলিমার কাছে চাহিবে কি ? তিনিই বা কি ভাবিবেন। তবু হাতে থাকিলে দিতে পারেন, কারণ দেশের দুঃখদারিত্র্যের সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ পরিচয় আছে। চিঠিখান দেখাইলে তিনি অবিশ্বাস হয়ত করিবেন না। ছেলেরী শুনিলে বিরক্ত হইবে, কিন্তু উপায় নাই। জগতে নিজে না খাইয়া, না পরিয়া অসহ দুঃখকষ্ট সহ্য করিয়াও প্রতাপ যদি নিজের মাথাটা খাড়া রাখিয়া চলিবার স্থবিধাটুকু পাষ্টত তাহাই সে যথেষ্ট মনে করিত। কিন্তু ইহাও তাহার অদুষ্টে নাই। নিজের জন্ত নয় পরিবারের জন্ত, যাহার কোলে সে জন্মলাভ করিয়াছিল, বুকের রক্ত দিয়া যিনি তাহাকে পালন করিয়াছিলেন, সে মায়ের জন্য ভাইবোনের যাহারা তাহার শিশুজীবনের অবলম্বন ছিল তাহাদের জন্য তাহাকে পরের নিকট অবনত হইতে হইবে । মানুষ জগতে জন্মগ্রহণ করিয়া অনেক জিনিষ বিনা অধিকারে উপভোগ করে, তেমনি বিনাদোষে বহু ছাগ অপমানও সহ্য করে। ইহার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের স্থান নাই। মানুষ হইয়া জন্মানোরই ইহা ফল। কাল্পকে জিজ্ঞাসা করিল,“তোর ঠাকুম কোথায় রে ?” কাল্প বলিল, “ঠাকুম ত কাল পিটে করবে বলে ডাল ভিজচ্ছে, আর নারকোল কুরে রাখছে। কাল পিটেপাৰ্ব্বণ জান না বুঝি ? কাল খুব কযে পিঠে খেতে হয় ।” পালপাৰ্ব্বন কখন যে কোনটা তাহা প্রতাপ বহুকাল ভুলিয়া গিয়াছিল। কামুর কথায় মনে পড়িল, কাল সত্যই পৌষ-সংক্রাস্তি বটে। বাল্যকালের কথা মনে পড়িল । তখনও সংসারে দারিদ্র্য ছিল বটে, কিন্তু তাহা এখনকার মত সংহারমৃষ্টি ধারণ করে নাই। উচুদরের পিঠে না হোক, মা কলাইয়ের ডাল বাটিয়া তাহার দ্বারা যে সরুচাকুলি পিঠা করিতেন তাহা নতুন খেজুর গুড় দিয়া খাইয়া প্রতাপরা সকলে যে পরিমাণ আনন্দিত হইত, দেবলোকে অমৃত পান করিয়াও ততখানি আনন্দের হুষ্টি হইত কি না সন্দেহ । আর কাল তাহার ভাইবোনদের পেটে একমুঠ ভাতও পড়িবে না, পিঠা খাইয়া আনন্দ করা ত দূরে থাক। না, নিজের মানঅপমানের কথা আর মনের ত্রিসীমানায়ও আসিতে দিবার অধিকার প্রতাপের नाहे । ধীরে ধীরে উঠিয়া সে পিসিমার সন্ধানে চলিল। বেশীদূর তাহাকে যাইতে হইল না। পিলিম রান্নাঘরের কাজ সারিয়া হারিকেন লণ্ঠন হাতে করিয়া উপরেই