১২৮ প্রদেশে নিজ নিজ মায়েবদের সৈন্য পাঠাইবার জন্ত তাগিদ করিয়া পত্র লিখিলেন । ঐ দুই স্থান হইতে নূতন সৈন্ত জাসিয়া তাঙ্গার সঙ্গে জুটিল। ইতিমধ্যে মীর হবিব গঙ্গার উপর নৌকা দিয়া সেতু বাপিয়া বগীদের পার হইবার স্নবিধা করিয়া দিয়াছিল, সেক্ট উপায়ে তাহারা গঙ্গার পূর্বপারে পলাশী, দাউদপুর পৌঁছিয়। লুঠপাট ৪ গৃহদাহু করিল, এমম কি কাসিমবাজারে পর্য্যস্ত আতঙ্ক পৌছাটল । কিন্তু নবাব অমনি সসৈন্তে তারকপুরে জাসায় বগীরা তাহদের থামা উঠাইয়া নদী পার কষ্টয়া কাটোয়ায় পলাইয়া গেল । তখনও বর্গ শেষ হয় নাই । ভারতবর্ষে সৰ্ব্বত্রই এই নিয়ম পুরাতন কাল হইতে চলিয়া আসিয়াছে যে দশহরার পর জলকাদ শুকাইলে এবং নদীগুলির জল কমিয়া সহজে পার হুইবার উপযোগী হইলে, তবে যুদ্ধযাত্র করিতে হয়। কিন্তু পাটনা ও পূর্ণিয়া হইতে সৈন্য আসিবামাত্র আলীবর্দী দশহরার জন্য অপেক্ষা না করিয়া বগীদের বিরুদ্ধে রওনা হইলেন । প্রথমতঃ মুর্শীদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশ হইতে মারাঠাদের থানা তাড়াইয়া দিয়া কাটোয়ার সম্মুখে গঙ্গার পূর্ব পারে (রহনপুর) মুচ্চ বাধিয়া কাটোয়ায় শক্রশিবিরে তোপ চালাইতে লাগিলেন । কাটোয়া শহরের পর্বদিকে গঙ্গা প্রবাহিত আর উত্তর ও কিছু পশ্চিম দিক অজয় নদী বেড়িয়া আছে । কাটোয়ার ঠিক পূৰ্ব্ব পাশে গঙ্গায় হুগলী হইতে আনীত জাহাজখানি খাড়া থাকায় আলীবর্দীর পক্ষে সেখানে নদী পার হওয়৷ অসম্ভব হইল । নবাব তখন উত্তরদিকে অনেকদূর উজাইয়। উদ্ধরণপুরে গঙ্গার উপর বড় বড় নৌকা দিয়া এক সেতু বাধিয়া শত্রুর অগোচরে নিজ সৈন্ত পার করিয়া গঙ্গার পশ্চিম কৃলে এবং অজয়ের উত্তর পারে অনিয়া ফেলিলেন । আশ্বিন অষ্টমীর এক রাজে মাঝারি আকারের নৌকা দিয়া অজয়ের উপর আর একটি পুল বাধিলেন। বার হাজার বেলদারের পরিশ্রমে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেতুটি সম্পূর্ণ হইল। ইহা মারাঠ শিবিরের , আধক্রোশ দূরে, কিন্তু তাহারী কিছুই জানিতে পারিল না । দেশময় জমিদারদের নিকট হইতে জোর-জবরদস্তির সঙ্গে টাদা ও ভোগের দ্রব্য আদায় করিয়া ভাস্কর সেখানে প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড ( ডাইহাটে ) মহাসমারোহে জগজ্জননীর পূজায় ব্যস্ত ছিল । সপ্তমী অষ্টমী নিৰ্ব্বিত্নে কাটিয়া গেল। অষ্টমীর শেষে গভীর অন্ধকার রাত্রে মশালের আলোয় নিঃশব্দে অজয়ের উপর ঐ পুল দিয়া পার হইয়া জুই তিন হাজার বাছা বাছা নবাব-সৈন্ত গতি প্রত্যুষে কাটোয়ায় মারাঠা শিবির আক্রমণ করিল। ভীষণ কোলাহল ও গণ্ডগোল উঠিল । মারাঠারা শক্ৰ কত আসিয়াছে তাঙ্গা দেখিবার অবসর না পাইয়া, নবাব সমস্ত সেনা লইয়া উপস্থিত হইয়াছেন এই ভাবিয়া দিশহারা হইয়া পলাষ্টয়া গেল । তাহীদের সব সম্পত্তি ও শিবির নবাবসৈন্ত লুঠিয়া লইল । প্রভাত হইবার পর নবাব বিজয় ংবাদ পাইয়া নিজের চড়িবার নৌকায় করিয়া ক্রমাগত সৈন্ত, ঘোড়া, হাতী ও তোপ অজয় পার করিয়া পাঠাইতে লাগিলেন, এবং সর্বশেষে নিজে আসিয়া পলাতক বগীদের কিছুদূর পর্য্যস্ত তাড়া করিলেন । ( ২৬ সেপ্টেম্বর ১৭৪২ )। দু-পক্ষেই খুব কম লোক মারা গেল। মারাঠারা সব ছাড়িয়া পাচেটে এবং পরে রামগড়ে ( হাজারিবাধ জেলায় ) পলাইয় গেল ; তাহাঁদের থানাগুলি বৰ্দ্ধমান, হুগলী হিজলী ও অন্যান্য জেলা হইতে সরিয়া পড়িল । ঘন জঙ্গলের জন্য আলীবর্দী তাহাদের বেশীদূর পশ্চাদ্ধাবন করিতে পারিলেন না । আর তাহারাও নিজদেশের দিকে সহজে অগ্রসর হইতে পারিল না । তখন মীর হবিবের পরামর্শে ভাঙ্গর দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়া বিষ্ণুপুর ও চন্দ্রকোণা হইয়া মেদিনীপুরে আবার মাথা পাড়া করিল । রাধানগর এবং অন্যান্য শহর লুঠিয় পোড়াইয়া নারায়ণগড়ে বসিয়া রহিল ৷ একদল মারাঠা অগ্রগামী সৈন্য জাজপুরের যুদ্ধে কটকের নায়েব স্ববাদার শেখ মাস্কমকে পরাস্ত ও নিহত করিয়া কটক দখল করিল। আলীবর্দী ভাস্করের গতিবিধির ংবাদ পাইয়া পাচেট হইতে ফিরিয়া মেদিনীপুরের দিকে রওনা হইলেন । এই সংবাদে ভাস্কর বালেশ্বরের পথ ধরিল । ষপন নবাব মেদিনীপুর হইতে ছুই ক্রোশ দূরে পৌছিলেন ভাস্কর ফিরিয়া আসিয়া তাহাকে আক্রমণ করিল, কিন্তু পরাস্ত হইয়া ক্রমাগত পলাইতে লাগিল । নবাবও তাহার পিছু পিছু অবিরাম চলিতে লাগিলেন।
পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/c/cd/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page151-1024px-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)