পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ురిపి না। তবে গান একৃটে—ত তুমি কি একলাই সব কর । কিসের দল বললে তোমার ” চোঙা-হাতে লোকটি বলিল,—“গ্রামোফোন— কলের গান। আমি কিছু করব না মশাই, সব এই কল দিয়ে করাব—” বলিয়া সে সঙ্গীর মাথার বাক্সটি দেখাইল । পিরোনাথ থামের আড়ালে দাড়াইয়া তামাক খাইতেছিল । গ্রামস্ববাদে রাম মিত্তিরের ভাইপো বলিয়। তাহার সামনে তামাক খায় না। একটা শেষ টান মারিয়া একটু জাগাইয়া হু কাটা অশ্বিনী শীলের হাতে দিয়া সে বলিল,—“তোমার ঐ বাক্স একটো করবে। কাঠে কখনও কথা কয় ? মস্কোর-ভস্তোর জান বুঝি ?” বামুনপাড়ার নিত্যঠাকরুণ দীঘির ঘাটে স্নান করিয়া ঘড়াঘটী হ’তে সবেগে মন্ত্ৰ পড়িতে পড়িতে পথের সকল অশুচিত হইতে আত্মরক্ষা করিয়া চলিতেছিলেন। কথাটা তাহার কানে গেল। মন্ত্র থামাইলেন না, কিন্তু দাড়াইয়া দাড়াইয়া বুত্তান্তটা শুনিলেন । এপাড়া ওপাড়ায় অবিলম্বে রাষ্ট্র হইয়া গেল—মিত্তিরবাড়ি এক আশ্চধ্য কল আসিয়াছে, তাহা মানুষের মত গান গায় ও একৃটো করে । খুন্ধীরা এবং যেসব ছেলে পাঠশালায় যায় না সকলেই ছুটিল । ষাহাদের বয়স হইয়াছে তাহারা অবশ্য এমন গাঙ্গখুরী গল্প বিশ্বাস করিল না—তবু দেখিতে cofam I চোঞ্জাওয়ালা লোকটার নাম হরসিত—জাতে পরামাণিক । উঠানে বেশ ভিড় জমিয়া গিয়াছে। সে কিন্তু নিতান্ডই নিস্পৃহভাবে তামাক খাইতেছে ; এত যে লোক জমিয়াছে তাহার যেন নজরেই আসিতেছে না । চকোক্তিদের বুচি খানিক আগে আসিয়াছে । আঙল দিয়া টেপিকে দেখাইয়া দিল,—ঐ সে কল। কিন্তু টেপিকে বোকা বুঝাইলেই হইল ! ছোট চৌকা কাঠের বাক্স—উহাই না-কি আবার গান গায়, যাঃ । হরসিত চোখ বুজিয়া একমনে হু কা টানিয়া টানিয়া তামাকের ধোয়ায় পৌষমাসের সকালবেলার মত চারিদিকে নিবিড় কুয়াশা জমাইয়া তুলিল । এ যেন আরব্য উপন্যাসের সেই কলসীর ভিতর হইতে দৈত্য বাহির হওয়া— কেবলই ধোয়, ধোয়া— তার মধ্য হইতে হরসিতের আবছায়া মূৰ্ত্তি ! এইবার বুঝি প্রচণ্ড লাফ দিয়া একটা অত্যভূত কিছু করিয়া বসিবে । কিন্তু সে তাহা কিছু না করিয়া সহসা ছকার ভূড় তুড়ি থামাইল এবং চোখ খুলিয়৷ বলিল,-“তামাক যে বড় ফ্যাক্সা মশাই, গলায় সেকও লাগে না ।" আমনি দুজন ছুটিল কামারপাড়ায় যাদবের বাড়ি, সে গাজ খায়, তাহার কাছে গলা [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেকিবার উপযুক্ত একছিলিম কড়া তামাক মিলিতে পারে । সকলে রাম মিত্তিরকে ধরিয়া বসিল,—“তুমি কায়েতদের সমাজপতি, এ গান তোমাকে দিতে হবে ।” রাম মিত্তিরের হইয়া সকলে দর কসাকসি আরম্ভ করিল। টাকায় আটপানি করিয়া গান, দুটাকায় সতেরো খান অবধি হইতে পারে—তার বেশী নয়। একুটোর দর অঞ্চত্রে হইলে বেশী হুইত, কিন্তু এতগুলি ভদ্রলোক যখন বলিতেছেন তখন তা আর কাজ নাই । মোটের উপর হরসিতের বিবেচনা আছে । এক টাকায় নয়খানি ब्रझ] झड्रेक्ष । তখন পকেট হইতে একটা চকুচকে গোলাকার বস্তু, হাতল, কঁাটার কোঁটা প্রভৃতি বাহির করিয়া ধ। ধা করিয়া চৌকা বাক্সে গুরসিত সেগুলি পরাইয়া ফেলিল, চোঙাটিও বাক্সের গায়ে বসাইল । তারপর গামছার পুটুলী খুলিয়া হাত-আয়না চিরুণী ও কাপড় সরাইয় বাহির করিল কালে কালো পাতলা পাথর । কাহারও আর নিঃশ্বাস পড়ে না । হাতল ঘুরাইতে ঘুরাইতে বলিল—“বায়নার টাকা দিন । অগ্রিম দেবেন না, বলেন কি মশাই ? আমার সাহেববাড়ির কল—” থালায় করিয়া টাকাটি আসরের ঠিক মধ্যস্থলেই রাখা হইল, যে যে পেলা দিতে চাহিবে, তাহাদের কাহারও , যাহাতে কোনো অস্ববিধা না হয় । তারপর হরসিত কলের উপর একগানা পাথর বসাইয়া কি টিপিয়া দিল আর পাথর চত্বকীর মত ঘুরিতে লাগিল। তারপর সেই ঘুরন্ত পাথরে যেই আর একটা মাথা বসাইয়া দেওয়া, অমনি একসঙ্গে বাজিয়া উঠিল— তবলা বেহালা, ইংরেজী বাজনা, ঢোল, করতাল— বোধ করি, পৃথিবীতে স্থর-যন্ত্র যা-কিছু আছে সবগুলিষ্ট । ইতিমধ্যে হৈ হৈ করিয়া একপাল ছেলে আসিয়া পড়িল, এই উপলক্ষ্যে পাঠশালার ছুটি হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ছেলেরা আর কতটুকু গণ্ডগোল করিতে পারে ? কলের মধ্যে যেন এককুড়ি পাঠশালায় একত্রে সমস্বরে নামত পাঠ হইতেছে । ই, কল যে সাহেববাড়ির তাহাতে সন্দেহ নাই । স্তরসিত বলিয়াছিল,—“ছাদ ফেটে যাবে—” সেক্টটাই বুঝি বা সত্য সত্য ঘটিয়া বসে। কিন্তু এত যে গোলযোগ, পাথরখানা বদলাইয়া দিতেই চুপচাপ। ক্রমশঃ শোনা গেল চোঙের ভিতর হইতে একলা গলায় গীত হইতেছে,-“ধিনতা ধিনা পাকা নোনা—” একেবারে স্পষ্ট আর অবিকল মানুষের গল ! মানুষ দেখা যায় না, অথচ মানুষই গাহিতেছে । মন্টর অনেকক্ষণ হইতে মনে হইতেছিল ঐ চোঙার ভিতরে কাহারা বসিয়া বসিয়া বাজাইতেছে—